বুধবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

জামাত- শিবির কি আস্তিক- নাস্তিক নির্ধারণের মাপকাঠি



আস্তিক বা নাস্তিক এই প্রশ্নটি এখন সকলের ।

আমি ও আপনি আস্তিক কি নাস্তিক তার সার্টিফিকেট নিতে হবে জামাত- শিবিরের কাছ থেকে ।  জামাত- শিবিরের এই দাবিকে দেশের জনগন ও সরকার কিভাবে নিচ্ছে তা আমি জানি না । তবে এটা বলতে পারি ইসলাম ধর্মে এ দায়িত্ব কাউকেই দেওয়া হয় নাই ।
একত্ববাদে বিশ্বাসী যে , সেই আস্তিক । আল্লাহ্‌ ও তার নবী রাসুলদের প্রতি যার বিশ্বাস সেই আস্তিক । ইসলামের ভাষায় আল্লাহ্‌ ও তার প্রেরিত শেষ নবী হযরত মোহাম্মাদ সঃ এর প্রতি যার বিশ্বাস , আহকাম-আরকান যে মেনে চলে সেই প্রকৃত মুসলমান । যাকে বলা যায় আস্তিক । 
কিন্তূ জামাত- শিবির যে আস্তিক- নাস্তিকের কথা বলছে তা আমি বুঝতে পারছি না । জামাত- শিবির কি আস্তিক- নাস্তিক নির্ধারণের কোন মাপকাঠি নিয়ে বসে আছে ।
আমার খুব জানতে ইচ্ছে করছে , জামাত- শিবির ৭১ এ যে কার্যকলাপ করেছে সেটা কোন আস্তিকের কাজ । যদি তারা আস্তিক হয় তাহলে এখন কেন তারা গাড়ি পুড়ছে, ভাংচুর করছে সব , আহত করছে পুলিস সহ সাধারন জনগণকে । জান- মালের ক্ষতি করছে এ রাষ্ট্রের ।
ইসলামে বলে , তুমি শ্রদ্ধা কর তোমার রাষ্ট্রের আইনকে , শ্রদ্ধা কর রাষ্ট্র ব্যাবস্থাকে, রক্ষা কর রাষ্ট্রের সকল স্থাপনাকে, শ্রদ্ধা কর তোমার ভাষাকে, শ্রদ্ধা কর তোমার প্রতিবেশী সহ সকল মানুষকে, শ্রদ্ধা কর অন্য ধর্মের অনুসারীদের ।
কিন্তূ জামাত- শিবির যা করছে তার সংগে ইসলাম ধর্মের কোন মিল খুজে পাচ্ছি না । জামাত- শিবির আস্তিক কি নাস্তিক সেই প্রশ্নে যাব না, তবে এটা বলতে পারি জামাত- শিবির ইসলাম মানে না । জামাত- শিবির যে ইসলামের কথা বলে, সে ইসলাম আমাদের নবী হযরত মোহাম্মদ সঃ না ।

মঙ্গলবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

যদি ইসলাম এর ক্ষতি না হয়



মসজিদে আগুন দিলে যদি ইসলাম এর ক্ষতি না হয় ।
মসজিদে ভাংচুর করলে যদি ইসলামের ক্ষতি না হয় ।
খুন, ধর্ষণ, লুট ও অগ্নিসংযোগ করলে যদি ইসলামের ক্ষতি না হয় । 

মসজিদে বসে একজন মুসলমানকে খুন করার পরিকল্পনায় যদি ইসলামের ক্ষতি না হয় । 
মসজিদে গ্রেনেড নিয়ে গেলে যদি ইসলামের ক্ষতি না হয় । 
মসজিদে বসে অন্য মুসলমানকে গালাগালি করলে যদি ইসলামের ক্ষতি না হয় । মসজিদের ভিতরে ইমাম ও মুসুল্লি পিটালে যদি ইসলামের ক্ষতি না হয় । 
মসজিদের ভিতরে জুতা নিয়ে প্রবেশ করলে যদি মসজিদের ও ইসলামের পবিত্রতা নষ্ট না হয় । 
মসজিদে বসে অন্য মুসলিমকে কাফের বা নাস্তিক বললে যদি ইসলামের ক্ষতি না হয় । 

তবে জামাত- শিবিরকে নিষিদ্ধ করে ও জামাত- শিবিরের সমর্থকদের নাগরিকত্ব বাতিল করলে ইসলামের কোন ক্ষতি হবে না ।

“যারা জামাত- শিবিরের বিপক্ষে তারা সবাই নাস্তিক”

এটা জামাত-শিবিরের ধর্ম যুদ্ধ না । এটা জামাত-শিবিরের স্বার্থের লড়াই ।

এটা আমাদের ৭১ এর যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে আন্দোলন । যারা ৭১ এ ধর্মের নামে খুন, ধর্ষণ, লুট, অগ্নিসংযোগ করেছিল তাদের বিরুদ্ধে । যদি এই ধর্মান্ধদের বিরুদ্ধে আন্দোলন ধর্ম যুদ্ধ হয় , তাহলে আমি সেই যুদ্ধের একজন সৈনিক।
এই জামাত-শিবির ৭১ এ ইসলামকে ব্যাবহার করে যেমন ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করেছিল , তেমনি এখনও ইসলামকে বিকৃত করে এই চক্রটি আবার ফায়দা লুটার চেষ্টা করছে ।

জামাত-শিবির বলে , “যারা জামাত- শিবিরের বিপক্ষে তারা সবাই নাস্তিক” ।


এই যদি হয় জামাত-শিবিরের ইসলাম , তবে আমি সে ইসলামের নই । জামাত- শিবির ইসলামকে বিকৃত করছে ।
সকল মুসলমান ভাই- বোনদের আহ্বান জানাচ্ছি , জামাত-শিবিরের অপপ্রচার থেকে নিজেকে ও ইসলামকে রক্ষা করতে । জামাত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করলেই একমাত্র মুক্তি ইসলামের এ বাংলায় । নইলে ইসলামের নামে অনেক রক্তপাত হবে এ বাংলায় ।

আমার ইসলাম শান্তির ধর্ম, মানবতার ধর্ম, সৌম্যার ধর্ম । আমার ইসলাম সকল মুসলমানদের জন্য সমান অধিকার রাখে । আমার ইসলাম অমুসলিমকে খুন, ধর্ষণ বা ঘৃণা করতে বলে না ।

গোলাম আযমের নাগরিকত্ব




  ১৯৭৬ সালের ১১ জুলাই বাংলাদেশে পা রেখেছিলেন গোলাম আযম। মায়ের অসুস্থতার কথা বলে তিন মাসের ভিসা এবং পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে এলেও আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে সেই তখন থেকেই থেকে গেছেন বাংলাদেশে। ১৯৭৯ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত অঘোষিতভাবে ছিলেন জামায়াতের আমির। কিন্তু '৯২ সালে জামায়াতের সম্মেলনে সরাসরি আমির হিসেবে নির্বাচিত হলে সর্বমহলে বিতর্কের ঝড় ওঠে।গোলাম আযম শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ফিরেও পান।


   ১৯৭৩ সালের ২১ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত গোলাম আযমসহ ৩৯ জনের নাগরিকত্ব বাতিল করে সরকার। '৭৬ সালের ১১ জুলাই গোলাম আযম পাকিস্তানি নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশে পা রাখেন ও নিজেকে বাংলাদেশের বৈধ নাগরিক হিসেবে দাবি করেন ।

তিন মাসের ভিসা নিয়ে আসা গোলাম আযম '৭৯ সালের মে মাসে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন আইডিএলের ব্যানারে। '৭৬ সালে সরকার ঘোষণা করেন যে, পূর্ববর্তী সরকার যাদের বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে অযোগ্য ঘোষণা করেছে তারা এখন সরাসরি স্বরাষ্ট্র সচিবের বরাবরে নাগরিকত্ব ফিরে পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন। তখন গোলাম আযম পাকিস্তানি পাসপোর্ট জমা দিয়ে বাংলাদেশের নাগরিকত্বের আবেদনও করেন।  
  ৮৬ সালের মে মাসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নাগরিকত্ব বহাল করার জন্য সুপারিশ করে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠান। গোলাম আযমের নিজের ভাষ্য অনুযায়ী তিনি '৭৭ সালের জানুয়ারিতে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন। '৭৮ সালেও রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কাছে আবারও দরখাস্ত করেন। গোলাম আযম তখন বলেন, আমার বৃদ্ধা অসুস্থ মায়ের আবেদনে সাড়া দিয়ে রাষ্ট্রপতি আমাকে বাংলাদেশে আসার সুযোগ দেন। জামায়াতকে ব্ল্যাকমেইল করার জন্যই আমার নাগরিকত্ব ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।

'
৭৬ সালের ২৩ জুলাই রাজনৈতিক দলবিধি নিয়ন্ত্রণ আইন এবং '৭৭ সালের ১৬ মে সংবিধানে ইসলামী নীতিমালা সংযোজনকেও তিনি স্বাগত জানান। সংবিধানে রাষ্ট্রপতির '৭২ সালের ৮ নম্বর আদেশ বাতিল সাম্প্রদায়িক রাজনীতি পুনর্বাসিত হলে তিনি আবারও সক্রিয় হয়ে ওঠেন। এদিকে '৯৩ সালের ২২ এপ্রিল সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিশেষ বেঞ্চে বিচারপতি আনোয়ারুল হক চৌধুরী গোলাম আযমের নাগরিকত্ব বাতিলের আদেশ অবৈধ ঘোষণা করেন। ২৫ এপ্রিল গোলাম আযমের নাগরিকত্ব মামলায় হাইকোর্টের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত রাখার জন্য আপিল বিভাগে ১টি আবেদনপত্র পেশ করা হয়। ১৯৯৩ সালের ২৪ জুলাই গোলাম আযমের আটকাদেশ সুপ্রিমকোর্ট অবৈধ ঘোষণা করেন।

ইসলামের ঠিকাদারি নিয়েছে জামায়াত ইসলাম



১৯৪১ সালে পাঠানকোটে আবুল আলা মওদুদী জামায়াতে ইসলামী নামে অরাজনৈতিকপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। কিছুদিন পর দেখা গেল তিনি রাজনীতিতে নাক গলাচ্ছেন। পাকিস্তান নিয়ে তখন যে আন্দোলন চলছিল তাকে তিনি উল্লেখ করেনআহাম্মকের বেহেশ্তএবং মুসলমানদের কাফেরানা রাষ্ট্রহিসেবে।

হিন্দু জাতীয়তাবাদ তার ভাষায় যেমন লানত’, মুসলিম জাতীয়তাবাদও তাই। মুসলিম লীগ সম্পর্কে জামায়াতে ইসলামী কি ইন্তেখাবীগ্রন্থে মওদুদী বলেছিলেন, ওরা পরিবেশকে পায়খানার চেয়েও খারাপ করে ফেলেছে। জিন্নাহর সবচেয়ে বড় সমালোচক ছিলেন মওদুদী।

১৯৪৭ সালে ভারত ভাগ হলে তল্পিতল্পা গুটিয়ে মওদুদী কাফেরদের রাষ্ট্রপাকিস্তানের লাহোরে এসে ডেরা বাঁধেন এবং ঘোষণা করেন, পাকিস্তান হলোখোদাদাদবা আল্লাহর দান। ভারতে প্রকাশিত তার আগের বইগুলো যখন পাকিস্তানে ছাপা হয় তখন জিন্নাহ, পাকিস্তান, মুসলিম লীগ সম্পর্কে যেসব সমালোচনা ছিল সেগুলো ছেঁটে ফেলেন। তারপর তিনি স্বভাব অনুযায়ী রাজনীতিতে নাক গলাতে লাগলেন। ১৯৫৩ সালে পাঞ্জাবে তিনি কাদিয়ানীদের বিরুদ্ধে দাঙ্গা শুরু করলেন। মওদুদীকে গ্রেফতার করে বিচার হলো এবং ফাঁসির আদেশ দেয়া হলো। পরে সৌদি আরবের হস্তক্ষেপে তার ফাঁসির দ- রদ করা হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে সৌদি-জামায়াত সম্পর্কের উন্নতি হতে থাকে ।

সৌদি বাদশাহ  ফয়সাল মওদুদীকে টাকা দিতে লাগলেন, মওদুদী প্রায় প্রতিদিন ফয়সালের প্রশংসা করতে লাগলেন। এভাবে জামায়াতের সঙ্গে ওহাবী ইসলামের যোগাযোগ হলো। সৌদি প্রতিষ্ঠান রাবেতার মাধ্যমে জামায়াত টাকা পায় বলে অনুমিত। এ টাকায়ই বাদশাহ ফাহাদ, ফয়সাল ইত্যাদি নামে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করা হয়। আর এসব থেকে মুনাফা সাদা টাকায় পরিণত হয়। সেই কারণে জামায়াতের টাকার কোন অভাব নেই। কল্পনা করা যায়, মীর কাশেম আলী ২৫ মিলিয়ন ডলার খরচ করছেন শুধু লবিস্ট নিয়োগে!

১৯৭১-এর পর পাকিস্তানী জামায়াতের সঙ্গে যোগাযোগ আছে এখানকার জামায়াতের, তবে তারা মওদুদী দর্শনের পুরোটা মানে না। এখানে মওদুদীবাদ সংশোধন করেছেন গোলাম আযম ও জামায়াত নেতৃত্ব। এর কারণ নিছক সুবিধাবাদ, অন্যকিছু নয়।

জামায়াত ইসলামের নামেই রাজনীতি করে। তারা নিয়ত বলে, ইসলামের ঠিকাদারি তারাই নিয়েছে এবং মানুষকে মুসলমান বানাবার ঠিকাদারিও তাদের। আর এ কাজটি সহজ করার জন্য ক্ষমতায় যাওয়া দরকার।