শনিবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০১৫

Cockatiel Bird পালনে ব্যাবসায়িক দিক




Cockatiel Bird  খুব বুদ্দিমান ও সামাজিক পাখি । 

Cockatiel Bird টিয়া প্রজাতির পাখি । Cockatiel নামটি এসেছে ডাচ শব্দ “Kakatielje” থেকে, যার মানে হল ছোট Cockatoo.   তবে DNA research (UC-Davis, 1997) এ প্রমানিত যে Cockatiel একটি Cockatoo পরিবারের পাখি । Cockatiel এর বৈজ্ঞানিক নাম হল Nymphicus, Hollandicus, “Goddess of New Holland”

 


 Cockatiel  Bird পাখিটির আদি আবাস স্থল অস্ট্রেলিয়া । Cockatiel Bird ১০ থেকে ১৪ ইঞ্চি লম্বা হয় । এদের গর ওজন হয় ৮০ থেকে ১২০ গ্রাম । 

Cockatiel Bird সাধারনত গাছের গর্তে বাসা তৈরি করে । তাই এদের খাচায় লালন পালন করলে বিশেষ ধরনের মাটির কলসি দিতে হবে বাসা তৈরি করে ডিম দেওয়ার জন্য । 
Cockatiel Bird  সাধারনত ১৫ থেকে ২০ বৎসর বাঁচে । তবে সঠিক পরিচর্যা না করলে এরা ১ থেকে ৫ বৎসরের বেশি বাঁচে না ।  Cockatile পাখিকে সুস্থ রাখার জন্য প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা ঘুমাতে দিতে হবে ।  পাখিকে সুস্থ রাখার জন্য অবশ্যই পাখির খাচা আশে পাশে পরিস্কার রাখতে হবে । এরা প্রতিদিন প্রচুর পানি পান করে থাকে । তাই প্রতিদিন স্বাস্থ্য সম্মত পানি সরবরহের ব্যাবস্থা করতে হবে ।




Cockatiel Bird নিজেই নিজের পরিবেশ নোংরা করে । এদের শরীর থেকে সর্বদাই সাদা পাউডার জাতীয় দ্রব্য বের হয় । যা দেখতে অনেকটা মাথার খুশকির মত । তাই প্রতিদিন কয়েকবার এদের খাচা ও আশেপাশে পরিস্কার করতে হয় । তবে প্রতিদিন গোসলের ব্যাবস্থা থাকলে এই সাদা পাউডারের পরিমান কমে । 

যাদের Dust allergies বা asthma রোগ আছে তাদের এই পাখি না পালান করাই ভাল ।      
অনেক ধরনের Cockatiel দেখা যায় ।
এর মধ্যে নিচের প্রজাতিগুলি বেশি দেখা যায় ।

১। গ্রে
২। ফন পাইড
৩। পাইড পার্ল
৪। লুটিনো
৫। লুটিনো পাইড
৬। এলবিনো
৭। এলবিনো পার্ল   





Cockatiel এর খাবারঃ  এরা সাধারনত কাউন, চিনা, বারজা,  তিসি, সূর্যমুখী ফুলের বিচি, কুসুম ফুলের বিচি, সরিষা, ধান, রুটি,  বিভিন্ন ধরনের ফল, কচি ঘাসের পাতা ও সবজি ও বিভিন্ন ফল  খেতে পছন্দ করে । এরা তাজা শাকসবজি ও ফল খেতে পছন্দ করে । একটি পাখি দিনে প্রায় ৪০ থেকে ৬০ গ্রাম খাবার গ্রহন করে । 

পাখির সঠিক পরিচর্যার জন্য  গ্রিট (বোন মিল (সিদ্ধ) ৫%, ঝিনুক ৪০%, লাইম স্টোন ৩৫%, গ্রাউন্ড লাইম স্টোন ৫%, লবণ ৪%, চারকোল ১০% এবং শিয়ান রেড ১%) খেতে দিতে হবে । 

খাচায় যখন পাখি পালন করা হয় তখন পাখি অনেক ভিটামিন- মিনারেল গ্রহন করতে পারে না , যা তারা বন-জঙ্গল থেকে পেত । এই সব ভিটামিন ও মিনারেল আমাদের অন্যান্য খাবারের সঙ্গে দিতে হবে । 


যেমনঃ 

১। মাল্টি ভিটামিন ২। ভিটামিন সি  ৩। ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম , পসফরাস, খনিজ লবন, আয়রন, ৪। স্যালাইন ৫। AD3E ইত্যাদি ।

এই জাতীয় ভিটামিন ও মিনারেল সঠিক মানের আমাদের নিয়মিত সরবারাহ করতে হবে । নইলে পাখি অসুস্থ হবে ও প্রজননক্ষম  থাকবে না  বা অল্প বয়সেই মারা যাবে ।

Cockatiel কোন কারনে ভয় পেলে খুব জোরে চিৎকার করে । ভয়ে উড়ে পালাতে চায় , তাই প্রচণ্ড জোরে পাখা জাপটায় । খাচায় জোরে পাখা জাপটালে পাখির ডানায় আঘাত লেগে বা পালক ভেঙ্গে অসুস্থ হয়ে যেতে পারে । তাই ভয় না পায় এমন ব্যাবস্থা রাখতে হবে । প্রয়োজনে রাতের বেলায় খাচার আশেপাশে হালকা আলোর ব্যাবস্থা রাখলে ভাল হয় । এরা একাকি নীরবে থাকতে পছন্দ করে, খাচার কাছে অপরিচিত কাহারও আগমনেও বিরক্ত হয় । তবে পাখির সঙ্গে বন্ধু সুলভ আচরন করলে এরা অন্যান্য পোষা প্রানির মতই আচরন করে । খাবার নিয়ে খেলে, খেলনা দিলে খেলে , নিজের পাখা মেলে আনন্দ প্রকাশ করে । 




Cockatiel সাধারনত ১৮ মাস বয়সে ডিম দেওয়ার উপযোগী হয় । তবে ৯/১২  মাসেও ভাল নার্সিং এর মাধ্যমে ডিম নেওয়া সম্ভব । তবে সে ক্ষেত্রে তারা ডিম কম দেয় বা ডিম ভেঙ্গে ফেলার আশঙ্কা থাকে বা বাচ্চা কম পুষ্ট হয় । অল্প বয়সে বাচ্চা নিলে অনেক সময় পাখির বাচ্চা মায়ের নিজস্ব রং হারায় । যেমন, মায়ের গায়ে পার্ল মারকিং থাকলে তা না হয়ে সাধারন গ্রে রঙের হয় । তাই ১২ মাস বয়সী পাখি থেকে ডিম ও বাচ্চা নেওয়া ভাল ।  ভাল নার্সিং এর মাধ্যমে বৎসরে ৪ বার অর্থাৎ ৩ মাস অন্তর অন্তর ডিম থেকে বাচ্চা নেওয়া সম্ভব ।

  
এবার আসা যাক ব্যাবসায়িক দিকঃ 

ব্যাবসায়িক ভাবে পালনের জন্য আমি কমপক্ষে ১০ জোড়া পাখি পালনের কথা বলব ।
একটি ৬ ফুট x .৫ ফুট খাচায় অনায়াসেই ৬  জোড়া পাখি পালন করা যায় ।


ব্যায়  


১#   এক জোড়া Cockatiel  পাখির ( ১০ মাস বয়সী )  দাম  = ০০০ টাকা ।
            োড়া Cockatiel  পাখির  দাম পরবে = ৫৪,০০০/ টাকা
২#  ৬ জোড়া Cockatiel  পাখির খাবার বাবদ মাসে আনুমানিক = ১৫০০ টাকা ।     
         ৬ মাস খাবার বাবদ খরচ পরবে আনুমানিক = ,০০০ টাকা ।
#  ৬ মাসে ভেক্সিন বাবদ খরচ পরবে আনুমানিক = ,০০০/ টাকা ।
৪#  ৬ জোড়া পাখির একটি ষ্টীলের খাচার দাম পড়বে প্রায় = ১০,০০০ টাকা

৬ মাস পর্যন্ত আনুমানিক খরচ = ( ++৩+৪ ) = ৭৪,০০০/ টাকা ।
( উল্লেখ্য যে, এই ব্যায় শুধু নিজের বসত বা ফ্লাটের  একটি রুমে করলে,
  কটি ১২/১০ ফুট রুমে প্রায় ০ জোড়া Cockatiel  পাখি পালন করা যাবে)

  
লাভের দিক

Cockatiel  পাখির  বয়স যখন ১২ মাস হবে তখন থেকেই ডিম দেয়া শুরু করবে ।
অর্থাৎ পাখির বয়স যখন ১৩  মাস হবে তখন জোড়া পাখি থেকে প্রায় ১২ জোড়া বাচ্চা পাওয়া যাবে ।  

৩/৪ মাস বয়সী প্রতি জোড়া বাচ্চা বিক্রি করা যাবে = ০০/ টাকা করে ।
১২ জোড়া বাচ্চা বিক্রি করা যাবে =  ,০০০/ টাকা ।

এই হিসাবে মোট ব্যায় তোলে আনতে সময় লাগবে আনুমানিক ৩+ =   মাস । 

এর পর থেকে প্রতি ৩ মাস অন্তর অন্তর মাত্র ৬ জোড়া Cockatiel থেকে  ৬০,০০০ টাকা বা প্রতি মাসে প্রায় ২০,০০০/ টাকা (খাবার ব্যায় বাদ দিয়ে) আয় করা যায় খুব সহজেই । 


যদি একটি রুমে জোড়া Cockatiel  পাখি পরিপালন করা যায় 
ব্যায় হবে পাখি ও ( ৬ মাসের খাবার ও ভ্যাক্সিন সহ ) আনুমানিক ৩,০,০০০/ টাকা ।
মোট প্রাক্কলিত ব্যায় উঠে আসতে সময় লাগবে মাত্র ৩+ = ৬ মাস ।
মাস বয়সী ৬০ জোড়া বাচ্চা বিক্রি করা যাবে ,০০০x ০ = ,০,০০০ টাকা ।
এর পর থেকে প্রতি মাসে খাবার ও ভ্যাক্সিন বাবদ আনুমানিক ব্যায় হবে = ১০,০০০/ টাকা । 


লাভ হবে প্রতি মাসে আনুমানিক = ৯০,০০০/ টাকা  ( ঘড় ভাড়া বাদে )


প্রতি মাসে অন্তত পক্ষে একবার পাখিকে ডাক্তার দেখানো উচিত । তা ছাড়া পাখি অসুস্থ হলে ডাক্তারের পরামর্শ মাফিক এণ্টিবায়টিক বা সঠিক রুগের জন্য সঠিক ঐসধ খাওয়াতে হবে ।

 
Cockatiel Bird রোগ প্রতিরোধঃ  
১। পাখি উঠানোর আগে খামারসহ ব্যবহার্য্য সকল যন্ত্রপাতি সঠিকভাবে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। প্রথমে পানি দিয়ে পানির সাথে কার্যকরী জীবানুনাশক (  সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইড বা আয়োডিন দ্রবণ) মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

২। সুস্থ্য সবল পাখি সংগ্রহ করতে হবে। প্রয়োজনে বাহ্যিক পরজীবি নিধনের জন্য ০.৫% ম্যালাথিয়ন দ্রবণে পাখিকে গোসল করিয়ে নিতে হবে। এক্ষেত্রে পাখির মুখ এই দ্রবণে ডুবানো যাবে না। হাত দিয়ে মাথায় লাগিয়ে দিতে হবে। অন্তঃপরজীবি প্রতিরোধের জন্য কৃমিনাশক ঔষধ সেবন করাতে হবে।

৩। পাখির খোপ, দানাদার খাদ্য ও খনিজ মিশ্রণ সরবরাহের পাত্র, পানির পাত্র ও গোসল করার পাত্র এবং পাখির বসার স্ট্যান্ড নিয়মিত পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করতে হবে। জীবাণুমুক্ত খাবার এবং বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে হবে।

  
বি দ্রঃ পাখিকে রোগমুক্ত রাখতে পাখির খাচায় ও আশেপাশে পারলে প্রতিদিন বা তিন দিন পরপর বা সপ্তাহে একদিন জীবাণু নাশক স্প্রে করলে রোগ বালাই থেকে মুক্ত থাকা যায় ।