শনিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৬

“এপ্রিল ফুল” ও স্পেনে ৮০০ বৎসরের মুসলিম শাসনের পতন



  

তৎকালীন ইউরোপীয় দেশ স্পেনে মুসলিম সেনাপতি তারিক বিন যিয়াদ এর নেতৃত্বে ৭১১ খ্রীস্টাব্দে ইসলামি পতাকা উড্ডীন হয় এবং মুসলিম সভ্যতার গোড়াপত্তন হয়। সুদীর্ঘ প্রায় আটশ বছর পর্যন্ত সেখানে মুসলমানদের গৌরবময় শাসন বহাল থাকে।



হিজরী প্রথম শতাব্দীর শেষের দিক । যখন সারাবিশ্ব মুসলমানদের বিজয়ের বাতাস বয়ে চলছে । সে বাতাস ইউরোপের মাটিতে দোলা দেয় । ইউরোপের একটি দেশের নাম আন্দুলুস বা স্পেন । ইউরোপের দক্ষিন পশ্চিমে অবস্থিত রুপসি স্পেন । উত্তরে ফ্রান্স, পশ্চিমে র্পতুগাল , র্পূবে ও দক্ষিনে ভূমধ্যেসাগর । স্পেনের রাজা লডারিক ছিলেন একজন কট্ররপন্থী জালিম খৃস্টান । তার জুলুমে জনগন ছিল অতিস্ঠ । তার জুলুম নির্যাতনে হাপিয়ে উঠেছিল মাজলুম মানবতা। কিন্তু তার বিরুধ্যে টু শব্দ করার সাহস ছিল না কারো। যখন গোটা ইউরোপের ক্রান্তিকাল চলছিল, মুসলিম রণক্ষেত্রে কমান্ডার প্রধান ছিলেন মূসা বিন নুসায়ের।

তিনি তখন দক্ষিন মরেক্কো জয় করে কায়রোয়ানে অবস্থান করছিল । তখন তার সাথে কাউন্টার রাজা জুলিয়ান সাক্ষাত করে মাজলুম মানবতাকে রক্ষা করার জন্য মূসা বিন নুসায়েরকে আহবান করেন । মূসা বিন নুসায়ের তার অধিনের সেনাপতি তারেক বিন যিয়াদের নেতৃত্বে ৭,০০০ (সাত হাজার) সৈন্যর একটি মুজাহিদ বাহিনি প্রেরন করেন । ৯২ হিজরী ২৮ রমযান মোতাবেক ৭১১ খ্রিঃ জুলাই মাসে স্পেনে অবতরন করেন মুজাহিদ বাহিনি । শুরু হয় খ্রিস্টানদের সাথে প্রচন্ড লড়াই ।মর্মস্পর্শী তাকবীর ধব্বনিতে মূখরিত হয় আকাশ বাতাস । দীর্ঘ জিহাদের পর খৃস্টান বাহিনি পর্যদস্ত হয় । একের পর এক স্পেনের সকল শহর করায়ত্ব হয় মুসলমানদের ।সলিল সমাধি হয় জালিম শাসকের । তারপর থেকে ১৪৯২ সাল পযর্ন্ত প্রায় ৮০০ বছর মুসলমানেরা শান্তি আর সাম্য বজায় রেখে স্পেন শাসন করে।

তাদের ন্যায়-ইনসাফ আর ভালবাসায় মুগ্ধ হয়ে মানুষ দলে দলে আশ্রয় নেয় ইসলামের ছায়া তলে । শিক্ষা-সাংস্কৃতি ,জ্ঞান-বিজ্ঞান ,শিল্প-বাণিজ্যে ইত্যাদির কেন্দ্র-বিন্দুতে পরিণিত হয় স্পেন । কালের প্রবাহে এক সময় মূসলমানেরা শিক্ষা-সাংস্কৃতি , জ্ঞান-বিজ্ঞান ছেড়ো আরাম- আয়েশে মত্ত হতে শুরু করল। শাসকদের মাঝে অর্থের লোভ, ভোগ- বিলাসিতা ও বিজাতিয় আচার-আচরনসহ সব ধরনের নৈতিক অধঃপতন দেখা দেয়। এমন কি নৈতিক অধঃপতনের নিম্নপর্যায়ে উপণীত হল। মুসলিম শাসকদের মধ্যে অনৈক্য ও বিবাদ শুরু হয় ।


স্পেনের মাটি থেকে মুসলমানদের উচ্ছেদ করার ঘোষণা দিয়ে পর্তুগীজ রাণী ইসাবেলা চরম মুসলিম বিদ্বেষী পার্শ্ববর্তী খ্রিষ্টান সম্রাট ফার্ডিনান্ডকে বিয়ে করে ৷ বিয়ের পর দু'জন মিলে সম্মিলিত বাহিনী গড়ে তোলে স্পেন আক্রমণের। ১৪৯২ সালে স্পেনে মুসলমানদের চূড়ান্ত পরাজয় ঘটে। এর আগেই রাজা ফার্ডিনান্ড মুসলমানদের হাত থেকে কর্ডোভাসহ অন্যান্য অঞ্চল দখল করে নেয়। বাকি ছিল শুধু গ্রানাডা। গ্রানাডার শাসনকর্তা ছিলেন হাসান। খ্রিস্টানরা তার উপর চাপ সৃষ্টি করছিল, আত্মসমর্পনের জন্য। কিন্তু তিনি কিছুতেই রাজি হচ্ছিলেন না। তাকে আত্মসমর্পনে রাজি করাতে না পেরে খ্রিস্টানরা তার পুত্র আবু আবদুল্লাহকে সিংহাসনে বসানোর লোভ দেখিয়ে হাত করে ফেলে। আবদুল্লাহ তাদের কথায় রাজি হয়ে পিতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে এবং এক সময় বাদশাহ হাসান পুত্রের সাথে যুদ্ধ করার গ্লানি এড়ানোর জন্য দেশান্তরী হন।

গ্রানাডার সর্বশেষ মূরিশ কিং (Moorsih king) হলেন নাসরিদ বংশীয় আবু আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ (Abu Abdullah Muhammad XII), যাকে স্প্যানিশরা বোয়াবদিল নাম দিয়েছে। বিলাস-ব্যসনে মত্ত ও উচ্ছন্নে যাওয়া আবু আব্দুল্লাহ হলেন গ্রানাডার তাইফার সুলতান আবুল হাসানের ছেলে। ছেলের ষড়যন্ত্র ও কুচক্রের কারনেই অনেকটা সিরাজুদ্দৌলার মতই বাবা আবুল হাসান পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। মীরজাফরের মত আবু আব্দুল্লাহকে বানানো হয় নামকাওয়াস্তে সুলতান। এই পুতুল সুলতানের কাছেও ১৪৮৯ সালে ফার্দিনান্দ ও ইসাবেলার নিকট থেকে চুড়ান্তরুপে নিঃশর্ত ভাবে আত্মসমর্পনের নির্দেশনা আসে এবং স্মরন করিয়ে দেয়া হয় অস্বীকারের ভয়াবহ পরিনতির কথাও।

আবু আব্দুল্লাহ বিশ্বাসঘাতকতা করলেও তার সেনাপতি মহাবীর মুসাসহ অনেক মুসলমান ফার্ডিনান্ড বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকে। এর আগে কখনো সম্মুখ যুদ্ধে মুসলমানদের পরাজিত করতে পারেনি বলে চতুর ফার্ডিনান্ড এবার পা বাড়ায় ভিন্ন পথে ৷ তার নির্দেশে আশপাশের সব শস্যখামার জ্বালিয়ে দেয়া হয় ৷ অচিরেই দুর্ভিক্ষ নেমে আসে গ্রানাডা শহরে ৷ দুর্ভিক্ষ খন প্রকট আকার ধারণ করে  বিভিন্ন এনসাইক্লোপেডিয়া অনুযায়ী আবু আব্দুল্লাহ উপায়ান্তর না দেখে গ্রানাডা সম্পূর্নভানে হস্তান্তর করতে বাধ্য হন ১৪৯২ সালের ২ জানুয়ারীতে, ১লা এপ্রিলে নয়।



একটি উদাহরন পাওয়া যেতে পারে এম বি সিঞ্জ (M B Synge) তার দ্যা বাল্ডউইন্স প্রজেক্ট (The Baldwins Project) প্রকাশিত সাহসী মানুষদের সাহসী কান্ড (Brave Men and Brave Deeds)নামক আর্টিকেলে। তিনি লিখেছেন, "December had nearly passed away. The famine became extreme, and Boabdil determined to surrender the city on the second of January (ডিসেম্বর শেষ হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। দূর্ভিক্ষ চরম আকার ধারন করেছে। আর বোয়াব্দিল গ্রানাডা আত্মসমর্পনের সিদ্ধান্ত নিলেন ২ জানুয়ারী)"।

যখন খ্রিষ্টানরা তাদের প্রথম আক্রমণ করেছিল তারা মরক্কের সুলতানের কাছে সাহায্যের আবেদন করলে তিনি তাদেরকে পরস্পরে যুদ্ধ থেকে বিরত হয়ে এক শাসকের অধিনে ইসলামি হুকুমাতের দিকে ফিরে যাবার আহ্বান জানান। কিন্তু তারা তাতে কর্ণপাত না করে নিজেদের স্বার্থ বজায় রেখে পরস্পরে যুদ্ধে লিপ্ত থাকে । এই সুযোগে রোমান খ্রিষ্টানরা নিজেদের শক্তিশালী করে আক্রমণ করা শুরু করলে মরক্কের সুলতান তাদের সাহায্য প্রত্যাখ্যান করলেন। এতে একের পর এক মুসলিম রাজ্য খ্রিষ্টানদের হাতে চলে যেতে থাকে। সবশেষে ১৪৯২ খ্রিস্টাব্দের ২ রা জানুয়ারি ইসলামের দুর্গ খ্যাত গ্রানাডার তৎকালীন মুসলিম শাসক আবু আব্দুল্লাহ (পাশ্চাত্যে তাকে ববডিল নামে ডাকা হয়) রাজা ফার্ডিন্যান্ড এবং রানি ইসাবেলার সঙ্গে এক চুক্তির মাধ্যমে পরাজয় স্বীকার করে মুসলিমদের ভাগ্যে দুর্দিন বয়ে নিয়ে আসে ।

এখানে ১৪৯২ সালের ২ রা জানুয়ারি তারিখটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এটা সত্য যে, এই চুক্তির পর মুসলিমরা সেখানে বসবাস করার অধিকার পেলেও তাদের উপর নির্যাতন এর পাহাড় নেমে আসে। এই সময়ের কয়েক দশক পরে আলজেরিয়ায় জন্ম নেয়া বিখ্যাত ইতিহাসবিদ আবুল আব্বাস আহমাদ ইবনে মোহাম্মদ আল মাকারি (১৫৭৮-১৬৩২) স্পেনে মুসলমানদের আগমন, শাসন এবং পতন নিয়ে রচনা করেন The history of the Mohammedan Dynasties in Spain (extracted from the Nafhu-t-Tib Min Ghosni-l-Andalusi-r-Rattib. Volume 2) (মূল আরবি বইয়ের ইংরেজি অনুবাদ) দ্য হিস্ট্রি অব দ্য মোহাম্মাদান ডাইনেস্টি ইন স্পেনএ গ্রন্থে তিনি অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী ভাষায় ধারাবাহিক বর্ণনায় স্পেনে মুসলমানদের পরাজয়ের বিষয়গুলো লিপিবদ্ধ করেছেন। কিন্তু কোথাও তিনি এপ্রিল ফুল জাতীয় কোনো ঘটনার কথা উল্লেখ করেননি। এছাড়াও বিশিষ্ট মুসলিম ইতিহাসবিদ এস. এম. ইমামুদ্দিন রচিত A political history of Muslim Spain গ্রন্থেও আলোচিত এপ্রিল ফুল জাতীয় কোনো ঘটনার উল্লেখ নেই। 

স্পেন থেকে মুসলমানদেরকে ১৪৯২ সালেই বের করে দেয়া হয়নি। আমীর আবূ-আব্দুল্লাহ্র সাথে ইসাবেলা আর ফার্দিনান্দের যে চুক্তি হয়েছিল তাতে গ্রানাডার মুসলমানদের পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী কালে (১৫০৮ সালে) ইনকুইজিশন চালু করা হলে মুসলমানদের হয় ক্যাথলিক নয়তো স্পেন ছাড়ার পছন্দ দেয়া হয়েছিল। যারা স্পেন ছাড়েনি তারা ক্যাথলিক ছদ্মবেশে মুসলিমই থেকে যান। খৃষ্টানরাও জানত তারা মুসলমান। আর এদেরকেই তারা মরিস্কো উপাধি দেয়। মরিস্কোদের পুরোপুরি স্পেন থেকে বহিষ্কার করা হয় ১৬০৯ থকে ১৬১৪ সালের মধ্যে। এটাও করা হয়েছিল রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা হারানো মরিস্কোদের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য বিদ্রোহ করার পর। সে সময়ে এপ্রিল ফুলের ঘটানার মত কোন ঘটনা ঘটেছে কিনা ইঊরোপীয় ঐতিহাসিকরা তা উল্লেখ করেননি।

এপ্রিল ফুলস ডে নিয়ে জার্মানদের ধারণা আবার ভিন্ন। তাদের মতে, ১৫৩০ সালের পয়লা এপ্রিল জার্মানির অগসবার্গে তৎকালীন আইনসভা সদস্যদের মধ্যে অর্থনৈতিক বিষয়ে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছিল। তবে সময় সংকুলানের অভাবে ওই সভাটি অনুষ্ঠিত হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ দেখা যায়। সভা দেখতে আসা অসংখ্য দর্শক সভা অনুষ্ঠানের ব্যাপারে পারস্পরিক বা​জিতে জড়িয়ে পড়েন। সভাটি হয়নি। ফলে যাঁরা সভা অনুষ্ঠানের পক্ষে বাজি ধরেছিলেন তাঁরা হেরে গিয়ে অন্য সবার ঠাট্টা-তামাশার পাত্র হয়ে পড়েন।

তবে পয়লা এপ্রিলে মানুষকে বোকা বানানোর প্রথাটি আসে ১৫৩৯ সালে ফ্লেমিশ (জার্মানদের একটি উপজাতি, যারা বেলজিয়ামের নাগরিক এবং ডাচ ভাষায় কথা বলে; এরা মূলত বেলজিয়ান ডাচ) কবি এডুয়ার্ড ডে ডেনে একটি হাস্য রসাত্মক কবিতা থেকে। কবিতাটির ইংরেজি নাম ছিল রিফ্রেইন অন এরান্ড-ডে, হুইচ হু দ্য ফারস্ট অভ এপ্রিল অর্থাৎ এপ্রিলের প্রথম দিনে অপ্রাপ্তি। কবিতাটির কাহিনিতে একজন ভদ্রলোক পয়লা এপ্রিলে তাঁর চাকরকে বোকা বানিয়েছিলেন। এভাবেই নাকি জার্মানিতে এপ্রিল ফুলস ডের প্রথা প্রচলিত হয়।

অন্যদিকে জামার্নির সীমান্তবর্তী দেশ নেদারল্যান্ডসের অধিবাসী ডাচদের কাছে পয়লা এপ্রিলের গুরুত্ব ভিন্ন। ১৫৭২ সালের এই দিনে তারা লর্ড আলভা নামক সেনার নেতৃত্বে স্প্যানিশ সৈন্যদের কাছ থেকে ডান ব্রিয়েল নামে একটি শহর দখল করে নেয়। শহরটি দখলের ঘটনা পরম্পরায় নেদারল্যান্ডস স্প্যানিশদের থেকে স্বাধীনতা লাভ করে বলে ডাচরা মনে করে। তাই এই দিনটি তাদের কাছে সৌভাগ্যের দিন বলে গণ্য।

এপ্রিল ফুলের আরেকটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের প্রফেসর জোসেফ বসকিন। তিনি বলেছেন, এই প্রথাটির শুরু হয় রোমান সম্রাট কনস্ট্যান্টাইনের শাসনামলে। হাসিঠাট্টা নিয়ে মেতে থাকে এমন একদল গোপাল ভাঁড় জাতীয় লোক একবার সম্রাটকে কৌতুক করে বলল,জাহাপনা, আমরা আপনার চেয়ে ভালোভাবে দেশ চালাতে পারবে। এ কথা রাজা মহোদয় বেশ পুলকিত হলেন। রাজা গোপাল ভাঁড়দের সরদার কুগেলকে এক দিনের জন্য বাদশাহ বানিয়ে ক্ষমতা ছেড়ে দিলেন। আর কুগেল সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে রাজ্যময় আইন জারি করে দিলো যে, প্রতি বছরের এই দিন অর্থাৎ ১লা এপ্রিল সবাই মিলে হাসি-তামাশা করবে। ব্যাস, তখন থেকেই চালু হয়ে যায় এপ্রিল ফুল ডে।

১৫৮২ সালে ১৩তম পোপ গ্রেগরি তাঁর এক আদেশে ইতালিতে জুলিয়ান পঞ্জিকার পরিবর্তে গ্রেগরিয়ান পঞ্জিকা চালু করেন। ১৫৮৩ সালে ফ্রান্সের রাজা নবম চার্লস গ্রেগরিয়ান পঞ্জিকা অনুসারে পয়লা জানুয়ারিকে নববর্ষ বলে ঘোষণা করেন। ২২ ডিসেম্বর, ১৫৬৪ সালে এটি ফ্রান্সের পার্লামেন্টে আইন হিসেবে পাস হয়। তবে ফ্রান্সের অনেকেই এ আইনটিকে মেনে নিতে পারেননি। তাঁরা আগের মতই পয়লা এপ্রিলকেই নববর্ষ হিসেবে পালন করতেন। ফলে নববর্ষ পালন নিয়ে জনগণ দু ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। যাঁরা পয়লা জানুয়ারিকে নববর্ষ বলে পালন করতেন তাঁরা পয়লা এপ্রিলকে নববর্ষ হিসেবে পালনকারীদের নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা আরম্ভ করে দিলেন। পয়লা এপ্রিলে তাঁরা প্রতিপক্ষের পিঠে গোপনে মাছের ছবি আঁকা স্টিকার লাগিয়ে দিতেন। যাঁর পিঠে স্টিকার লাগানো হতো তাঁকে বলা হতো পওয়াহসোঁ ডাভরিলপওয়াহসোঁ ডাভরিল শব্দগুচ্ছটি এসেছে এলয় দ্য আমেরভাল নামক একজন ফরাসি কবির কাছ থেকে। তিনি ১৫০৮ তার লে লিভরে ডে লা ডিয়াবলেরিয়ে কবিতায় বোকা লোক বোঝাতে প্রথম এ শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করেন। এর আক্ষরিক অর্থ এপ্রিলের মাছ; তত্রাপি ফরাসি পওয়াহসোঁ ডাভরিল বলতে এপ্রিল ফুলস ডেকে বোঝায়।



কথিত আছে, ১৪৯২ সালের ১ এপ্রিল অ্যারাগোন রাজ্যের রাজা ফার্ডিন্যান্ড এবং ক্যাস্টিলের রানী ইসাবেলা স্পেন দখল করার পর ৭ লক্ষেরও বেশী মুসলিমদের কেউ বলে মসজিদে কেউ বলে জাহাজে আশ্রয় নিলে নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়ে আগুনে পুড়িয়ে মেরেছিল এবং এই প্রতারণা ও বিজয় কে উদযাপন করার জন্য এপ্রিল ফুল দিবস পালন করা হয় । কারো কারো মতে ত্রিশ লক্ষ মুসলমানদের কে পুরিয়ে মারলো এক সাথে । পরর্বর্তিতে মুসলমানদের মসজিদ-মাদ্রাসা এবং স্মৃতিগুলোকে বানিয়ে ছিল তাদের ঘোড়ার আস্তাবল  সেদিন খ্রিস্টানগুরুর আদেশে জ্ঞান-বিজ্ঞানের মূল সূত্র লক্ষ লক্ষ আরবি পুস্তক পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়। শুধু মুসলিমগণ নয়, ইয়াহুদীদের উপরও খ্রিস্টানগণ একই রূপ অত্যাচার করে।

কারো কারো মতে ফার্দিনান্ড ঘোষণা করেছিল, যারা মসজিদে গিয়ে আশ্রয় নেবে তাদের নিরাপদে আশ্রয় দেওয়া হবে। তার ঘোষণায় চল্লিশ হাজার মুসলমান আত্মবিশ্বাসী হয়ে গ্রানাডার বিভিন্ন মসজিদে আশ্রয় নিলেও তাদের শেষ রক্ষা হয়নি। মসজিদের দরজাগুলো বাহির থেকে বন্ধ করে দিয়ে মসজিদের মেঝেতে পেট্রল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে মুসলিমদের হত্যা করেছিল রাজা ফার্দিনান্ড। ঐতিহাসিক এক বর্ণনা মতে তিন দিন পর্যন্ত হত্যার উৎসব চলেছিল। মসজিদের বাহিরেও অসংখ্য মুসলিমকে আগুনে পুড়িয়ে, পাহাড় থেকে ফেলে, সমুদ্রের মধ্যে জাহাজ ডুবিয়ে ও গণজবাই করে হত্যা করা হয়।


উপরের আলোচনা থেকে এপ্রিল ফুল কেন কি তা বুঝে নেওয়ার দায়িত্ব পাঠক আপনার উপরেই রইল । 








শুক্রবার, ১৫ এপ্রিল, ২০১৬

‘বাংলা সন’ হিজরী সন ভিত্তিক মুসলমান কর্তৃক প্রবর্তিত এবং বিজ্ঞানসম্মত



সন তারিখ দুটিই আরবী শব্দ। প্রথমটির অর্থ হল বর্ষ বা বর্ষপঞ্জী এবং অন্যটির অর্থ দিনতারিখ বলতে আবার ইতিহাসও বোঝায়। সাল হচ্ছে একটি ফারসী শব্দ, যার অর্থ হল বৎসর। বাংলা সনের সূত্রপাত হয় আরবী হিজরী সনের ওপর ভিত্তি করে। অর্থাৎ ইসলামী সনের ওপর ভিত্তি করেই একজন মুসলমান বাদশাহ  সম্রাট আকবর কর্তৃক বাংলা সনের প্রবর্তন।



ভারতে ইসলামি শাসনামলে হিজরি পঞ্জিকা অনুসারেই সকল কাজকর্ম পরিচালিত হতো। মূল হিজরি পঞ্জিকা চান্দ্র মাসের উপর নির্ভরশীল। চান্দ্র বৎসর সৌর বৎসরর চেয়ে ১১/১২ দিন কম হয়। কারণ সৌর বৎসর ৩৬৫ দিন, আর চান্দ্র বৎসর ৩৫৪ দিন। একারণে চান্দ্র বৎসরে ঋতুগুলি ঠিক থাকে না। আর চাষাবাদ ও এজাতীয় অনেক কাজ ঋতুনির্ভর। এজন্য ভারতের মোগল সম্রাট আকবারের সময়ে প্রচলিত হিজরি চান্দ্র পঞ্জিকাকে সৌর পঞ্জিকায় রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সম্রাট আকবর ইরান থেকে আগত বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও জ্যোতির্বিদ আমির ফতুল্লাহ শিরাজীকে হিজরি চান্দ্র বর্ষপঞ্জীকে সৌর বর্ষপঞ্জীতে রূপান্তরিত করার দায়িত্ব প্রদান করেন। ওমর ফতুল্লাহ্ শিরাজির সুপারিশে পারস্যে প্রচলিত সৌর বর্ষপঞ্জীর অনুকরণে ৯৯২ হিজরি মোতাবেক ১৫৮৪ খৃস্টাব্দে সম্রাট আকবার হিজরি সৌর বর্ষপঞ্জীর প্রচলন করেন। তবে তিনি ঊনত্রিশ বছর পূর্বে তার সিংহাসন আরোহনের বছর থেকে এ পঞ্জিকা প্রচলনের নির্দেশ দেন। এজন্য ৯৬৩ হিজরি সাল থেকে বঙ্গাব্দ গণনা শুরু হয়। ইতোপূর্বে বঙ্গে প্রচলিত শকাব্দ বা শক বর্ষপঞ্চির প্রথম মাস ছিল চৈত্র মাস। কিন্তু ৯৬৩ হিজরি সালের মুহাররাম মাস ছিল বাংলা বৈশাখ মাস, এজন্য বৈশাখ মাসকেই বঙ্গাব্দ বা বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস এবং ১লা বৈশাখকে নববর্ষ ধরা হয়।




 সম্রাট আকবরের খাজনা আদায়ের হিসাব সংরক্ষণের বিষয়টি ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।গড়মিল ছিলো হিসাব সংরক্ষণের সময় ও সংখ্যা নিয়ে। সংখ্যা মিলতো কিন্তু সময় মিলতো না। একেক জনের হিসাব সংরক্ষিত হতো একেক সময় হিসেবে। সম্রাট আকবর রাজজ্যোতিষী আমীর ফতেহ উল্লাহ সিরাজীকে নির্দেশ দিলেন, এই সমস্যার সমাধান চাই আমি।

 ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি মোতাবেক ৯৬৩ হিজরির ২৮ রবিউস সানি তারিখে সম্রাট জালালুদ্দিন আকবর শাহ সিংহাসনে আসিন হন। সম্রাটের এই ক্ষমতা গ্রহণের স্মৃতিকে চিরভাস্কর করে রাখার উদ্দেশ্যে রাজজ্যোতিষী ফতেহ উল্লাহ সিরাজী ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দের ১ এপ্রিলকে পহেলা তারিখ নির্ধারণ করে খাজনা আদায় এবং এর যাবতীয় হিসাব-নিকাশ সংরক্ষণের উপযোগী করে হিজরি ৯৬৩ সনের সাথে পরবর্তী সৌরমাস ও বছরের সংখ্যা যোগ করে নতুন একটি ফসলি সন প্রবর্তন করেন। প্রাথমিক পর্যায়ে এই সন সৌরমাস হিসেবে গণনা হতো। পরর্বতীতে রাজজ্যোতিষী ফতেহ উল্লাহ প্রবর্তিত এই ফসলি সনই বাংলা সন বা বঙ্গাব্দের রুপান্তিত হয়।

সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সৌরদিন গণনা শুরু হয়। পৃথিবী সূর্যের চারদিকে একবার ঘুরে আসতে মোট ৩৬৫ দিন কয়েক ঘণ্টা সময়ের প্রয়োজন হয়। এই সময়টাই এক সৌর বছর। খ্রিস্টান পোপ গ্রেগরী  ইংরেজি ক্যালেন্ডারের প্রণেতা । গ্রেগরিয়ান সনের মতো বাংলা সনেও মোট ১২ মাস। এগুলো হল বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র, আশ্বিন, কার্তিক, অগ্রহায়ণ, পৌষ, মাঘ, ফাল্গুন ও চৈত্র। 

গ্রেগেরিয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে বাংলাদেশে ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন করা হয়৷ সূর্যোদয়ের সাথে সাথেই শুরু হয় বাঙ্গালির পহেলা বৈশাখ উত্সাব৷ বাংলা দিনপঞ্জির সাথে হিজরি ও খ্রিষ্টিয় সালের সাথে কিছুটা মৌলিক পার্থক্য রয়েছে৷ প্রচলিত হিজরি সালের নতুন তারিখ শুরু হয় সন্ধ্যায় নতুন চাঁদের আগমনে, ইংরেজি দিন শুরু হয় মধ্যরাতে, আর বাংলা সাল শুরু হয় ভোরে বা সূর্যোদয়ের সাথে সাথে৷ এ ছাড়াও সৌর সাল হয় ৩৬৫ দিনে আর চান্দ্র হয় ৩৫৪ দিনে অর্থাত্‍ চান্দ্র সাল সৌর সাল থেকে ১১ দিন কম৷ সে কারণেই হিজরি ও চান্দ্র সালের মধ্যে ১১ দিন করে ব্যবধান বাড়তে থাকে৷ বাংলা সালে ১২ মাসে মোট ৩৬৫ দিন ৬ ঘন্টা৷

অতীতে ১২ মাসের কাল বিন্যাসে কিছুটা জটিলতা থাকায় ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে ড.মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ্কে সভাপতি করে বাংলা বর্ষপঞ্জি পুনর্বিন্যাসের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল৷ এ কমিটি ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে ১৭ ফেব্রুয়ারিতে প্রচলিত বাংলা সালের মূল কাঠামো ঠিক রেখে বছরের প্রথম পাঁচ মাস ৩১ দিন এবং শেষের সাত মাস ৩০ দিন ধরে বাংলা বর্ষপঞ্জি সংস্কারের সুপারিশ করে যা ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দে ১৯ জুন বাংলা সৌর সালের নিয়মতান্ত্রিকতা কার্যকর করা হয়৷ ফলে বৈশাখ থেকে ভাদ্র মাস পর্যনত্ম ৩১ দিন এবং আশ্বিন থেকে চৈত্র মাস পর্যনত্ম প্রতি মাস ৩০ দিন করে গণনা করা হয়৷ এ ছাড়াও বছরে বাড়তি ৬ ঘন্টার জন্য গ্রেগরিয় বর্ষপঞ্জিতে অধিবষের্র (লিপইয়ার) মতো বাংলা বর্ষপঞ্জিতেও অধিবর্ষ হিসেবে চৈত্র মাসকে ৩১ দিন হিসাবে ধরা হয়৷

সংশোধিত এই বাংলা সন এ দেশ কিন্তু সহজে গ্রহণ করেনি। গ্রেগরীয়ান ক্যালেন্ডারের স্বীকৃতি প্রদানের ক্ষেত্রে ইউরোপীয় দেশগুলো যে  রকম গড়িমসি করেছিল, বাংলা একাডেমি কর্তৃক সংশোধিত বাংলা সন গ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশেও কিন্তু কিছুটা দ্বিধা-দ্বন্দ্ব দেখা যায়। ফলে, সংশোধনের প্রায় দুই যুগ পর ১৯৮৮ সালের ১৯ জুন তারিখে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বাংলা সন-এর সংশোধিত রূপ স্বীকৃত হয়।

মোঘল সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে তারই নির্দেশে ৯৯৮ হিজরী মোতাবেক ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দে বাংলা সনের প্রবর্তন হয়। বাদশাহ আকবর ৯৬৩ হিজরীতে অথাৎ ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে (১৪ ফেব্রুয়ারি তারিখে) দিল্লীর সিংহাসনে আরোহণ করেন। এই ঐতিহাসিক ঘটনা চিরন্তরণীয়  করে রাখার জন্য ৯৬৩ হিজরী অবলম্বন করেই বাংলা সন চালু করা হয়।

মহানবী (সা.) স্বয়ং আনুষ্ঠানিকভাবে হিজরী সন চালু করেননি। এটি প্রবর্তন করেন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর বিন খাত্তাব (রা.) ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে।

হিজরী সনের ক্ষেত্রে যে রকম হিজরতের দিন ও মাস (১২ রবিউল আউয়াল) সুনির্দিষ্টভাবে অবলম্বন না করে শুধুমাত্র সালটিকেই (৬২২ খ্রিস্টাব্দে) সংরক্ষণ করা হয়, বাংলা সনের ক্ষেত্রেও তেমনি সম্রাট আকবরের রাজ্যভিষেকের দিন ও মাস (১৪ইং ফেব্রুয়ারি) অবলম্বন না করে শুধুমাত্র বৎসরটি (৯৬৩ হিজরী) সংরক্ষিত হয়।

১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দে মুগল সম্রাট আকবর বাংলা সনের প্রবর্তন করেন বলে বেশিরভাগ পণ্ডিত মনে করেন। ঐ সময়ে বঙ্গে শক বর্ষপঞ্জি ব্যবহৃত হতো, যার প্রথম মাস ছিল চৈত্র। বাংলা বর্ষপঞ্জি প্রথমে তারিখ-ই-এলাহী বা ফসলি সন নামে পরিচিত ছিল। ১৫৮৪ সালের ১০ বা ১১ মার্চ তারিখে এটি বঙ্গাব্দ নামে প্রচলিত হয়।

১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দের ৫ নভেম্বর, এবং ৯৬৪ হিজরির ১ মুহররম তারিখে মাত্র ১৩ বছর বয়সে সম্রাট হেমচন্দ্র বিক্রমাদিত্যকে ২য় পানিপথের যুদ্ধে পরাজিত করেন। পানিপথের যুদ্ধে সম্রাট আকবরের বিজয়কে মহিমান্বিত করে রাখবার জন্য, এবং অধিকতর পদ্ধতিগত উপায়ে রাজস্ব আদায়ের উদ্দেশে এ বাংলা সনের প্রবর্তন করা হয়েছিল। সম্রাট যে মাসে সিংহাসনে অরোহণ করেন, তার নিকটতম হিজরি বছরের ১ম মাসকে ভিত্তি ধরা হয়। ৯৬৩ হিজরির ১ মহররম ছিল নিকটতম। ঐ বছর শকাব্দের ১ বৈশাখ এবং হিজরির ১ মহররম একই দিনে এসেছিল। বৈশাখ হলো শকাব্দের ২য় মাস, চৈত্র ১ম মাস। ৯৬৩ হিজরির ১ মহররমকে বাংলা ৯৬৩ সনের ১ বৈশাখ পরিচিহ্নিত করে বাংলা সন শুরু করা হয়।

কিন্তু ৯৬৩ হিজরীতে যখন ফসলী সন বা বাংলা সন শুরু করা হয়, তখন হিজরী সনের প্রথম মাস মহররম বৈশাখ মাসের সঙ্গে মিশে যায়। ফলে, এ দেশে ১লা বৈশাখই  নওরোজ বা নববর্ষ হিসেবে পরিচিহ্নিত হয়। উল্লেখ্য, ইংরেজি তথা গ্রেগরীয়ান ক্যালেন্ডারের ক্ষেত্রেও প্রথমে ১লা মার্চ ছিল নিউ ইয়ারস ডে। কিন্তু পরবর্তী পর্যায়ে পহেলা জানুয়ারি সে সম্মানজনক স্থান দখল করে নেয়।
সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে এ সময় থেকেই অসাম, ত্রিপুরা, বঙ্গ, কেরল, মণিপুর, নেপাল, উরিষ্যা, পাঞ্জাব, তামিলনাড়ুতে নববর্ষ উদযাপিত হতো৷ কিন্তু সার্বজনীন উত্সলব হিসেবে নয়৷ তখন নববর্ষ ঋতুধর্মী উত্সরব হিসেবে পালন করা হতো৷ এ উত্সলবের মূল বিষয় ছিল কৃষিকাজকে প্রাধান্য দেয়া ৷ কেননা এ সময় সমাজ-অর্থনীতি কৃষিকাজের উপর অধিকাংশ নির্ভরশীল ছিল৷



চৈত্র মাসের শেষ দিনে (সংক্রানত্মি) জমিদারি সেরেসত্মায় প্রজাদের কাছ থেকে কৃষি ও রাজস্ব কর বা খাজনা আদায় করা হতো৷ এ সময় প্রত্যেক চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যে সকল খাজনা, মাশুল ও শুল্ক পরিশোধ করতে হতো৷ এর পরের দিন, অর্থাত্‍ পহেলা বৈশাখ ভূমির মালিকরা নিজেদের অঞ্চলের প্রজা বা অধিবাসীদের মিষ্টান্ন দিয়ে আপ্যায়ন করতেন৷ এ উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো৷ এ সময় থেকেই হালখাতা উত্সকবের প্রচলন হয় ৷ এ দিনে মহাজনরা পুরানো দেনা-পাওনার হিসাব বন্ধ করে নতুন হিসাবের খাতার সূচনা করতেন যার প্রচলন আজও আছে৷ মূলত এ ধরনের উত্সনবের মাধ্যমে দেনাদার ও পাওনাদারের মধ্যে একটি গভীর সম্পর্কের সূচনা হতো৷

সম্রাট আকবরের আমলে ফার্সি মাসের অনুকরণে বাংলা মাসের নাম ছিল যথাক্রমে কারওয়ারদিন (Karwadin),, আর্দি (Ardi), খোরদাদ( Khordad ), তীর( Teer), আমারদাদ (Amardad), শাহারিবার (Shahriar), ভিহিসু (Vihisu), আবান (Aban), আজার (Azur), দে( Dai ), বাহমান (Baham) ও ইসফান্দা মিজ( Iskander Miz )৷ এ পঞ্জিকার প্রথম নাম ছির তারিখ-ই ইলাহি(Tarikh-e-Elahi )৷ পরবর্তীকালে নানা ঘটনাক্রমে মাসের নামগুলো বিভিন্ন তারকার নাম অনুসারে বর্তমান নামে প্রর্বতন করা হয়৷


সম্রাট আকবরের সময় মাসের প্রতিটি দিনের জন্য পৃথক পৃথক নাম ছিল। সম্রাট শাহজাহানের রাজত্বকালে এ জটিল প্রথা পরিহার করে সপ্তাহের সাতটি দিনের জন্য সাতটি নাম নির্ধারণ করা হয়। বর্তমানে ব্যবহৃত ঐ সাতটি নামের সঙ্গে রোমান সাপ্তাহিক নামগুলোর সাদৃশ্য সহজেই পরিলক্ষিত হয়। অনুমিত হয় যে, বাদশাহ শাহজাহানের দরবারে আগত কোন ইউরোপীয় (সম্ভবত পর্তুগীজ) মনীষীর পরামর্শক্রমে মূলত গ্রহপুঞ্জ থেকে উভূত নিম্নবর্ণিত নামগুলোর প্রচলন করা হয় : (১) রবি (সূর্য)- ঝঁহ বা সূর্য থেকে, (২) সোম (চন্দ্র) গড়হধহ অর্থাৎ গড়ড়হ থেকে, (৩) মঙ্গল গধৎং বা মঙ্গল গ্রহ থেকে, (৪) বুধ গবৎপঁৎু বা বুধ গ্রহ থেকে, (৫) বৃহস্পতি ঔঁঢ়রঃবৎ বা বৃহস্পতি গ্রহ থেকে, (৬) শুক্র ঋৎরমম  (বা ঠবহঁ ) থেকে এবং (৭) শনিবার ঝধঃঁৎহ বা শনি গ্রহ থেকে।

বাংলা সন মূলত : ইসলামী হিজরী সনের উপর নির্ভরশীল হলেও শকাব্দের নিকটও সে কিঞ্চিৎ ঋণী। বাংলা সনে আমরা বর্তমানে দিন ও মাসের যে নামগুলো ব্যবহার করি সেগুলো শকাব্দ থেকেই গৃহীত।  মাসের নামগুলো, যেমন বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণ ইত্যাদি আমরা পেয়েছে নক্ষত্রপুঞ্জ থেকে।

বর্তমান ভারতের জাতীয় সন হচ্ছে শকাব্দ। রাজা চন্দ্রগুপ্ত ৩১৯ অব্দে গুপ্তাব্দ প্রবর্তন করেন। এই সন পরে বিক্রমাব্দ নামে অভিহিত হয়। এই অব্দ প্রথমে শুরু হতো চৈত্র মাস থেকে। পরবর্তী পযায়ে কার্তিক মাসকে বছরের প্রথম মাস হিসেবে পরিচিহ্নিত করা হয়। খ্রিস্টপূর্ব ১৫ সালে ভারতে শক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। শক সনের স্মারক হিসেবে ৭৮ খ্রিস্টাব্দে শাকাব্দ চালু করা হয়। সৌরভিত্তিক শকাব্দের রবিমার্গের দ্বাদশ রাশির প্রথম মেঘ অন্তর্গত পূর্ণচন্দ্রিকাপ্রাপ্ত প্রথম নক্ষত্র বিশাখার নামানুষারে বৎসরের প্রথম মাসের নাম রাখা হয় বৈশাখ। বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন যে, নাক্ষত্রিক নিয়মে বাংলা সনের মাসগুলোর নাম নিম্নেবর্ণিত নক্ষত্রসমূহের নাম থেকে উদ্ভত হয়েছে
 বিশাখা নক্ষত্রের নাম থেকে বৈশাখ; জ্যেষ্ঠা নক্ষত্রের নাম থেকে জ্যৈষ্ঠ; উত্তরাষাঢ়া নক্ষত্রের নাম থেকে আষাঢ়; শ্রবণা নক্ষত্রের নাম থেকে শ্রাবণ; পূর্বভাদ্রপদ নক্ষত্রের নাম থেকে ভাদ্র; আশ্বিনী নক্ষত্রের নাম থেকে আশ্বিন; কৃত্তিকা নক্ষত্রের নাম থেকে কার্তিক; মৃগশীরা নক্ষত্রের নাম থেকে মাগশীষর্ (অগ্রহায়ণ); পৃষ্রা নক্ষত্রের নাম থেকে পৌষ; মঘা নক্ষত্রের নাম থেকে মাঘ; উত্তর ফাল্গুনী নক্ষত্রের নাম থেকে ফাল্গুন; চিত্রা নক্ষত্রের নাম থেকে চৈত্র৷

আমাদের সংস্কৃতির এক মৌলিক উপাদন বাংলা বর্ষপঞ্জি৷ এ বর্ষপঞ্জির সূচনা হয় নববর্ষ উত্সকব দিয়ে যা আমাদের জাতীয় চেতনার মূর্ত প্রতীক৷ এ উত্সকবের উদ্ভব হয়েছিল বাংলার কৃষক সমাজের মধ্য দিয়ে৷ আজও বাংলা বর্ষ আমাদের কৃষক সমাজের চেতনায় বিঁধে আছে ও মিশে আছে জীবনের সঙ্গে৷ কোনো মাসের নামের সাথে মিশে আছে ফসল, আহরণ ও বিভিন্ন ধরনের আনন্দ উত্স বের সম্পর্ক৷

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরে পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন শুরু হয় রমনার বটতমূলে মুক্ত চিন্তার সংগঠন ছায়ানটের_এসো হে বৈশাখ এসো এসো গানের মাধ্যমে৷ এ গানটি পরিবেশনের মধ্য দিয়ে নতুন বছরের সূর্যকে আহ্বান করা হয়৷ ১৯৬০ দশকে পাকিস্থানী শাসক গোষ্ঠীর নিপীড়ন ও সংস্কৃতি চর্চা বন্ধের প্রতিবাদে ১৯৬৭ সাল থেকে ছায়ানটের এই বর্ষবরণ অনুষ্ঠান শুরু হয়৷ ১৯৮৯ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের ছাত্রছাত্রীরা বের করে মঙ্গল শোভাযাত্র৷ এ শোভাযাত্রায় স্থান পায় বাংলার পশুপাখি আর অন্যান্য বিচিত্র চেহারার মুখোশ যা বৈশাখ উদযাপনকে আরো অধিক আকর্ষণীয় ও মোহনীয় করে তোলে ৷ 

এ শোভাযাত্রায় হাজার হাজার বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ অংশ নেয়৷ বিশাল এলাকা জুড়ে শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী ও বযস্কদের পথচারণে মুখরিত হয়ে উঠে রাজপথ৷ হাতে বেলুন, বাউলের একতারা, ছোট ডুগডুগি নিয়ে ঢাকের বাদ্যের তালে তালে নেচে নেচে আনন্দ উল্লাসে ফেটে পড়ে নব বৈশাখে ৷ মূলত এ শোভাযাত্রার মাধ্যমে গ্রামীণ জীবন এবং অবহামান বাংলাকে ফুটিয়ে তোলা হয়৷ এ শোভা যাত্রার জন্য তৈরি করা হয় রঙ-বেরঙের বিভিন্ন আকৃতির মুখোশ ও বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিলিপি৷ এ ছাড়াও সকল বিভাগীয় ও জেলা শহরে পহেলা বৈশাখ উদ্যাপনের অয়োজন করা হয়৷ ১৯৮৩ সালে শুরু হয় পাআত্ম ইলিশের প্রচলন যা বর্তমানে অত্যনত্ম জনপ্রিয় বৈশাখের পানত্মা ইলিশ সংস্কৃতি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে এবং এর শিকড়ের বিস্তৃতি লাভ করেছে শহর ছেড়ে গ্রামেও৷

পারসিকগণ খ্রিষ্টপূর্ব ৮০০ সালে এই নববর্ষ পালন বা নওরোজের প্রর্বতন করেছিলেন এবং এ ধারাবাহিকতায় এখনো ইরানে নওরোজ বা নববর্ষ জাতীয় উত্সিব হিসেবে পালিত হয়৷ ইরান থেকেই এ ধরনের একটি সংস্কৃতিক ধারা মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে প্রবেশ করে৷

বেবিলনে নববর্ষ উদ্যাপিত হতো আজ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে যা ছিল সে দেশের সর্ববৃহত্‍ জাতীয় উত্সপব৷ এ উত্সগব ১১ দিন ধরে পালন করা হতো৷ ফরাসি, গ্রিক, মিসর, ভারত, চিন, ভিয়েতনাম, লাওসেও বর্ষবরণ উত্স`বের প্রচলন রয়েছে৷ এ ছাড়া উন্নত বিশ্বের সকল দেশেই নববর্ষ বিশেষ ধুম-ধামের সাথে পালন করা হয়৷ ইংরেজি নববর্ষ ইউরোপ ও আমেরিকায় আনন্দের জোয়ার বয়ে আনে৷ গ্রেগরিয় পঞ্জিকা সারা বিশ্বে অধিক অনুসৃত হয় বলে পহেলা জানুয়ারি বিশ্বে মহোত্স ব বয়ে যায়৷ এর ঢেউ আমাদের দেশেকেও কম আলোড়িত করে না ৷

সন হিসেবে বাংলা সন নিঃসন্দেহে অতীব কার্যকর ও বিজ্ঞানসম্মত বলে বিবেচিত হয়। এর কারণ হল এটি একই সঙ্গে চান্দ্র (খঁহধৎ) ও সৌর (ঝড়ষধৎ) পদ্ধতির সার্থক উত্তরাধিকারী। এর প্রথমাংশ, অর্থাৎ ৯৬৩ বৎসর, সম্পূর্ণরূপে হিজরী সনভিত্তিক তথা চন্দ্র সন। পরবর্তী অংশ, অর্থাৎ ৯৬৩ থেকে অদ্যবধি, সৌর ভিত্তিক। ফলে, বিশ্বে সার্বজনীনভাবে স্বীকৃত ইংরেজি তথা গ্রেগরীয়ান ক্যালেন্ডারের সঙ্গে বাংলা সন সামঞ্জস্য রেখে চলে। উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যায় যে, ৯৬৩ বাংলা বর্ষে পহেলা বৈশাখ হয়েছিল ১১ই এপ্রিল, ১৫৫৬ তারিখে। এ বৎসর, অর্থাৎ ১৪২৩ বাংলা সনে, পহেলা বৈশাখ আমরা পাচ্ছি ১৪ই এপ্রিল। অর্থাৎ ১৪২৩-৯৬৩=৪৬০ বছরে পার্থক্য হয়েছে মাত্র ৩ দিন। আর, ভবিষ্যতে সে পার্থক্য এর চেয়ে একদিনের অধিক কখনও হবে না। বিজ্ঞানসম্মত এবং মুসলমান কর্তৃক প্রবর্তিত হিজরী ভিত্তিক এই বাংলা সন নিঃসন্দেহে আমাদের গৌরব।






শুক্রবার, ১ এপ্রিল, ২০১৬

জলপাই, জলপাই তেল ও জলপাই পাতার পুষ্টিমান ও উপকারিতা





জলপাইয়ের আদি নিবাস এশিয়া, আফ্রিকা ও ভূমধ্যসাগরীয় কিছু অঞ্চলে। লেবানন, সিরিয়া, তুরস্ক, ইরানে জলপাই খুবই ভালো জন্মে। এ অঞ্চলে জলপাইয়ের তেলকে ডাকা হয় Liquid Gold বা 'তরল সোনা' নামে। গ্রীক সভ্যতায় জলপাইয়ের পাতাকে পবিত্র এবং শান্তির প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হতো। গ্রীক সভ্যতার শুরু থেকেই জলপাইয়ের তেল দিয়ে রন্ধন ও চিকিৎসার কাজ করা হতো।

যুদ্ধে শান্তির প্রতীক হলো জলপাইয়ের পাতা এবং মানুষের শরীরের শান্তির দূত হলো জলপাইয়ের তেল বা অলিভ ওয়েল। আরবিতে জয়তুন নামে ডাকা হয়। ভেষজ গুণে ভরা এই ফলটি লিকুইড গোল্ড বা তরল সোনা নামেও পরিচিত। 


গ্রীক সভ্যতার প্রারম্ভিক কাল থেকে এই তেল ব্যাবহার হয়ে আসছে রন্ধন কর্মে ও চিকিৎসা শাস্ত্রে। আকর্ষণীয় এবং মোহনীয় সব গুণ এই জলপাইয়ের তেলের মধ্য রয়েছে।

বিজ্ঞানীরা বলেন, জলপাই তেলে এমন উপাদান রয়েছে, যেগুলো আমাদের শরীরকে সুস্থ এবং সুন্দর রাখে।

জলপাই তেল পেটের জন্য খুব ভালো। এটা শরীরে এসিড কমায়, লিভার পরিষ্কার করে। যাদের কোষ্টকাঠিণ্য রয়েছে, তারা দিনে এক চা চামচ জলপাই তেল খেলে উপকার পাবেন। গবেষকরা বলেন, জলপাই তেল গায়ে মাখলে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্বক কুচকানো প্রতিরোধ হয়।

গবেষকরা ২৫ মিলিয়ন লোকজনের উপর গবেষণা করে দেখিয়েছেন প্রতিদিন দুই চা চামচ জলপাই তেল ১ সপ্তাহ ধরে খেলে তা দেহের ক্ষতিকর এলডিএল কোলেস্টেরল কমায় এবং উপকারী এইচডিএল কোলেস্টেরল বাড়ায়।

অন্যদিকে স্পেনিশ গবেষকার দেখিয়েছেন, খাবারে জলপাই তেল ব্যবহার করলে কোলন বা মলাশয় ক্যান্সার প্রতিরোধ হয়। এটা পেইন কিলার হিসাবেও কাজ করে।

গবেষকরা আরো জানান, গোসলের পানিতে চার ভাগের এক ভাগ চা চামচ জলপাই তেল ঢেলে গোসল করলে রিলাক্স পাওয়া যায়। মেয়েদের রূপ বাড়াতে এটা অনেকটা কার্যকর।

ইসলাম ধর্মেও জলপাইয়ের তেল খাওয়া এবং ব্যবহারের গুরত্ব দেয়া হয়েছে। আল্লাহর রাসুল (স.) বলেছেন, কুলু আয যাইতু ওয়াদ দাহিনু বিহি, ফা ইন্নাহু মিন শাজারাতিন মুবারাকাতিন অর্থ- তোমরা এই তেলটি খাও, তা শরীরে মাখাও।

জলপাই শীতকালীন ফল। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই এই ফলটি পাওয়া যায়। আমাদের দেশে সবুজ জলপাই সহজলভ্য। পৃথিবীর অনেক দেশে কালো জলপাই জন্মে। জলপাইয়ের পাতা ও ফল দুটোই ভীষণ উপকারী। জলপাইয়ের রস থেকে যে তেল তৈরি হয় তার রয়েছে যথেষ্ট পুষ্টিগুণ।

প্রচণ্ড পরিমাণে টক এই ফলে রয়েছে উচ্চমানের ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ভিটামিন ই। এই ভিটামিনগুলো দেহের রোগজীবাণু ধ্বংস করে, উচ্চ রক্তচাপ কমায়, রক্তে চর্বি জমে যাওয়ার প্রবণতা কমিয়ে হূৎপিণ্ডের রক্তপ্রবাহ ভালো রাখে। ফলে হূৎপিণ্ড থেকে অধিক পরিশোধিত রক্ত মস্তিষ্কে পৌঁছায়, মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ে। ত্বকের কাটাছেঁড়া দ্রুত শুকাতে সাহায্য করে। উচ্চরক্তচাপ ও রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে এর রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

সেদ্ধ জলপাইয়ের চেয়ে কাঁচা জলপাইয়ের পুষ্টিমূল্য অধিক। এই ফলের আয়রন রক্তের আরবিসির কর্মশক্তি বৃদ্ধি করে।

জলপাইয়ের খোসায় রয়েছে আঁশজাতীয় উপাদান। এই আঁশ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়ায়, কোলনের পাকস্থলীর ক্যানসার দূর করতে রাখে অগ্রণী ভূমিকা।

জলপাইয়ের পাতারও রয়েছে যথেষ্ট ঔষধি গুণ। এই পাতা ছেঁচে কাটা, ক্ষত হওয়া স্থানে লাগালে কাটা দ্রুত শুকায়। বাতের ব্যথা, ভাইরাসজনিত জ্বর, ক্রমাগত মুটিয়ে যাওয়া, জন্ডিস, কাশি, সর্দিজ্বরে জলপাই পাতার গুঁড়া জরুরি পথ্য হিসেবে কাজ করে।

মাথার উকুন তাড়াতে, ত্বকের ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাকজনিত সমস্যা দূর করার জন্য এই পাতার গুঁড়া ব্যবহূত হয়। রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসে জলপাই পাতার গুঁড়া ও জলপাইয়ের তেল ব্যবহারে হাড় ও মাংসপেশির ব্যথা কমে।

জলপাইয়ের তেল কুসুম গরম করে চুলের গোড়াতে ম্যাসাজ করলে চুলের পুষ্টি ও বৃদ্ধি ভালো হয়, চুলের ঝরে যাওয়া তুলনামূলকভাবে কমে।

সর্দি-কাশি হলে শরীর একেবারে রোগা-পাতলা হয়ে যায়। এই রোগে রান্নায় জলপাইয়ের তেল ব্যবহার করতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়। কারণ এই তেলের ফ্যাট খুব সহজে হজম করা যায়। এই তেল কডলিভার অয়েলের চেয়েও ভালো কাজ করে। তা ছাড়া কডলিভার অয়েলের বদলে জলপাইয়ের তেলও কাঁচা খেতে পারলে দারুণ উপকার পাওয়া যায়। কাঁচা খেতে অসুবিধা হলে কমলালেবুর রস বা অন্য যেকোনো ফলের রসের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।



জলপাইয়ের পুষ্টিমানঃ 
    
পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এই তেলের প্রতি ১০০ গ্রামে পাওয়া যায়ঃ

খাদ্যশক্তি
১৪৬ কিলোক্যালরি
শর্করা
৩.৮৪ গ্রাম
চিনি
০.৫৪ গ্রাম
খাদ্য আঁশ
৩.৩ গ্রাম
চর্বি
১৫.৩২ গ্রাম
আমিষ
১.০৩ গ্রাম
ভিটামিন
২০ আই ইউ
বিটা ক্যারোটিন
২৩১ আই ইউ
থায়ামিন
০.০২১ মিলিগ্রাম
রিবোফ্লেভিন
০.০০৭ মিলিগ্রাম
নিয়াসিন
০.২৩৭ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি৬
০.০৩১ মিলিগ্রাম
ফোলেট
৩ আই ইউ
ভিটামিন
৩.৮১ মিলিগ্রাম
ভিটামিন কে
১.৪ আই ইউ
ক্যালসিয়াম
৫২ মিলিগ্রাম
আয়রন
৩.১ মিলিগ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম
১১ মিলিগ্রাম
ফসফরাস
৪ মিলিগ্রাম
পটাশিয়াম
৪২ মিলিগ্রাম
সোডিয়াম
১৫.৫৬ মিলিগ্রাম
ভিটামিন সি
৩৯ মিলিগ্রাম




উপকারিতাঃ

১। হৃদযন্ত্রের যত্নে জলপাইঃ   যখন কোনো মানুষের রক্তে ফ্রি রেডিকেল অক্সিডাইজড কোলেস্টোরেলের মাত্রা বেড়ে যায় তখন হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেশি থাকে। জলপাইয়ের তেল হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়। জলপাইয়ের এ্যান্টি অক্সিডেন্ট রক্তের কোলেস্টেরেলের মাত্রা কমায়। ফলে কমে যায় হৃদরোগের ঝুঁকি।
২। ক্যান্সার প্রতিরোধকঃ  কালো জলপাই '' ভিটামিনে সমৃদ্ধ। এটা শরীরের চর্বিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। শরীরের ডিএনএ সেল নষ্ট হয়ে গেলে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ আশঙ্কা থেকে রক্ষা করতে পারে জলপাই তেল। এ তেল ব্যবহারে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ভয় কম থাকে। মাছের তেলেও এ উপকার পাওয়া যায়।
৩। ত্বক  ও চুলের স্বাস্থ্যঃ   কালো জলপাই ফ্যাটি এসিড এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসে সমৃদ্ধ। এতে আছে ভিটামিন ''। এটা শরীরে যেভাবে প্রয়োগ করা হোক না কেন আলট্রাভায়োলেট রেডিয়েশন থেকে চামড়াকে রক্ষা করে। যা স্কিন ক্যান্সার থেকে মানুষকে রক্ষা করে। হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধোয়ার পর কয়েক ফোঁটা জলপাই তেল মুখে মাখলে দারুণ উপকার পাওয়া যায়। গোসলের আগেও জলপাই তেল শরীরে মাখলে অনেক ধরনের সমস্যা থেকে চামড়া ভালো থাকে। নিজেকে শক্তপোক্ত এবং কর্মক্ষম রাখতে যেমন খাবারের প্রয়োজন তেমনি চুলের স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য চুলেরও খাবারের প্রয়োজন। চুলের খাবার হিসেবে জলপাই তেল দারুণ কার্যকরী। ডিমের কুসুমের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা জলপাই তেল নিয়ে চুলে ব্যবহার করে ভালো ফল পাওয়া যায়।
৪। হাড়ের ক্ষয়রোধ করেঃ জলপাইয়ের মনোস্যাটুরেটেড ফ্যাটে থাকে এন্টি ইনফ্লামেটরি । আছে ভিটামিন ও পলিফেনাল । যা কিনা অ্যাজমা ও বাতব্যাথা জনিত রোগের হাত থেকে বাঁচায় । বয়স জনিত কারণে অনেকেরই হাড়ের ক্ষয় হয় । হাড়ের ক্ষয় রোধ করে জলপাইয়ের তেল ।   

পরিপাকক্রিয়ায় সাহায্য করেনিয়মিত জলপাই খেলে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমেখাবার পরিপাকক্রিয়ায় সাহায্য করে জলপাই শুধু তাই নয়,গ্যাস্টিক  আলসারে হাত থেকেও বাঁচায় জলপাইজলপাইয়ের তেলে প্রচুর পরিমানে ফাইবার থাকে যা বিপাকক্রিয়ায় সাহায্য করে

৬। আয়রনের ভালো উৎসঃ  কালো জলপাই আয়রনে সমৃদ্ধ। শরীরে আয়রনের অভাব দেখা দিলে আমাদের টিস্যুগুলো পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না। আর তখনই আমরা শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ি অথবা আমাদের ঠাণ্ডা লাগে। শুধু তা-ই নয়, আয়রন শরীরে শক্তি উৎপাদনের দারুণ এক উৎস। সর্বোপরি শরীরের সব অঙ্গের কাজ সুষ্ঠুরূপে সম্পাদনের জন্য পর্যাপ্ত আয়রন প্রয়োজন।
৭। চোখের উপকারে জলপাইঃ  কালো জলপাই চোখের জন্য দারুণ উপকারী। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন যে পরিমাণ ভিটামিন '' প্রয়োজন হয় তার দশ ভাগের এক ভাগ সহজেই পাওয়া যায় এক কাপ কালো জলপাইয়ে। এই পরিমাণ ভিটামিন চোখের স্বাস্থ্যের জন্য জরুরি। ভিটামিন ''র অভাব হলে রাতকানা রোগ দেখা দিতে পারে। গ্লুকোমাসহ চোখের অন্য সব রোগ থেকে মুক্ত থাকার জন্য ভিটামিন '' দরকার।
৮। বিভিন্ন রোগ দূর করে জলপাইঃ  সংক্রামক ও ছোঁয়াচে রোগগুলোকে রাখে অনেক দূরে। নিয়মিত জলপাই খেলে পিত্তথলির পিত্তরসের কাজ করতে সুবিধা হয়। পরিণামে পিত্তথলিতে পাথরের প্রবণতা কমে যায়। এই তেলে চর্বি বা কোলেস্টেরল থাকে না। তাই ওজন কমাতে কার্যকর। যেকোনো কাটা-ছেঁড়া, যা ভালো করতে অবদান রাখে। জ্বর, হাঁচি-কাশি, সর্দি ভালো করার জন্য জলপাই খুবই উপকারী।
৯। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় জলপাইঃ  জলপাইয়ে প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্টও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে, যা দেহের ক্যান্সারের জীবাণুকে ধ্বংস করে এবং রোগ প্রতিরোধ শক্তিকে বাড়ায় দ্বিগুণ পরিমাণে।
১০। রক্তে কোলস্টেরলের মাত্রাটা বেশি থাকলে জলপাই তেলের কোনো বিকল্প নেই। বিভিন্ন রান্নায় ও সালাদে এই তেল ব্যবহারে স্বাদ ও পুষ্টি দুটোই ঠিক রাখতে পারেন আবার কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন।

১১। ত্বকে চুলকানির সমস্যা দূর করতে এই তেল ম্যাসাজ করতে পারেন। শিশুর ত্বকেও নিরাপদ তেল হিসেবে জলপাই তেল ব্যবহার করা যেতে পারে।
১২। জলপাই তেল মাথার ত্বকের খুশকি দূর করার জন্যও উপকারী।
১৩। সম্প্রতি এক আবিষ্কারে দেখা গেছে, খাবারে নিয়মিত অলিভ অয়েল ব্যবহার করলে সিস্টোলিক এবং ননসিস্টোলিক রক্তচাপ দূর করে।
১৪। অলিভ অয়েল মোটা হওয়ার প্রবণতা দূর করে।
১৫। বয়ষ্কদের হাড়ের ভঙ্গুরতা দূর করতেও অলিভ অয়েলের দারুণ গুণ রয়েছে।
১৬। জলপাই চোখ ওঠা, চোখের পাতায় ইনফেকশন সারাতে দারুণভাবে সাহায্য করে।
১৭। ত্বকের ক্ষত দ্রুত সারাতে জলপাই তেল সহায়তা করে।
১৮। অলিভ অয়েল বাথঃ সোফিয়া লরেন, সুন্দরী ইটালিয়ান অভিনেত্রী একবার নিজের সৌন্দর্যের গোপন রহসের পেছনে অলিভ অয়েল বাথের অবদানের কথা জানিয়েছিলেন। এক বালতি পানিতে ৫ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিন আর গোসলের পর অনুভব করুন তুলতুলে নরম, সিল্কি ত্বকের স্পর্শ অথবা আপনি যদি গোসলের আগে অভিল অয়েল দিয়ে শরীর ম্যাসাজ করে নেন তাহলেও সেই একই ফলাফল পাবেন।
১৯। নখের ভঙ্গুরতা রোধঃ শখ করে নখ বড় করেছেন কিন্তু এত সাবধান থাকা স্বত্তেও নখ ভেঙ্গে যাচ্ছে। আর মন খারাপ করবেন না। তেলটিকে হালকা গরম করে নিন তারপর নখ গুলো ডুবিয়ে রাখুন ৫-১০ মিনিট। তারপর দেখুন আপনার নখ গুলো কেমন শাইন দিচ্ছে আর এভাবে নিয়মিত করতে থাকলে নখগুলো শক্তও হয়ে যাবে।
২০। আই ক্রিমঃ অলিভ অয়েল চোখের চারপাশের কুঁচকে থাকা ত্বককে হাইড্রেট করে আর নরম করে তোলে। রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে আপনার রিং ফিঙ্গার দিয়ে আলতো হাতে অলিভ অয়েল বুলিয়ে দিন। অতিরিক্ত তেল নরম টিস্যু পেপার দিয়ে মুছে নিতে পারেন।

২১। পা ফাটা সমস্যার সমাধানঃ পায়ের দুরবস্থার কারণে কারও সামনে পা বের করতে বিব্রত হচ্ছেন? রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে পায়ে অলিভ অয়েল ম্যাসাজ করে নিন, তারপর মোজা পরে ঘুমান। সকালে নরম তুলতুলে পায়ে পছন্দের স্যান্ডেল গলিয়ে চলে যান গন্তব্যস্থলে।
২২। ঠোঁটের যত্নে অলিভ অয়েলঃ নিম্নমানের কসমেটিকস বা সূর্যের ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে আপনার নরম কোমল ঠোঁট তার কোমলতা হারিয়ে রুক্ষ হয়ে আসে, হারিয়ে ফেলে উজ্জ্বলতা। তাই নিয়ম করে যদি অল্প অলিভ অয়েল ঠোঁটে বুলিয়ে নেয়া যায় তাহলে এই সমস্যা থেকে সহজেই নিস্তার পাওয়া যাবে।
২৩। মেক-আপ রিমুভারঃ জমকালো সাজে সবাইকে মন্ত্রমুগ্ধ করেছেন। এবার সঠিক উপায়ে মেকা-আপ তোলার পালা। আঙ্গুলের ডগায় অথবা কটন প্যাডে অলিভ অয়েল লাগিয়ে নিন। তারপর সার্কুলার মোশনে আস্তে আস্তে সমস্ত মেক-আপ তুলে ফেলুন। তারপর ভালো মানের ক্লিনজার দিয়ে শেষ করুন আপনার মেক-আপ তোলার প্রক্রিয়া। যাদের সেনসেটিভ স্কিন তারা নিরাপদে মেক-আপ তোলার কাজ সেরে নিতে পারেন।
২৪। অলিভ অয়েলে মুখের যত্নঃ মাস্ক একটি ডিমের কুসুমের সাথে ১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল আর ৩ ফোটা লেবুর রস মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। তারপর মুখে লাগিয়ে ৫-১০ মিনিট অপেক্ষা করে প্রথমে হালকা গরম পানি তারপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ঠাণ্ডা পানি খুলে যাওয়া পোরস বন্ধ করে। নরমাল অথবা শুষ্ক ত্বকে এই মাস্ক আর্দ্রতা বজায় রাখবে সেই সঙ্গে নরম কোমল করে তুলবে।
২৫। ময়েশচারাইজারঃ  অলিভ অয়েলে আছে linolic acid, যা পানি বাষ্প হতে দেয়না। তাই ১/২ কাপ অলিভ অয়েল, ১/৪ কাপ ভিনেগার আর ১/৪ কাপ পানি মিশিয়ে একটি সলিউশন তৈরি করুন যা রাতে ঘুমানোর সময় নাইট ক্রিমের মত ব্যবহার করতে পারবেন। অলিভ অয়েল স্কিনকে নরম করে, ভিনেগার ত্বকে থাকা ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে।
২৬। সান প্রোটেকশনঃ  অভিল অয়েলে ভিটামিন এ এবং ই আছে সেই সঙ্গে ৩ রকমের antioxidants আছে, যা আপানাকে সূর্যের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করবে। তাই যদি বাইরে যাওয়ার আগে অলিভ অয়েলের প্রলেপ দিয়ে বের হন তবে সান্ টান থেকে অনেকটাই মুক্তি লাভ করবেন।

২৭। ব্রণ প্রতিরোধকঃ  অলিভ অয়েল ব্রণের বংশ ধ্বংস করার জন্য উপকারী। ৪ টেবিল চামচ লবণের সাথে ৩ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। তারপর সেই পেস্ট ২ মিনিট ধরে মুখে ম্যাসাজ করুন। এভাবে এক সপ্তাহ করুন। আপনি অবশ্যই পরিবর্তন দেখতে পারবেন। লবণ exfoliation করে pore পরিষ্কার করে আর অলিভ অয়েল মুখের আর্দ্রতা ধরে রাখে।
২৮। চুলের যত্নঃ
ফ্রিজি চুলের সমাধানঃ  একটি চিরুনি অলিভ অয়েলের মধ্যে ডুবিয়ে নিন তারপর ফ্রিজি চুলে আঁচড়ে নিন। এতে চুল ময়েশচার হয়ে ফ্রিজিনেস কেটে যাবে।
হেয়ার কন্ডিশনারঃ  শ্যাম্পু করার পর হাতের তালুতে কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল নিয়ে ভালো ভাবে দুই হাতে ঘষে ফেলুন। তারপর চুলে কন্ডিশনারের বদলে লাগিয়ে ফেলুন।
ডিপ কন্ডিশনঃ  সপ্তাহে অন্ততপক্ষে একবার হালকা গরম অলিভ অয়েল চুলে ভালো ভাবে ম্যাসাজ করে লাগান। এভাবে ২/৩ ঘণ্টা চুলে তেল লাগিয়ে রেখে শ্যাম্পু করুন। তারপর নিজেই লক্ষ করবেন শাইনি আর স্বাস্থ্যকর চুলের বাহার।
খুশকি থেকে মুক্তিঃ  সমপরিমাণ জলপাই তেল আর বাদামের তেল একসাথে মিশিয়ে চুলের গোড়ায় ঘষে ঘষে লাগিয়ে ১ ঘণ্টা অপেক্ষা করে শ্যাম্পু করে ফেলুন। এভাবে ৩ সপ্তাহ করলে খুশকি অনেকটা কমে আসবে।
নতুন চুল গজানোঃ  মাথায় অলিভ অয়েল ম্যাসাজ করে গরম পানিতে ডুবানো তোয়ালে দিয়ে মাথা পেঁচিয়ে নিতে হবে। খেয়াল রাখবেন তাপমাত্রা যেন সহ্য ক্ষমতার মধ্যে থাকে। তোয়েল ঠাণ্ডা হয়ে গেলে মাইক্রোওয়েভে আবার গরম করে নিন। এভাবে কয়েকবার করুন।
হেয়ার মাস্কঃ  একটি ডিমের কুসুমের সাথে ২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল, ৫ ফোঁটা লেবুর রস মেশান। চুলে ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখুন তারপর ধুয়ে ফেলুন। আপনার চুল হয়ে উঠবে নরম আর উজ্জ্বল।
২৯। কোষ্ঠকাঠিন্য রোধেঃ পেট পরিষ্কার না থাকার কারণে আমাদের অনেকেরই মুখে ব্রণ দেখা দেয়। তাই ব্রণের সমসসা সমাধানের সাথে সাথে পেটের সমস্যাও সমাধান করতে হবে আমাদের। প্রতিদিন সকালে কিছু খাওয়ার আগে ১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল খাবেন। কয়েকদিনের মধ্যেই আপনার সমস্যার সমাধান হবে।
৩০। চোখের সৌন্দর্যেঃ  মাশকারার বদলে চোখের পাপড়ি, ভ্রু তে অলিভ অয়েল লাগান, আর বাড়িয়ে তুলুন আপনার চোখের সৌন্দর্য।
৩১। শরীরে এসিড কমায়, যকৃৎ (Liver) পরিষ্কার করে, যেটা প্রতিটি মানুষের ২/৩ দিনে একবার করে দরকার হয়।
৩২। সাধারণত সন্তান হওয়ার পর মহিলাদের পেটে সাদা রঙের স্থায়ী দাগ পড়ে যায় । গর্ভধারণ করার পর থেকেই পেটে জলপাই তেল (Olive Oil) মাখলে কোন জন্মদাগ পড়ে না।
৩৩। কানের সমস্যায় জলপাই তেলঃ কানের মধ্যে চুলকানি ও গন্ধ হওয়া এমন কিছু সমস্যা অনেকেরেই রয়েছে । এসব সমস্যা সমাধানের করে জলপাই তেল বা অলভ অয়েল । কটন বার অলিভ অয়েলে ভিজিয়ে খুব সাবধানে কানের মধ্যে দিলে বেশ উপকার পাওয়া যায় । ড্রপারে করে এক বা দুই ফোটা অলিভ অয়েল কানে দেওয়া যায় । এতে কানের চুলকানি ও গন্ধ কমবে ।  


হেলেন অফ ট্রয় খ্যাত লেখক হোমার অলিভ অয়েলকে তরল সোনা বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। এমন কি Thomas Jefferson আমেরিকার তৃতীয় প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন হেভেনের সবচেয়ে মূল্যবান উপহার অলিভ অয়েল। বহিরাগত সৌন্দর্য ছাড়াও অলিভ অয়েল আমাদের অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য রক্ষায় অনেক বেশি উপকারী।এটি ব্লাড প্রেসার কমিয়ে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। অলিভ অয়েলে আছে polyphenol নামের এক উপাদান যা LDL কোলেস্টেরলকে স্বাস্থ্যকর লেভেলে রাখে। তাই শুধু হাত পা বা মুখে মেখে নয় অলিভ অয়েল সেবন করেও নিজেদের সুস্থ সবল রাখতে হবে।