শুক্রবার, ৩ এপ্রিল, ২০১৫

কামসূত্রে পত্নীলাভ __ কামসূত্রঃ পর্ব – ২



-১ আদর্শ বধূ নির্বাচন  

আদর্শ বধূ নির্বাচন আমাদের দেশে একটি প্রকৃত সমস্যা হিসাবে রয়েছে
বিয়ে হয় অনেকটা ভাগ্যকে অবলম্বন করে তাই আমাদের দেশে প্রাচীন শাস্রে সুলক্ষণযুক্ত নর-নারীর বিচারে এত ঘটা ছিল

 
আদর্শ বধূ নির্বাচন সমস্যার ব্যাপারে যে যে বিষয়গুলো দেখা হত তা হলঃ
ভাবী বধুর রুপ ও তাহার চেহারার কথা
বধুর গায়ের রংসন্তানের দেহে মায়ের রং আসতে পারে, তাই ফর্সা নারীর কদর
শরীর সুগঠিত কিনা
হাঁটা চলা ভাল কিনা
চুল কত লম্বামাথা ঠিক আছে কিনা
বধুর স্বাভাবিক চরিত্র কেমনঝগড়াটে কিনা
বধূর কর্মকুশলতা
বিদ্যা চর্চা
অন্যান্য চর্চাসেলাই, বাদ্য, সঙ্গীত ইত্যাদি

বধূ নির্বাচন সমস্যাঃ
বধূ নির্বাচন প্রাচীন কালেই একটি সমস্যা বলে পরিগণিত হত শাস্রে বধূ নির্বাচনে সমস্যা সমাধানের জন্য যে যে কথা বলা হয়েছে তা নিম্নরুপ
বধূ স্বামীর সঙ্গে একই জাতির ও ধর্মের হবে প্রাচীন যুগে এক শ্রেণীর সঙ্গে অন্য শ্রেণীর বিবাহ প্রচলিত ছিল না
বধূ যে উচ্চ বংশের মেয়ে হবে এটা সর্বদাই কাম্য
মেয়ের চরিত্র বেশ উন্নত হবে
স্বামীর চেয়ে বধূর বয়স অন্তত পাঁচ বৎসরের ছোট হবে স্ত্রীর চেয়ে স্বামীর বিদ্যা কিছু বেশী থাকা উচিত
কোষ্ঠীতে উপযুক্ত ঘোটক বিচার শাস্রমতে করা হয়ে থাকে

 

 এ ছাড়া কন্যা নির্বাচনের সময় অন্য যে সব দিকে নজর রাখা হয়ে থাকে তাও বলা হচ্ছে
শাস্রে চেহারা ও গুনাগুন অনুযায়ী নারীকে তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়

উত্তমা কুমারী
মধ্যমা কুমারী
অধমা কুমারী

উত্তম কুমারীর লক্ষনঃ 

যে কন্যা শ্যামাঙ্গিনী, যার কেশ মনোহর, দেহে অল্প অল্প লোম বিরাজমান, সে কন্যা মনোহারিণী । মনোহর ভ্রূ-যুক্তা, সুশীল, মৃদু গতি শালিনী । সুদন্তা, পঙ্কজ নয়না, যার কটি ক্ষীণ, যার কথা অতি উত্তম ও মিষ্ট ভাষী বলে মনে করবে । যে কন্যা কুলের কল্যান কারিণী । যার দেহ নাতিদীর্ঘ, নাতিহ্রাস । যার বর্ণ শ্যাম, দেহ ক্ষীণ, গতি হংসিনীর মত । করতল রক্তপদ্মের মত, স্তন নাতিউচ্চ, নাতি ক্ষুদ্র, যোনিপৃষ্ঠ কচ্ছপাকৃতি, ধর্ম পরায়ন, পতিব্রতা, তাকেই উত্তমা রমণী বলে মনে করা চলে ।

মধ্যমা কুমারীর লক্ষনঃ

যার শরীর মধ্যবিত্ত, কেশ দীর্ঘ। যে রমণী সর্বদা আলস্য পরিত্যাগ করে । কি সুখ কি দুঃখ উভয় যার সমজ্ঞান । যে সর্বদা হাঁসি মুখে কথা বলে, যার নাভিদেশ গভীর, যে রমণী সকলের প্রতি মিষ্টি বাক্য প্রয়োগ করে, যে সদাচার পরায়ন, যার মতি সর্বদা ধর্মে প্রতিষ্ঠিত । অল্প মাত্র আহারেই যার তৃপ্তিবোধ হয়, সর্বজীবে যার আত্মজ্ঞান, যে রমণী গুরুভক্তি পরায়ন, যে রমণী সাধ্বী, তাকেই মধ্যমা রমণী বলে ।

অধমা কুমারীর লক্ষনঃ 

অধমা কুমারী হস্ত ও পদ ক্ষীণ, চক্ষু পিঙ্গল বর্ণ, দন্ত সুদীর্ঘ ও বিরল ( ফাকা ফাকা) এবং উদর বৃহৎ হয়ে থাকে এর শরীর অধিক লোমে পরিপূর্ণ এই রমণী অতি উচ্চস্বরে হাস্য করে এবং বেশী কথা বলে এই রমণী অতি নির্লজ্জ , সদা ক্রোধপূর্ণ এবং চিত্ত সদা বিকল
 
অধমা কুমারীর হস্ত ও পদ দীর্ঘ এবং কেশ খর্ব হয়ে থাকে এদের সমস্তই কুলক্ষনে পরিপূর্ণ অধমা রমণী কদাচ স্বধর্ম বিহিত সদাচারের অনুষ্ঠান করে না সুতরাং পরিত্যাগ করা কর্তব্য

যেখানে অধমা রমণী বাস করে, লক্ষ্মী কখনও সেখানে বিরাজ করে না যে লোক এহেন এহেন কন্যাকে বিবাহ করে, টাকে আজীবন মহাদুঃখ ভোগ করতে হয় অতএব সব সময় এরুপ নারীর সংসর্গ ত্যাগ করা উচিত যার সর্বাঙ্গ লোমে পরিপূর্ণ সেরুপ কন্যা কুলে উচু হলেও বিবাহযোগ্য নহে সে কন্যা কুলক্ষনাযুক্ত
যে কন্যা শুভ্র বর্না, অধিকাঙ্গী, রোগিণী, লোম শুন্য, অধিক রোমানিতো, বাচাল, পিঙ্গল বর্না, নক্ষত্র নাসিকা, বৃক্ষ নাসিকা, নদী নাম্নী, পক্ষী নাম্নী, সর্প নাম্নী, ভীষণ নাম্নী, সেরুপ কন্যাকে বিবাহ করা কর্তব্য নহে সেরুপ লক্ষণযুক্ত কন্যা শাস্রে কুলক্ষণা বলে কথিত হয়ে থাকে কিন্তু গঙ্গা, যমুনা, গোমতী, সরস্বতী এই সব নদীর নাম তুলসী ও মালতী এই দুই বৃক্ষের নাম এবং রেবতী, অশ্বিনী ও রোহিণী এই তিন নক্ষত্রের বেলায় কোন দোষ নয়
 
যে কন্যার চক্ষুদ্দয় ট্যারা ও চপল, যে কন্যা দুঃশীলা ও পিঙ্গলবর্ণ এবং হাস্যকালে গণ্ডস্থলে কুপাকার চিহ্ন দৃষ্টি হয় তাকে কামুকী বলে জানবে
 
বিবাহের বিচার্য বিষয়ঃ 

এবারে বিবাহের আগে কি কি বিষয়ের বিচার করা উচিত সে সম্বন্ধে বলছি
() যোগ্য বর কনে পছন্দ করা
() কন্যার উপযুক্ত শিক্ষা- দীক্ষা
() বরের উপযুক্ত উপার্জন ক্ষমতা ও জীবনে প্রতিষ্ঠা
() দুজনের শরীর গঠনে ঠিক মত মিল
() সম্ভব হলে ডাক্তার দ্বারা স্বাস্থ্য পরিক্ষা করানো
() দুজনের পূর্ণ বয়স আমাদের দেশে পুরুষের বয়স ২২-৩০ আর নারীর বয়স ১৮-২৫ হলে ভাল হয়
() ছেলে ও মেয়ের মধ্যে অন্তত ৫-৮ বছরের পার্থক্য থাকা উচিত
() দুজনের মনের গঠন ও চিন্তাধারার প্রতি লক্ষ্য রাখা উচিত
() বিবাহের আগে দুজনের কামশাস্র বিষয়ে পূর্ণ জ্ঞান থাকা উচিত
() বিবাহের আগে যেন কারও চারিত্রিক দোষ না থাকে
() দুজনের প্রকৃতি এক প্রকার কিনা সে বিষয়েও বিচার করা
() দুজনের আর্থিক অবস্থায় যেন বিরাট পার্থক্য না হয়

খুব গরীব ঘরের পুরুষের সঙ্গে খুব ধনী ঘরের মেয়ের ও খুব ধনী ঘরের পুরুষের সঙ্গে খুব গরীব ঘরের মেয়ের বিয়ে হলে পারিবারিক জীবন প্রায়ই সুখের হয় না
কোকো পণ্ডিতের মত হল সাধারন মানুষ পুরুষ বা নারীর রুপ, তাদের বংশ ও তাদের দেহের উচ্চতা দেখে বিয়ের বিষয় বিচার করেন কিন্তু এটা যে কত বড় ভ্রান্তি তা একটু চিন্তা করলে বুঝতে পারা যায়
পুরুষ বা নারীর ভেতরটা অর্থাৎ তাদের অন্তরের কথা বুঝতে বা হৃদয় দখল করতে পারে খুব কম সংখ্যক মানুষ তাই তাদের দুটি প্রকৃত সুখ মণ্ডিত হবে কি না , তা সঠিক বিচার না করে বিয়ে দিলে সুখের চেয়ে দুঃখই দেখা দেবার আসঙ্কা থাকেওনেক বেশী যখন বর-কনে পরস্পরকে দেখতে পায় না বিয়ের আগে, তখন বিচারকদের হাতে সবে সার্থক ও উপযুক্ত দম্পতি নির্বাচন
 
বিভিন্ন শুভাশুভ বিচারঃ 

যখন বরপক্ষরা কন্যা দেখতে যাবেন, তখন নিম্নলিখিত চিহ্ন গুলি তাদের অবশ্যই দেখা উচিত ।
১। কন্যাটি এই সময় ঘুমাচ্ছে বা কাঁদছে কিনা, কিংবা বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে কিনা ।
২। কন্যার নাম সহজে এবং প্রকৃতপক্ষে উচ্চারন করা যায় কিনা, টার নাম অকল্যান সূচক কিনা ।
৩। খবর নেওয়া উচিৎ, ঐ কন্যার আগে অপর কারও সাথে বিয়ের কথা পাকা হয়েছিল কিনা
কন্যার গায়ের রং পিঙ্গল বর্ণ কিনা তার মুখে সাদা সাদা দাগ আছে কিনা
কন্যার মুখ দেখতে পুরুষের মত যেন না হয়
তার মুখে চুল আছে কিনা
তার কাঁধ নিচে ঝুলে পরা কিনা
পা দুটি বাঁকা কিনা
কপাল বাইরে ঠেলে বের হয়েছে কিনা, অথবা খুব উঁচু কিনা
১০ তার স্তন দুটি অনুদ্ভিন্ন কিনা
১১ যদি কন্যা তার পিতার শবদাহ করে থাকে
১২ যদি কোনও পুরুষের সঙ্গে আগে যৌন মিলন করে থাকে এবং তা জানা যায়
১৩ যদি তার বিয়ের বয়স পার হয়ে গিয়ে থাকে
১৪ যদি কন্যা রুগ্না বা বোবা হয়
১৫ কন্যার সঙ্গে যদি কোনও সম্পর্ক যেমন খুড়তুতো কি মামাতুতো বোন ইত্যাদি থাকে
১৬ যদি কন্যা বরের চেয়ে খুব ছোট বা বর হয় (বয়সে) কন্যার এইসব লক্ষন থাকলে বিবাহ করা কখনও উচিৎ নয়  



-২ বিবাহান্তর কর্তব্য


নব বধূর প্রতি কর্তব্য নববধূর প্রতি অবশ্যই পালনীয় কতকগুলি কর্তব্যের নির্দেশ করা হয়েছে আমাদের শাস্ত্রে। শাস্ত্রমতে সেগুলি অতি অবশ্যই পালন করা উচিত। এখানে একে একে সেগুলি সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো।

 
১। নববধূ বাড়িতে প্রথম পদার্পণের পর প্রতিটি পরিজন তার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করা উচিত। এটি মনে রাখতে হবে, যেরকম তাকে দেখান হবে, তেমন আচরণ সে করবে। তাকে যদি প্রত্যেকে ভালবাসে, সেও প্রত্যেককে ভালবাসবে।
২। নববধূকে জোর করে বা হুকুম করে কোনও কাজ করাতে নেই। তাতে পরিবারের বা স্বামীর গৃহের প্রতি তার একটা বিরক্তির ভাব জন্মায়।
৩। নববধূ ইচ্ছা করে যদি কিছু কাজকর্ম সখ করে নিজের হাতে তুলে নেয় তাতে কোন বাধা দিতে নেই। তাতে তার মনে দুঃখ বা ব্যথা লাগতে পারে।
৪। নববধুর প্রতি তার স্বামীর খুব ভদ্র ভ্যবহার করা উচিত। এটা অবশ্য মনে রাখা কর্তব্য, স্বামীর ভালবাসাই বিবাহিতা নারীর জীবনে সবচেয়ে বেশী কাম্য। তাতে স্বামীন আহ্লাদ থেকে বঞ্চিত হলে কিছুতেই তার মনে শান্তি আসতে পারে না।
৫। নববধূ পিতামাতার স্নেহের আলয় ছেড়ে স্বামীগৃহে পদার্পণ করেছে একথা মনে রাখা উচিত। বিবাহের আগে সে পিতামাতাকে খুব ভালবাসত একথা অস্বীকার করা যায় না, তাই পিতামাতার নিন্দা তার কাছে মোটেই ভাল লাগে না- এতে সে মনে আঘাত পায়। তাই বিবাহিতা নববধূর সামনে কখনও তার পিতৃগৃহের নিন্দা করা উচিত নহে।
৬। ছোটখাটো আর্থিক বা ঐ ধরণের সামান্য বিষয় নিয়ে কখনও নববধূর মনে আঘাত দেওয়া উচিত নয়। এই কথা তুলে তার পিতাকে ছোট প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করা কোনও মতেই উচিত নয়। এই ধরনের আলোচনা সর্বদা বর্জনীয়।
৭। আদর, সোহাগ, প্রীতি ও সেই সঙ্গে শ্বশুর গৃহের প্রকৃত অবস্থার বিষয়ে নববধূকে জ্ঞান দান করা কর্তব্য। নববধূ যদি স্বামীর প্রকৃত অবস্থা বোঝে, তবে সে নিশ্চয়ই প্রকৃত অবস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেবার চেষ্টা করবে।
 ৮। নারীর কোমলতা, প্রেম, অভিমান এগুলি যে নারীর সহজাত বৃত্তি- নববধূকে তা বলা উচিত নয়। নববধূর বিশ্বাস উৎপাদন স্বামী কি করে নববধূর বিশ্বাস উৎপাদন করবে

      এ বিষেয়ে শাস্ত্রে যা বলা হয়েছে তা হচ্ছে-
১। স্বামী কখনও বাড়ির সম্বন্ধে কোনও মিথ্যা কথা নিজে নববধূকে কিছুতেই বলবে না- এটা অত্যন্ত অন্যায় এবং এর ফলে পরে সে বধূর কাছে ছোট হয়ে যায়।
২। স্বামী তার ব্যবহারের মধ্যে কোনও সময়েই স্ত্রীর প্রতি সহসা কামভাব প্রদর্শন করবে না।
৩। ধীরে ধীরে স্ত্রীর সঙ্গে নানা কথা বলে আনন্দ করবে এবং তার ফাঁকে ফাঁকে নিজের প্রকৃতি, বুদ্ধি ও সংযমের পরিচয় দেবে।
 ৪। প্রয়োজন হলে নববধূর প্রশংসা করবে- তার ব্যবহার, কথাবার্তা, রূপ-গুণের প্রশংসা করবে।
৫। নববধূ তার প্রতি ধীরে ধীরে আকৃষ্টা হলে, তা প্রকাশিত হবে তার ব্যবহার ও রতি-প্রকৃতিতে। তা না হলে জোর করে স্বামী যৌন আকর্ষণ বা দৃঢ়তা দেখাবে না।
 ৬। নববধূ নিজে থেকে প্রেম ও প্রীতি প্রকাশ করলে তার মন বুঝে স্বামী তার প্রতি চুম্বন, আলিঙ্গন ইত্যাদি ধীরভাবে করতে পারে, তবে দেখতে হবে সে তা চায় কিনা।
৭। নববধূ বিমুখ হলে তার প্রতি কখনও রূঢ় আচরণ বা কর্কশ বাক্য ব্যবহার করবে না।
৮। প্রয়োজন হলে বধূকে প্রসন্ন করার জন্যে তার কাছে সব নিজেকে নিচু করবে। শাস্ত্রে উল্লেখ আছে- কোনরকম রূঢ়তা ও কর্কশতা সর্বদা পরিত্যাজ্য।
৯। যখন নববধূ চুম্বন নেবে তারপর আলিঙ্গন ও ধীরে ধীরে তার সম্মতি নিয়ে মিলনের কথা উঠতে পারে।
১০। নববধূর যদি প্রথম ঋতু না হয়ে থাকে, কদাচ মিলন উচিত নয়। নারী ঋতুমতী হবার আগে পর্যন্ত সে কখনও মিলনের উপযুক্তা হয় না।
এখানে একটা কথা। আজকাল অধিকাংশ বিয়েই হয় নারীর ঋতুর পর-কিন্তু বাৎস্যায়নের আমলে তা হতো না। উপরের নিয়মগুলি পালন না করলে বালিকার মনে স্বামীর প্রতি ঘৃণা বা বিরক্তির ভাব জাগতে পারে- তাতে দাম্পত্য জীবন কখনও সুখের হয় না। যৌবনাগমন ও মাসিক ধর্ম নারী ও পুরুষ উভয়ের জীবনেই বিভিন্ন সময়ে যৌবনের সঞ্চার ঘটে থাকে। তবে যৌবন আগমন উভয়ের ঠিক একই সময়ে ঘটে না- বিভিন্ন সময়ে ঘটে। নারীর যৌবন আগমন ঘটে আগে- পুরুষের ঘটে কিছু পারে।
গ্রীষ্মপ্রধান দেশে পুরুষের যৌবন আগমন ঘটে আঠারো থেকে কুড়ি বছরের মধ্যে। শীতপ্রধান দেশে- অর্থাৎ ভারতের বহির্দেশে যুবকদের যৌবন আগমন ঘটে বাইশ থেকে পঁচিশ বছর বয়সে। নারীর যৌবন আগমন ঘটে গ্রীষ্মপ্রধান দেশে চৌদ্দ থেকে ষোল বছর বয়সে- আর শীতপ্রধান দেশে আঠারো থেকে কুড়ির মধ্যে। যৌবন ধর্মের তালিকা শীতপ্রধান দেশে যৌবন আগমন পুরুষ- ২২-২৫ নারী- ১৮-২০ গ্রীষ্মপ্রধান দেশে যৌবন আগমন পুরুষ- ১৮-২০ নারী- ১৪-১৬ শীতপ্রধান দেশে 
     যৌবন নিরোধন পুরুষ- ৬৫-৭০ নারী- ৫০-৫৫ গ্রীষ্মপ্রধান দেশে যৌবন নিরোধন পুরুষ- ৫৫-৬০ নারী- ৪৫-৫০ পুরুষের যৌবন আগমনের লক্ষণ অবশ্য মাঝে মাঝে উপরের প্রকৃতিগত নিয়মেও ব্যতিক্রম দেখা যায়।
পুরুষের যৌবন আগমন বিভিন্ন লক্ষণের মধ্য দিয়ে ফুটে ওঠে। যেমন-
(১) কষ্ঠস্বর ভারী হয়।
(২) গোঁফের মধ্যে রেখা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
 (৩) বগলে ও বসি-দেশে লোম দেখা যায়।
(৪) তাদের দেহের মধ্যে বীর্য্য বা শক্তি সৃষ্টি হয়।
(৫) মানসিক পরিবর্তন ঘটে।

নারীর যৌবন আগমনের লক্ষণ নারীর যৌবন আগমনের সঙ্গে সঙ্গে তার দেহে যে সব চিহ্ন ফুটে ওঠে তা হলোঃ- তাদের দৈহিক ও মানসিক পরিবর্তন।

১। দেহে নারী-সুলভ কমনীয়তা ফুটে ওঠে।
২। হাত, পা, জঙ্ঘন, নিতম্ব ইত্যাদিতে মেদ জমে ওঠে।
৩। বক্ষদেশ উন্নত হয়ে ওঠে।
৪। মানসিক পরিবর্তন দেখা দেয়।
৫। প্রায় আঠাশ দিন অন্তর মাসিক বা ঋতুস্রাব হয়ে থাকে। এই ঋতুস্রাব হলো নারীর যৌবন আগমনের সবচেয়ে বড় চিহ্ন। মাসিক বা ঋতু নারীর যৌবন আগমনর থেকে যৌবনের সীমা পর্যন্ত এই সময়ে প্রতি আঠাশ দিন অন্তর নারীর যোনি থেকে কিছুটা রক্ত ও শ্লেষ্মা বেরিয়ে আসেএকই বলা হয় মাসিক বা ঋতু।

বাৎস্যায়ন বলেন- এই ঋতু নারীর বিবাহের সূচনা বোঝায়। বাৎস্যায়নের মত বিবাহের সূচনার সময়, ঋতুস্রাবের ঠিক প্রারম্ভে। কিন্তু আজকাল ও বিধান প্রাই মানা হয় না- কারণ ভারত সরকার আঠারো বছরের আগে কোনও নারীর বিবাহ অসিদ্ধ বলে ঘোষনা করেছেন। ঋতুর সময়ে বিভিন্ন সতর্কতা ঋতুমতী নারীর সময় বা ঐ সময়ের পরে কতকগুলি বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা কর্তব্য। তা না হলে তার দৈহিক ও মানসিক নানা প্রকার ক্ষতি হতে পারে। এ বিষয়ে এখানে সংক্ষেপে আলোচনা করা হচ্ছে।

                   ঋতু যে একটি সাধারণ বস্তু নয়, তা আমাদের ভারতীয় সব শাস্ত্রকারদের বেশ জানা ছিল- তাই তাঁরা এটা মেনে চলতেন সব সময়ে। শাস্ত্রের ভাষায়ঃ- ঋতুমতী যদা নারী চণ্ডালী প্রথমেহনি। পাপীয়সী দ্বিতীয়ে চ তৃতীয়ে নষ্টরূপিনী ॥ উপস্বিনী চতুর্থে চ লাতা চৈব বিশুদ্ধতি। প্রথমেহ হ্নি অগত্যা চ গমনে জীবন ক্ষয় ॥ দিনভেদে ঋতুমতী নারীর বিভিন্ন নামকরণ করা হয়েছে ভারতীয় শাস্ত্রে। নারীর ঋতু হলে তিন দিন কোন নারীকে কি নামে ডাকা হয় এবং তার প্রকৃতি কি হয় তা বলা হয়েছে। যেদিন নারী জাতি প্রথম ঋতুমতী হয় সেদিন সে চণ্ডালিনীসদৃশা হয়ে থাকে। তেমনি দ্বিতীয় দিনে সে হয় মহাপাপীয়সী, তৃতীয় দিনে হয় নষ্টরূপী, চতুর্থ দিনে সে হয় উপস্বিনীসদৃশা। চতুর্থ দিনে নারী যথাবিধি স্নান করলে সে পবিত্রা হয়ে থাকে।
                      ঋতু হলে প্রথম দিন নারী স্পর্শ করবে না। সেই দিন উপগত হলে পরমায়ু হ্রাস য়ে থাকে। যদি দ্বিতীয় দিনে নারী গমন করা হয় তাহলে সেই পুরুষকে মহাপাপে লিপ্ত হতে হয়। তৃতীয় দিনেও নারীকে পরিত্যাগ করা উচিত। সেই দিন নারীকে স্পর্শ করলে সেই নারী বেশ্যাবৃত্তি অবলম্বন করে এবং সেই পুরুষকেও বেশ্যাগমনজনিত পাপে লিপ্ত তে হয়। চতুর্থ দিনে নারী স্নান করে বিশুদ্ধা হলে তারপর তাকে স্পর্শ করবে। ঋতুকালীন নিয়ম শাস্ত্রের এই কথাগুলির মধ্যে যে কতটা বাস্তবতা প্রচ্ছন্ন আছে তা একটু চিন্তা করলেই বোঝা যায়। তারপর ঋতুকালীন বিভিন্ন বিষয়ের ফলাফল বলা হচ্ছে।

 (ক) ঋতুর পরই নারীর জরায়ু থাকে নরম ও সংবেদনশীল। ঐ সময় কোন ব্যায়াম, দৌড় ঝাঁপ, ছুটাছুটি, লাফালাফি করা উচিত নয়।
 (খ) ঋতুর সময় নিয়মিতভাবে দৈহিক বিশ্রাম অবশ্য কর্তব্য। তাই আমাদের দেশে ঋতুর সময় তিন দিন পূর্ণভাবে নারীর অশৌচ পালন করা হয়ে থাকে। এর অর্থ আর কিছুই নয়। এই তিন দিন বিশেষ ভাবে গৃহকর্ম থেকে নারীকে বিশ্রাম দেওয়া কর্তব্য।
(গ) ঋতুর সময় ঋতুস্রাব মুছে ফেলার জন্যে বা রক্ত শুষে নেবার জন্যে অনেকে অত্যন্ত ময়লা কাপড়ের টুকরো ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকে এটি যে কত বড় ভুল জিনিস এবং এর জন্যে যে কতটা অনিষ্ট হতে পারে এটি তারা গভীরভাবে দেখবার অবসর পান না। যদি কাপড়ের বা কার্পাস তুলোর টুকরোতে কোন রোগের বা দুরারোগ্য ব্যাধির জীবাণু থাকে তবে তা যোনিনালী দিয়ে দেহের ভিতরে প্রবেশ করবে। এর ফলে জরায়ু বা গর্ভাশয় কঠিন পীড়ায় আক্রান্ত হতে পারে। এজন্য অনেক সময় ধনুষ্টংকার বা রতিজ রোগ বা অন্য কোন রোগ হতে পারে। ঋতুমতী নারীর তাই এ বিষয়ে সাবধান থাকা একান্ত প্রয়োজন। ঋতুমতী নারীর উত্তর ধৌত কার্পাস বস্ত্র ব্যবহার করা উচিত
(ঘ) ঋতুর সময় কখনও শরীরে ঠান্ডা লাগান উচিত নয়-রাত্রি জাগাও উচিত নয়। ঐ সময় শরীর দুর্বল থাকে। সহজেই ঠাণ্ডা লাগতে পারে। রাত জাগলেও শরীরের ক্ষতি হতে পারে।
(ঙ) ঋতুস্রাবের সময়ে পরিষ্কার কার্পাস টুকরো বা সাবান গরম জল ইত্যাদি দ্বারা পচা কাপড়ের টুকরো যোনিতে ব্যবহার করা উচিত।
 (চ) ঋতুস্রাবের সময় অন্ততঃ তিন চার দিন কোন পুরুষের সঙ্গে যৌন মিলনে ব্রতী হওয়া উচিত নয়। তাতে জরায়ু কোন না কোন ভাবে আহত হতে পারে। তার ফলে নানা ক্ষতি হতে পারে।
 (ছ) ঋতু কালীন মাটির পাত্রে জলপান, কঠোর বিছানায় শয়ন করা উচিত। এ সময়ে চুলে তেল দেওয়া, গন্ধ দ্রব্য বা সুগন্ধি বস্তু ব্যবহার করা উচিত নয়। এ সব পর্যন্ত শাস্ত্রীয় মতে নিষিদ্ধ।
(জ) যদিও আজকাল ও সব নিয়ম পালন করা হয় না। তবু এগুলি পালন করা উচিত। তার কারণ ঋতুকালে এমন কিছু করা উচিত নয়, যাতে নারী কামাতুর হয়ে সঙ্গমে লিপ্ত হতে পারে।



২-৩ বিবাহের চেষ্টা ও উপায়


বালিকা বয়স থেকে প্রেমালাপ কখনও কখনও এমন ঘটে থাকে যে, কোন তরুণ যুবক, বহু চেষ্ট করে অতিপ্রেত তরুণীকে বিয়ে করে উঠতে পারে না। নিম্নলিখিত ক্ষেত্রগুলিতে এরূপ হতে পারে।


 (১) যখন কোন লোক গুণবান হয়েও নির্ধন।
(২) যখন কোন লোক দেখতে সুন্দর বা গুণবান হয়েও প্রতিপত্তিশালী বন্ধু বা আত্নীয়ের অভাবে বিবাহ স্থির করতে পারে না।
(৩) যখন কোন লোক ধনশালী হয়েও অত্যন্ত কলহ পরায়ণ হয়।
(৪) যখন কোন যুবক তার পিতামাতা বা ভাইদের উপর নির্ভরশীল থাকে।
(৫) যখন কোন লোক দেখতে স্ত্রীলোকের মত। অন্য লোকের অন্তঃপুরে গিয়ে মিলতে পারে।-কিন্তু কেউ বর বলে গ্রাহ্য করে না। এরূপ ক্ষেত্রে সেই যুবক যাকে বিয়ে করতে চায়, বালিকা বয়স থেকেই সে বিষয়ে চেষ্টা করা উচিত।
                     দক্ষিণ ভারতে দেখা গেছে, কোন পিতৃমাতৃহীন বালক অন্য মানুষের ঘরে মানুষ হয়েও, এমন কন্যা বিবাহ করেছে, যে সে তা সাধারণভাবে করতে পারত না। কিন্তু তা ঘটেছে শুধু প্রেম-নিবেদন কৌশলে। কোনও কোনও বালক প্রেমালাপ করেও বালিকার মাকে মাতৃ সম্বোধনের কৌশলেও উচ্চস্তরের মেয়ে বিয়ে করতে পারে। যা অনেক ধরনবান ব্যক্তিও পারে না। অবশ্য এই বালক ও বালিকারা ছেলেবেলা থেকেই সাথী হওয়া চাই। তারপর দুজনের মধ্যে বন্ধুত্ব বেশ দৃঢ় হওয়া চাই, বাল্যকাল থেকে। দুজনে একসঙ্গে নানা খেলা করবে-ফুল তুলবে, পুতুল তৈরি করে খেলবে, নানা ফুলের মালা গাঁথবে, মেয়েটা-ছেলেটাকে ফুল তুলে দিয়ে সাহায্য করবে। তা ছাড়া চোর চোর খেলা, বিচি নিয়ে খেলা, পাখি ওড়ানো ইত্যাদি নানা প্রকার খেলা আছে।
 
এবারে এগুলি বিষয়ে বলা হচ্ছে। বাৎস্যায়ন নিম্নোক্ত খেলাগুলির কথা অনুমোদন করেছেন।
(১) চোর চোর খেলা- এই খেলায় একজন অন্যজনের চোখ বেঁধে দেয়। সহচর সহচরিরা কোন গুপ্ত স্থানের ভেতর লুকিয়ে পড়ে। তারপর তার চোখ খুলে দেওয়া হয়। তখন সে তাদের খুঁজতে আরম্ভ করে দেয়। একজনকে খুঁজে বের করে তাকে ছুঁয়ে দিলেই সে চোর হবে। সাধারণতঃ প্রেমিক প্রেমিকা পরস্পরকে খুঁজে বের করতে চেষ্টা করে-‌
(২) বিচি নিয়ে খেলা- বিভিন্ন ফলের বিচি নিয়ে এই খেলা হয়। একজন হাতে কিছু বিচি নিয়ে প্রশ্ন করে, জোড় না বেজোড় তারপর সে হয়ত উত্তরে বলল জোড়। তখন খুলে গুণে দেখা হয়। কথা মিলে গেলে সে জিতল-অন্যথায় হেরে গেল।
(৩) পাখি ওড়ান- সব খেলোয়াড় হাতে হাত দিয়ে দাঁড়ায়-একজন ঝাপটা দিয়ে দৌড়াতে শুরু করে দেয়।
(৪) লবণ বীথিকা- বাৎস্যায়নের সময়ও খেলা ছিল-বর্তমানে আছে কিনা জানা নেই। একদল ছেলেমেয়ে একটি লবণের ছোট স্তূপ তৈরি করে। অন্য দল তাদের ধরবার চেষ্টা করে লবণের স্তূপটি জয় করতে চায়। তারা কিছু লবণ চুরি করে পালায়-আগের দল তাদের ধরবার চেষ্টা করে।
(৫) গম নিয়ে খেলা- গম ও চাল একত্র মিশিয়ে দেয়। তারপর তা পৃথক পৃথক করার চেষ্টা।
(৬) কানামাছি খেলা- এই খেলার বর্তমান নাম কানামাছি খেলা। খেলোয়াড়দের একজনের চোখ বেঁধে দেওয়া হয়ে থাকে। তারপর তার মাথায় সকলে থাবড়া মারতে থাকে। সে যদি চোঁখ বাঁধা অবস্থায় একজনকে ধরতে পারে বা তার নাম বলতে পারে তখন সে আবার কাণাষাঁড় হবে। তখন আবার তার চোখ বেঁধে এইভাবে খেলা চলবে।
কৈশোর প্রেম এইভাবে নানা খেলা ইত্যাদির মধ্য দিয়ে তরুণ প্রেমিকের উচিত প্রেমাস্পদকে লাভ করার চেষ্টা করা। তাছাড়া যারা একটু বয়সে বেড়েছে তারা তাদের অভিপ্সীতার সখা বা বাল্যবন্ধুর সঙ্গে আলাপ পরিচয় করবে। যদি অভিস্পীতার কোন ধাত্রী কন্যা থাকে, তার সাহায্যে তার দেখা পেতে হবে। বা কোনও নারীর সাহায্যে ঐ নারীর সঙ্গে দেখা করবে। আর যদি কোন বাধা না থাকে স্বাভাবিক ভাবে দেখা করবে। কৈশোর প্রেমের কাজ প্রেমিকের কাজ প্রেমিকাকে সর্বদা সুখী করে রাখা। তরুণী বা কিশোরী যা চায় তাকে তাই জোগাড় করে এনে দিতে হবে। যে সব খেলার জিনিস প্রেমিকা কোথাও পায় না, তা জোগাড় করে দিতে হবে। নানাবিধ খেলনা জোগাড়ে খুব সাবধান্তকোন পুরুষ বন্ধুর সাহায্য না নেওয়া হয় যেন। তা হলে সে পরে উক্ত প্রেমিকার প্রতি আকৃষ্ট হতে পারে।
 
    স্থান বা কাল অনুযায়ী প্রসাধন দ্রব্য, গন্ধদ্রব্য,কুমকুম্‌,চন্দন ইত্যাদিও জোগাড় করে দেওয়া উচিত। ওসব কিন্তু করতে হবে খুব নিভৃতে, যাতে আর পাঁচজন জানাতে না পারে। প্রেমাস্পদকে চুপি চুপি বলতে হবে-তোমাকে যা দিচ্ছি তা যেন কাউকে বলো না। যদি প্রেমিকা বলে-কেন? তার উত্তরে বলতে হবে-তোমাকে আমার ভাল লাগে-তাই বলে তা কি সকলকে বলা উচিত? যখন তরুণীর মন আরও জয় হয়েছে দেখবে, তখন নানা ম্যাজিক যাদুবিদ্যা ইত্যাদি দেখাবে। যদি গান বা আবৃত্তি জান, গোপনে তাকে বা তার সখীদের সহ তাকে গান বা আবৃত্তি ধীরে ধীরে শোনাবে। যখন শরৎ বা বসন্ত কালে আসে, পৃথিবী যখন চাঁদের আলো আর মন্দ মধুর বাতাসে ভেসে আসে, তখন নিরালায় প্রেমিকাকে ফুলের মালা গন্ধদ্রব্য উপহার দিবে। তার সঙ্গে মিষ্ট সুরে নানা কথা বলবে।
 
এইভাবে নানা কাজের মাধ্যমে বুঝতে হবে যে নায়িকার মন টলেছে কি না। নায়িকার প্রেমের লক্ষণ নারীর কাম্য পুরুষের সঙ্গে দেখা হলে সে মুখের দিকে তাকায় না। যদি হঠাৎ কখনো দেখা হয় তাহলেও সে মাথা নামিয়ে নিয়ে চলে যায় বা আড়চোখে তাকায়। তবে মনের প্রেম জানাবার জন্য সে হয়ত কাপড় ঘুরিয়ে পরার অছিলায় দেহের অংশ যেমন স্তন, কাঁধ বা বগল নায়ককে দেখাতে পারে। এটি তাকে আকর্ষণের জন্যে। যদি নারী দেখে যে তার প্রেমের মানুষটি তাকে ঠিক দেখতে না পেয়ে অন্যমনস্কভাবে চলে যাচ্ছে, তখন নারী দূর থেকে তার দিকে অজ্ঞাতে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। যদি প্রেমিক কোনও কিছু জিজ্ঞাসা করে, নারী ধীরভাবে কিন্তু সংক্ষেপে তার জবাব দেয়। নায়িকা কেবলই তার কাছে কাছে থাকতে চায়-যদি নায়ক কোনও সময় একটু দূরে থাকে তা হলে নায়িকা তার আত্নীয়ের সঙ্গে কথা বলে -কিন্তু আড়চোখে নায়কের দিকে তাকায়। সে নায়কের কাছ থেকে সরতে চায় না-কোন সামান্য বিষয়ের অজুহাতে বা কোনও অছিলা ধরে নায়কের সঙ্গে কথা বলতে সে আগ্রান্বিত হয়। হয়তো সখীদের চুল নিয়ে তা গোছাতে গোছাতে প্রেমাস্পদের কাছে সময় কাটায়।
 
যে প্রেমিকের বন্ধুদের ওপর বিশ্বাস রাখে-তাদের প্রতি সম্মানসূচকভাবে কথা বলে। প্রেমিকের পরিচারকের কথা মন দিয়ে শোনে-তার সঙ্গে নিজের পরিচারকের মত ব্যবহার করে থাকে। নায়কের সঙ্গে নানা খেলা করতে চায়-যেমন তাস, পাশা ইত্যাদি- অবশ্য একটু পরিচয় হলে এটি হয়। নায়ক কোনও বস্তু নায়িকার কাছে গচ্ছিত রাখতে দিরে সে তা বেশ যত্ন সহকারে রেখে দেয়। বেশভূষা করলেই নারী চায় তার প্রেমাস্পদকে সেই সব বেশভূষা দেখাতে। ঐ নায়ক যদি তার বেশভূষার প্রশংসা করে, তাতে সে মহাখুশী হয়। যদি নায়ক বেশভূষার প্রশংসা না করে-তবে সে মনে করে তা মোটেই ভাল হয়নি। সে পরে সেই বেশ পরতে চায় না। নায়কের প্রতি বিরূপ মনোভাবও আসতে পারে। নায়ক যদি তাকে কোনও বেশ বা অলংকার উপহার দেয়, নায়িকা সেগুলি পরিধান করে বাইরে বা কোনও উৎসবে যেতে খুব ভালবাসে।
যদি তার নিজের বাড়িতে অপর কোনও ভদ্রলোকের সঙ্গে তার বিয়ের কথাবার্তা হয়, তখন সে ভারি বিষণ্ন হয়ে ওঠে যাতে ও বিয়ে না হয় বা ভেঙ্গে যায়। আর এ বিয়ে যাতে না হয় সেই চেষ্টা করে। এছাড়া নায়ককে দূর থেকে দেখলে, তার কন্ঠস্বর শুনলে বা গান শুনলে সে খুব খুশী হয়ে ওঠে। এ সময় সে বেশ হাসিখুশী থাকে। অন্য সময়ে দূরে থাকলে সে কি যেন চিন্তা করতে থাকে। যদি কোনও লোক নায়কের কোনও গুণের প্রশংসা করে, তবে নায়িকা খুশী হয়। নায়ক কোন বড় পরীক্ষায় পাশ করলে বা কোন উচ্চ সম্মান লাভ করেছে শুনতে পেলে নায়িকা খুবই খুশী হয়ে ওঠে। নায়ক কোনও অন্যায় কাজ করেছে শুনলে, সে তা প্রায় বিশ্বাস করে না-তবু সে মনে মনে বিষন্ন ও দুঃখিত হয়ে ওঠে। নায়িকার মনোভাব বুঝে চালচলন ও কাজকর্ম করা নায়কের উচিত। তার ভালবাসার নায়িকাকে বিয়ে করার জন্যে সর্ব প্রকারে চেষ্ট ও যত্ন করবে। বাৎস্যায়ন আরও বলেন্তবাল্যের বন্ধুকে বাল্যের খেলার মাধ্যমে বিয়ে করা উচিত। যুবকদের উচিত, যৌবন সুলভ কাম ক্রিয়ার সব চিহ্ন দেখলে সেই যুবতীকে লাভ করার জন্যে সর্ব প্রকার চেষ্টা করে। আর বর্ষীয়সীদের উচিত তাদের বিশ্বস্ত সখীদের মাধ্যমে পুরুষকে লাভ করা।



২-৪ প্রেম নিবেদন


বাইরের সাহায্য ছাড়া যুবক-যুবতীদের প্রেম নিবেদন যখন কোনও তরুণী তার হাবভাবে বা ব্যবহারে আর এক যুবকের প্রতি আসক্তি দেখায়, তখন ঐ যুবক আর কোনবও ঘটক বা মধ্যবর্ত্তী দূতের সাহায্য না নিয়ে নিজেই ঐ যুবতীকে লাভ করবার ব্যবস্থা করবে। পাশা খেলা বা তাস খেলতে খেলতে ছলনা করে যুবক যুবতীর সঙ্গে ঝগড়া আরম্ভ করতে পারে। তখন যুবতী নিশ্চয়ই তার আকারে প্রকারে নানা রকম কামক্রিয়ার সূচনা করতে পারে।

 
অবসর পেলেই ঐ প্রেমিক যুবক যুবতীকে আল্‌গা আল্‌গা ভাবে অঙ্গ স্পর্শ করবে। তখন সে হয়তো এমন ছবি ঐ নায়িকাকে দেখাতে পারে যাতে দুটি মূর্ত্তি (একটি নারী একটি পুরুষ) পরস্পর আলিঙ্গন অবস্থায় অঙ্কত। কোন মিলনের ছবি দেখিয়ে নায়িকাকে নায়ক তার মনের ইচ্ছা বোঝাতে পারে। অথবা নদীতে বা দীঘিতে দুজনে স্নান করার সময় নায়ক একটু তফাতে ডুব মেরে একেবারে নারীর অঙ্গ ঘেঁসে উঠতে পারে। গা ঘেঁসে দূরে যেয়েও উঠতে পারে। এতে প্রেমাকর্ষণ বাড়ে।
 
বসন্ত উৎসবের সময় কোনও পাতায় তার মনের ইচ্ছার ছবি এঁকে তা ঐ প্রেমিকাকে দেখিয়ে তার মনের কথাটা জানাতে পারে। ঐ যুবক তার প্রেমিকাকে বলতে পারে যে তাকে না পেলে বড় মন খারাপ হয়ে যায়। ঘুম আসে না, ঘুমোলে সে তাকে স্বপ্ন দেখে। থিয়েটার বা যাত্রা দেখতে গিয়ে কোনও ছল করে সে ধীরে ধীরে তার অঙ্গ স্পর্শ করবে। খুব আস্তে আস্তে তার পায়ের বুড়ো আঙ্গুল নিজের আঙ্গুলে দিয়ে চেপে ধরবে। যে কোন নিশানাতেই নিজের মনের ভাব নায়িকাকে জানাবে-আমি তোমাকে ভুলতে পারি না। এসো দুজনে একসঙ্গে থাকি। যখন নায়ক বুঝবে-নায়িকা সত্যিই তার প্রতি আসক্ত তখন সে অসুখের ভান করবে। নায়িকাকে ডেকে পাঠাবে-নায়িকা হয়ত এসে মাথায় গায়ে হাত বুলাবে। তখন নায়ক বলবে-উঃ কি আরাম। এত ওষুধ খাওয়া হলো, তাতে কিছুই হলো না। তোমার সামান্য স্পর্শে আমি খুব আনন্দ পেলাম, আমি অনেক সুস্থ। তারপর সে নায়িকার অনেক প্রশংসা করবে। 

          এইভাবে ধীরে ধীরে নায়িকা আকৃষ্ট হলে দুজনে কোনও দিন নিভৃতে থাকাকালে নায়ন যৌন কার্যের কথা বলবে। এটি অন্ধকারে করা উচিত-কারণ অন্ধকারে নায়িকাদের প্রেম কামনা বৃদ্ধি পায়। একান্ত কিছুতেই স্বীকৃতি না পেলে নায়িকার কোন সখী বা সাথীদের সাহায্য নেওয়া উচিত। যখন কোনও তরুণী সাধারণ কোন জায়গায়, দেব মন্দির কিংবা উৎসবের জায়গায় কোনও তরুণের প্রতি ভালবাসা দেখায় (যমন চাউনি, হাসি খুশি ইত্যাদি) তখন বুঝতে হবে ঐ তরুণ ইচ্ছুক হলেই তরুণীটিকে সে লাভ করতে পারে। শুধু চাই ধৈর্য্য, কৌশল ও অধ্যবসায়। ইচ্ছুক নারীদের কর্তব্য যখন কোনও নারী তার মনের মত পুরুষ পেতে ইচ্ছুক হয়, তখন এমনও হতে পারে যে ঐ তরুণীকে সে কিছুতেই যোগাড় করতে পারে না।
 
এরূপ ঘটনা নিম্নলিখিত ক্ষেত্রগুলিতে ঘটতে পারে। যথা-
১। কোন সম্ভ্রান্ত কন্যা, সুন্দরী, গুণবতী কিন্তু আর্থিক অভাবগ্রস্ত।
২। নারী গুণবতী, সুন্দরী কিন্তু উচ্চবংশের নয়।
৩। পিতৃমাতৃহীন, মাতুলালয়ে প্রতিপালিত।
৪। স্বামী জোগাড় করে দেবার লোকের অভাব।
৫। বয়সে বিবাহ যোগ্যের হয়ে বেশি।
 
        এইসব ক্ষেত্রে হলে নিজের চেষ্টা করে তার মনোমত প্রতি যোগাড় করে নেবে। সে তখন একজন পরিশ্রমী, উদ্যমশীল ও সুশ্রী তরুণকে মনে মনে ঠিক করে নেবে। হয়তো বাল্যকালে যে সব বালকের সঙ্গে সে খেলাধূলা করেছিল, তাদের একজনকে ঠিক করে নিতে পারে। অথবা এমন যুবককে মনে মনে ঠিক করবে-যে তার প্রতি কিছু কিছু ইশারায় আসক্ত হয়েছে। সেই যুবক এমন চিহ্ন প্রকাশ করেছে যে, নায়িকার মত পেলে সে তাকে বাবা মার মতের বিরুদ্ধেই বিয়ে করতে পারে। তাকে পাবার জন্যে নিজের পৈতৃক ধন্তসম্পত্তিও বিসর্জন দিতে পারে। এমন কি সমাজের নিন্দা বা নিষেধাজ্ঞা সে অগ্রাহ্য করতে পারে।
 
মনে মনে এমনি পাত্র ঠিক করে সে সেই তরুণের সঙ্গে নিভৃতে দেখা করবে। হাব ভাব ইঙ্গিতে সে তাকে আকর্ষণ করতে চেষ্টা করবে। সুযোগ পেলে সে গোপনে নায়ককে ফুলের মালা বা গন্ধ দ্রব্য উপহার দিতে পারে। নায়িকা নিভৃতে নায়ককে মনের ভাব জানাবে-তার কাণের কাছে মুখ নিয়ে ফিস্‌ফিস্‌ করে গল্প করবে, দেখবে, নায়ক তাকে চায় কিনা। যদি নায়ক তা চায় সে তখন নায়িকার দেহ স্পর্শ বা আলিঙ্গণ করবে। নায়িকা আগে বুঝবে, নায়ক তাকে গ্রহণ করতে সত্যি রাজী কিনা। যদি দেখে নায়ক তাকে গভীর ভাবে ভালবাসে-তখন সে নায়কের চুম্বন বা আলিঙ্গনের উত্তর দেবে। নায়ক যদি যৌন মিলনের প্রস্তাব করে নায়িকা তাতেও রাজী হবে। তারপর দুজনে চুম্বন, আলিঙ্গন করবে। নায়ক তার দেহ মর্দন করলে সে তা উপভোগ করবে।
কিন্তু আগে দেখা উচিত নায়ক যেন বিশ্বাসী হয়-অর্থাৎ উপভোগ করে ত্যাগ করতে না পারে। মিলনের সময় নায়ক চাইলে, নায়িকা তার বাম হাত দিয়ে নায়কের লিঙ্গ স্থানে চাপ দিতে পারে। নায়িকার যোনিতে হাত দিয়ে নায়কের লিঙ্গ স্থানে চাপ দিতে পারে। নায়িকার যোনিতে হাত দিয়ে চাইলে, সে মৃদু আপত্তি করবে, তাতে বাধা দেবে না। কিন্তু প্রত্যক্ষ যৌন মিলনে রাজী হওয়া উচিত-যতক্ষণ অন্ততঃ গান্ধর্ব বিয়ে অনুষ্ঠিত না হচ্ছে। এ বিষয়ে পরে বলা হবে।
 
নারী কিরূপ পুরুষ চায়
১। বলিষ্ঠ, স্বাস্থ্যবান ও যুবক।
২। সুন্দর গাত্রবর্ণ, সুদর্শন ও সুশ্রী।
৩। যার মধ্যে নিজস্ব স্বকীয়তা বা বিশেষ দৃঢ়তা আছে।
৪। যে কিছুটা অহঙ্কারী, গর্ব্বিত।
৫। যার প্রচণ্ড আত্নবিশ্বাস আছে।
৬। যার বিশেষ ব্যক্তিত্ব ও দৃঢ়তা আছে।
৭। যে পুরুষের নিজস্ব উপার্জন যথেষ্ট এবং সে তাকে প্রতিপালন করার যোগ্য।
৮। যে পুরুষের অন্য স্ত্রী নাই-বা অন্য নারীর প্রতি গভীর আসক্তি নাই।
৯। যে নির্ভরযোগ্য ও তাকে সারা জীবন আশ্রয় দিতে পারবে।
১০। নায়ক সুশিক্ষিত, মার্জিত ও রুচি সম্পন্ন হলে খুব ভাল হয়।
১১। খেয়ালী ও কল্পনা প্রবণ পুরুষকেও অনেক নারী পছন্দ করে থাকে।
১২। যে পুরুষের নানা গুণ আছে-যেমন,গান, বাজনা, শিশুসাহিত্য, কাব্য ইত্যাদি। কোনও বিশেষ গুণের অধিকারী যে পুরুষ।
১৩। যে পুরুষ উচ্চ বংশ উদ্ভুত।
১৪। বয়সে নারীর চেয়ে কিছুটা অন্ততঃ পাঁচ-ছয় বছরের বড়।
১৫। যে পুরুষ নারীকে সত্যিই গভীর ভাবে ভালবাসে।
১৬। খুব কামুক বা লম্পট পুরুষকে চায় না।
১৭। বয়স্ক বা অনাসক্ত পুরুষকে চায় না।
১৮। জুয়াড়ি বা বেশ্যাসক্ত পুরুষকে চায় না। এই ধরণের অন্যান্য গুণ থাকলেও তাকে নারী ঘৃনা করে।
১৯। যে পুরুষ হৃদয়হীন বা অত্যাচারী ও স্বেচ্ছাচারী হয় তাকে নারী চায় না।
২০। যে পুরুষ পৌরুষত্বহীন বা দৃঢ়তাহীন তাকেও নারী চায় না।





কামসূত্রে পত্নী সম্পর্কে__কামসূত্রঃ পর্ব
 http://banglamoon.blogspot.com/2015/05/blog-post.html