বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর, ২০১৩

Love Bird পাখি পালনে ব্যাবসায়িক দিক




Love Bird  শান্তি প্রিয়, চঞ্চল, আনন্দ পূর্ণ ও দেখতে খুব সুন্দর একটি পাখি । 

Love Bird  টিয়া প্রজাতির পাখি । এই পাখিটির মূল আবাস স্থল আফ্রিকার উষ্ণ অঞ্চলএই পাখি বাংলাদেশের আবহায়াওয়ার সাথে খুব ভাল মানিয়ে চলতে পারে । খুব সহজেই এবং অল্প পরিসরে এর লালন পালন করা যায় । এই পাখি লালন পালন খরচ অনেক কম ।

 


আমাদের দেশে সহজেই লালন পালন করা যায় বিধায় ও দেখতে খুব সুন্দর ও সামাজিক পাখি বলে অনেকেই বাসায় পালন করেন ।

সারা পৃথিবীতে নয় জাতের লাভ বার্ড দেখা যায় , এর মধ্যে আট জাতের মূল আবাস স্থল আফ্রিকা এবং একটি জাতের মূল আবাস স্থল মাদাগাস্কার ।
 

Love Bird এর  generic  name  Agapornis” . Agapein মানে "to love" in Greek  Ornis  মানে "bird" in Latin .

তাই সারা বিশ্বে এখন এই পাখিকে Love Bird ( লাভ বার্ড ) হিসাবেই চিনে বা এই পাখির বর্তমান নামকরন Love Bird  
  
এই পাখিটি মাত্র ৫ থেকে ৭ ইঞ্চি বা ১৩ থেকে ১৭ সেন্টিমিটার লম্বা হয় । এরা ১০ থেকে ১২ বৎসর বাঁচে । 

আট জাতের লাভ বার্ড পাখির নাম ---
  • Abyssinian Love bird
  • Albino Love bird
  • Black Masked Love bird
  • Blue Masked Love bird
  • Dutch Blue Love bird
  • Fischer's Love bird
  • Lutino Love bird
  • Peach-faced Love bird

 
এদের মধ্যে চার জাতের লাভ বার্ড বেশি দেখা যায় –  
  Peach-faced Love bird








২। Masked Love birds
 







৩। Fischer's Love birds
 



৪। Lutino Love bird




তবে বর্তমানে ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির মধ্যে ক্রস করে নতুন নতুন রঙের ও নামের লাভ বার্ড পাখির জন্ম দিচ্ছে অনেকে ।
যেমনঃ –



লাভ বার্ড এর খাবারঃ
এরা সাধারনত কাউন, চিনা, বারজা,  তিসি, সূর্যমুখী ফুলের বিচি, কুসুম ফুলের বিচি, সরিষা, ধান,  বিভিন্ন ধরনের ফল, কচি ঘাসের পাতা ও সবজি ও বিভিন্ন ফল  খেতে পছন্দ করে । একটি পাখি দিনে প্রায় ৪০ থেকে ৬০ গ্রাম খাবার গ্রহন করে । 


এরা প্রতিদিন প্রচুর পানি পান করে থাকে । তাই সারাক্ষণ পানি সরবরহের ব্যাবস্থা করতে হবে ।  পাখির সঠিক পরিচর্যার জন্য  গ্রিট (বোন মিল (সিদ্ধ) ৫%, ঝিনুক ৪০%, লাইম স্টোন ৩৫%, গ্রাউন্ড লাইম স্টোন ৫%, লবণ ৪%, চারকোল ১০% এবং শিয়ান রেড ১% ) খেতে দিতে হবে ।
 এরা প্রতিদিন গোসল করতে পছন্দ করে । লাভ বার্ড অলস প্রকৃতির ও শান্তি প্রিয় পাখি , তাই এদের খুব নিরিবিলি পরিবেশে রাখতে হয় । 
বিশেষ লক্ষণীয় কতগুলি দিকঃ 
১ @ পাখির খাচায় যেন পলিথিন বা প্লাস্টিক জাতীয় পাত্র না থাকে । কারন এরা ওদের ধারাল দাত দিয়ে সারাক্ষণ কামড়ায় । কোন কারনে প্লাস্টিক কেটে খেয়ে ফেললে , অসুস্থ বা মারা যেতে পারে । 
২ @ খাচায় এই পাখি পালন করতে হলে  ৩২ x ২০ x ২০ ইঞ্চি একটি খাচায় এক জোড়া পাখি পালন করা যায় । এই পাখি বাসা নিয়া নিজেদের প্রচণ্ড মারামারি করে । একটি খাচায় দুই জোড়া পাখি পালন করলে নিজেরা মারামারি করে সবাই আহত হবে ।  তাই একটি খাচায় এক জোড়া বা তিন জোড়া পাখি পালতে হয় । তাতে করে মারামারি করার প্রবনতা হ্রাস পায় ।
একটি খাচায় তিন জোড়া পাখি থাকলে সবগুলি বাক্স বা কলসি একই উচ্চতায় দিতে হবে । নইলে বাসা নিয়া মারামারি করে সকলেই আহত হবে ।  
লাভ বার্ড এর পরিপূর্ণ বয়স হতে প্রায় ১০ মাস সময় লাগে , কখনও কখনও ১২/১৩ মাস সময় লাগে । এরা সাধারনত ১০/১১ মাস বয়সেই ডিম দেয় । লাভ বার্ডের ডিম দেওয়ার সময় হলে প্রতি জোড়া পাখির জন্য ৮”x ৮”x ৮” মাপের কাঠের বাক্স বা মাঝারি সাইজের পাখির জন্য তৈরি কলসি দিতে হবে ।
লাভ বার্ড প্রতিবারে ৫টি থেকে ৮ টি ডিম দিয়ে থাকে । এর মধ্যে সাধারনত ৪ টি বাচ্চা পাওয়া যায় । ডিম দেওয়ার ২২ – ২৫ দিনের মধ্যে ডিম থেকে বাচ্চা বের হয়ে আসে ডিম পারার দিন থেকে ৪০ থেকে ৫০ দিন লাগে এদের বাচ্চাদের মুক্ত করে দিতে । এর পরেই এরা আবার ডিম দেওয়ার জন্য তৈরি হয় । মানে বাচ্চা ২০ থেকে ২৫ দিন পাখির বাসার ভিতর থাকে ।
আবহাওয়া অনকুলে থাকলে ও পর্যাপ্ত পরিমান যত্ন নিলে লাভ বার্ড প্রতি ৩ মাস অন্তর অন্তর বৎসরে সাধারনত ৪ বার ডিম দেয় । 
       


এখন আসা যাক Love Bird পাখি পালনে ব্যাবসায়িক দিকঃ 

ব্যাবসায়িক ভাবে পালনের জন্য আমি কমপক্ষে ১০ জোড়া পাখি পালনের কথা বলব । যদি আরও বেশি যেমন ২০ জোড়া পাখি পালন করলে ব্যাবসায়িক দিক থেকে লাভবান হওয়া যাবে বেশি ।
একটি ৬ ফুট x .৫ ফুট খাচায় অনায়াসেই ১৮ বা জোড়া লাভ বার্ড পাখি পালন করা যায় ।

ব্যায়  

১ @   এক জোড়া লাভ বার্ড পাখির ( ১০ মাস বয়সী ) এর দাম  = ০০০ টাকা ।
        ১৮োড়া লাভ বার্ড পাখির  দাম পরবে = ৯০,০০০/ টাকা

২ @  ১৮ জোড়া লাভ বার্ড পাখির  খাবার বাবদ প্রতি মাসে আনুমানিক = ১৫০০/ টাকা । 

         ৬ মাস খাবার বাবদ খরচ পরবে আনুমানিক = ,০০০ টাকা ।

@  ৬ মাসে ভেক্সিন বাবদ খরচ পরবে আনুমানিক = ,০০০/ টাকা । 

৪ @  একটি ষ্টীলের খাচার দাম পড়বে = ১০,০০০ টাকা

৬ মাস পর্যন্ত আনুমানিক খরচ = ( ++৩+৪ ) = ১,১,০০০/ টাকা ।
( উল্লেখ্য যে, এই ব্যায় শুধু নিজের বসত বা ফ্লাটের  একটি রুমে করলে,
  কটি ১২/১০ ফুট রুমে প্রায় ৬০ জোড়া লাভ বার্ড পাখি পালন করা যাবে । )

  

লাভের দিক

লাভ বার্ড পাখির  বয়স যখন ১০ মাস হবে তখন থেকেই ডিম দেয়া শুরু করবে ।
অর্থাৎ পাখির বয়স যখন ১২  মাস হবে তখন ১৮ জোড়া পাখি থেকে প্রায় ৩৬ জোড়া বাচ্চা পাওয়া যাবে ।  

মাস বয়সী প্রতি জোড়া বাচ্চা বিক্রি করা যাবে = ০০/ টাকা করে ।
৩৬ জোড়া বাচ্চা বিক্রি করা যাবে =  ১,০৮,০০০/ টাকা ।

এই হিসাবে মোট ব্যায় তোলে আনতে সময় লাগবে আনুমানিক + =   মাস ।
এর পর থেকে প্রতি ৩ মাস অন্তর অন্তর  ১০০,০০০ টাকা বা প্রতি মাসে প্রায় ৩,০০০/ টাকা (খাবার ব্যায় বাদ দিয়ে) আয় করা যায় খুব সহজেই । 




যদি একটি রুমে ৬০ জোড়া Love Bird পাখি পরিপালন করা যায় ____

ব্যায় হবে পাখি ও ( ৬ মাসের খাবার ও ভ্যাক্সিন সহ ) আনুমানিক ৩,৩০,০০০/ টাকা ।
মোট প্রাক্কলিত ব্যায় উঠে আসতে সময় লাগবে মাত্র + = ৫ মাস ।
৩ মাসের ১০০ জোড়া বাচ্চা বিক্রি করা যাবে ৩,০০০x ১০০ = ৩,০০,০০০ টাকা ।
এর পর থেকে প্রতি মাসে খাবার ও ভ্যাক্সিন বাবদ আনুমানিক ব্যায় হবে = ৫,০০০/ টাকা
লাভ হবে প্রতি মাসে আনুমানিক = ৯০,০০০/ টাকা  ( ঘড় ভাড়া বাদে )




এবার আশা যাক Love Bird এর পরিচর্যার বিষয়ঃ 

খাচায় যখন পাখি পালন করা হয় তখন পাখি অনেক ভিটামিন- মিনারেল গ্রহন করতে পারে না , যা তারা বন-জঙ্গল থেকে পেত । এই সব ভিটামিন ও মিনারেল আমাদের অন্যান্য খাবারের সঙ্গে দিতে হবে । 

যেমন ___
১। মাল্টি ভিটামিন ২। ভিটামিন সি ৩। ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম , পসফরাস, খনিজ লবন, আয়রন, ৪। স্যালাইন ৫। AD3E ইত্যাদি । 

এই জাতীয় ভিটামিন ও মিনারেল সঠিক মানের আমাদের নিয়মিত সরবারাহ করতে হবে । নইলে পাখি অসুস্থ হবে ও প্রজননক্ষম  থাকবে না । 

প্রতি মাসে অন্তত পক্ষে একবার পাখিকে ডাক্তার দেখানো উচিত । তা ছাড়া পাখি অসুস্থ হলে ডাক্তারের পরামর্শ মাফিক এণ্টিবায়টিক বা সঠিক রুগের জন্য সঠিক ঐসধ খাওয়াতে হবে ।
 
Love Bird পাখির রোগ প্রতিরোধঃ 
১। পাখি উঠানোর আগে খামারসহ ব্যবহার্য্য সকল যন্ত্রপাতি সঠিকভাবে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। প্রথমে পানি দিয়ে পানির সাথে কার্যকরী জীবানুনাশক (  সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইড বা আয়োডিন দ্রবণ) মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
২। সুস্থ্য সবল পাখি সংগ্রহ করতে হবে। প্রয়োজনে বাহ্যিক পরজীবি নিধনের জন্য ০.৫% ম্যালাথিয়ন দ্রবণে পাখিকে গোসল করিয়ে নিতে হবে। এক্ষেত্রে পাখির মুখ এই দ্রবণে ডুবানো যাবে না। হাত দিয়ে মাথায় লাগিয়ে দিতে হবে। অন্তঃপরজীবি প্রতিরোধের জন্য কৃমিনাশক ঔষধ সেবন করাতে হবে।
৩। পাখির খোপ, দানাদার খাদ্য ও খনিজ মিশ্রণ সরবরাহের পাত্র, পানির পাত্র ও গোসল করার পাত্র এবং পাখির বসার স্ট্যান্ড নিয়মিত পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করতে হবে। জীবাণুমুক্ত খাবার এবং বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে হবে।

বি দ্রঃ পাখিকে রোগমুক্ত রাখতে পাখির খাচায় ও আশেপাশে পারলে প্রতিদিন বা তিন দিন পরপর বা সপ্তাহে একদিন জীবাণু নাশক স্প্রে করলে রোগ বালাই থেকে মুক্ত থাকা যায় ।  










কোন মন্তব্য নেই: