মঙ্গলবার, ১৯ জানুয়ারী, ২০১৬

কিসমিসের পুষ্টিমান ও উপকারিতা




কিসমিস হল আঙুর ফলের শুকনা রূপ। যা তৈরি করা হয় সূর্যের তাপ অথবা মাইক্রোওয়েভ ওভেনের সাহায্যে। তাপের কারণে আঙুরের ফ্রুক্টোজগুলো জমাট বেঁধে পরিণত হয় কিশমিশে এটি রক্তে শর্করার মাত্রায় ঝামেলা তৈরি করে না। আর শতকরা ৭০ ভাগ খাঁটি এই ফ্রুক্টোজ সহজেই হজমযোগ্য। 
এছাড়া আঙুরের বিভিন্ন পুষ্টিগুণ যেমনঃ   
ফসফরাস, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, কপার, জিংক, লৌহ, ফ্লোরাইড, পোটাসিয়াম, ফোলাট, নিয়াসিন, কোলিন, ভিটামিন বি সিক্স, সি, কে এবং রিবোফ্লাবিন কিসমিসেও পাওয়া যায়।

প্রতিদিন এই ছোট শুকনা ফলের ১২টি খেলেই যাদুমন্ত্রের মতো কাজ করবে।





কিসমিস এর পুষ্টিমানঃ

প্রতি ১০০ গ্রাম কিসমিসে রয়েছেঃ

উপাদান
পরিমাণ
এনার্জি
৩০৪ কিলো ক্যালোরি
কার্বোহাইড্রেট
৭৪.৬ গ্রাম
ডায়েটরি ফাইবার
১.১ গ্রাম
ফ্যাট
০.৩ গ্রাম
প্রোটিন
১.৮ গ্রাম
ক্যালসিয়াম
৮৭ মিলিগ্রাম
আয়রন
৭.৭ মিলিগ্রাম
পটাশিয়াম
৭৮ মিলিগ্রাম
সোডিয়াম
২০.৪ মিলিগ্রাম
জিংক
০.২২ মিলিগ্রাম
ফ্লুরাইড
২৩৩.৯ মাইক্রোগ্রাম
ভিটামিন সি
২.৩ মিলিগ্রাম
ভিটামিন কে
৩.৫ মিলিগ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম
৩২ মিলিগ্রাম
ফসফরাস
১০১ মিলিগ্রাম








কিসমিস আমাদের স্বাস্থের কি কি উপকার সাধন করেঃ

১। ভালো রাখে মুখের স্বাস্থ্যঃ   ক্যান্ডির মতো দাঁতে লেগে থাকেনা ।  কিশমিশ ফলে থাকে না ক্যাভিটি তৈরির আশঙ্কা। বরং কিশমিশের পাইথোনিউট্রিয়েন্ট, অলিয়ানলিক এসিড নামে পরিচিতি যা ব্যাকটেরিয় ক্যাভিটি ধ্বংস করে মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।  
২। হজমে সাহায্য করেঃ কিসমিসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, যা আমাদের পরিপাকক্রিয়া দ্রুত হতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে।
৩। রক্তশূন্যতা দূর করেঃ রক্তশূন্যতার কারণে অবসাদ, শারীরিক দুর্বলতা, বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যতে পারে; এমনকি, বিষণ্ণতাও দেখা দিতে পারে। কিশমিশে আছে, প্রচুর পরিমাণে লৌহ উপাদান, যা রক্তশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে।
৪। জ্বর নিরাময় করেঃ কিশমিশ রয়েছে প্রচুর পরিমানে ব্যাকটেরিয়ারোধী, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ফলে এটা ভাইরাল এবং ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জ্বর নিরাময় করতে সাহায্য কারে।
৫। ক্যান্সারঃ খাবারে প্রচুর পরিমাণ আঁশ থাকলে কোলোরেক্টারাল ক্যান্সার ঝুঁকি কমে যায়। এক টেবিল চামচ কিশমিশ ১ গ্রাম পরিমাণ আঁশ থাকে। কিসমিসের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দেহের কোষগুলোকে ফ্রি র‌্যাডিক্যাল ড্যামেজের হাত থেকে রক্ষা করে এবং ক্যান্সারের কোষ উৎপন্ন হওয়ায় বাধা প্রদান করে।
৬। এসিডিটি কমায়ঃ রক্তে অধিক মাত্রায় এসিডিটি (অম্লতা) বা টক্সিসিটি (বিষ উপাদান) থাকলে, তাকে বলা হয়, এসিডোসিস। এসিডোসিসের (রক্তে অম্লাধিক্য) কারণে বাত, চর্মরোগ, হৃদরোগ ও ক্যান্সার হতে পারে। কিশমিশ রক্তের এসিডিটি কমায়।
৭। চোখের যত্নেঃ আপনি কি জানেন, প্রতিদিন কিশমিশ খেলে বৃদ্ধ বয়সে অন্ধত্ব থেকে রক্ষা পাওয়া যায়? কিশমিশে আছে প্রচুর পরিমাণ, এন্টি-অক্সিডেন্ট, যা অন্ধত্ব প্রতিরোধ করে। কিশমিশে আছে প্রচুর পরিমাণে এন্টি-অক্সিডেন্ট, যা অন্ধত্ব প্রতিরোধ করে।
৮। দাঁতের ও হারের সুরক্ষাঃ কিসমিসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, যা দাঁত ও হাড় মযবুত করতে বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে। কিসমিসে আরো রয়েছে বোরন নামক মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস, যা হাড়ের ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে।
৯। দেহে শক্তি সরবরাহকারীঃ  দুর্বলতা দূরীকরণে কিসমিসের জুড়ি মেলা ভার। কিসমিসে রয়েছে চিনি, গ্লুকোজ এবং ফ্রুক্টোজ, যা তাৎক্ষণিকভাবে দেহে এনার্জি সরবরাহ করে। তাই দুর্বলতার ক্ষেত্রে কিসমিস খুবই উপকারী।
১০। অনিদ্রাঃ কিশমিসের মধ্যে রয়েছে প্রচুর আয়রন যা মানুষের অনিদ্রার চিকিত্সায় বিশেষ উপকারী।


১১। উচ্চরক্তচাপ ও কোলেস্ট্রোরেল কমায়ঃ কিশমিশ শুধুমাত্র রক্তের মধ্যে থাকা বিষোপাদান কমায় তাই না, বরং উচ্চরক্তচাপও কমায়। কিশমিশে আছে এন্টি-কোলোস্ট্রোরেল উপাদান যা রক্তের খারাপ কোলোস্ট্রোরেলকেহ্রাস করতে সাহায্য করে। কিশমিশের দ্রবণীয় আশ, লিভার থেকে কোলোস্ট্রোরেল দূর করতে সাহায্য করে।
১২। ইনফেকশনের সম্ভাবনা দূরীকরণঃ  কিসমিসের মধ্যে রয়েছে পলিফেনলস এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিইনফেমেটরী উপাদান, যা কাঁটা-ছেড়া বা ক্ষত হতে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা দূরে রাখে।
১৩। কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণঃ  কিসমিসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, যা আমাদের পরিপাকক্রিয়া দ্রুত হতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে।
১৪। মস্তিষ্কের খাদ্যঃ  কিশমিশের মধ্যে থাকা বোরন খনিজ পদার্থটি মস্তিষ্কের জন্য খুবই উপকারী, যা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতার জন্য অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। বোরন মস্তিষ্কের কি উপকার করে? এটা মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে, হাত ও চোখের মধ্যে সমন্বয়কে বৃদ্ধি করে এবং স্মৃতিশক্তি বাড়ায়।
১৫। রক্তাল্পতার রক্ষকঃ  কিসমিসে প্রচুর আয়রন থাকে। যা রক্তাল্পতার বিরুদ্ধে লড়াই করে। এতে নতুন রক্তকোষ তৈরি করতে সক্ষম ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স থাকে। কিসমিসে লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে সাহায্যকারি কপারও আছে।
 ১৬। ওজন বাড়ানোঃ  কিসমিসে প্রচুর ফ্রুক্টোজ ও গ্লুকোজ থাকে। তাই এটি ওজন বাড়াতে সহায়ক। যদি সঠিক নিয়মে ওজন বাড়াতে চান তবে আজই কিসমিস খেতে পারেন।
১৭। কিশমিশ শরীরের সোডিয়াম মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে।
১৮। কিসমিস গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল (মুখ থেকে পায়ু) পথ থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়।





প্রতি ১০০ গ্রাম কিশমিশে ৩ দশমিক ৭ গ্রাম গলন-অযোগ্য আঁশ বা ইনসলিউবল ফাইবার আছে, যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর ও হজম করতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। প্রচুর গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ আছে কিশমিশে। প্রতি ১০০ গ্রাম কিশমিশ প্রায় আড়াই শ ক্যালরি ধারণ করে। তবে একই কারণে ওজনাধিক্য ও ডায়াবেটিক রোগীদের আবার বেশি কিশমিশ খাওয়া বারণ।

১০০ গ্রাম কিশমিশে যে পরিমাণ লৌহ আছে, তাতে একজন মানুষের দৈনিক চাহিদার ২৩ শতাংশ পূরণ করে। রক্তশূন্যতা দূর করতে এবং গর্ভাবস্থায় তাই কিশমিশ খাওয়া উচিত। এ ছাড়া এতে আছে কেটেচিন ও রেসভেরাট্রল নামের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক। কিশমিশের ২৬ শতাংশ হলো শর্করা, ১৫ শতাংশ আঁশ, আমিষ আছে ৬ শতাংশ ও চর্বি মাত্র ১ শতাংশ। আছে পটাশিয়াম ২১ শতাংশ এবং লৌহ ১০ শতাংশ। এ ছাড়া আছে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ও কপার। দীর্ঘ রোগভোগের পর শক্তি ও দ্রুত ওজন বাড়াতে কিসমিসের ব্যবহার প্রচলিত। নিউট্রিশন ফ্যাক্ট।








রবিবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০১৬

লিচুর পুষ্টিমান ও উপকারিতা



লিচুকে বিবেচনা করা হয় চীন দেশের ফল বলে। চীনারা আবার একে ভালোবাসা ও রোমাঞ্চের ফল হিসেবে মর্যাদা দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, লিচু চীনা এলাকায়ই প্রথম ফলের কদর পায় এবং চাষবাস শুরু হয়। চীন দেশের এক বংশের নাম ছিল থাং। এই থাং সাম্রাজ্যের এক রাজা তার সৈন্যবাহিনীকে ৬০০ মাইল দূরে পাঠিয়েছিলেন লিচু সংগ্রহে। এই লিচুর রঙ, গন্ধ, রস ও স্বাদ রাজা উপহার দিতে চেয়েছিলেন তার ভালোবাসার নারীকে। ইতিহাসে লিচুর প্রথম ঘটনা এভাবেই বর্ণিত আছে।



লিচুর বৈজ্ঞানিক নাম Litchi chinensisএটি মৌসুমি ফল। বাংলাদেশের সব স্থানেই লিচু হয়, তবে উত্তরবঙ্গের রাজশাহী ও দিনাজপুর অঞ্চলে এর ভাল ফলন হয়।

লিচু হলো Sapindaceae পরিবারের Litchi গণের একমাত্র সদস্য। এটি নিরক্ষীয় ও উপ-নিরক্ষীয় অঞ্চলে জন্মে থাকে। এর আদি নিবাস চীনে। বর্তমানে বিশ্বের বহু স্থানে লিচু চাষ করা হয়।


লিচু খুব ধীর গতিতে বড় হয়। ফুলের কুড়ি দিয়ে যখন গাছটি অলঙ্করিত হয়, তখন গাছটি খুব আর্কষণীয় দেখায়। বসন্তের সময় যখন গাছটি ফলে ভরে যায় তখন গাছগুলো আরও সুন্দর রুপ ধারণ করে। কাঠামোগত কারণে লিচুর আকৃতি ডিম্বাকৃতির হয়। এরা ৩ থেকে ৫ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ৫ সেন্টিমিটার ব্যাস বিশিষ্ট হয়। প্রতিটি লিচুর ওজন প্রায় ১০ গ্রাম হয়।



পুষ্টিমানঃ

পুষ্টিগুণের দিক থেকে বলতে গেলে বলা যায়, এতে আছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন
সি। ক্যালসিয়াম দরকার হয় হাড়, দাঁত, চুল, ত্বক, নখ ভালো রাখতে। হিসাব করে দেখা গেছে, ১০০ গ্রাম লিচুতে থাকে শর্করা ১৩.৬ গ্রাম, ক্যালরি ৬১, ক্যালসিয়াম ১০ মিলিগ্রাম, লৌহ ০.৭ মিলিগ্রাম ও ভিটামিন সি ৩১ মিলিগ্রাম।

১০০ গ্রাম লিচু বলতে মাঝারি আকারের প্রায় ১০টি লিচুকে বোঝায়। মার্কিন ওষুধ প্রশাসন বিভাগ বলছে, প্রতি ১০০ গ্রাম লিচুতে ৬৬ কিলোক্যালরি শক্তি ও ১৬ গ্রাম শর্করা রয়েছে। চর্বি একেবারেই নেই। আরও আছে ৭১ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, ১৭০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম, ১৪ মাইক্রোগ্রাম ফলেট এবং সামান্য পরিমাণ (১মিলিগ্রাম) সোডিয়াম। 










উপকারিতাঃ


১।  ক্যালরির পরিমাণ বেশি থাকে তাই ডায়াবেটিস রোগীদের পরিমিতভাবে লিচু খাওয়া ভালো।
২।  বোলতা, বিছে কামড়ালে পাতার রস ব্যবহারে ভালো হয়।
 ৩। এতে দেহে শক্তি বাড়ে। কারণ এটা শরীরে ফ্লুইডের পরিমাণ বাড়ায়।
 ৪। এর ভিটামিন
সি-এর পরিমাণ কমলালেবুর তুলনায় ৪০ শতাংশ বেশি।
 ৫। এ ছাড়া গাজরের তুলনায় বেশি বিটা ক্যারোটিনও আছে।
 ৬। আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড রয়েছে।
 ৭। এটি বিটা ক্যারোটিনসহ প্রয়োজনীয় ভিটামিন শোষণে সহায়তা করে।
 ৮। লিচু হজমে সহায়তা করে, কারণ এতে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট ও ফাইবার।
 ৯। হাড়, দাঁত, চুল, ত্বক, নখ ভালো রাখতে সাহায্য করে। কারণ এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম।
 ১০। বয়স্ক নারী যাদের মেনোপজ হয়ে গেছে, তাদের জন্য লিচু যথেষ্ট উপকারী। কারণ এসব   নারীর অতিমাত্রায় ক্যালসিয়ামের অভাব হয়।
 ১১। এটি মৌসুমি অসুখগুলো থেকে আপনাকে রক্ষা করে।
 ১২। একই সঙ্গে ত্বক ও চুলের পুষ্টি জোগায়।
 ১৩। প্রচণ্ড ক্ষতিকর আলট্র্রাভায়োলেট রশ্মি থেকে শরীরকে রক্ষা করে।
 ১৪। এতে রয়েছে নিয়াসিন ও রিবোফ্লাভিন নামক ভিটামিন
বি কমপ্লেক্স।
 ১৫। ভিটামিন
বি কমপ্লেক্স শরীরের জ্বালাপোড়া, দুর্বলতা দূর করে।
 ১৬। লিচুর ভিটামিন
রাতকানা কর্নিয়ার অসুখ, চোখ ওঠা, চোখের কোনা ফুলে লাল হয়ে যাওয়া দূর করে।
 ১৭। এ ছাড়া জ্বরঠোসা, জিহ্বার ঘা, জিহ্বার চামড়া ছিলে যাওয়া এসব রোগ প্রতিরোধ করে।
 ১৮। লিচু গরম ফল। এটি বেশি খেলে পেট গরম হয়ে ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই সিজন ছাড়া খাওয়া ঠিক নয়।
 ১৯। বেশি মিষ্টি লিচু অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের পরিহার করা উচিত।
 ২০। কাশি, পেটব্যথা, টিউমার দমনে লিচু কার্যকর।
 ২১। চর্মরোগের ব্যথায় লিচুর বীজ ব্যবহৃত হয়।
 ২২। কচি লিচু শিশুদের বসন্ত রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
 ২৩। বাকল ও শিকড়ের কস্ফাথ গরম পানিসহ কুলি করলে গলার স্বর ভালো হয়।
 ২৪। লিচুর রস চকোলেট জাতীয় খাদ্যদ্রব্যে ব্যবহার করা হচ্ছে।
 ২৫। এতে অবস্থিত পটাসিয়াম এবং খনিজের মতো উপাদান হূদরোগের ঝুঁকি কমায়। রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।



জাপানের কিয়োরিন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, লিচুতে রয়েছে অলিগোনল নামের এক ধরনের উপাদান। একে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লুয়েঞ্জা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ উপাদান রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে, ত্বকে ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাব নিয়ন্ত্রণ করে এবং ওজন কমায়।

২৬। শরীরের প্রদাহজনিত ময়লা পরিষ্কার করে। মস্তিষ্ক বিকাশেও সহায়তা করে। এছাড়া আমাদের হার্ট সুরা করে, স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
২৭। ত্বকের তৈলাকাততা দূর করে বিধায়, লিচু খেলে ব্রণের উপদ্রবও কমে।
২৮। কপালের ভাজ পরা, ঠোটের চারপাশের বলি রেখা, গলা এবং বুকের পিগমেন্টেশন দূর করতেও ভূমিকা রাখে।
২৯। ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা ধরে রেখে ত্বকের যৌবন ধরে রাখে।
৩০। প্রতি ১০০ গ্রাম লিচুতে ৬৬ ক্যালরি রয়েছে। যা আঙ্গুরের তুলনায় অনেক কম। লিচুতে কোন সম্পৃক্ত চর্বি বা কোলেস্টেরল নেই। কিন্তু এতে ভাল পরিমাণে তালিকাগত ফাইবার, ভিটামিন ও অ্যান্টি-অস্কিডেন্টসমূহ রয়েছে।
৩১। গবেষকরা বলেছেন, তারা লিচুতে প্রচুর পরিমাণে অলিগনাল নামক একটি আণবিক উপাদান রয়েছে। যা পলিফেনলের আণবিক উপাদান। অলিগনাল এ অ্যান্টি-অস্কিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্লুয়েঞ্জা নামক ভাইরাস কর্ম রয়েছে। যা বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ করে। এছাড়াও রক্ত পরিবহনের মাত্রা উন্নত করে। সূর্যের ক্ষতিকর রশ্নি থেকে ত্বককে রক্ষা করে।
৩৩। লিচু একটি লেবু জাতীয় ফলের মত এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। গবেষণায় পাওয়া গেছে, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল শরীরের সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। শরীরের প্রদাহজনীত ময়লা পরিস্কার করে এবং মস্তিস্ক বিকাশে সহায়তা করে।
৩৪। থিয়ামিন, নিয়াসিন ও ফলেটস এর মত ভিটামিন বি কমপ্লেক্র এর সব থেকে ভালো উৎস হচ্ছে লিচু। এই উপাদানগুলো শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এসকল উপাদানে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও চর্বি রয়েছে যা শরীরের জন্য অপরিহার্য।
৩৫। লিচুতে খুব ভালো পরিমাণ পটাসিয়াম ও কপারের মত খনিজ রয়েছে। পটাসিয়াম আমাদের শরীরের কোষের জন্য খুবই উপকারী । এছাড়াও আমাদের হার্টের সুরক্ষা প্রদান করে এবং স্ট্রোকের ঝুকি কমায়।
৩৬। লিচু ক্যান্সার থেকে মানবদেহকে দেয় সুরক্ষা। এটি ক্যান্সার তৈরিকারী কোষ ধ্বংস করে। এতে অবস্থিত ফ্ল্যাভনয়িডস বা ভিটামিন পি স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
৩৭। ওজন কমাতেঃ  লিচুতে প্রচুর ফাইবার এবং ভিটামিন বি কমপ্লেক্স থাকে। যা মেটাবলিজম বা বিপাক ক্রিয়া বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। মেটাবলিজম শক্তি কম হলেই মানুষের দেহে চর্বি বেড়ে যায়। লিচু এই মেটাবলিজম বৃদ্ধিতে দারুণ ভূমিকা পালন করে। ফলে শরীরে অতিরিক্ত ওজন হ্রাসে সাহায্য করে।

৩৮। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ  লিচু ভিটামিন সি এর একটি অসাধারণ উৎস। প্রচুর ভিটামিন সি সাথে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকার কারণে লিচু বেশ কিছু রোগ প্রতিরোধ করে। যেমনঃ সর্দির সমস্যা, ফ্লু, কাশি। এছাড়াও বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে লিচু কার্যকরী একটি ফল।
৩৯।  বুড়িয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করেঃ  সময়ের সাথে মানুষ বৃদ্ধ হয় স্বাভাবিক। কিন্তু বর্তমানে দূষণ, কালো ধোঁয়া, ভেজাল খাদ্য সহ আরো নানা কারণে মানুষ খুব দ্রুত বুড়িয়ে যাচ্ছে। মুখে বয়সের ছাপ আসার যে প্রধান কারণ তা আমাদের শরীরে উৎপন্ন হওয়া ফ্রি রেডিকেল। এই ফ্রি রেডিকেল রোধ করতে সবচেয়ে কর্মক্ষম হচ্ছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফল খায় তাদের চেহারায় বয়সের ছাপ কম পড়ে। লিচুর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটি ত্বককে বুড়িয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে।
৪০।  হৃদরোগ থেকে রক্ষা করেঃ  The Journal of Nutrition এর মতে, লিচুতে প্রায় ১৫% polypheols আছে যা এটিকে polyphenols সমৃদ্ধ ফলের মধ্যে দ্বিতীয় আসনে রেখেছে। অন্যান্য যে সব ফল পরীক্ষা করা হয়েছে তার মধ্যে লিচু হৃদযন্ত্র ভাল রাখতে অন্যান্য ফলের চেয়ে বেশি উপকারী। লিচু শরীরের খারাপ ধরণের কোলেস্টেরল (LDL) কমায় এবং ভাল কোলেস্টেরল (HDL) এর মাত্রা বাড়ায়। ফলে এতে হৃৎপিণ্ডের রক্তসঞ্চালন প্রক্রিয়া ঠিক থাকে এবং হার্ট এটাক, স্ট্রোক ও হাইপার টেনশনের ঝুঁকি কমে। আগ্রহী পাঠকদের জন্যে বলে রাখা ভাল, polypheols থাকা ফলের মধ্যে ১ম স্থান অধিকার করেছে আঙুর।
৪১।  কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করেঃ  লিচুতে প্রচুর দ্রবণীয় ফাইবার থাকার কারণে অন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যা রোধ করে। এছাড়া লিচু পাকস্থলি এবং কোলন পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। ফলে এটি কোষ্ঠকাঠিন্য রোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। দীর্ঘদিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্যের রোগে যারা ভুগছেন তাদের জন্যে লিচু যে খুব উপকারী হবে এতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই।
৪২। লিচু ত্বক ভালো রাখে।  সেই সঙ্গে ত্বকের কালো দাগ দূর করার ক্ষমতা আছে লিচুর।
৪৩। লিচুতে থাকা ভিটামিন সি, নিয়াসিন, থায়ামিন চুলের সৌন্দর্য বাড়িয়ে চুলকে দিঘল কালো করে তোলে।
৪৪। লিচুর জলীয় অংশ শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।


রূপচর্চাঃ লিচু দিয়ে তৈরি করা যায় ফেসিয়াল মাস্ক।

তৈরির পদ্ধতিঃ  ৩টি লিচু ব্লেন্ড করে এর সঙ্গে ২ চা চামচ টক দই এবং ১ চা চামচ আটা মিশিয়ে ফেস মাস্ক তৈরি করা যায়। এই ফেস মাস্ক মুখে মেখে ১০ থেকে ১৫ মিনিট রেখে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এই মাস্ক ময়শ্চারাইজার হিসাবে কাজ করে। সপ্তাহে তিন থেকে চারবার এই মাস্ক ব্যবহার করলে ত্বক হয়ে উঠবে উজ্জ্বল।

লিচুর শরবতঃ
যা লাগবেঃ  ১০ টুকরো লিচু, আস্ত লিচু (বিচি ছাড়া) সাত-আটটি, এক টেবিল চামচ চিনি, এক চা চামচ লবণ, ৩/৪ চা চামচ গোলমরিচ গুঁড়া, এক চা চামচ লেবুর রস, এক কাপ পানি।
যেভাবে বানাবেনঃ  আস্ত লিচু ছাড়া সব উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করুন। গ্লাসে ঢেলে ফ্রিজে রাখুন। পরিবেশনের আগে আস্ত লিচুগুলো গ্লাসে দিয়ে পরিবেশন করুন।
লিচুর পায়েসঃ
যা লাগবেঃ  দুই লিটার দুধ, দুই কাপ চাল, ৩/৪ কাপ মাওয়া, আধা কাপ চিনি, এলাচ দুই-তিন টুকরা, দারুচিনি এক-দুই টুকরা, ৩/৪ কাপ হেভি ক্রিম, সাত-আটটি লিচু কুচি।
যেভাবে বানাবেনঃ  দুধ জ্বাল দিন। দুই-তিন মিনিট পর চাল ধুয়ে দুধে দিন। চিনি, এলাচ, দারুচিনি দিন। চাল সিদ্ধ হলে এবং দুধ কমে ঘন হয়ে এলে মাওয়া, হেভি ক্রিম দিয়ে চুলার জ্বাল কমিয়ে দিয়ে লিচু দিয়ে নামিয়ে পরিবেশন করুন।