বুধবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

জাতীয় সংসদ ভবন



তৎকালীন পাকিস্তান সরকার পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য আইনসভার জন্য জাতীয় সংসদ ভবনের নির্মাণ  এর জন্য ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে এই ভবন তৈরির উদ্দেশ্যে ঢাকার শেরে-বাংলা নগরে ২০৮ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়।। এই সংসদ ভবনটি তৈরির প্রথম উদ্যোগ গ্রহণ রেছিল তদানীন্তন পাকিস্তানী সরকার পাকিস্তানের তৎকালীন সামরিক সরকার ঢাকা-কে পাকিস্তানের দ্বিতীয় রাজধানী হিসাবে ঘোষণা দেয় এই সূত্রে ঢাকার শেরে-বাংলা নগরে একটি সংসদ ভবন তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে

 
জাতীয় সংসদ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন সভা এটির মোট নির্বাচিত সদস্য সংখ্যা ৩০০ জন  সংসদ সদস্যগন জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়ে থাকেন এছাড়াও ৫০ জন মহিলা সংসদ সদস্য সংরক্ষিত আসনের মাধ্যমে সংসদ সদস্যরূপে মনোনীত হন  

জাতীয় সংসদ ভবন  বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের প্রধান ভবন এটি ঢাকার  শেরে-বাংলা নগর এলাকায় অবস্থিত প্রখ্যাত মার্কিন স্থপতি লুইস কান (Louis Kahn, প্রকৃত নাম  Itze-Leib (Leiser-Itze) Schmuilowsky (Schmalowski) এটির মূল স্থপতি ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে কান ভবনটির নকশা সরকারের কাছে জমা দেন ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে এই নকশা অনুসারে ভবনটিত তৈরির জন্য কোটি ৫০ লক্ষ মার্কিন ডলার অনুমোদন করা হয় ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলা দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এর নির্মাণ কাজ বন্ধ ছিল। ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে মূল পরিকল্পনা অনুসারে কাজটি পুনরায় শুরু হয় এই বৎসরে কান মৃত্যু বরণ করেন
মূল ভবনটি (সংসদ ভবন) মূলতঃ তিন ভাগে বিভক্ত:
  • মেইন প্লাজা : ৮২৩,০০০ বর্গফুট (৭৬,০০০ বর্গমিটার)
  • সাউথ প্লাজা : ২২৩,০০০ বর্গফুট (২১,০০০ বর্গমিটার)
  • প্রেসিডেন্সিয়াল প্লাজা : ৬৫,০০০ বর্গফুট (,০০০ বর্গমিটার)
এই ভাগগুলোতে রয়েছে নয়টি স্বতন্ত্র বিভাগ এর ভিতরে ৮টির উচ্চতা ৩৩.৫৩ মিটার মূল ভবনটির উচ্চতা ৪৭.২৪ মিটার এর ভিত্তিকক্ষে রয়েছে গাড়ির রাখার সুবিধাদি এবং ভবনের কার্যক্রমের উপযোগী বিভিন্ন ব্যবস্থাদি এর কেন্দ্রে রয়েছে সংসদ অধিবেশন চলার বিশাল কক্ষ সাততলা উঁচু গোলাকার মূল কক্ষটিতে প্রাকৃতিক আলো প্রবেশের সুযোগ রাখা হয়েছে ভবনের চার কোণায় রয়েছে চারটি কার্যালয় অংশ ভবনের সর্বোচ্চ তলাটিকে বলা হয় লেভেল ১০ এখানে ভবন পরিচালনার জন্য বিভিন্ন যন্ত্রপাতি রয়েছে

মূল ভবনের নয়টি পৃথক ব্লক এর  মাঝের অষ্টভূজ ব্লকটির উচ্চতা ১৫৫ ফুট এবং বাকি আটটি ব্লকের উচ্চতা ১১০ ফুট প্রতিটি ব্লকের জায়গাকে বিভিন্ন কাজের ভিত্তিতে ভাগ করা হয়েছে, করিডোর, লিফট, সিড়ি বৃত্তাকার পথ দিয়ে আনুভূমিক উলম্বিকভাবে ব্লকগুলোর মাঝে আন্তঃসংযোগ স্থাপন করা হয়েছে পুরো ভবনটির নকশা এমনভাবে প্রনয়ন করা হয়েছে যাতে সব ব্লকগুলোর সমন্বয়ে একটি ব্লকের অভিন্ন স্থান হিসাবে ব্যবহার করা যায়

দ্বিতীয় তলার একটি লাগোয়া ব্লকে প্রধান কমিটির রুমগুলো রয়েছে। সকল ধরনের সংসদীয় কার্যক্রম, মন্ত্রী, চেয়ারপারসন এবং স্ট্যান্ডিং কমিটির অফিস রয়েছে এই ভবনে। একই ভবনে সংসদীয় সচিবের জন্যও কিছু অফিস বরাদ্দ রয়েছে
মেইন প্লাজার মূল অংশটি হচ্ছে সংসদ অধিবেশন কক্ষ এখানে একই সময়ে ৩৫৪ জন সদস্যের সংস্থান রাখা হয়েছে ভিআইপিদের জন্য দুইটি পোডিয়াম এবং দুইটি গ্যালারী রয়েছে পরাবৃত্তাকার ছাদসম্পন্ন অধিবেশন কক্ষটির উচ্চতা ১১৭ ফুট ছাদটি স্বচ্ছভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে দিনের আলো এতে প্রবেশ করতে পারে সূর্যের আলো চারদিকের ঘেরা দেয়াল অষ্টভূজকৃতির ড্রামে প্রতিফলিত হয়ে অধিবেশন কক্ষ প্রবেশ করে (আলোর নান্দনিকতা সর্বোচ্চ ব্যবহার লুইস কান স্থাপত্য ক্ষমতার নিদর্শনস্বরূপ) উপরের অংশের অভ্যাগত এবং গণমাধ্যমের জন্য গ্যালারীর ব্যবস্থা রয়েছে এছাড়াও এর বিভিন্ন অংশে রয়েছে:
  • প্রথম তলায়, একটি গ্রন্থাগার
  • তৃতীয় তলায়, সংসদ সদস্যদের জন্য লাউঞ্জ এবং
  • উপর তলায়, মিলনায়তন
 সংসদ ভবনের সাউথ প্লাজা এর ক্রমোচ্চ (Gradually rises) ২০' উচ্চতার ভবন কাঠামো সৌনর্য বর্ধনের পাশপাশি সংসদ ভবনের মূল প্রবেশ পথ (অধিবেশন চলাকালে) হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে এখানে আরো রয়েছে:
  • নিয়ন্ত্রিত প্রবেশপথ;
  • ড্রাইভওয়ে;
  • প্রধান যন্ত্রপ্রকৌশল কক্ষ;
  • গাড়ি পার্কিং-এর জন্য বিস্তৃত পরিসর;
  • টেলিফোন এক্সচেঞ্জ;
  • রক্ষনাবেক্ষণ কাজে নিয়োজিত প্রকৌশলীদের অফিসকক্ষ;
  • উপকরণ সরঞ্জাম রাখার স্থান; এবং
  • মূল ভবনে যাওয়ার জন্য উম্মুক্ত চত্বর;
 উত্তর দিকে অবস্থিত প্রেসিডেন্সিয়াল প্লাজা সম্মুখে লেক রোড অবস্থিত এই প্লাজা সংসদ সদস্য এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে মার্বেলের তৈরি মেঝে, গ্যালারী এবং খোলা পথ এই প্লাজার নির্মাণশৈলীর বৈশিষ্ট্য
কৃত্রিম আলোকে এমনভাবে বিভক্ত করা হয়েছে যে সূর্যের আলোর প্রবেশের ক্ষেত্রে তা কোনো বাধার সৃষ্টি করতে পারে না। শ্যান্ডেলির বা ঝাড়বাতিগুলো পরাবৃত্তাকার ছাদ হতে নিচে নেমে এসেছে। এর গঠনশৈলীতে ধাতুর ব্যবহার প্রতিটি আলোক উৎসর ভিত্তি হিসাবে কাজ করে
 
এই ভবনের চারপাশে রয়েছে  বিশাল সবুজ ঘাসের অঙ্গন, হ্রদ সাংসদদের জন্য নির্মিত আবাসিক ভবন কমপ্লেক্সটির চারপাশ দিয়ে গেছে প্রধান চারটি সড়ক (উত্তর দিকে লেক রোড, পূর্ব দিকে রোকেয়া সরণি, দক্ষিণ দিকে মানিক মিয়া এভিনিউ; এবং পশ্চিম দিকে মিরপুর রোড) ভবনটি ঘিরে একটি কৃত্রিম হ্রদ রয়েছে, যে কারণে মনে হয়, পুরো ভবনটি পানির উপর ভেসে রয়েছে নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রতীক হিসাবে লুই কান এই হ্রদের সংযোজন করেছিলেন
 
মূল ভবনটি কমপ্লেক্সের কেন্দ্রে অবস্থিত। এমপি হোস্টেল এবং জরুরী কাজে ব্যবহৃত ভবনসমূহ কমপ্লেক্সের বহির্ভাগে অবস্থিত। ভবনটিতে রয়েছে ৩৪০টি শৌচাগার, ১৬৩৫টি দরজা, ৩৩৫টি জানালা, ৩০০টি বিভাজক দেওয়াল, ,৩৩৯,৫৭ বর্গমিটার কাঁচের শার্টার, ,৪৩৪,৮৩ বর্গমিটার কাঠের শার্টার, ,৭৩৮ ঘনমিটার কাঠের প্যানেল
ছাদ দেয়ালের স্ট্রাকচারাল নকশাবিদ : হ্যারি ব্লুম
দেয়ালের ব্যাস : ১২ ফুট- ফুট
সংসদ ভবনের উচ্চতা : ১৫৫ ফুট ইঞ্চি
কার্পেট এরিয়া : লাখ ৫০ হাজার ঘনফুট
প্যাসেজ করিডোর : লাখ ৮৭ হাজার ঘনফুট
টয়লেট ডাস্ট : ৯০ হাজার ঘনফুট
শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এলাকা : লাখ ৮৬ হাজার ঘনফুট
দরজা : হাজার ৬৩৫টি লিফট : ১৮টি  



লুইস কানের মৃত্যুর পর  প্রকৌশলী মাজহারুল ইসলাম (লুইস কান-এর শিষ্য) অবশিষ্ট কাজ সম্পন্ন করেন তবে এক্ষেত্রে মূল পরিকল্পনায় ব্যাপক পরিবর্তন করা হয়েছিল কমপ্লেক্সের ঠিক মাঝখানে রাখা হয় মূল ভবনটি আর এই ভবনটিকে কেন্দ্র করে রাখা হয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট, মসজিদ এবং রাষ্ট্রপতির বাসভবন এই পরিবর্তিত পরিকল্পনায় এই ভবনগুলোকে নির্মাণ-পরিকল্পনা থেকে বাদ দেওয়া হয় ফলে মূল কমপ্লেক্সটি সৌন্দর্যের বিচারে নিস্প্রভ হয়ে যায়

লুইস কান তাঁর নকশায় প্রাকৃতিক আলোর পাওয়ার জন্য ভবনে বিশেষ ব্যবস্থা রেখেছিলেন তিনি এই ভবনে বৃত্ত, অর্ধবৃত্ত, বর্গ, ত্রিভুজের কাঠামোগুলো দিয়ে একটি নতুন নতুন ধরনের সৌন্দর্যকে প্রকাশ করেছেন এই ভবনে কোনো সরল খুঁটি নেই মূলত ভবনের ভর সঞ্চলানের জন্য খুঁটিগুলিকে জ্যামিতিক নকশায় এমনভাবে স্থাপন করা হয়েছে যে, দেখে মনে হয় পুরু ভবনের কক্ষগুলো খুঁটি ছাড়াই দাঁড়িয়ে আছে
এর বিশাল পরিকাঠামোর ভিতরেই এর মূল সৌন্দর্য নিহিত রয়েছে। কংক্রিটের তৈরি বিশাল বহির্দেয়ালের মাঝে মাঝে ভবনের প্রবশ দ্বারগুলো স্থাপন করা হয়েছে জ্যামিতিক শৈলী অনুসরণে
 
১৯৮২  সালের ২৮শে জানুয়ারি নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর একই বছরের ১৫ই ফেব্রুয়ারি  বাংলাদেশের দ্বিতীয় সংসদের অষ্টম (এবং শেষ) অধিবেশনে প্রথম সংসদ ভবন ব্যবহৃত হয় তখন থেকেই আইন প্রণয়ন এবং সরকারি কর্মকাণ্ড পরিচালনার মূল কেন্দ্র হিসাবে এই ভবন ব্যবহার হয়ে আসছে উদ্বোধন করেন তত্কালীন প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আবদুস সাত্তার কোনো বিদেশি অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে সর্বপ্রথম ভাষণ দেন যুগোস্লাভিয়ার সে সময়ের প্রেসিডেন্ট মার্শাল টিটো, ১৯৭৪ সালের ৩১ জানুয়ারি
 
অতিথিদের জন্য আসন রয়েছে ৫৬টি সাংবাদিকদের জন্য সংরক্ষিত আসন ৪১টি এবং ৪৩০ আসন সংরক্ষিত দর্শকদের জন্য ৩টি পার্টি হাউসে আসন রয়েছে ১৫ হাজার ৪৪০টি নিয়ে আমাদের জাতীয় সংসদ ভবনের সর্বমোট আসনসংখ্যা ১৬ হাজার ৩৬১টি

বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জাতীয় সংসদের সদস্যতা লাভের জন্য বাংলাদেশের নাগরিক হওয়াসহ বয়সসীমা অবশ্যই ২৫ বছরের ঊর্ধ্বে হতে হবে তবে ব্যক্তি দ্বৈত নাগরিকত্ব লাভ করলেও তিনি 'এমপি' হবার যোগ্যতা অর্জন করবেন না  
  
নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল দলীয় প্রধান বিরোধী দল বিরোধী দলীয় প্রধানঃ
  ১ম জাতীয় সংসদ, ১৯৭৩ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ  শেখ মুজিবুর রহমান  অন্য কোন রাজনৈতিক দল ১টির বেশী আসন লাভ করেনি ২য় জাতীয় সংসদ, ১৯৭৯ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) জিয়াউর রহমান , বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ  বিরোধী দল  ভেঙ্গে যাওয়ায় নেতা নির্বাচন করতে পারেনি ৩য় জাতীয় সংসদ, ১৯৮৬ জাতীয় পার্টি এইচ এম এরশাদ, বিরোধী দল প্রধান  বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনা ৪র্থ জাতীয় সংসদ, ১৯৮৮ জাতীয় পার্টি এইচ এম এরশাদ বিরোধী দলীয় জোট . এস. এম. আব্দুর রব, রব এরশাদের নিযুক্ত বিবোধী দলীয় নেতা ছিলেন ৫ম জাতীয় সংসদ, ১৯৯১ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) খালেদা জিয়া , বিরোধী দল প্রধান  বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনা ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ, ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৬ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) খালেদা জিয়া, বিরোধী দল  বাংলাদেশ ফ্রিডম পার্টি  ৭ম জাতীয় সংসদ, জুন, ১৯৯৬ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনা, বিরোধী দল প্রধান  বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) খালেদা জিয়া ৮ম জাতীয় সংসদ, ২০০১ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) খালেদা জিয়া, বিরোধী দল প্রধান  বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনা ৯ম জাতীয় সংসদ, ২০০৮ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনা , বিরোধী দল প্রধান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) খালেদা জিয়া ১০ম জাতীয় সংসদ, ২০১ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনা, বিরোধী দল প্রধান  বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি রওশন এরশাদ।