রবিবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৫

পেঁপে চাষ পেঁপের পুষ্টিমান ও উপকারিতা





প্রচলিত নাম :পেঁপে। ইউনানী নাম:পাপিতা, আরানড খরবূযা। আয়ুর্বেদিক নাম:অমৃততুম্বী। একটি সব্জি। (Carica papaya) যা সারাবছর পাওয়া যায়। এটি একটি ছোট আকৃতির অশাখ বৃক্ষবিশেষ। লম্বা বো‍টাঁযুক্ত ছত্রাকার পাতা বেশ বড় হয় এবং সর্পিল আকারে কান্ডের উপরি অংশে সজ্জিত থাকে। প্রায় সারা বছরেই ফুল ও ফল হয়। পেঁপে কাচাঁ ফল সবুজ, পাকা ফল হলুদ বা পীত বর্ণের।





পেঁপে ভিটামিণ এ সমৃদ্ধ ।কাঁচা পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণে পেপেইন নামক হজমকারী দ্রব্য থাকে । অজীর্ণ,কৃমি সংক্রমণ,আলসার,ত্বকে ঘা,কিডনি ও ক্যান্সার নিরাময়ে কাজ করে।পাকা পেঁপে ফল ও কাঁচা পেপে সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। 

প্রচুর পরিমাণ আঁশ, ভিটামিন সি, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আছে পেঁপেতে। এই উপাদানগুলো রক্তনালিতে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল জমতে বাধা দেয়। তাই হৃদ্স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এবং উচ্চরক্তচাপ এড়াতে পেঁপে খেতে পারেন নিয়ম করে। পেপেতে রয়েছে ভিটামিন বি-১৭, সাথে ভিটামিন এ, সি, ই। যা ক্যান্সার কোষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। এছাড়াও পেঁপেতে আরো অনেক উপাদান রয়েছে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।

১০০ গ্রাম পাকা পেঁপের পুষ্টিগুণঃ

উপাদান
পরিমাণ
সোডিয়াম
৬.০ মিলিগ্রাম
মিনারেল
০.৫ গ্রাম
ভিটামিন সি
৫৭ মিলিগ্রাম
ফ্যাট
০.১ গ্রাম
ফাইবার
০.৮ গ্রাম
প্রোটিন
০.৬ গ্রাম
পটাসিয়াম
৬৯ মিলিগ্রাম
খাদ্যশক্তি
৩২ কিলোক্যালরি
কার্বোহাইড্রেড
৭.২ গ্রাম
আয়রন
০.৫ মিলিগ্রাম


পেঁপে চাষঃ
বাংলাদেশে পেঁপে খুবই জনপ্রিয়। শুধুমাত্র ফল নয় সবজি হিসেবেও এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। পরিচর্যা করলে সব ধরনের মাটিতেই পেঁপে চাষ করা যায়।

জাত পরিচিতিঃ
১।  ব্লুস্টেম,
২।  কাশিমপুরী,
৩।  যশোরি,
৪।  রাচি,
৫।  নউন ইউ,
৬।  হানি ডিউ,
৭।  ছোট পেঁপে,
৮।  শাহী পেঁপে,
৯।  শঙ্কর জাত।

বারি পেঁপে-১ (শাহী পেঁপে)   স্ত্রী ও পুরুষ ফুল আলাদা গাছে ধরে। চারা লাগানোর ৩-৪ মাস পর ফুল আসে। কান্ডের খুব নিচ থেকেই ফল ধরা শুরু হয়। প্রতিটি ফলের ওজন ৮৫০-৯৫০ গ্রাম। চারা লাগানোর ৩-৪ মাস পর ফুল আসে, ফুল আসার ৩-৪ মাস পর পাকা পেঁপে সংগ্রহ করা যায়। এ জাতটি প্রায় সার বছরই ফল দিয়ে থাকে। ফল ডিম্বাকৃতি এবং ওজন ৮০০থেকে ১০০০ গ্রাম। ফল প্রতি বীজের সংখ্যা ৫০০ থেকে ৫৫০ টি। রং গাঢ় কমলা থেকে লাল। ফল বেশ মিষ্টি ও সুস্বাদু। গাছ প্রতি ফলের সংখ্য ৪০ থেকে ৬০টি। জাতটি দেশের সব জায়গায় চাষ উপযোগী।

চাষের উপযোগী পরিবেশ ও মাটিঃ

জলবায়ু
মাটির প্রকৃতি
কার্তিক মাসের মাঝামাঝি থেকে পৌষ মাসের মাঝামঝি এবং মাঘ মাসের মাঝামাঝি থেকে চৈত্র মাসের মাঝামাঝি সময় পেঁপের বীজ বোনার উপযুক্ত সময়। শাহী পেঁপে সারাবছর চাষ করা যায়।
উঁচু ও মাঝারি উঁচু উর্বর দো-আঁশ মাটি পেঁপে চাষের জন্য সবচেয়ে ভালো। এছাড়া পরিচর্যা করলে সব ধরণের মাটিতেই পেঁপে চাষ করা যায়।


পেঁপে চারা তৈরিঃ
১. বীজ থেকে চারা তৈরি করা যায়।
২. পলিথিন ব্যাগে চারা তৈরি করলে রোপণের পর চারা দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
৩. ১৫ X ১০ সে.মি. আকারের ব্যাগে সমান পরিমাণ বালি, মাটি ও পচা গোবরের মিশ্রণ ভর্তি করে ব্যাগের তলায় ২-৩টি ছিদ্র করতে হবে। 
৪. তারপর সদ্য তোলা বীজ হলে একটি এবং পুরাতন হলে ২-৩টি বীজ বপন করতে হবে।
৫. একটি ব্যাগে একের বেশি চারা রাখা উচিত নয়।

গর্ত তৈরীঃ  
চারা রোপণের ১৫ থেকে ২০ দিন পূর্বে বেডের মাঝ বরাবর ২ মিটার দূরত্বে ৬০ x ৬০ x ৪৫ সে.মি. আকারে গর্ত তৈরী করতে হবে। গর্ত প্রতি ১৫ কেজি পচা গোবর, ৫০০ গ্রাম টিএসপি, ২৫০ গ্রাম জিপসাম, ২০ গ্রাম বরিক এসিড এবং ২০ গ্রাম জিংক সালফেট সার প্রয়োগ করে মাটির সাথে ভালভাবে মেশাতে হবে। সার মিশ্রিত মাটি দ্বারা গর্ত পূরণ করে সেচ দিতে হবে।

পেঁপে চারা রোপণ পদ্ধতিঃ  
১. দেড় থেকে ২ মাস বয়সের চারা রোপণ করতে হয়।
২. ২ মিটার দূরে দূরে ৬০ X ৬০ X ৬০ সে.মি. আকারের গর্ত করতে হয়।
৩. চারা রোপণের ১৫ দিন আগে গর্তের মাটিতে সার মেশাতে হয়।
৪. পানি নিকাশের জন্য দুই সারির মাঝখানে ৫০ সে.মি. নালা রাখলে ভালো।

পেঁপে চাষের সময় পরিচর্যাঃ
১. প্রতি গর্তে ৩টি চারা রোপণ করা যায়।
২. ফুল আসলে ১টি স্ত্রী গাছ রেখে বাকি গাছ তুলে ফেলতে হবে।
৩. পরাগায়নের সুবিধার জন্য বাগানে ১০% পুরুষ গাছ রাখতে হবে।
৪. ফুল থেকে ফল ধরা নিশ্চিত মনে হলে একটি বোঁটায় একটি ফল রেখে বাকিগুলো ছিঁড়ে ফেলতে হবে।
৫. গাছ যাতে ঝড়ে না ভাঙ্গে তার জন্য বাঁশের খুঁটি দিয়ে গাছ বেঁধে দিতে হবে।
৬. দুই সারির মাঝখানে নালার মাধ্যমে পানি নিকাশ নিশ্চিত করতে হবে।
৭. ফলের কষ জলীয়ভাব ধারণ করলে সবজি হিসেবে সংগ্রহ করতে হবে।

সার ব্যবস্থাপনাঃ   প্রতি গাছে ১৫ কেজি জৈব সার, ৫৫০ গ্রাম ইউরিয়া সার, ৫৫০ গ্রাম টিএসপি সার, ৫৫০ গ্রাম এমওপি সার, ২৫০ গ্রাম জিপসাম সার, ২৫ গ্রাম বোরাক্স সার এবং ২০ গ্রাম জিংক সালফেট সার একত্রে ভালভাবে প্রয়োগ করতে হয়।  ইউরিয়া ও এমওপি সার ছাড়া সব সার গর্ত তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হবে। চারা লাগানোর পর গাছে নতুন পাতা আসলে ইউরিয়া ও এমওপি সার ৫০ গ্রাম করে প্রতি ১ মাস পর পর প্রয়োগ করতে হয়। গাছে ফুল আসলে এ মাত্রা দ্বিগুণ করা হয়।

পানি সেচ ও নিকাশঃ  শুষ্ক মৌশুমে প্রয়োজন অনুযায়ী পানি সেচ দিতে হবে। সেচের ও বৃষ্টির পানি যাতে জমিতে জমে না থাকে সে জন্য পানি নিকাশের সুব্যবস্থা রাখতে হবে।
পেঁপের অতিরিক্ত গাছ অপসারণঃ   চারা লাগানোর ৩ থেকে ৪ মাস পর গাছে ফুল আসলে প্রতি গর্তে একটি করে সুস্থ্য সবল স্ত্রী গাছ রেখে বাকিগুলো কেটে ফেলতে হবে। তবে সুষ্ঠু পরাগায়ণ ও ফল ধারণের জন্য বাগানের বিভিন্ন স্থানে কমপক্ষে শতকরা ৫টি পুরুষ গাছ থাকা অপরিহার্য।

ফল পাতলা করণঃ  পেঁপের অধিকাংশ জাতের ক্ষেত্রে একটি পত্রক থেকে একাধিক ফুল আসে এবং ফল ধরে। ফল কিছুটা বড় হওয়ার পর প্রতি পত্রকক্ষে সবচেয়ে ভাল ফলটি রেখে বাকিগুলো ছিড়ে ফেলতে হবে। দ্বিতীয় বা তার পরবর্তী বছরে যে পেঁপে হয় সেগুলো ঠাসাঠাসি অবস্থায় থাকে। ফলে ঠিকমত বাড়তে পারেনা এবং এদের আকৃতি নষ্ট হয়ে যায়। এক্ষেত্রে ছোট ফলগুলো ছাঁটাই করতে হবে।
পেঁপের রোগবালাই ও পোকামাকড় দমনঃ
পেঁপের রোগবালাইয়ের মধ্যে ঢলেপড়া ও কাণ্ডপচা, এ্যানথ্রাকনোজ, মোজাইক ও পাতা কোঁকড়ানো রোগ অন্যতম। আর পোকার মধ্যে মিলিবাগ উল্লেখযোগ্য।
ঢলেপড়া ও কাণ্ডপচা রোগঃ  মাটি স্যাঁতস্যাঁতে থাকলে বীজতলায় চারায় ঢলে পড়া রোগ দেখা দিতে পারে। এছাড়া বর্ষাকালে কাণ্ডপচা রোগ দেখা দিতে পারে। কাণ্ডপচা রোগ হলে গাছের গোড়ায় বাদামী বর্ণের পানি ভেজা দাগের সৃষ্টি হয়। আক্রান্ত চারা গাছ  মারা যায় এবং ঢলে পড়ে। প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা হিসেবে বীজতলার মাটি বীজ বোনার আগে শুকনা রাখতে হবে এবং সিকিউর নামক ছত্রাক নাশক ২ থেকে ৩ গ্রাম প্রতি কেজি বীজের সাথে মিশিয়ে শোধন করতে হবে। এ রোগের প্রতিকার হিসেবে রোগাক্রান্ত চারা গাছ উঠিয়ে পুড়ে ফেলতে হবে। এ ছাড়া প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম রিডোমিল এম জেড-৭২ ছত্রাকনাশক মিশিয়ে আক্রান্ত কাণ্ডে ছিটিয়ে দিলে সুফল পাওয়া যায়।
এ্যানথ্রাকনোজঃ  এ রোগের কারণে ফলের গায়ে বাদামী পচন রোগ দেখা দেয়। ফল খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে যায়।
প্রতিকারঃ  ২ গ্রাম নোইন বা ব্যাভিস্টিন নামক ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানির সাথে   মিশিয়ে ১০ থেকে ১৫ দিন পর পর ২ থেকে ৩বার ফলে গায়ে ¯েপ্র করতে হবে।
পেঁপের মোজাইকঃ  এটি একটি ভাইরাস জনিত রোগ। এ রোগ হলে পাতায় হলুদ রং এর  ছোপ ছোপ দাগ পড়ে, পাতার বোঁটা বেঁকে যায় এবং গাছের বৃদ্ধি কমে যায়।  জাব পোকার আক্রমণে  এ রোগ ছড়ায়।
প্রতিকারঃ  আক্রান্ত গাছ তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। রোগ বিস্তারকারী পোকা দমনের মাধ্যমে এই রোগের বিস্তার রোধ করা সম্ভব।
মিলিবাগঃ  সাম্প্রতিক সময়ে মিলিবাগ পেঁপের একটি তিকর পোকা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আক্রান্ত পাতা ও ফলে সাদা পাউডারের মতো আবরণ দেখা যায়। আক্রান্ত গাছের পাতা ও ফল শুটি মোল্ড রোগের সৃষ্টি হয়। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে গাছ মারা যেতে পারে।
প্রতিকারঃ  আক্রমণের প্রথম দিকে পোকাসহ আক্রান্ত পাতা বা কাণ্ড সংগ্রহ করে ধ্বংস করে ফেলতে হবে। আক্রমণ বেশি হলে প্রতি লিটার পানিতে ৫ গ্রাম সাবান পানি অথবা এডমায়ার ২০০ এসএল ০.২৫ মি.লি. হারে মিশিয়ে ১৫ দিন পর পর ২ থেকে ৩ বার স্প্রে করতে হবে।
পেঁপে ফসল সংগ্রহঃ  
ফল ধরার দুমাস পরেই সবজি হিসেবে এগুলো বাজারজাতকরণের জন্য সংগ্রহ করা যেতে পারে। পাকা খাওয়ার জন্য যখনই পেঁপের গায়ে একটু হলুদ রং দেখা দেয় তখনই সংগ্রহ করা উচিত। গাছের সব পেঁপে একসাথে সংগ্রহ করা যায় না। যখন যে ফলের রং হলুদ হবে তখনই সেটি সংগ্রহ করতে হয়। এ অবস্হায় সংগ্রহ করলে পেঁপে সম্পূর্ণ পাকতে ৩ থেকে ৪ দিন সময় নিয়ে থাকে। সংগ্রহের পর ফলগুলো এক সারিতে খড়ের ওপর রেখে খড় দিয়ে ঢেকে রাখলে সমানভাবে পাকে। ফল ধরার ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহের উপযুক্ত হয়ে থাকে।

#  পেঁপে কাঁচা কী পাকা, দুটোতেই এর উপকারের মাত্রা সীমাহীন। কাঁচা পেঁপের কষ বাতাসার সঙ্গে খেলে লিভার সংক্রান্ত নানা সমস্যা দূর হয়। এর সঙ্গে খিদে বাড়ে। জন্ডিস হওয়ার সম্ভাবনা কমে। অপরদিকে পেঁপের রসে এমন কিছু উপাদান আছে যা আমাশয়, অশ্ব, কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সক্ষম।
#  পেঁপে খেলে শরীর থেকে দূষিত বায়ু সহজেই বেরিয়ে যায়। কাঁচা পেঁপের তরকারি পথ্যের কাজ করে। চিকিত্সকরা ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের কাঁচা পেঁপের তরকারি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। অপরদিকে কাঁচা পেঁপের কষ নাকি ঘা শুকাতে সাহায্য করে। পাকা পেঁপে তো খেতেও মিষ্টি। গুণটাও এর মধুর মতো মধুর।
#  লিভারের জটিল সমস্যা দূর করে। পাচন শক্তি বাড়ায়। অপরদিকে ত্বকের গ্ল্যামার বাড়াতে হলে আপনি পাকা পেঁপের লেপও মুখে লাগাতে পারেন। তা আপনার সৌন্দর্যে অভূতপূর্ব চমক এনে দেবে। 

সারা বছর সবজি ও ফল হিসেবে পাওয়া যায় এমন একটি ফসল হলো পেঁপে। একই গাছ থেকে অপরিপক্ব ফল বা কাঁচা সবুজ পেঁপে সংগ্রহ করে সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। কাঁচা পেঁপের তরকারি একটি উপাদেয় এবং ওষুধি সবজি হিসেবে বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয়। অন্য দিকে পরিপক্ব বা পুষ্ট পেঁপে একটি চমৎকার পুষ্টিকর ও জনপ্রিয় ফল। 

কথায় আছে
প্রতিদিন পেঁপে খাও, বাড়ির বাইরে ডাক্তার তাড়াও। অর্থাৎ প্রতিদিন কাঁচা পেঁপের তরকারি বা পাকা পেঁপে খাওয়া শরীরের পক্ষে খুবই উপকারী। পুষ্টিগুণের দিক দিয়েও পেঁপে অন্য ফলের তুলনায় অনেক বেশি পুষ্টিকর। পাকা পেঁপে ভিটামিন এবং ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। কাঁচা পেঁপেতেও ভিটামিন , ভিটামিন বি এবং ভিটামিন সি আছে। এ ছাড়া কাঁচা বা পাকা পেঁপেতে লৌহ ও ক্যালসিয়াম আছে। হজমে সহায়ক পেঁপে কাঁচা ও পাকা উভয় অবস্খাতেই শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।



পেঁপের ঔষধি গুনাগুন বা  উপকারিতাঃ

১। রক্ত আমাশয়ঃ  প্রত্যেহ সকালে কাঁচা পেঁপের আঠা ৫/৭ ফোঁটা ৫/৬ টি বাতাসার সঙ্গে মিশিয়ে খেতে হবে। ২/৩ দিন খাওয়ার পর রক্তপড়া কমতে থাকবে।
২। ক্রিমিঃ  যে কোনো প্রকারের ক্রিমি হলে, পেঁপের আঠা ১৫ ফোঁটা ও মধু ১চা চামচ একসঙ্গে মিশিয়ে খেতে হবে। এরপর আধা ঘন্টা পরে উঞ্চ পানি আধ কাপ খেয়ে তারপরে ১ চামচ বাখারি (শসা-ক্ষীরার মতো এর স্বাদ) চুনের পানি খেতে হয়। এভাবে ২ দিন খেলে ক্রিমির উপদ্রব কমে যাবে।
৩। আমাশয়ঃ  আমাশয় ও পেটে যন্ত্রনা থাকলে কাঁচা পেঁপের আঠা ৩০ ফোঁটা ও ১ চামচ চুনের পানি মিশিয়ে তাতে একটু দুধ দিয়ে খেতে হবে। একবার খেলেই পেটের যন্ত্রনা কমে যাবে এবং আমাশয় কমে যাবে
৪। যকৃত বৃদ্ধিতেঃ  এই অবস্থা হলে ৩০ ফোঁটা পেঁপের আঠাতে এক চামচ চিনি মিশিয়ে এক কাপ পানিতে ভালো করে নেড়ে মিশ্রণটি সারাদিনে ৩বার খেতে হবে। ৪/৫ দিনের পর থেকে যকৃতের বৃদ্ধিটা কমতে থাকবে, তবে ৫/৬ দিন খাওয়ার পর সপ্তাহে ২ দিন খাওয়াই ভালো। এভাবে ১ মাস খেলে ভাল ফল পাওয়া যাবে।
৫। ক্ষুধা ও হজম শক্তিতেঃ  প্রত্যেকদিন সকালে ২/৩ ফোঁটা পেঁপের আঠা পানিতে মিশিয়ে খেতে হবে। এর দ্বারা ক্ষুধাও বেড়ে যাবে এবং হজমও ঠিকভাবে হবে।
৬। পেট ফাঁপায়ঃ  কয়েক টুকরো পাকা পেঁপের শাঁষ, আর সামান্য লবন এবং একটু গোলমরিচের গুড়ো একসংগে মিশিয়ে খেতে হবে। এর দ্বারা পেট ফাঁপার উপশম হয।
৭। প্রবল জ্বরেঃ  দেড় চামচ পেঁপে পাতার রস এক কাপ পানিতে মিশিয়ে খেতে হবে। এর দ্বারা জ্বরের বেগ, বমি, মাথার যন্ত্রনা, শরীরে দাহ কমে যাবে। জ্বর কমে গেলে আর খাওয়ার প্রয়োজন নেই।
৮। মাসিক ঋতু বন্ধেঃ  যাদের মাসিক ঋতু বন্ধ হওয়ার সময় হয়নি অথচ বন্ধ হয়ে গিয়েছে অথবা যেটুকু হয় তা না হওয়ারই মত, সেক্ষেত্রে ৫/৬ টি পাকা পেঁপের বিচি গুড়া করে রোজ সকালে ও বিকালে দু
বার পানিসহ খেতে হবে। এর ফলে কয়েকদিনের মধ্যেই মাসিক স্রাব ঠিক হয়ে যাবে, তবে অন্য কোন কারনে এটা বন্ধ হয়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
৯। দাদেঃ  সে যে কোনো প্রকারের হোক না কেন, কাঁচা পেঁপের/গাছের আঠা ঐ দাদে লাগিয়ে দিতে হবে, একদিন লাগিয়ে পরের দিন লাগাতে হবে না, এরপরের দিন আবার লাগাতে হবে, এইভাবে ৩/৪ দিন লাগালে দাদ মিলিয়ে যাবে।
১০। একজিমায়ঃ  যে একজিমা শুকনা অথবা রস গড়ায় না, সেখানে ১ দিন অথবা ২ দিন অন্তর পেঁপের আঠা লাগালে ওটার চামড়া উঠতে উঠতে পাতলা হয়ে যায়।
১১। উকুন হলেঃ  ১ চামচ পেঁপের আঠা, তার সঙ্গে ৭/৮ চামচ পানি মিশিয়ে ফেটিয়ে নিতে হয়। তারপর ওই পানি চুলের গোড়ায় লাগিয়ে কিছুক্ষণ রাখার পর মাথা ধুয়ে ফেলতে হয়। এইভাবে একদিন অন্তর আর একদিন বা ২ দিন লাগালে উকুন মরে যায়।
১২। ওজন নিয়ন্ত্রণেঃ  শরীরের মেদ ঝরাতে যারা তৎপর, তাদের খাদ্যতালিকায় পেঁপে রাখুন। একদিকে যেমন কম ক্যালরি আছে, অন্যদিকে থাকা আঁশ পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে সবজি হিসেবে পেঁপে অনন্য।
১৩। প্রতিরোধ ব্যবস্থায়ঃ  দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদারে ভূমিকা রাখে পেঁপে। নিয়মিত পেঁপে খেলে সাধারণ রোগবালাই দূরেই থাকে।
১৪। ডায়াবেটিস রোগের পথ্যঃ  ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ ফল। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, পেঁপে শুধু ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যই প্রয়োজনীয় ফল নয়, ডায়াবেটিস রোগ এড়ানোর জন্যও পেঁপে খান।
১৫। চোখ ভালো রাখতেঃ   এর ভিটামিন এ চোখ ভালো রাখতে সাহায্য করে। এ ছাড়া বয়সজনিত ক্ষীণদৃষ্টি রোগ প্রতিরোধেও পেঁপের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। পেঁপেতে তিনের অধিক উপাদান আছে যা চোখের ARMD নামক রোগ প্রতিরোধে করতে কার্যকরী ভুমিকা রাখে।
১৬। বয়স ধরে রাখবেঃ  পেঁপের মধ্যে থাকা উপাদানগুলো বয়সের ছাপ লুকিয়ে ফেলতে খুব দক্ষ। নিয়মিত পেঁপে খেলে ত্বকে বলিরেখা পড়ার প্রবণতা ধীর হয়ে যায়।
১৭। ক্যানসার প্রতিরোধীঃ  কোলন ও প্রোস্টেট ক্যানসার প্রতিরোধে এটি উপকারী।
১৮। হৃদপিণ্ডের সুরক্ষাঃ  কাঁচা পেঁপে আমাদের দেহের সঠিক রক্ত সরবরাহে কাজ করে। আমাদের দেহে জমা থাকা সোডিয়াম দূর করতে সহায়তা করে। যা হৃদপিণ্ডের রোগের জন্য দায়ী। নিয়মিত পেঁপে খেলে উচ্চ রক্ত চাপের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এতে করে হৃদপিণ্ড জনিত যেকোনো সমস্যার সমাধান হয়।
১৯। অন্ত্রের সুরক্ষাঃ  পেঁপের বীজে আছে এন্টি-অ্যামোবিক ও এন্টি-প্যারাসিটিক বৈশিষ্ট্য। যা অন্ত্রের চলাচলকে নিয়ন্ত্রণ করে। এমনকি এটি বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য, এসিড রিফ্লাক্স, হৃদযন্ত্রের সমস্যা, অন্ত্রের সমস্যা, পেটের আলসার ও গ্যাস্ট্রিক সমস্যা থেকেও রক্ষা করে।
২০। দ্রুত ক্ষত নিরাময়ঃ  প্রতিদিন কাঁচা পেঁপে খেলে দেহের যে কোনো ক্ষত এবং কাটাছেড়া দ্রুত নিরময় হয়। কাঁচা পেঁপের অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান ক্ষতের ইনফেকশন হওয়া থেকে মুক্তি দেয়। কাঁচা পেঁপে ত্বকের জন্যও বেশ ভালো একটি খাদ্য উপাদান। আর তাই বেশিরভাগ ভালো ত্বকের প্রোডাক্টে কাঁচা পেঁপের ব্যবহার হয়ে থাকে।


২১। ব্যথা নিরাময়ঃ  পেঁপের পুষ্টিগুণ মেয়েদের জন্য সবচেয়ে বেশি দরকারী। কারণ এটি যে কোনো ধরনের ব্যথা কমাতে কার্যকারী ভূমিকা রাখে। পেঁপের পাতা, তেঁতুল ও লবণ একসাথে মিশিয়ে পানি দিয়ে খেলে ব্যথা একেবারে ভালো হয়ে যায়।
২২। কোষ্ঠকাঠিন্য দূরঃ  কাঁচা পেঁপে কোষ্ঠকাঠিন্যের মহৌষধ হিসেবে কাজ করে। কাঁচা পেঁপে এবং এর বীচির মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি অ্যামোবিক এবং অ্যান্টি প্যারাসিটিক উপাদান। যা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম। এছাড়াও হজমের সমস্যা, বুক জ্বালাপোড়া, গ্যাসের সমস্যা, পেটে ব্যথা ইত্যাদি সমস্যা সমাধানেও কাঁচা পেঁপের জুড়ি নেই।
২৩। ত্বকের হারানো সৌন্দর্য ফিরে পেতেঃ   আমাদের ত্বক কোমল এবং উজ্জ্বল করতে পেঁপের জুড়ি নেই। এখানে একটি মাস্ক তৈরির পদ্ধতি বলা হল: আধা কাপ পাকা পেঁপে, ৪ টেবিল চামচ নারকেলের দুধ(ডাবের নরম অংশ), ১/৪ কাপ কর্নফ্লেক্স একটি পাত্রে নিয়ে চটকে নিয়ে মুখ, হাত এবং গলায় ৫ মিনিট স্ক্র্যাব করুন। পানি দিয়ে ধুয়ে মশ্চারাইজার লাগিযে নিন।
আধা কাপ পাকা পেঁপে, ৪ টেবিল চামচ কমলার রস, ৪ টেবিল চামচ গজরের রস, ১ চা চামচ মধু একসঙ্গে মিলিয়ে ত্বকে মেখে কিছুক্ষণ রেখে ধুয়ে নিন।
নিয়মিত যত্নে আপনার ত্বক কোমল ও মশৃণ হবে। সব ধরনের ত্বকেই পেঁপের তৈরি মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন।

শুষ্ক ত্বকের জন্যঃ  পাকা পেঁপে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে একটি বাটিতে নিয়ে তাতে দুই চা-চামচ পরিমাণ ঠাণ্ডা তরল দুধ ও এক চা-চামচ মধু যোগ করে ভাল করে মেখে পেস্ট তৈরি করে নিন। এবার পেস্টটি মুখে ও গলায় মেখে ১৫ মিনিট রেখে দিন এবং ১৫ মিনিট পরে পানি দিয়ে ভাল করে ধুয়ে ফেলুন।

তৈলাক্ত ত্বকের জন্যঃ পাকা পেঁপে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে একটি বাটিতে নিয়ে তাতে এক চা-চামচ পরিমাণ মাল্টার রস যোগ করে ভাল করে মেখে পেস্ট তৈরি করে নিন। এবার পেস্টটি মুখে ও গলায় মেখে ১৫ মিনিট রেখে দিন এবং ১৫ মিনিট পরে পানি দিয়ে ভাল করে ধুয়ে ফেলুন।
ত্বকের উজ্জলতা বাড়ানোর জন্যঃ  পাকা পেঁপে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে একটি বাটিতে নিয়ে তাতে এক চা-চামচ পরিমান লেবুর রস ও এক চা-চামচ মধু যোগ করে ভাল করে মেখে পেস্ট তৈরি করে নিন। এবার পেস্টটি মুখে ও গলায় মেখে ১০ মিনিট রেখে দিন এবং ১০ মিনিট পরে পানি দিয়ে ভাল করে ধুয়ে ফেলুন।
 ২৪। Nausea একটি শারীরিক উপসর্গ যাতে পাকস্থলির উপরিভাগে ব্যথা অনুভূত হয় এবং এক ধরণের অস্বস্তির সাথে সাথে বমি বমি ভাব হয়। সম্প্রতি দেখা গেছে, এই সমস্যায় পেঁপে দারুণ কার্যকর ভুমিকা পালন করে। কেননা পেঁপেতে কিছু এনজাইম আছে যা পাকস্থলির এসিডের ভারসাম্য সঠিক মাত্রায় রাখে।
২৫। পেঁপের মধ্যে প্রচুর beta-cryptoxanthin থাকে। একটি মাঝারি সাইজের পেঁপেতে ২,৩১৩mcg পরিমাণ beta-cryptoxanthin পাওয়া যায়। যা ফুসফুসের বিভিন্ন সমস্যার পাশাপাশি ফুসফুসের ক্যান্সার রোধেও সাহায্য করে।
২৬। শুধু পেঁপের মধ্যেই পাপাইন (papain) নামের একটি উপাদান আছে যা ত্বকের মৃত কোষ দূর করে নতুন কোষ তৈরিতে সাহায্য করে। 
২৭। পেঁপেতে আছে পটাশিয়াম। তাই এই ফল রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। পাশাপাশি হাইপারটেনশন কমায় অনেকখানি।
২৮। শরীরে থাকা বিভিন্ন ক্ষতিকর কোলেস্টরলের মাত্রা কমিয়ে দেয় পেঁপে। তাই নিয়মিত পেঁপে খেলে হৃদযন্ত্রের নানা সমস্যা যেমন হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
২৯। কোলনের ইনফেকশন দূর করেঃ  পেঁপের জুস সবচাইতে কার্যকরী কোলন পরিষ্কারক পানীয়। কারণ পেঁপের জুস কোলনের মিউকাস দ্রুত দূর করে কোলন পরিষ্কার করে ইনফেকশন দূর করে।
৩০। হাতে পায়ের জয়েন্টে ব্যথা ও বাতের ব্যথার উপশম করেঃ  পেঁপেতে রয়েছে অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি উপাদান যা প্রদাহ এবং প্রদাহজনিত ব্যথা দূর করতে সহায়তা করে। এই একই ধরণের এনজাইম সমূহ ক্যান্সার ও অস্টিওপোরোসিস থেকে মুক্ত রাখতে সহায়তা করে।
৩১। পেঁপে বাটা পায়ের ফাটা দূর করে পাকে মসৃণ করে ।
৩২। কাঁচা পেঁপে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে পুরো মুখে নিয়মিত লাগালে ব্রণের উপদ্রব কমে ও ব্রণের দাগ মিলিয়ে যায় ।
৩৩। চুল শ্যাম্পু করার আগে চুলে পেঁপে বাটা বা পেঁপের রস লাগালে খুসকি সমস্যা কমে ।
৩৪। পেঁপের খোসা মুখের ত্বকে, হাতে কিংবা পায়ে লাগিয়ে রাখুন । নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক উজ্জ্বল হয় ।
৩৫। ডেঙ্গু জ্বর হলে রক্তের প্লাটিনেট নষ্ট হয় ।  পেঁপে পাতা রক্তের প্লাটিনেট নষ্ট হউয়া থেকে রক্তকে রক্ষা করে এবং প্লাটিনেট উৎপাদনে সাহায্য করে ।
৩৬। পেঁপে পাতার  জুস বা রস রক্তের বিভিন্ন উপাদান যেমন প্লাটিলেট এবং শ্বেত রক্ত কণিকা বৃদ্ধি ও পুনরায় উৎপাদন করতে সাহায্য করে ।
৩৭। কাঁচা পেঁপের তরকারি পাইলসের সমস্যা দূর করে এবং লিভার বৃদ্ধিরোধ করে।

অন্যান্য ফলের তুলনায় পেঁপেতে ক্যারোটিন অনেক বেশি থাকে। কিন্তু ক্যালরির পরিমাণ অনেক কম। যারা মেদ সমস্যায় ভুগছেন তারা অনায়াসে খেতে পারেন এ ফলটি।





কোন মন্তব্য নেই: