বৃহস্পতিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৫

তুলসী গাছ ও পাতার উপকারিতা





তুলসী একটি ঔষধিগাছ। তুলসী অর্থ যার তুলনা নেই। সুগন্ধিযুক্ত, কটু তিক্তরস, রুচিকর। এটি সর্দি, কাশি, কৃমি ও বায়ুনাশক এবং মুত্রকর, হজমকারক ও এন্টিসেপটিক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে বিশেষ করে কফের প্রাধান্যে যে সব রোগ সৃষ্টি হয় সে ক্ষেত্রে তুলসী বেশ ফলদায়ক।
তুলসী একটি ঔষধি গাছ। তুলসী অর্থ যার তুলনা নেই। তুলসী এর ইংরেজি নাম Holy basil এবং বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে Ocimum basilicum Linn.



তুলসী পরিচিতিঃ  
তুলসী সাধারণত একটি ঘন শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট ২-৪ ফুট উঁচু বড় বিরুৎ বা ছোট গুল্ম জাতীয় কটু তিক্তরস যুক্ত উদ্ভিদ। এর মূল কান্ড কাষ্ঠল, পাতা ২-৪ ইঞ্চি লম্বা হয়। পাতার কিনারা খাঁজকাটা, শাখাপ্রশাখার অগ্রভাগ হতে ৫ টি পুষ্পদন্ড বের হয় ও প্রতিটি পুষ্পদন্ডের চারদিকে ছাতার আকৃতির মত ১০-২০ টি স্তরে ফুল থাকে। প্রতিটি স্তরে ৬টি করে ছোট ফুল ফোটে। 

এর পাতায় এক ধরনের সুগন্ধী তেল থাকে তাই তুলসী গাছ সুগন্ধযুক্ত। এর বীজ চ্যাপ্টা, মসৃণ ও ফিকে লাল। সারাবছর এর পাতা সংগ্রহ করা যায়।

সাদা তুলসী গাছটাই সাধারণত চোখে পড়ে তবে কালো তুলসী গাছ ও দেখা যায়, যাকে বলা হয় কৃষ্ণ তুলসী।  
তুলসী বিভিন্ন রকম ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া ও ফাংগাস থেকে শরীরকে রক্ষা করে। পাতা কাঁচা চিবিয়ে খাওয়া যায়। অনেকে বেটে রসটা খান। তুলসী পাতার চা বেশ সুস্বাদু।


  
তুলসী পাতার উপকারিতাঃ
১।  পেট খারাপ হলে তুলসীর ১০ টা পাতা সামান্য জিরের সঙ্গে পিষে ৩-৪ বার খান ৷ হাগু একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে!!! মানে পায়খানার ওই সমস্যাটা আর কি!
২।  জ্বর হলে পানির মধ্যে তুলসী পাতা, গোল মরিচ এবং মিশ্রী মিশিয়ে ভাল করে সেদ্ধ করুন ৷ অথবা তিনটি দ্রব্য মিশিয়ে বড়ি তৈরি করুন ৷ দিনের মধ্যে তিন-চার বার ঐ বড়িটা জলের সঙ্গে খান ৷ জ্বর খুব তাড়াতাড়ি সেরে যাবে ৷
৩।  কাশি যদি না কমে সেই ক্ষেত্রে তুলসী পাতা এবং আদা পিষে মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খান৷ এতে উপকার পাবেন৷
৪।  মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে দিনে ৪/৫ বার তুলসী পাতা চেবান৷
৫।  ঘা যদি দ্রুত কমাতে চান তাহলে তুলসী পাতা এবং ফিটকিরি একসঙ্গে পিষে ঘা এর স্থানে লাগান কমে যাবে৷
৬।  শরীরের কোন অংশ যদি পুড়ে যায় তাহলে তুলসীর রস এবং নারকেলের তেল ফেটিয়ে লাগান এতে জ্বালা কমবে৷ পোড়া জায়গাটা তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাবে৷ সেখানে কোন দাগ থাকবে না ।
৭।  ত্বকের চমক বাড়ানোর জন্য এছাড়া ত্বকের বলীরেখা এবং ব্রন দূর করার জন্য তুলসী পাতা পিষে মুখে লাগান৷
৮।  চর্মরোগে তুলসী পাতা দূর্বাঘাসের ডগার সংগে বেটে মাখলে ভালো হয়ে যায়।
৯।  ডায়রিয়া হলে ১০ থেকে বারোটি পাতা পিষে রস খেয়ে ফেলুন।
১০।  শরীরের কোন অংশ যদি পুড়ে যায় তাহলে তুলসীর রস এবং নারকেলের তেল ফেটিয়ে লাগান, এতে জ্বালাপোড়া কমে যাবে। পোড়া জায়গাটা তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাবে এবং পোড়া দাগ ওঠে যাবে।
১১।  যদি কখনও বমি কিংবা মাথা ঘোরা শুরু করে, তাহলে তুলসী রসের মধ্যে গোলমরিচ মিশিয়ে খেলে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়।
১২।  সকালবেলা খালি পেটে তুলসী পাতা চিবিয়ে রস পান করলে খাবার রুচী বাড়ে।
১৩।  নিয়মিত তুলসীর রস পানে হৃদরোগেও উপকার পাওয়া যায়।
১৪।  চোখের সমস্যা দূর করতে রাতে কয়েকটি তুলসী পাতা পানিতে ভিজিয়ে রেখে ওই পানি দিয়ে সকালে চোখ ধুয়ে ফেলুন।
১৫।  মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে দিনে ৪-৫ বার তুলসী পাতা চেবান ৷



১৬।  ঘা যদি দ্রুত কমাতে চান তাহলে তুলসী পাতা এবং ফিটকিরি একসঙ্গে পিষে ঘা এর স্থানে লাগান, কমে যাবে ৷
১৭।  ত্বকের চমক বাড়ানোর জন্য, এছাড়াও ত্বকের বলীরেখা এবং ব্রোন দূর করার জন্য তুলসী পাতা পিষে মুখে লাগান ৷
১৮।  বুদ্ধি এবং স্মরণশক্তি বাড়ানোর জন্য প্রতিদিন ৫-৭ টা তুলসী পাতা চিবান ৷
১৯।  প্রস্রাবে জ্বালা হলে তুলসী পাতার রস ২৫০ গ্রাম দুধ এবং ১৫০ গ্রাম জলের মধ্যে মিশিয়ে পান করুন ৷ উপকার পাবেন ৷
২০।  তুলসী মূল শুক্র গাঢ় কারক। তুলসী পাতার ক্বাথ, এলাচ গুঁড়া এবং এক তোলা পরিমাণ মিছরী পান করলে ধাতুপুষ্টি সাধিত হয় যতদিন সম্ভব খাওয়া যায়। এটি অত্যন্ত ইন্দ্রিয় উত্তেজক। প্রতিদিন এক ইঞ্চি পরিমাণ তুলসী গাছের শিকড় পানের সাথে খেলে যৌনদূর্বলতা রোগ সেরে যায়।
২১।  কোন কারনে রক্ত দূষিত হলে কাল তুলসিপাতার রস কিছুদিন খেলে উপকার পাওয়া যায়। শ্লেষ্মার জন্য নাক বন্ধ হয়ে কোনো গন্ধ পাওয়া না গেলে সে সময় শুষ্ক পাতা চূর্ণের নস্যি নিলে সেরে যায়। পাতাচূর্ণ দুই আঙ্গুলের চিমটি দিয়ে ধরে নাক দিয়ে টানতে হয়, সেটাই নস্যি।
২২।  তুলসী পাতা দিয়ে চায়ের মত করে খেলে দীর্ঘদিন সুস্থ থাকা যায়। তুলসী চা হিসাবে এটি বেশ জনপ্রিয়।
২৩।  তুলসি পাতার রসে লবন মিশিয়ে দাদে লাগালে উপশম হয়।
২৪।  তুলসীর বীজ পানিতে ভিজালে পিচ্ছিল হয়। এই পানিতে চিনি মিশিয়ে শরবতের মত করে খেলে প্রস্রাবজনিত জ্বালা যন্ত্রনায় বিশেষ উপকার হয়। এছাড়াও তুলসী পাতার রস ২৫০ গ্রাম দুধ এবং ১৫০ গ্রাম জলের মধ্যে মিশিয়ে পান করুন ।
২৫।  মুখে বসন্তের কাল দাগে তুলসীর রস মাখলে ঐ দাগ মিলিয়ে যায়। হামের পর যে সব শিশুর শরীরে কালো দাগ হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে তুলসী পাতার রস মাখলে গায়ে স্বাভাবিক রং ফিরে আসে।
২৬। কিডনির সমস্যাঃ  তুলসীপাতা আপনার কিডনীর বেশ কিছু রোগের সমাধান করে দিতে পারে। তুলসীপাতার রস প্রতিদিন একগ্লাস করে পান করলে, কিডনীতে স্টোন হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম থাকে। যদি কিডনীতে স্টোন জমে যায় তবে তুলসীপাতার রস টানা ৬ মাস পান করলে সেই স্টোন মূত্রের সঙ্গে বেরিয়ে যায়।

২৭।  গলার ব্যাথাঃ  সামান্য গরম জলে তুলসীপাতা দিয়ে সেদ্ধ করে নিয়ে, সেই জল দিয়ে গার্গল করলে বা জল পান করলে আপনার গলার ব্যাথা দ্রুত সেরে যাবে।

২৮। ত্বকের সমস্যাঃ  মাঝে মধ্যেই ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা আপনাকে জর্জরিত করে তোলে। ত্বকে বিভিন্ন মরসুমে বিভিন্ন ধ্রনের সমস্যা দেখা যায়। সেই সমস্যা সমাধানের একটি সহজ ও অন্যতম উপায় হল তুলসীপাতার পেস্ট লাগান। তুলসীপাতার পেস্ট তৈরি করে তা ত্বকে লাগালে এই সমস্যাগুলি কমে যায়।



২৯।  তুলসী পাতা হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়ায় ও এর স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
৩০।  এছাড়াও তুলসী পাতার রস শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
৩১।  মাথা ব্যাথা ও শরীর ব্যথা কমাতে তুলসী খুবই উপকারী।
৩২।  পোকার কামড়ে আক্রান্ত স্থানে তুলসী পাতার তাজা রস লাগিয়ে রাখলে পোকার কামড়ের ব্যথা ও জ্বলা থেকে কিছুটা মুক্তি পাওয়া যায় !

৩৩।  তেজস্ক্রিয়তার ফলে ক্ষতিগ্রস্থ কোষসমুহকে মেরামত করে।

৩৪।  চর্বিজনিত হৃদরোগে এন্টি অক্সিডেন্টের ভুমিকা পালন করে।
৩৫।  তুলসী একশেরও বেশি Phytochemicals (যেমন oleanolic acid, beta caryophyllene ইত্যাদি)বহন করে বলে ক্যান্সার চিকিত্সারয় ব্যবহৃত হয়।
৩৬।  তুলসীর অ্যালকোহলিক নির্যাস Immune system এর রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে।

৩৭।  দাঁতের রোগে উপশমকারী বলে টুথপেস্ট তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।

৩৮। মানসিক চাপঃ  তুলসীর ভিটামিন সি ও অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুলো মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে। এই উপাদান গুলো নার্ভকে শান্ত করে। এছাড়াও তুলসী পাতার রস শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।

৩৯। বয়স রোধ করেঃ  ভিটামিন সি, ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস ও এসেন্সিয়াল অয়েল গুলো চমতকার অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের হিসেবে কাজ করে যা বয়সজনিত সমস্যা গুলো কমায়। তুলসী পাতাকে চির যৌবন ধরে রাখার টনিক ও মনে করেন কেউ কেউ।

৪০।  উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল কমিয়ে হূৎপিণ্ডের রক্ত সরবরাহের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে। লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।


৪১।  হাড়ের গাঁথুনিতে ব্যথা দূর করে এবং শরীরের কাটাছেঁড়া দ্রুত শুকাতে অবদান রাখে।

৪২।  ডাইরিয়া হলে ১০ থেকে বারোটি পাতা পিষে রস খেয়ে ফেলুন।

৪৩।  তুলসীতে Eugenol অধিক পরিমাণে থাকায় তা Cox-2 Inhibitor রূপে কাজ করে বলে তা ব্যথানাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
৪৪।  Hypoglycemic drugs এর সাথে তুলসী খেলে তা টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগে দ্রুত গ্লুকোজের মাত্রা কমিয়ে দেয়।


  




পেয়ারার পুষ্টিমান ও উপকারিতা





পেয়ারা ব্যাপক জনপ্রিয় গোটা এশিয়ায়। সুস্বাদু এই ফলের চিকিৎসা গুণের জন্যই প্রচুর পেয়ারা খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ডায়াবেটিস রুখতে পেয়ারার বিকল্প হয় না। আবার পেয়ারার পাতা রক্তচাপ, হৃদরোগে কাছে ঘেঁসতে দেয় না। 
পেয়ারাকে (guava) ভিটামিনের গুপ্তধন বলা যায়। এতে রয়েছে Anti-oxidant সহ  নানা ধরণের ভিটামিন, যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন উপকার করে থাকে। এজন্যেই  তো পেয়ারাকে 'super food' বলে ডাকা হয়।




বিজ্ঞানীরা বলছেন, ফলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিটামিন ও মিনারেল থাকে পেয়ারায়। বিশেষ করে ভিটামিন সি। অনেকের ধারণা লেবুতে সবচেয়ে বেশি ভিটামিন থাকে। কিন্তু বহু লোক জানেন না, একটি পেয়ারায় লেবুর চারগুণ বেশি ভিটামিন সি থাকে। প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ সমৃদ্ধও পেয়ারা। পাতিলেবুর চেয়ে ১০ গুণ বেশি ভিটামিন এ থাকে পেয়ারায়। এছাড়াও পেয়ারায় থাকে ভিটামিন B2, ভিটামিন K এবং Eশুধু ভিটামিনই নয়, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফেরাস, লোহা, তামা, ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়ামের মতো প্রচুর খনিজও থাকে এই ফলে।

পেয়ারা পাতায় কিছু প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক রয়েছে, যা প্যাথোজেনস মেরে ফেলে। প্যাথোজেনস-এর জন্যই ডায়রিয়া হয়। একই সঙ্গে রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে ও হার্ট ভালো রাখতেও সাহায্য করে পেয়ারা পাতার নির্যাস। সুতরাং পেয়ারা ও পেয়ারা পাতার নির্যাস নিয়মিত খেতে পারলে, রোগ নিয়ে আর দুশ্চিন্তা করতে হবে না।



পেয়ারার পুষ্টিগুনঃ  

উপাদান
পরিমাণ
ক্যালরি
৭ গ্রাম
ভিটামিন
২৫০ আই ইউ
থায়ামিন
০.০৭ গ্রাম
নিয়াসিন
১.২ মিলিগ্রাম
ভিটামিন সি
৩০২ মিলিগ্রাম
ক্যালসিয়াম
৩০ মিলিগ্রাম
ফসফরাস
২৯ মিলিগ্রাম
কার্বোহাইড্রেট
১৭.১০ গ্রাম
প্রোটিন
১ গ্রাম
মিনারেল
১০০ গ্রাম
পানি
৮০-৮৩ %
অম্ল
২.৪৫ %
বিজারিত চিনি
৩.৫০ ৪.৪৫ %
অবিজারিত চিনি
৩.৯৭ ৫.২৩ %
দ্রবণীয় শুষ্ক পদার্থ
৯.৭৩ %
পটাশিয়াম
০.৪৮ %




পেয়ারার উপকারিতাঃ

১।  শরীরের অতিরিক্ত শর্করা শুষে নিতে পারে পেয়ারা৷ এছাড়াও এতে যে ফাইবার রয়েছে তা বেশ উপকারি৷ এই বিশেষ ফলটি টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সক্ষম৷
২।  পেয়ারাতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি ও লাইকোপিন রয়েছে৷ এর ফলে রক্ত পরিষ্কার হয় ও ত্বক অনেক বেশি উজ্জ্বল হয়৷ এছাড়াও লাইকোপিনের সাহায্যে গালে গোলাপী আভা ফুটে ওঠে৷
৩। পেয়ারায় অবস্থিত ভিটামিন সি বিভিন্ন ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারে৷ এছাড়াও এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সক্ষম৷
৪।  পেয়ারাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বর্তমান৷ এই জাতীয় ভিটামিন দৃষ্টি শক্তি বাড়াতে সক্ষম৷
৫। যেকোনো ব্যকটেরিয়া সংক্রমণ বা পেটের গোলযোগে সবচেয়ে কার্যকরী হল পেয়ারা৷ এই ফলটিতে অ্যাস্ট্রিজেন্ট ও অ্যান্টি-মাইক্রোবাল উপাদান থাকে ফলে এটি পাকস্থলীর স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে৷
৬।  পেয়ারাতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে৷ এটি শরীরের অতিরিক্ত রক্তপাচ কমাতে সাহায্য করে ও রক্তচাপকে স্বাভাবিক রাখে৷
৭।  যারা ওবেসিটির শিকার বা যাদের ওজন অতিরিক্ত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে তারা পেয়ারা খেতে পারেন৷ পেয়ারা খেলে শরীরের অতিরিক্ত ওজন খুব সহজেই ঝড়ানো যেতে পারে৷
৮।  হাই ব্লাডপ্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। অনেক দিন ধরে মেনস্ট্রুয়েসন-এর সমস্যায় পেয়ারা উপকারী।
৯।  অ্যাজমা, স্কার্ভি, ওবিসিটি ইত্যাদি অসুখের ক্ষেত্রেও পেয়ারা উপকারী। ডায়াবেটিসতো বটেই, ক্যান্সার এমন কি প্রস্টেট ক্যান্সারের মতো রোগ প্রতিরোধেও সাহায্য করে পেয়ারা। কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট ও ফাইবারসমৃদ্ধ পেয়ারা ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
১০।  পেয়ারা পাতার জুস গ্যাস্ট্রোনটেস্টিনাল সমস্যায় উপকারী। কারণ, পেয়ারা পাতায় রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এ ছাড়া পেয়ারা পাতা ওজন কমাতে সাহায্য করে। পেয়ারা পাতার জুস সর্দি-কাশি উপশমে সাহায্য করে। আয়রন ও ফাইবারে সমৃদ্ধ পেয়ারা কনস্টিপেশন সারাতে উপকারী
১১।  অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ পেয়ারা ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া রুখতে সাহায্য করে। একই কারণে অনেক বডি লোশন বা ফেস ক্রিমের উপাদানে পেয়ারা থাকে।
১২।  বয়সের সঙ্গে জড়িত নানা রোগ, যেমনঅ্যালজাইমার, ছানি, রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস প্রতিরোধে সাহায্য করে। অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদানে সমৃদ্ধ পেয়ারা ডিসেন্ট্রি প্রতিরোধ করে।
১৩।  পেয়ারাতে ভিটামিন এ, বিটাক্যারোটিন, লাইকোপিন, লুটিন এবং ক্রিপ্টোজ্যান্থিন বিদ্যমান। সুস্থ দেহের জন্য এসব উপাদান অত্যন্ত প্রয়োজনীয় যারা ফুসফুস এবং মুখগহবরে ক্যান্সার হওয়া প্রতিরোধ করে।
১৪।  পেয়ারাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি বিদ্যমান। অনেকে বাইরের সবুজ ত্বক খেতে চান না। কিন্তু ভিতরের শাঁস অপেক্ষা বাইরের ত্বকেই বেশি ভিটামিন বিদ্যমান। ভিটামিন সি নিয়মিত গ্রহণ করলে শরীরে যেকোনো ক্ষত হতে ঘা সৃষ্টি (ইনফেকশান) হওয়ার আশংকা অনেকাংশে কমে যায়, কোলাজেন সংশ্লেষণের হার ঠিক থাকে, যা রক্তনালি, ত্বক, বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দৃঢ় রাখতে সহায়তা করে।
১৫।  পেয়ারার লাইকোপিন সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি হতে ত্বককে রক্ষা করে এবং প্রস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।



১৬।  পেয়ারায় আরও রয়েছে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স (প্যান্টোথেনিক এসিড, নিয়াসিন, পাইরিডক্সিন), ভিটামিন ই, ভিটামিন কে, এবং কয়েকরকম খনিজ (ম্যাগনেশিয়াম, কপার এবং ম্যাঙ্গানিজ)। কপার লৌহ রক্ত কণিকা উৎপাদনে সহায়তা করে, ম্যাঙ্গানিজ এন্টিঅক্সিডেন্ট এনজাইমের সহকারী হিসেবে কাজ করে।
১৭।  পেয়ারায় ক্যালরি এবং ফ্যাট বলতে গেলে একেবারেই নেই। তবে তা ভিটামিন, মিনারেল এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট (পলিফেনোলিক ও ফ্ল্যাভেনয়েড) সমৃদ্ধ যা ক্যান্সার প্রতিরোধে অত্যন্ত সহায়ক। শরীরের চামড়ায় ভাঁজ পড়া প্রতিরোধেও এর ভূমিকা মুখ্য।
১৮।   চুল পড়া রোধ করেঃ   পেয়ারার ভিটামিন সি চুল পড়া রোধে বিশেষভাবে কার্যকরী। এছাড়াও প্রতিদিন মাত্র ১ টি পেয়ারা খেলে চুল গজানোতে সহায়তা করে।
১৯।   মস্তিস্কের সুরক্ষা করেঃ   পেয়ারা আমাদের মস্তিষ্ক সুরক্ষায় কাজ করে। পেয়ারার ভিটামিন বি৩ এবং বি৬ আমাদের মস্তিস্কের নার্ভ রিলাক্স করতে সহায়তা করে। এতে মস্তিস্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
২০।   নার্ভ ও মাংসপেশি শিথিল করেঃ  পেয়ারাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম যা অনেক কঠিন পরিশ্রমের পরও আমাদের মাংসপেশি শিথিল করতে সহায়তা করে। এছাড়াও নার্ভ রিলাক্স করে, এতে করে আমরা আরামবোধ করি।
২১। থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণ করেঃ   পেয়ারায় কপার থাকায় তা থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া এটি হরমোনের উৎপাদন এবং শোষণ নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা রাখে। থাইরয়েড আমাদের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি গ্রন্থি, যা হরমোন উৎপন্ন করে এবং শরীরের নানা কার্যপ্রক্রিয়ায় অংশগ্রহন করে। পেয়ারা কপারের  একটি অন্যতম উৎস যা থাইরয়েডের মেটাবোলিজম (metabolism) প্রক্রিয়ার জন্যে  জরুরি। 
২২। ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করেঃ  এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে যা টাইপ-২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। কাজেই ডায়াবেটিসে সুস্থ থাকতে পেয়ারা খাওয়ার বিকল্প নেই। 

২৩।  কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ  ফাইবার সমৃদ্ধ পেয়ারা শরীরে পানি ধরে রাখে এবং অন্ত্রকে পরিষ্কার রাখে। ফলে সহজেই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। 
২৪। স্নায়ুকে বিশ্রাম দেয়ঃ  পেয়ারা ম্যগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাদ্য হওয়ায় তা স্নায়ুগুলোকে বিশ্রামে রাখতে সাহায্য করে। একইসঙ্গে এটি শরীরের মাংসপেশীগুলোকে বিশ্রামে রাখতে ভূমিকা পালন করে।
২৫। গর্ভবতী নারীদের জন্যঃ  ডাক্তাররা গর্ভবতী নারীদের বেশি করে পেয়ারা খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি৯ তথা ফলিক অ্যাসিড রয়েছে যা স্নায়ুজনিত যে কোন সমস্যা দূর করে গর্ভোজাত শিশুদের সুস্থ রাখে। 
২৬। গর্ভধারণ ক্ষমতা বাড়াতেঃ   পেয়ারা ফলেটের একটি বড় উৎস যা গর্ভধারণে সক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 
২৭। পুষ্টি গ্রহণেঃ  পেয়ারায় ম্যাঙ্গানিজ নামক উপাদান থাকায় তা দ্রুত পুষ্টি গ্রহণে সহায়তা করে। আমরা প্রতিনিয়ত যেসব খাবার খাই এগুলো থেকে প্রয়োজনীয় বায়োটিন, ভিটামিন এবং মিনারেল গ্রহণে সাহায্য করে এই খাবারটি। 
২৮। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণেঃ  পেয়ারা সর্দি-কাশি উপশমে সাহায্য করে। একইসঙ্গে এটি শ্বাসতন্ত্রের নানা সমস্যা প্রতিরোধেও ভূমিকা রাখে।
২৯। তারুণ্য ধরে রাখেঃ  ভিটামিন এ, বি, সি এবং পটাশিয়ামের ভালো উৎস হলো পেয়ারা। এগুলো ত্বককে শুধু সুস্থ রাখতেই সাহায্য করে না, একইসঙ্গে ত্বকের তারুণ্যও বজায় রাখে।  
৩০। দাতেঁর যত্নেঃ  দাঁতের যে কোন সমস্যা যেমন-মাড়ি ফোলা এবং আলসার প্রতিরোধে সাহায্য করে পেয়ারা।  এক্ষেত্রে পেয়ারা পাতার রস বেটে খেলে ভালো উপকার পাওয়া যায়।
৩১।  আয়রণ ও ফাইবার সমৃদ্ধ পেয়ারা কনস্টিপেশান সারানোর জন্য উপকারী
৩২।  স্কার্ভি নামক রোগ থেকে বেঁচে থাকুন (Avoid scarvy by eating guava) 
পেয়ারাতে কমলার চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি ভিটামিন 'সি' থাকে। আর ভিটামিন 'সি' 
স্কার্ভি নামক ভয়াবহ রোগ থেকে রক্ষা করে। এখন পর্যন্ত জানা উপায়গুলোর  মধ্যে স্কার্ভি (scarvy) প্রতিরোধে একমাত্র উপায় ভিটামিন 'সি' আর ভিটামিন  'সি' এর অন্যতম উৎস পেয়ারা। তাই স্কার্ভির মত রোগ থেকে বেঁচে থাকতে  সাহায্য নিন পেয়ারার।