রবিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১৪

বিজ্ঞানী স্যার আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু ১৮৫৮ --- ১৯৩৭





উপমহাদেশে আর্ন্তজাতিক স্বীকৃতি প্রাপ্ত প্রথম বিজ্ঞানী স্যার আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু ।পারিবারিক আদি নিবাস ঢাকার ,বিক্রমপুরের রাঢ়িখাল গ্রাম হলেও স্যারের জম্ম হয় নভেম্বর ৩০, ১৮৫৮  ময়মনসিংহে ।




যদিও স্যার একজন পদার্থবিজ্ঞানী, পাশাপাশি উদ্ভিদ বিজ্ঞানেও তার অবদান অসামান্য এবং প্রথম দিকের একজন কল্পবিজ্ঞান রচয়িতা। ভারতীয় উপমহাদেশে ব্যবহারিক ও গবেষণাধর্মী বিজ্ঞানের সূচনা করেন তিনি। স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু প্রথম ব্যখ্যা করে প্রমান করেন যে ,গাছেরও প্রাণ আছে ।আর এই প্রমাণের নিমিত্ত্বে তিনি ক্রেস্কোগ্রাফ নামক যন্ত্র আবিষ্কার করেন ।“  ইনস্টিটিউট অব ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনি ইঞ্জিনিয়ার্সক্স তাঁকে রেডিও বিজ্ঞানের জনক বলে অভিহিত করে।

তার পিতা ব্রাহ্ম ধর্মাবলম্বী ভগবান চন্দ্র বসু তখন ফরিদপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। এর পূর্বে তিনি ১৮৫৩ থেকে ১৮৫৮ সাল পর্যন্ত ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ভগবান চন্দ্রই এই স্কুলের প্রথম প্রধান শিক্ষক ছিলেন। পরবর্তিতে তিনি বর্ধমান ও অন্যান্য কিছু অঞ্চলের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালন করেছেন।

ইংরেজ সরকারের অধীনে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা থাকা সত্ত্বেও ভগবান চন্দ্র নিজের ছেলেকে ইংরেজি স্কুলে ভর্তি করাননি। জগদীশ চন্দ্রের প্রথম স্কুল ছিল ময়মনসিংহ জিলা স্কুল। জগদীশ কলকাতার হেয়ার স্কুল থেকে পড়াশোনা করে ১৮৭৯ খ্রিষ্টাব্দে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন। এই কলেজে ইউজিন ল্যাফন্ট নামক একজন খ্রিষ্টান যাজক প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের ওপর তাঁর আগ্রহ বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এরপর তিনি আইসিএস পরীক্ষায় বসার জন্য ইংল্যান্ডে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও ভগবান চন্দ্র এতে রাজী হননি কারণ তিনি চেয়েছিলেন তাঁর পুত্র একজন বিদ্বান হোন। 

বাংলা স্কুলে ভর্তি করানোর ব্যাপারে তাঁর নিজস্ব যুক্তি ছিল। তিনি মনে করতেন ইংরেজি শেখার আগে এদেশীয় ছেলেমেয়েদের মাতৃভাষা আয়ত্ব করা উচিত। বাংলা স্কুলে পড়ার ব্যাপারটি জগদীশ চন্দ্রের জীবনে যেমন গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করেছে তেমনি বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করতেও সাহায্য করেছে। এর প্রমাণ বাংলা ভাষায় রচিত জগদীশের বিজ্ঞান প্রবন্ধগুলো। ভাষার প্রতি বিশেষ মমত্ববোধ ছাড়াও ভগবান চন্দ্র চেয়েছিলেন তার পুত্র দেশের আপামর জনসাধারণের সাথে মিলেমিশে মানুষ হোক এবং তার মধ্যে দেশপ্রেম জাগ্রত হোক।
বাবার ইচ্ছা ও তার আগ্রহে তিনি ১৮৮০ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞান পাঠের উদ্দেশ্যেই লন্ডনের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান, কিন্তু অসুস্থতার কারণে বেশিদিন এই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি। তাঁর ভগ্নীপতি আনন্দমোহন বসুর আনুকুল্যে জগদীশ চন্দ্র প্রকৃতি বিজ্ঞান সম্বন্ধে শিক্ষালাভের উদ্দেশ্যে কেমব্রিজের ক্রাইস্ট কলেজে ভর্তি হন। এখান থেকে ট্রাইপস পাশ করেন। ১৮৮৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি পাঠ সম্পন্ন করেন। 

জগদীশ চন্দ্র বসু ১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দে ভারতে ফিরে আসেন। তৎকালীন ভারতের গভর্নর-জেনারেল জর্জ রবিনসন, প্রথম মার্কুইস অব রিপন এর  অনুরোধে স্যার অ্যালফ্রেড ক্রফট বসুকে প্রেসিডেন্সি কলেজে পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক নিযুক্ত করেন। কলেজের অধ্যক্ষ চার্লস হেনরি টনি এই নিয়োগের বিপক্ষে ছিলেন। শুধু যে তাঁকে গবেষণার জন্য কোন রকম সুবিধা দেওয়া হত না তাই নয়, তিনি ইউরোপীয় অধ্যাপকদের অর্ধেক বেতনেরও কম অর্থ লাভ করতেন । এর প্রতিবাদে জগদীশ চন্দ্র বসু বেতন নেওয়া বন্ধ করে দেন এবং তিন বছর অবৈতনিক ভাবেই অধ্যাপনা চালিয়ে যান। দীর্ঘকাল ধরে এই প্রতিবাদের ফলে তাঁর বেতন ইউরোপীয়দের সমতুল্য করা হয়। প্রেসিডেন্সি কলেজে গবেষণার কোন রকম উল্লেখযোগ্য ব্যবস্থা না থাকায় ২৪-বর্গফুট  একটি ছোট ঘরে তাঁকে গবেষণার কাজ চালিয়ে যেতে হত। পদে পদে প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তাঁর বিজ্ঞান সাধনার প্রতি আগ্রহ ভগিনী নিবেদিতাকে বিস্মিত করেছিল । কলেজে যোগ দেওয়ার এক দশকের মধ্যে তিনি বেতার গবেষণার একজন দিকপাল হিসেবে উঠে আসেন।

১৮৮৭ সালে জগদীশচন্দ্র বসুর সাথে অবলার বিয়ে হয়। অবলা ছিলেন ব্রাহ্ম সমাজের বিখ্যাত সংস্কারক দুর্গা মোহন দাসের কন্যা। বিয়ের আগে অবলা বসু কলকাতা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে চাইলেও তাকে ভর্তি হতে দেয়া হয়নি, কারণ সেখানে তখন মেয়েদের পড়ানো নিষেধ ছিল। ১৮৮২ সালে বঙ্গ সরকারের বৃত্তি নিয়ে অবলা মাদ্রাজে যান পড়াশোনার উদ্দেশ্যে। সেখানে চিকিৎসাবিজ্ঞান অধ্যয়ন শুরু করলেও অসুস্থতার কারণে আবার ফিরে আসতে বাধ্য হন। তাদের বিয়ের সময় জগদীশচন্দ্র বসু আর্থিক কষ্টের মধ্যে ছিলেন। এর মধ্যে আবার তিনি তখন কলেজ থেকে বেতন নিতেন না। এছাড়া জগদীশের বাবার কিছু ঋণ ছিল যার কারণে তার পরিবারকে পথে বসতে হয়। এর মধ্য থেকে অবলা ও জগদীশ অনেক কষ্টে বেরিয়ে আসেন এবং সব ঋণ পরিশোধ করতে সমর্থ হন। সব ঋণ থেকে মুক্তি পাওয়ার পর কিছুদিন মাত্র বসুর পিতা-মাতা জীবিত ছিলেন।
প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপনার প্রথম আঠারো মাসে জগদীশ যে সকল গবেষণা কাজ সম্পন্ন করেছিলেন তা লন্ডনের রয়েল সোসাইটির জার্নালে প্রকাশিত হয়। এই গবেষণা পত্রগুলোর সূত্র ধরেই লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় ১৮৯৬ সালের মে মাসে তাকে ডিএসসি ডিগ্রী প্রদান করে। প্রেসিডেন্সি কলেজে কোন উন্নতমানের গবেষণাগার ছিলনা, অর্থ সংকটও ছিল প্রকট। সীমিত ব্যয়ে স্থানীয় মিস্ত্রীদেরকে শিখিয়ে পড়িয়ে তিনি পরীক্ষণের জন্য উপকরণ প্রস্তুত করতেন। তার এই গবেষণা কর্মগুলোর গুরুত্ব বিবেচনা করেই ইংল্যান্ডের লিভারপুলে বক্তৃতা দেয়ার জন্য ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশন তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। এই বক্তৃতার সাফল্যের পর তিনি বহু স্থান থেকে বক্তৃতার নিমন্ত্রণ পান। এর মধ্যে ছিল রয়েল ইন্সটিটিউশন, ফ্রান্স এবং জার্মানি।

বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র গবেষণাগারে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ছাড়াই ইলেকট্রিক রেডিয়েশন বিষয়ে গবেষণা করতেন বিদ্যুৎ উৎপাদক ইথার তরঙ্গের কম্পনের দিকে পরিবর্তন বিষয়ক প্রবন্ধটি (যা তাঁর প্রথম প্রবন্ধ) তিনি এশিয়াটিক সোসাইটিতে পেশ করেছিলেন পরের প্রবন্ধগুলো ইংল্যান্ডের ইলেকট্রিশিয়ান পত্রিকায় প্রকাশ করেন এসময় বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বিনা তারে বৈদ্যুতিক তরঙ্গের মাধ্যমে শব্দকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় কিভাবে পাঠানো যায় সে বিষয়ে গবেষণা করছিলেন একই বিষয়ে গবেষণা করছিলেন আমেরিকার বিজ্ঞানী লজ, ইতালীতে মার্কনী কিন্তু বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র এ বিষয়ে ছিলেন অগ্রণী
জগদীশের আঠারো মাসের সেই গবেষণার মধ্যে মুখ্য ছিল অতিক্ষুদ্র তরঙ্গ নিয়ে গবেষণা। ১৮৯৫ সালে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে এ বিষয়ে পরীক্ষা করেন বেতার যন্ত্র তখনও আবিষ্কৃত হয় নি  কলকাতার টাউন হল সাঁইত্রিশ বছরের যুবক জগদীশ যন্ত্রপাতি নিয়ে তৈরি হয়ে আমন্ত্রিত শ্রোতাদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন, সর্বসমক্ষে তা পরীক্ষা করে দেখাতে চান এর পরেই তিনি বিনাতারে তাঁর উদ্ভাবিত যন্ত্রের মাধ্যমে নিজের বাসা থেকে এক মাইল দূরে কলেজে সঙ্কেত আদান-প্রদানের ব্যবস্থা করলেন   জগদীশচন্দ্র তার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে সর্বপ্রথম প্রায় ৫ মিলিমিটার তরঙ্গ দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট  তরঙ্গ তৈরি করেন। এ ধরণের তরঙ্গকেই বলা হয়ে অতি ক্ষুদ্র তরঙ্গ বা মাউক্রোওয়েভ। আধুনিক রাডার, টেলিভিশন এবং মহাকাশ যোগাযোগের ক্ষেত্রে এই তরঙ্গের ভূমিকা অনস্বীকার্য। মূলত এর মাধ্যমেই বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ তথ্যের আদান প্রদান ঘটে থাকে।

wireless telegraphy সম্বন্ধে তাঁর আবিষ্কার ইংল্যান্ডে সাড়া পড়ে গিয়েছিল একটি বিখ্যাত ইলেকট্রিক কোম্পানী তাঁর পরামর্শ মত কাজ করে wireless telegraphy বিষয়ে প্রভূত উন্নতি করতে সক্ষম হয় অর্থনৈতিক কারণে জগদীশচন্দ্রের গবেষণা ব্যাহত হয়েছিল ১৮৯৬ সালে মার্কনী wireless telegraphy- প্রথম পেটেন্ট নিলেন 
  
এ বছর জুলাই মাসে ইউরোপে রওয়ানা হলেন বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র দশ বছর আগে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছিলেন গবেষণার ফলাফল ইউরোপীয়দের কাছে বলবেন, এই ইচ্ছে ছিল তাঁর কলকাতার টাউন হলে যে যন্ত্র থেকে তরঙ্গ তৈরি করেছিলেন তিনি, সেই যন্ত্রটি সাথে নিয়ে গেলেন ব্রিটেনে, জার্মানী ও ফ্রান্সের বিভিন্ন জায়গায় এ বিষয়ে বক্তৃতা করলেন শ্রোতাদের মাঝে সেসময় ছিল জে জে থমসন, যিনি ইলেকট্রনের আবিষ্কারক আর ছিলেন বিখ্যাত পদার্থবিদ লর্ড কেলভিন  

অবশেষে জয়ের মালা নিয়ে দেশে ফিরলেন বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু সেসময় তাঁকে অভিনন্দন জানাতে উপস্থিত হয়েছিলেন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র, ডা. নীলরতন সরকার, শিবনাথ শাস্ত্রী এবং আরও অনেকে
লন্ডনে বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র অনুভব করেছিলেন বিদেশে বিজ্ঞানীরা কত আধুনিক গবেষণাগারের সুযোগ পাচ্ছে তাঁর অনুরোধে লর্ড কেলভিন ও অন্য বিজ্ঞানীরা ভারত সচিবের কাছে গবেষণার সুযোগ-সুবিধা প্রদান করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছিলেন ভারতবর্ষে এসে তিনি এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা শুরু করলেন, মূলত তাঁরই প্রচেষ্টায় ১৯১৪ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজে একটি আধুনিক ল্যাবরেটরি গড়ে উঠল
 
ভারতবর্ষে এসে তিনি আবার অধ্যাপনার কাজে নিয়োজিত সেই সঙ্গে গবেষণাও চালিয়ে যেতে থাকলেন এ সময়েই তাঁর উদ্ভিদ বিষয়ক যুগান্তকারী গবেষণা আরম্ভ করেন ১৯০০ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক পদার্থবিদ্যা বিষয়ক সম্মেলনে যোগ দিলেন বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র এখানে তাঁর বক্তৃতায় বিষয় ছিল জীব ও জড়ের উপর বৈদ্যুতিক সাড়ার একাত্বতা সেখানে জীব ও জড়ের সম্পর্ক বিষয়ে ব্রিটিশ এসোসিয়েশনের ব্রাডফোর্ড সভায় বক্তৃতা দিলেন
 
বৈজ্ঞানিক গবেষণার ভিত্তিতে বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র ১৯০২ সালে রচনা করলেন ‘Responses in the living and non living’| ১৯০৬ সালে প্রকাশিত হল তাঁর দুটি গ্রন্থের মধ্যে তিনি প্রমাণ করলেন উদ্ভিদ বা প্রাণীকে কোনভাবে উত্তেজিত করলে তা থেকে একইরকম সাড়া মেলে তিনি ইংল্যান্ড এবং আমেরিকায় গেলেন আমেরিকার বিজ্ঞানীরা তাঁর আবিষ্কার সম্বন্ধে যথেষ্ট আগ্রহী ছিলেন ইংল্যান্ডের বিজ্ঞানীগণ ধীরে ধীরে গবেষণার সত্যতাকে স্বীকার করে নিচ্ছিলেন
 
দেশে ফিরেই বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র তৃতীয় পর্যায়ের গবেষণা শুরু করলেন উদ্ভিদ ও প্রাণীদের দেহকলার মধ্যে তুলনামূলক গবেষণা গবেষণার এ পর্যায়ে তিনি উদ্ভাবন করলেন তাঁর বিখ্যাত যন্ত্র ক্রেস্কোগ্রাফ এ যন্ত্রের মাধ্যমে কোন বস্তুর অতি সূক্ষ্মতম সঞ্চালনকেও বহুগুণ বৃদ্ধি করে দেখানো সম্ভবপর
 
আবার ১৯১৪ সালে তিনি চতুর্থবার ইংল্যান্ড গেলেন এ বার যাত্রার সময় তিনি সঙ্গে করে শুধু যে তাঁর বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি নিয়ে গেলেন সেই সঙ্গে লজ্জাবতী ও বনচাঁলড়াল গাছ এ গাছগুলো সহজে সাড়া দিতে পারে তিনি অক্সফোর্ড ও ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে, এছাড়া রয়েল সোসাইটিতেও তাঁর উদ্ভাসিত যন্ত্রের সাহায্যে প্রমাণ করলেন, জীবদেহের মত বৃক্ষেরও প্রাণ আছে, তারাও আঘাতে উত্তেজনায় অণুরণিত হয়
 
১৯১৩ সালে জগদীশচন্দ্রের চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার কথা ছিল কিন্তু তাঁর চাকরির মেয়াদ আরো দুবছর বাড়ানো হয় ১৯১৫ সালে সুদীর্ঘ ৩১ বছর অধ্যাপনা করার পর চাকরি জীবন থেকে অবসর নিলেন চাকরি জীবন থেকে অবসর নিলেও গবেষণার কাজ চলতে থাকলো এ সময় তিনি লন্ডনের রয়েল ইনস্টিটিউটের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আর এ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের আলোকে ভারতবর্ষে এ ধরনের গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ার পরিকল্পনা করলেন পরিচিতজনের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে তাঁর ইচ্ছার কথা প্রকাশ করলেন এ কাজে অনেক মানুষ এগিয়ে এলেন এছাড়া দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে ঘুরে জগদীশচন্দ্র অর্থ সঞ্চয় করলেন তাছাড়া তিনি নিজের সমস্ত জীবনের উপার্জিত অর্থ এ প্রতিষ্ঠানে দিলেন সরকারে তরফ থেকে বার্ষিক অনুদান নির্ধারণ করা হলো ১৯১৭ সালে ৩০ নভেম্বর জগদীশচন্দ্রের ৫৯তম জন্মদিনে প্রতিষ্ঠা হল বিজ্ঞানমন্দির তাঁর এ প্রতিষ্ঠান শুধু ভারতবর্ষ নয, সমগ্র বিশ্বের একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ গবেষণাগার
 
বিজ্ঞান শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে জগদীশ চন্দ্রের সফলতার কথা কর্মজীবন অংশেই উল্লেখিত হয়েছে। এছাড়া তিনি বিজ্ঞান গবেষণায়ও প্রভূত সাফল্য অর্জন করেছিলেন যার জন্য তার সুখ্যাতি তখনই ছড়িয়ে পড়েছিল। বাঙালিরাও বিজ্ঞান গবেষণার ক্ষেত্রে নিউটন-আইনস্টাইনের চেয়ে কম যায়না তিনি তা প্রমাণ করেন। জগদীশ চন্দ্র যে গ্যালিলিও-নিউটনের সমকক্ষ বিজ্ঞানী তার স্বীকৃতি দিয়েছিল লন্ডনের ডেইলি এক্সপ্রেস পত্রিকা, ১৯২৭ সালে। আর আইনস্টাইন তার সম্পর্কে নিজেই বলেছেনঃ
“জগদীশচন্দ্র যেসব অমূল্য তথ্য পৃথিবীকে উপহার দিয়েছেন তার যে কোনটির জন্য বিজয়স্তম্ভ স্থাপন করা উচিৎ”।
 
তার অসামান্য অবদানের জন্য দেশে বিদেশে বিভিন্ন সন্মাননায় ভূষিত হনঃ
  • নাইটহুড, ১৯১৬
  • রয়েল সোসাইটির ফেলো, ১৯২০
  • ভিয়েনা একাডেমি অফ সাইন্স-এর সদস্য, ১৯২৮
  • ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেস-এর ১৪তম অধিবেশনের সভাপতি, ১৯২৭
  • লিগ অফ ন্যাশন্‌স কমিটি ফর ইনটেলেকচুয়াল কো-অপারেশন -এর সদস্য
  • ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ সাইন্সেস অফ ইন্ডিয়া-এর প্রতিষাঠাতা ফেলো। এর বর্তমান নাম ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল সাইন্স একাডেমি।

তার রচনাবলী গুলিঃ

ইংরেজি ভাষা

  • Responses in the Living and Non-living (১৯০২)
  • Plant Responses as a Means of Physiological Investigations (১৯০৬)
  • Comparative Electrophysiology (১৯০৭)
  • Physiology of the Asent of Sap (১৯২৩)
  • Physiology of Photosynthesis (১৯২৪)
  • Nervous Mechanism of Plants (১৯২৫)
  • Collected Physical Papers (১৯২৭)
  • Motor Mechanism of Plants (১৯২৮)
  • Growth and Tropic Movement in Plants (১৯২৯)

বাংলা ভাষায়


ভারতবর্ষ এই মহান বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসুকে হারালেন ১৯৩৭ সালের ২৩ নভেম্বর

কিন্তু মৃত্যুর পূর্বে তিনি তাঁর লালিত স্বপ্ন পূরণ করতে সক্ষম হয়েছিলেনও বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে













তথ্য সংগৃহীত 

সোমবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৪

ডঃ মুসা বিন শমসের ওরফে নুলা মুসা





১৯৭১ সালের বাংলাদেশের প্রত্যন্ত জেলা ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার ফুলসুতি ইউনিয়নের কাজীকান্দা-হিয়াবলদী গ্রামের রাজাকার এই প্রিন্স মুসা বিন শমশের । সবাই যাকে চেনে নুলা মুসা নামে ।



আপনাদের বলে নেই যে, এই মুসা বিন শমশেরের নাম, কি করে নুলা মুসা হলো । নুলা মুসার বাম হাতের উপরের অংশটি জন্মগতভাবে খানিকটা বাঁকা ও সেটিকে সোজা করে রাখতে পারতনা সে । অনেকটা ঝুলিয়ে রাখতে হতো । সে কারনেই স্থানীয় লোকজন তাকে নুলা মুসাবলে সম্বোধন করে । তবে তার এই নামকরন টি মুক্তিযুদ্ধে তার ঘৃণ্য ভূমিকার পর-পরই হয়েছিলো।



এখন তার নাম ড. মুসা বিন শমশের হলেও সার্টিফিকেটের নাম এডিএম মুসা । নিজেকে ডক্টর বলে দাবী করলেও, ১৯৬৮ সালে ঈশান স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করে রাজেন্দ্র কলেজে ভর্তি হয়েছিল মুসা। ১৯৮৬ সালে মুসার নামের আগে ডক্টর যুক্ত হলেও উচ্চ-মাধ্যমিক পাসের কোনো প্রমাণ মেলেনি কোথাও!
 

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ডিসেম্বরেই মুসা মুক্তিযোদ্ধাদের ভয়ে ফরিদপুর থেকে পালিয়ে চলে যায় পাবনায়। সেখানে বড় ভাইয়ের শ্যালিকাকে বিয়ে করে ঢাকা-চট্টগ্রামে ছুটাছুটি করে। ঢাকার এক অবাঙ্গালিকে পাকিস্তানে পাঠাবার নাম করে তাঁর সহায়সম্পত্তি আত্মসাতের মাধ্যমে একপর্যায়ে ঢাকায় 'শাহবাজ ইন্টারন্যাশনাল' নামে আদম ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলে। এরপর বিদেশে লোক পাঠাবার নাম করে উত্তরবঙ্গের কয়েকশ' লোকের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে বিদেশে উধাও হয়ে যায়। বছর তিনেক পর ঢাকায় ফিরে 'ড্যাটকো' নামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে আবারও শুরু করে আদম ব্যবসা! এরশাদ আমলে শুরু হয় তার উত্থান। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি মুসাকে ।
  

এই মুসা বিন শমশের কতটা ভয়াবহ ও প্রভাবশালী সে সম্পর্কে আপনারা জানবেন এই পোস্টে । 



নুলা মুসার বাবার নাম ছিলো শমশের মোল্লা । আজকে নুলা মুসা যেমন তার নামের আগে প্রিন্স শব্দটি বসিয়েছে ঠিক তেমনি এইভাবেই তার বাবা শমশের মোল্লা নিজের নামের আগে পীর শব্দটি বসিয়েছিলো । এই ভন্ড ও তথাকথিত পীর ততকালীন সময়ে একজন আধ্যাত্নিক সাধক হয়ে উঠবার জন্য প্রাণ-পণ চেষ্টা করতে থাকে এবং প্রচার করে যে সে স্বপ্নে বিভিন্ন নির্দেশ পায় ও আল্লার সাথে তার একেবারে ডাইরেক্ট যোগাযোগ । বাংলাদেশের মানুষ খুব সহজেই এইসব বিশ্বাসে আক্রান্ত হয় এবং খুব স্বাভাবিকভাবেই শমশের মোল্লাকে বিশ্বাস করতে শুরু করে । পীর নামটি প্রকাশ করতে না করতেই ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় ও মেজর আকরাম কোরায়শীর নেতৃত্বে পাকিস্তানী হানাদারেরা ফরিদপুরে প্রবেশ করে ।( এখানে একটি কথা বলে নেয়া ভালো যে এই আকরাম কোরায়শী-ই হচ্ছে সেই ১৯১ জন যুদ্ধপরাধীদের একজন যাদের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে বিচারের কার্যক্রম শুরু হয়েছিলো এবং পরবর্তীতে বিতর্কিত সিমলা চুক্তির মাধ্যমে ছাড়া পেয়ে যায় । ) পাকিস্তানী আর্মি ফরিদপুরে ঢুকবার পর-পরি এই তথাকথিত ভন্ড পীর শমশের মোল্লার কথা শুনতে পায় এবং আকরাম কোরায়শী এই শমশের মোল্লার সাথে পরিচিত হয় । ঠিক সে সময়েই মোল্লা তার ছেলে নুলার সাথে আকরাম কোরায়শীকে পরিচয় করিয়ে দেয় এবং ফরিদপুরে হানাদারদের সাথে একাত্ন হয়ে তাদের সাহায্য করবে হিন্দুদের উতখাত করবার জন্য, সেই মর্মে তারা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় । এর আগেও আমরা জেনেছি যে রাজাকার শর্ষিনার ভন্ড পীর আবু জাফর সালেহ ( এই রাজাকার কিন্তু দুই দুবার স্বাধীনতা পদক পেয়েছে, হায় জাতি !!! ১৯৮০ সালে খুনী জিয়া ও ১৯৮৫ সালে লুইচ্চা এরশাদ) সাথে পাকিস্তানী হানাদারদের সখ্যের কথা । কোনো এক কারনে এই পাকিস্থানী হানাদারেরা এই পীর-ফকির এই জাতীয় নাম শুনে গলে যেত । ফরিদপুরের মানুষের কাছে কথিত আছে যে ভন্ড পীর শমশের মোল্লা পাকি সেনাদের মনোবোল বাড়াতে বিভিন্ন রকম দোয়া করে তাদের গায়ে ফুঁ দিত ।

এছাড়াও নুলা মুসা যখন স্কুলে পড়ত তখন করাচীতে একটি বিতর্ক প্রতিযোগিতায় এই নুলা শ্রেষ্ঠ বক্তার পুরষ্কার পায় এবং আইয়ুব খান সেই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলো । সে সময়েই এই খুদে সাপটি প্রথম নজরে আসে । পরবর্তীসময়ে ২১ শে এপ্রিল ১৯৭১ সালে নগরকান্দায় যেদিন পাকিস্তানী বাহিনী আক্রমণ চালায় সেদিন থেকেই বাবা শমশের মোল্লার হাত ধরে খুনী আকরাম কোরায়শীর সাথে হাত মেলায় এই নরপশু মুসা ।

মুসার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় শহরের মদনগোপাল আংগিনার চন্দ্রকান্ত নাথ, গৌরগোপাল আংঙ্গিনার বিজয় মজুমদার,টেপা খোলার কবির আহমেদ চৌধুরী,গুড় বাজারের শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ দুলাল, খোদাবক্স রোডের অপরেশ সাহা, ভোম্বল সাহা, বৈদ্যনাথ সাহাকে খুন করে এই পাকি হানাদার বাহিনী এই নুলা মুসার সহযোগিতায় । একাত্তরে এই নুলা মুসা যে একাই তার সব অপকর্ম করেছে নগরকান্দায় তা নয় । তার লুটপাটের সহযোগী হিসেবে যাদের নাম খুবই উল্লেখযোগ্য , তারা হলো , মজিদ বিহারী ,আবুল বিহারী ,কালু বিহারী, চান্দা, ভেটকা, আয়নাল, আইয়ূব, অনু,পান্নু, চন্দন,রবি,হাম্মাদ মৌলানা সহ অনেক পাকি দোসর । নিত্যানন্দ কবিরাজ, সুখেন্দু রায়,মুক্তিযোদ্ধা আজাদ সিদ্দীকি অহিভূষন পোদ্দার, ধীরেন সাহা, চন্দ্রকান্ত পোদ্দার সহ আরো অনেক নিরীহ মানুষের বাসায় আজকের ডক্টর প্রিন্স মুসা বিন শমশের আগুন ধরিয়ে দেয় । এই লাহিড়ীপাড়া,ওয়ারলেস পাড়া,শোভারামপুর সহ বিভিন্ন এলাকার নির্যাতিত মানুষের মুখে মুখে আজও সেই নির্যাতনের গল্প আর মুসার বিভিষীকাময় সে গল্প রূপকথার গল্পকেও হার মানায় তার দুই সময়ের কর্মকান্ডে । ১৯৭১ সালের রাজাকার নুলা মুসা আর বর্তমানে অসীম বিত্ত আর বৈভবের মালিক ডক্টর প্রিন্স মুসা ।

ডক্টর এম এ হাসানের ১৯১ জন পাকিস্তানী যুদ্ধপরাধী বইটিতে ফরিদপুর নগরকান্দা উপজেলার দায়িত্বে থাকা পাকি অফিসার মেজর আনসারী, মেজর আকরাম কোরায়শী ও সিপাহী রাশিদ খান (বেলুচ) সম্পর্কে সেই অঞ্চলেরই কিছু সাক্ষীর জবানবন্দীতে পাকি হানাদারদের তান্ডব এবং সেসময় নুলা মুসার প্রত্যক্ষ মদদ সম্পর্কে আরো জানা যায় । এম এ হাসানের ১৯১ পাকিস্তানী যুদ্ধপরাধীদে বইটির ৪৮ নাম্বার পৃষ্ঠা থেকে কিছু অংশ বলছি--
আমাদের গাড়ি গিয়ে থামল ফরিদপুর সার্কিট হাউসের ভেতরে। দেখলাম চেনা-অচেনা অনেককে সেখানে আটকে রাখা হয়েছে। আমাদেরকে একটা রুমের ভেতরে নিয়ে গেল। সেখানে পাকিস্তানি মেজর আকরাম কোরেশীর সঙ্গে আমাদের মুসা বিন শমসের ও নাজমা ক্ল স্টোরের মালিককে দেখলাম খোশ গল্প করছে। এই মেজরকে তখন চিনতাম না, পরে নাম জানতে পেরেছি। সিএন্ডবি ও পাবলিক হেলথের দুজন ড্রাইভার এবং অন্য ছজন আর্মিও সেখানে দাঁড়ানো ছিল। যাহোক কিছুক্ষণ পর সার্কিট হাউজে মেজর কোরেশীর রুমে আরও বারো-তেরো জন যুবককে ধরে আনল পাকি সেনেরা। তারপর তাদের সবাইকে বাইরে এনে রাস্তার পাশে লাইন করে দাঁড় করাল। আমরা রুমের ভেতর থেকেই সব দেখতে পারছিলাম। মুহূর্তের মধ্যে তাদের ওপর মেশিনগান চালিয়ে দেওয়া হল। আমরা চিন্তাই করিনি, এ রকম ভয়াবহ ঘটনা ঘটতে পারে। দেখলাম ধীরে ধীরে নিথর হয়ে আসছে দেহগুলো। আমাদেরও একই পরিণতি হবে ভেবে দুভাই ততক্ষণে কাঁপতে শুরু করেছি। এর পর তিন জন আর্মি আমাদের রুমে এসে ঢুকল। তাদের একজন বলল, আমাদেকে মারা হবে না। আরেকজন বলল, ‘মারা হবে না মানে? আমি নয় আদমি মেরেছি, এই শালাদেরকেও মারব।আমার তখন জ্ঞান হারানোর দশা। মুসা বিন শমসের আমাদেরকে ভালভাবেই চিনত।মেজর যখন আমাদের পরিচয় জিজ্ঞেস করল, তখন সে কোন কথাই বলল না। আর্মির সঙ্গে মুসার তখন অনেক খাতির। আমরা আশা করেছিলাম, সে কিছু একটা বলবে । কিন্তু তার মধ্যে কোন রকম প্রতিক্রিয়া দেখতে পেলাম না

নুলা মুসার নামে ১৯৭১ সালে একটি বড় অভিযোগ ছিলো, সে ফরিদপুরের তালমার অমূল্য কুন্ডু এবং কার্তিক সাহার বাড়ি থেকে লুট করে এনেছিলো প্রায় আট মন সোনা । উল্লেখ্য কার্তিক সাহা ও অমূল্য কুন্ডু স্বর্ণের ব্যাবসায়ী ছিলেন । মূলত পাকি মেজর আকরাম কোরায়শীর অনেকটা চামচা গোছের ভৃত্য ছিলো এই মুসা । কোরায়শীর বিভিন্ন মিশনের ফায়-ফরমাশ খাটাই ছিলো আজকের ডক্টর মুসা বিন শমশেরের প্রধান কাজ ।

মুসা বিন শমশের ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী হানাদার আকরাম কোরায়াশী ও আরো সৈন্যকে নিয়ে যখন ফরিদপুরের মহিম স্কুল সংলগ্ন ধর্মশালায় ঢুকে তার কেয়ারটেকার কেষ্টমন্ডলকে হত্যা করে, যখন সেই নিরীহ কেষ্টমন্ডলের চার কন্যা ননী,বেলী,সোহাগী ও লতাকে ধর্ষনের পর ধর্ষন করে রক্তাক্ত অবস্থায় পথে ফেলে যায় তখন বিধাতা কই ছিলেন জানি না ।( উল্লেখ্য সে সময় ননী আর বেলীকে পাকিস্তানী আর্মি তাদের ক্যাম্পে নিয়ে যায় ।) আমি এও জানিনা যখন ওই হানাদার আর্মি অফিসার ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামট এলাকার মদন গোপালের মেয়ে কমলা ঘোষকে ধর্ষন করে বীরত্বের বুক ফুলিয়ে চলে গিয়েছিলো, জানিনা তখন বিধাতা কোথায় ছিলেন । হায় বিধাতা !! পরবর্তীতে ওই চার বোন আর তাঁদের মা মাখন বালার স্থান হয় ফরিদপুরের পতিতা পল্লীতে । আজ স্বাধীনতার এত বছর পরে বুড়ো বটগাছের মতন বেঁচে আছেন আমাদের ওইসব জননীরা নিভৃতে আর নিরবে । ৪০ বছরের অশ্রু গালে আর চোখে নিয়ে তারা বেঁচে থাকবেন নিঃশ্ব হয়ে । এই-নিয়তি । ওইদিকে কমলা ঘোষের কি হয়েছিলো জানতে চান ?

কমলা ঘোষের স্বামী জানতে পারে তার স্ত্রীর লাঞ্চিত ও নির্যাতিত হবার ঘটনা । স্বভাবতই কুত্তার বাচ্চা স্বামী বঙ্গ জননী কমলাকে আর ঘরে নেয় নি । তেলাপোকা আর বীভৎস শুওরের বাচ্চার মত কমলাকে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলো সেই অমানুষ । ফলশ্রুতিতে কমলা দেশের বাইরে আশ্রয় নেয় স্ময়ের পরিক্রমায় । এখন তিনি দেশের বাইরে বেঁচে আছেন একা হয়ে । সে দুঃস্বপ্নকে তাড়া করে । একা একা ।

ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির তালিকায় ফরিদপুর জেলার প্রধান ১৩ জন রাজাকারের মধ্যে তার নাম আছে শুরুর দিকেই। কিন্তু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর ঘৃন্য রাজাকার মুসা বিন শমশের ওরফে নুলা মুসা নিজেকে রীতিমতোমুক্তিযুদ্ধের সংগঠকহিসেবে দাবি করে বসে আছে! ওয়ার ক্রাইম ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির আহ্বায়ক ডা. এমএ হাসান আওয়ামী লীগে যুদ্ধাপরাধী খোঁজার বিষয়ে বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করবো, দলের মর্যাদা অক্ষুণ্ন ও নিষ্কলুষ করার জন্য নিজেদের উদ্যোগেই জরুরি ভিত্তিতে একটি তদন্ত কমিটি করা উচিত।’ (আমাদের সময়, ২৮ এপ্রিল, ২০১০)

১৯৭১ সালের আগে এই নুলা মুসা ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগের পক্ষে মাইকিং করেছিলো । ১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলনেও তার ভুমিকা ছিলো বলে কথিত রয়েছে । ২১ শে এপ্রিল যখন ফরিদপুরে পাক সেনারা ঢোকে তখন এই নুলা মুসাই পাক আর্মিদের স্বাগত জানিয়েছিলো । ২২ শে এপ্রিল ১৯৭১ সালে এই আকরাম কোরায়শীর সাথে এক বৈঠকে এই নুলা মুসাকে দেখা যায় ।এই ঘটনার প্রতক্ষ্যদর্শী ছিলেন ফরিদপুরের মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম আবু ইউসুফ সিদ্দীক পাখি ।

মোটামুটি আপনাদের কল্পনারও বাইরে নুলা মুসার সম্পত্তি আর তার অর্থের পরিমাণ সম্পর্কে ধারনা করা , কেননা নুলা নিজেই এই সম্পদের প্রকৃত হিসেব জানে না । সংক্ষেপে বলছি নুলা মুসার ধন সম্পদের আর ক্ষমতার কথা !

ড. মুসা বিন শমসেরের ৭ বিলিয়ন ডলারের একাউন্ট ফ্রিজ করেছিল সুইস ব্যাংক।অনিয়মিত লেনদেনের অভিযোগ এনে এ হিসাব জব্দ করে সুইস কর্তৃপক্ষ। এনিয়ে আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তার লন্ডনস্থ আইনজীবিরা। সুইস ব্যাংকে আটকা ৫১ হাজার কোটি টাকা ফিরিয়ে আনতে প্রিন্স মুসার লবিং২০ ডিসেম্বর ২০১০ এর মানবজমিন প্রধান শিরোনাম এটি।

ফোর্বস ম্যাগাজিন অনুযায়ী মুসা বিন শমসেরই বাংলাদেশের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। তার মূল সম্পত্তি প্রায় ১২ বিলিয়ন ইউএস ডলারের উপরে। তিনি অস্ত্র সরবরাহকারী হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক পরিচিত।



তিনি হীরক খচিত জুতো পরেন যার প্রতি জোড়া লক্ষ ডলার বলে ধারনা করা হয়। তাঁর সংগ্রহে এমনি হাজারো রত্ন খচিত জুতো রয়েছে। তাঁর পরনের কয়েকটি সু্যট স্বর্ণ সুতা খচিত। ভারতীয় দৈনিক 'দি হিন্দু' পত্রিকায় এ নিয়ে প্রকাশিত এক বিশেষ প্রতিবেদনে লিখেছেন বিশিষ্ট সাংবাদিক রাশিদা ভাগৎ।

তিনি নিত্য গোসল করেন নির্জলা গোলাপ পানিতে। তিনি হচ্ছেন মুসা বিন শমসের। তিনি পৃথিবীর এক স্বল্প উন্নত রাষ্ট্র বাংলাদেশের নাগরিক এবং এখানেই তিনি বসবাস করেন।

আমি জানি এমন একজন সৌখিনদার ব্যক্তির কথা যার পোশাক, পছন্দ-অপছন্দ ও নিদের্াশ হেয়ালীপনা বৃটেনের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী স্যার এন্থনি ইডেনের মত। ঊনবিংশ শতাব্দির সেরা ফ্যাশনরাজ বিউব্রামেল এর সাথেই তাঁর কেবল তুলনা চলে।

আমরা আরো শুনেছি ফিলিপাইনের এক সময়ের ফাষ্ট লেডি ইমেল দ্য মারকোসের ফ্যাশন-প্রিয়তার কথা এবং যাঁর ওয়্যারড্রব ভরে থাকত ১০০ জোড়া সৌখিন জুতো। তবে কিন্তু মুসা বিন শমসেরের অবাক বিস্ময়কর বিলাসিতার কাছে ইমেল দ্য মারকোসের ফ্যাশন প্রীতি অনেকাংশে অলিক কল্পনা মাত্র।

এজন্যই বনেদী সংবাদ পত্র-পত্রিকায় তাঁর পরিচ্ছদ সম্পর্কে লিখেছে যে তাঁর সংগ্রহে অসংখ্য মূল্যবান সু্যট রয়েছে; তাঁকে কখনো এক সু্যট পরিহিত অবস্থায় দু'বার দেখা যায় না। এমনি মূল্যবান প্রতিটি সু্যটের দাম ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার পাউন্ড। যা শুধু তাঁর জন্য তৈরী করা হয়েছিল। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ডিজাইনার বলে খ্যাত প্রিওনী বেলভেস্ট এবং ইটালীর আবলা এবং ফ্যান্সিসকো স্মলটো ও খ্রিস্টিয়ান ডিয়রের বিশেষ ব্রান্ডের অতি মূল্যবান পোশাক-আশাক দিয়েই তাঁর সারি সারি ওয়্যারড্রব ভর্তি। তাঁর হাতের সবচেয়ে মূল্যবান ঘড়ির ডায়াল এবং ব্রেসলেট হচ্ছে হীরক খচিত। যার মূল্য অর্ধ মিলিয়ন ডলার এবং তাঁর সবচেয়ে মূল্যবান ঘড়ির বেল্ট, কাফলিঙ্ক-এর সেটের মূল্য ১.১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। কেবল তাঁর জন্যে প্রস্তুতকৃত এই মূল্যবান ঘড়িটি তৈরী করা হয়েছিল ২৭ মাসেরও বেশী সময় ধরে। বিশ্ব বিখ্যাত রোলেক্স কোম্পানী এই অত্যাশ্চার্য্য ঘড়িটির প্রস্তুতকারক।

কেবল মাত্র বড় বড় অংকের চেক সই করতে তিনি পুরো ২৪ ক্যারেট স্বর্ণ দিয়ে তৈরী মন্ট ব্ল্যাঙ্ক কলম ব্যবহার করে থাকেন। অতি মনোমুগ্ধকর এই কলমটিতে ৭৫০০ হীরক খন্ড বসানো রয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য ২৬০ হাজার মার্কিন ডলার। লন্ডনের দৈনিক দি সানডে টেলিগ্রাফ ম্যাগাজিনের এক জরিপে বলা হয়, এই আশ্চর্য্যজনক মূল্যবান ঘড়িটি পৃথিবীর তাবৎ বিখ্যাত ঘড়ির মাঝে সর্বোৎকৃষ্ট।

ডঃ মুসা তাঁর ব্যবসায়িক জীবনে কোন ব্যাংক থেকে কখনই কোন ঋণ গ্রহণ করেননি বরং তিনি ইউরোপিয়ান ব্যাংকেগুলোকে ঋণ দিয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া যায়। এ বিষয়টি ভারতের বিখ্যাত দি হিন্দু পত্রিকায় প্রকাশিত সাংবাদিক রাসিদা ভাগৎ-এর বিশেষ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল। পত্রিকান্তরে প্রকাশ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী বব ডোলকে তিনি তাঁর ব্যক্তিগত গালফ-ইস্টিম জেট বিমানটি নির্বাচনী প্রচারণার সাহায্যার্থে ধার দিয়েছিলেন। যদিও ডোল নির্বাচনে জয়ী হননি।

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে ডঃ মুসার চারিত্রিক গুনাবলী নিয়ে অসংখ্য প্রতিবেদন প্রকাশ পেয়েছে। এসব প্রতিবেদনে তাঁকে বিভিন্ন শিরোনামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সে সবের মধ্যে রয়েছে নানা মুখরোচক শিরোনামঃ "প্রাচ্যের রাজকুমারের রূপকথার গল্প", ''মুকুটহীন এক রাজার প্রতিকৃতি'', "বিশ্বের ধনী ও শক্তিধরদের বন্ধু"। কোনটার আখ্যায় আবার বলা হয়েছে, "বিলাসিতা যাঁর নিত্য জীবনের অঙ্গ।"

লন্ডনের দি সানডে ম্যাগাজিনে তাঁকে আখ্যায়িত করা হয়েছে এক আন্তর্জাতিক রহস্য মানব বলে। ইন্টারনেটের ওয়েব সাইটে তাঁকে "মহাজাগতিক যুগের প্রিন্স" বলা হয়েছে। টেলিগ্রাফ ম্যাগাজিনের উপ-শিরোনামে বলা হয়, "ডঃ মুসা বিন শমসের প্রচন্ড মাত্রার একজন ধনী এবং আত্মমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি।"

তাঁর গুলশানস্থ বিলাশবহুল প্রাসাদোপম ভবনের পাহারায় নিয়োজিত আছে কেতাদূরস্ত ও সশস্ত্র নিরাপত্তা প্রহরী দল। বলা হয় তাঁর ভবনের প্রতিটি আসবাবপত্র বিশেষভাবে ইটালি থেকে প্রস্তুতকৃত। তাঁর প্রাসাদের আভ্যন্তরীণ মূল্যবান সব কারুকার্য ৬ মাস অন্তর পরিবর্তন করা হয়। তাঁর রাজোচিত খাদ্য ভান্ডার সবসময় পরিপূর্ণ থাকে। একটি বিশেষ মজার ব্যাপার এই যে, বিশ্ব বরেণ্য এই ধনাঢ্য প্রিন্স জীবনে কখনও মদ্য স্পর্শ করেননি। পৃথিবীর সব শক্তিধর ও প্রভাবশালী নেতা ও ব্যক্তিত্বের কাছে তিনি অতি নিকটজন। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ সিনিয়র বুশ, টনি ব্লেয়ার, সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলৎসিন, মারগারেট থ্যাচার, ডেভিড ফ্রস্ট, নেলসন মেন্ডেলা তাঁর ঘনিষ্ট বন্ধু মহলের অনর্্তভুক্ত। মার্গারেট থ্যাচার, ডেভিড ফ্রস্ট এবং নেলসন ম্যান্ডেলা তাঁদের আত্মজীবনী গ্রন্থ সহস্তে স্বাক্ষর দিয়ে প্রিন্স মুসাকে উপহার দিয়েছেন।

এক সময়ে বৃটিশ পত্র-পত্রিকায় প্রয়াত প্রিন্সেস ডায়ানার সাথে তাঁর নাম জড়িত করে বেশ রসালো কিচ্ছা-কাহিনী ছাপিয়েছিল। মুসা বিন শমসেরকে অনেক জিজ্ঞাসাবাদ করে এসব ঘটনার সত্য উদঘাটিত হয়েছে। জাতীয় এবং আনর্্তজাতিকভাবে এ পর্যন্ত প্রকাশিত অনেক বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদনের মুখে তিনি এক বিরাট রহস্যঘেরা ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন। ১৯৯৪ সালে তিনি যখন বৃটেনের লেবার পার্টিতে ৫ মিলিয়ন পাউন্ড দান করতে প্রস্তাব দিয়েছিলেন তখনই তিনি বিশ্বময় সংবাদ মাধ্যমগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। কিন্তু তাঁর প্রস্তাবটি এড়ানো হয়েছিল শুধুমাত্র একটি কারণেই ঃ তিনি বৃটেনের ভূমিপুত্র নন।

তিনি আবারও বৃটিশ পত্র-পত্রিকায় ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছিলেন। উপলক্ষ্য ছিল তিনি এক প্রস্তাবে সে দেশের ১৫০০ একরের বিশাল ঐতিহ্যবাহী জমিদারী 'লুটন হু' ২৫ মিলিয়ন স্টালিং পাউন্ড দিয়ে ক্রয় করতে চেয়েছিলেন। আসল কথা হল, বৃটিশ সংবাদ মাধ্যমগুলো আফ্রিকা কিংবা এশিয়ার ধনী ব্যক্তিদের বৃটেনের ঐতিহ্যবাহী মূল্যবান সম্পত্তি কেনার আগ্রহটা আদৌ ভাল নজরে দেখে না। এ কারণেই মিশরীয় ধনাঢ্য ব্যক্তি ডোডি আল-ফায়েদ যখন লন্ডনের হ্যারডস্ ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোর ক্রয় করেন তখন সারা বৃটেনে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। তবে এখনো ডঃ মুসা বৃটিশ সংস্কৃতির একজন অকৃত্রিম প্রেমী হিসাবেই রয়েছেন।

তিনি মনে করেন, বৃটিশ সাম্রাজ্য বিশ্বের মানব সভ্যতাকে অনেক কিছু দান করেছে এবং তাঁর ধারণা বিশ্বময় বৃটিশ সাম্রাজ্যে অব্যাহত থাকলে মানব সভ্যতার আরো অশেষ উপকার হত। ডঃ মুসার এই মতামতটি অনেক দার্শনিকের কাছেও গ্রহণযোগ্য।

ডঃ মুসার অর্জিত বিশাল ধন-সম্পদ ও বিলাসিতার কল্পকাহিনী তাঁর শিক্ষাগত অর্জনকে আড়াল করেছে। তিনি ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে কৃতিত্বের সাথে পি,এইচ,ডি লাভ করেছেন।

তাঁর পর্বতসম সম্পদের মূল্য নির্ধারণ বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। ১ বিলিয়ন হতে ৩ বিলিয়ন ডলার কিংবা তারও বেশী বলে ধারণা করা হয়। যদি তা' হয়, কিভাবে তিনি এই লক্ষ কোটি টাকা অর্জন করলেন এটা এক মহা রহস্য হিসাবে রয়ে গেছে। জনৈক সাংবাদিক ডঃ মুসার অনেক আস্থা অর্জন করেছিলেন। সে কারণে তাকে তাঁর রক্ষিত সমস্ত স্বর্ণ, রৌপ্য, অলংকার ও মূল্যবান সম্পদ অবলোকনের সুযোগ দিয়েছিলেন। তার কাছে মনে হয়েছিল এসব যেন আরব্য রজনীর রাজা-মহারাজাদের স্তুপকৃত অত্যাশ্চার্য্য ধন-রত্নের মতো।

তাঁর সহধর্মীনি ফাতেমার অঢেল অলংকার এবং সম্পদ অর্জনের ব্যাপারে কিছুই জানানো হয়নি। তাঁর ব্যবসা সংক্রান্ত নিয়ে তিনি খুব স্বল্প কথাই বলে থাকেন। তাঁর বিপুল ধন-সম্পদ সম্পর্কে বলা হয়, এগুলো তার অস্ত্র ও আবাসন প্রকল্প থেকে অর্জিত ফসল। অবশ্যই তিনি স্বচ্ছতা ও বৈধতা নিয়ে অস্ত্রের ব্যবসা পরিচালনা করে থাকেন। কিন্তু বিস্তারিত আলোচনার অভাবে কেউ তাঁর বিশাল বিত্ত-বৈভবের কোন উপসংহার টানতে পারছে না।
 

এ বিশাল অর্থ তিনি গড়ে তুলেছেন আন্তর্জাতিক অস্ত্র, তেল ও ক্ষমতার দালালী (পাওয়ার ব্রোকারেজ) করে। বাংলাদেশে তার ড্যাটকো নামে জনশক্তি রফতানির একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
ড. মুসা ১৯৯৪ সালে সর্বপ্রথম তার বন্ধু ব্রিটেনের বিরোধী দলীয় নেতা (পরে প্রধানমন্ত্রী) টনিব্লেয়ারের নির্বাচনী ফান্ডে ৫০ লাখ পাউন্ড অনুদান দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে বিশ্ব দরবারে আলোচনায় উঠে আসেন। একজন বিদেশী নাগরিক হওয়ায় টনিব্লেয়ার অবশ্য সে অনুদান গ্রহণ করেননি। তার পরে নানা কর্মকান্ডের মাধ্যমে এ ব্যবসায়ী মাঝে মধ্যেই বিশ্ব মিডিয়ার আলোচনা বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছেন। লোক মুখে আছে তার বিচিত্র ও বর্ণাঢ্য জীবনের অনেক চমকপ্রদ কাহিনী। ১৯৯৭ সালে ড. মুসা বিন শমসের তার ইউরোপিয়ান সদর দপ্তর হিসেবে একবার আয়ারল্যান্ডের কালকিনি দুর্গ কিনতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সফল হননি।

মুসা বর্তমান বাস করছেন গুলশানে অবস্থিত তার প্রাসাদোপম বাড়িতে। এ বাড়িতে প্রায় প্রতিদিনই পার্টি থাকে। সেখানে সবসময় তার দেশি বেদেশি হাইপ্রোফাইল মেহমানরা উপস্থিত থাকেন। পার্টিতে খাবার পরিবেশনের জন্য রয়েছে প্রশিক্ষিত কয়েক ডজন সেফ। এরা সবাই রান্না-বান্না ও পরিবেশনার উপর উচ্চ ডিগ্রিধারী। বিখ্যাত কলম ও স্টেশনারী প্রস্তুত কারক প্রতিষ্ঠান মন্ট ব্লাঙ্ক নুলা মুসার জন্য একটি কলম বানিয়ে দিয়েছে যার মধ্যে রয়েছে ৭,২৫০ টি ছোট ছোট হীরা । এই কলম দিয়েই নুলা মুসা সব গুরুত্বপূর্ণ দলিল দস্তাবেজ,চুক্তি,ইত্যাদি সাক্ষর করে থাকে । তার হীরক খচিত জুতো রয়েছে অসংখ্য । পৃথিবীর সব বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার এই রাজাকারের জন্য স্যুটের ডিজাইন করে দেয় । ১৯৯৯ সালের দিকেই সম্ভবত, এই মুসা পুরো এটিএন বাংলা কয়েক ঘন্টার জন্য ভাড়া নিয়েছিলো শেরাটনে তার জন্মদিনের অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করবার জন্য । তার ব্যাক্তিগত জেট প্লেনটি ধার দেয়া হয়েছিলো আমেরিকার ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বব ডোলের জাতীয় নির্বাচনের সময় যাতায়াতের জন্য । ১৯৯৫ সালে মৃত্যু বরণ কারী রাশিয়ার জার হবার প্রার্থী ( যিনি স্পেনে লুকিয়ে ছিলেন) আলেক্সিস-২ ছিলো এই নুলা মুসার বিশ্বস্ত বন্ধু । কঙ্গোর প্রেসিডেন্ট এই নুলা মুসাকেই ফোন করে জানতে চায় তার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত কি হবে । রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলতসিন নিয়মিত খোজ নিয়ে জানত মুসা বিন শমশেরের খবরা খবর ।

পৃথিবীর হাজারো মানুষ নেলসন ম্যান্ডেলাকে সম্মান করেন । একজন জগত বিখ্যাত লেজেন্ড হিসেবে তিনি টিকে রয়েছেন আমাদের মাঝে । অথচ এই নেলসন ম্যান্ডেলা তার নিজের লেখা আত্নজীবনী এই নুলা মুসাকে উপহার দিয়েছে এবং সেখানে লিখেছে, “আমার প্রিয় বন্ধুকে। শুধু সেখানেও ব্যাপারটি শেষ হয়ে যেতে পারত । তা হয় নি । নেলসন ম্যান্ডেলা মুসার সাথে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ভাবে বিভিন্ন উপদেশও নিয়ে থাকেন ও তাদের ভেতর খুব ভালো সম্পর্ক রয়েছে ।

জানিনা টুঙ্গি পাড়া থেকে ফরিদপুর শহরের নগরকান্দা কতদূর । তবে বিভিন্ন মাধ্যমে শেখ সেলিমের জানার কথা এই নুলা মুসা রাজাকারের কথা। আপনারা জামাত শুয়োরের বাচ্চা এবং তাদের পা চাটা কুকুর সমর্থক গুলোকে চেনেন । তাদের নাম জানেন । আপনারা এও জানেন এখানে ছাগু নামকরণের ব্যাপারটি। অথচ শেখ সেলিম তার বড় ছেলে শেখ ফজলে ফাহিমের বিয়ে যখন নুলা মুসার মেয়ে যাহারা ন্যান্সির সাথে দেন তখন গণতন্ত্রের মানসকন্যা , বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা কোথায় ছিলেন? এই বিয়ে যে প্রেমের বিয়ে তাওতো নয় । সম্পূর্ন এরেঞ্জন্ড বিয়ে । তাহলে প্রেমে পড়লে বাপের কি করবার আছেএই যুক্তিও খাটে না । এই বিয়ের উকিল বাপ ছিলো আমাদের চির নবীন, ৮০ বছরের দাদাভাই লেফটেনেন্ট জেনারেল হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ ওরফে লুইচ্চা দাদাভাই। কি,চমকে গেলেন ?



যেই লোক ১৯৭১ সালে আমাদের বোন-মা কে ধর্ষন করে , উলংগ করে, আমাদের বাপ-চাচা-ভাইদের বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মেরে ফেলেছে সে কি করে এই দেশে দিব্যি বেঁচে থাকে ? কি করে এত ধন-সম্পদ, ক্ষমতার অধিকারী হয়? এই লোকটিই ঠিক ৪০ বছর আগে মেয়েদের ধরে ধরে ধর্ষন করত আর পাকি হানাদারদের কাছে দিয়ে আসত । যেই লোকটি এত অপরাধ করেছে তার মেয়েরই সাথে আবার বিয়ে হচ্ছে তথাকথিত মুক্তিযুদ্ধের পতাকা বাহী শেখ সেলিমের ছেলের । তার বড় ছেলে ববি হাজ্জাজ অক্সফোর্ড থেকে পড়ালেখা করে, ছোট ছেলে ব্যারিস্টার হয়ে যায় লন্ডন থেকে । কি করে তা সম্ভব হয় ? আপনারা জানুন, কি করে অর্থ দিয়ে আওয়ামীলীগ কেনা যায়, বিএনপি কেনা যায়, লেবার পার্টি কেনা যায়,লিবারেল পার্টি কেনা যায়, ডেমোক্রেট কেনা যায় । আপনারা জানুন অর্থ থাকলেই কি করে রাজাকারের তালিকা থেকে শেখ সেলিমের বেয়াই হয়ে পার পাওয়া যায় ।





সূত্রঃ
১. দৈনিক জনকন্ঠে (তুই রাজাকার)
২. দৈনিক মানবজমিন, ২০ ডিসেম্বর ২০১০
৩. ১৯১ পাকিস্তানী যুদ্ধপরাধী(এম এ হাসান)





Please visit   www.selfjudge.wordpress.com





তথ্য সংগৃহীত