বুধবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৫

পেঁয়াজের পুষ্টিমান ও উপকারিতা




পেঁয়াজ হল একটি কন্দজ সবজি। এটি আবার মশলা হিসেবেও ব্যবহার করার চলন আছে। সারাবছর বাজারে পেঁয়াজের দেখা মেলে। এর বিজ্ঞানসম্মত নাম হল- অলিয়াম সোপা।  পেঁয়াজ বাংলাদেশের একটি অত্যন্ত মূল্যবান ফসল। মসলা ছাড়াও সবজি ও সালাদ হিসেবে এটি ব্যবহৃত হয়। পেঁয়াজ এর পাতা ও ডাঁটা ভিটামিন-সি ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ। তাছাড়া এতে অন্যান্য খাদ্য উপাদানও রয়েছে। এটি সাধারণতঃ ঠান্ডা জলবায়ুর উপযোগী ফসল এবং বাংলাদেশে মূলত রবি মৌসুমেই পেঁয়াজের আবাদ হয়ে থাকে।



পেঁয়াজ ভিটামিন এ, বি ও সি সমৃদ্ধ।এটি ফোলিক এসিডেরও একটি ভালো উৎস।এছাড়া এতে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, সালফার, আয়রন ও ক্রোমিয়ামও রয়েছে। পেঁয়াজে এত পুষ্টি উপাদান থাকার পর এর উপকারিতা নিয়ে কোন সন্দেহ থাকার অবকাশ নেই।

পেঁয়াজের পুষ্টিমানঃ  একটি বড় পেঁয়াজে ৮৬.৮ শতাংশ পানি, ১.২ শতাংশ প্রোটিন, ১১.৬ শতাংশ শর্করা জাতীয় পদার্থ, ০.১৮ শতাংশ ক্যালসিয়াম, ০.০৪ শতাংশ ফসফরাস ।  

সচরাচর আমরা পেঁয়াজ কাটার সময় পেঁয়াজের ত্বক ফেলে দেই। কিন্তু পেঁয়াজের যে অংশটি আমরা ফেলে দেই সেই বাদামি রঙের খোসা  নাকি বেশি উপকারী।



 পেঁয়াজের উপকারিতাঃ

১। পেঁয়াজে অবস্থিত ফাইটোকেমিক্যাল (ভিটামিন, প্রোটিন, মিনারেল) আমাদের দেহে ভিটামিন 'সি'  এর যোগান দিয়ে থাকে ও দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
২। পেঁয়াজে বিদ্যমান ক্রোমিয়াম আমাদের দেহে রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
৩। শত শত বছর ধরেই পেঁয়াজ আমাদের বুকের জ্বালাপোড়া ও যেকোনো ধরণের ইনফেশন সারিয়ে  তুলতে সাহায্য করে।
৪। অনেকেই খবারের সঙ্গে  কাঁচা পেঁয়াজ খেতে পছন্দ করেন যা স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। কাঁচা  পেঁয়াজ আমাদের দেহের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে ও আমাদের হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখে।
৫। পেঁয়াজের কিউরেকটিন আমাদের দেহে ক্যান্সার কোষ গঠন প্রতিরোধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা  পালন করে।
৬। যদি মৌমাছি দেহের কোনো স্থানে কামড় দিয়ে থাকে তাহলে, সেই স্থানে পেঁয়াজের রস লাগিয়ে    দিন দেখবেন জ্বালাপোড়া কমে যাবে।
৭। পেঁয়াজে আছে এমন উপাদান যার জন্য দেহে গ্যাস্ট্রিক আলসার হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে।
৮। পেঁয়াজের সবুজ পাতা (পেঁয়াজ পাতা) গুলোতে আছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন-এ। যা আমাদের  চোখের জন্য বেশ উপকারী।
 
৯। হৃদপিন্ডের সংবহনতন্ত্রের উপকারিতা- খাবার সাথে পেঁয়াজ যোগ করে অথবা পেঁয়াজের রস খেলে এটি রক্ত জমাট বাধা প্রতিরোধ করে।এটি ধমনী শক্ত হয়ে যাওয়া এবং হৃদরোগসহ নানা রকম রোগ প্রতিরোধ করে। পেঁয়াজ হোমোসিসটেইনের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে এবং যেকোনো হৃদরোগ সংক্রান্ত সমস্যা বৃদ্ধিতে বাধা দেয়।
১০। প্রদাহনাশক- পেঁয়াজে রয়েছে প্রদাহনাশক গুনাগুন, যার ফলে এটি আর্থ্রাইটিস ও গেঁটে বাত প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
১১। জীবাণুনাশক- পেঁয়াজের জীবাণুনাশক গুনাগুনের জন্য এটি ই-কোলাই ও স্যামোনেলা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ প্রতিরোধে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও cystitis ধরনের মূত্রতন্ত্রের সংক্রমণের জন্য পেঁয়াজের রস বেশ উপকারী।
১২। এলার্জি প্রতিরোধে- পেঁয়াজে থাকা Quercetin নামক এন্টিহিস্টামিন অ্যাজমার জন্য উপকারী। এছাড়া পেয়াজে থাকা Quercetin অন্য যেকোন ধরনের উৎস থেকে প্রাপ্ত Quercetin থেকে তুলনামূলকভাবে সহজে শোষণ হয় এবং রক্তের চলাচল স্বাভাবিক রাখে।
১৩। শ্বসনতন্ত্রের রোগ- ঠাণ্ডা কাশির মতো সাধারণ রোগের ক্ষেত্রেও সেরা ঘরোয়া প্রতিকার হচ্ছে পেঁয়াজের রস। পেঁয়াজের মাঝে থাকা তেল শুধুমাত্র শ্লেষ্মা কমাতেই সাহায্য করে না সাথে সাথে তা প্রতিরোধও করে। এটা ব্রংকাইটিস, রক্ত জমাট বাধা এবং বিপাকীয় সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্যও বেশ উপকারী।
১৪। অস্টিওপোরোসিস- পেঁয়াজ ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস। গবেষণায় দেখা গেছে যে পেঁয়াজের মাঝে এমন একটি উপাদান রয়েছে যা হাড়ের ক্ষয় রোধ করে তাই পেঁয়াজ আমাদের দেহের হাড়ের রক্ষণাবেক্ষনে সাহায্য করে এবং অস্টিওপোরোসিস বা অস্থিক্ষয় রোগ প্রতিরোধ করে।
১৫। মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য রক্ষায়- নিয়মিত পেঁয়াজ মুখে নিয়ে চিবিয়ে খেলে দাঁতের ক্ষয় এবং মুখের ভেতরের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তাই সালাদের মাঝে কাঁচা পেঁয়াজ খেলে মুখের ভেতরের জীবাণু সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে এবং মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য রক্ষা করা সম্ভব হবে।
১৬। ডায়াবেটিস প্রতিরোধে- পেঁয়াজে থাকা ক্রোমিয়াম ইনসুলিনের মাত্রা কমাতে এবং গ্লুকোজ সহনশীলতার মাত্রাকে উন্নত করতে সাহায্য করে।
১৭। কানের ব্যাথা দূরীকরণে- কানের ব্যাথায় পেঁয়াজের রস কানে লাগালে ব্যাথা দূর হয়। পেঁয়াজে থাকা এসেন্সিয়াল অয়েলের জন্য সেটা হয়ে থাকে। খুব ভালো হয় যদি পেঁয়াজ চুলায় সেঁকে নিয়ে বা সেদ্ধ করে নিয়ে রস বের করে সেটা কুসুম গরম অবস্থায় কানে দেয়া যায়।
১৮। হিট স্ট্রোক প্রতিরোধ- হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে পেঁয়াজ একটি খুব ভালো ঘরোয়া প্রতিকার হতে পারে। তাই ওই সময় কাঁচা পেঁয়াজের রসের সাথে চিনির মিস্রি মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। এছাড়া পেঁয়াজের রস পায়ের পাতায় ঘষলেও বেশ উপকার পাওয়া যায়।
১৯। রক্ত বন্ধ করতে- দেহের কোন স্থানে কেটে গেলে এক টুকরা পেঁয়াজ ঘষুন। দেখবেন সাথে সাথে রক্ত বন্ধ হয়ে গেছে এবং এটি ইনফেকশন প্রতিরোধেও সাহায্য করবে।
২০। চুলের যত্নেঃ  এটি ক্লিনিকালই পরীক্ষিত যে চুল ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে পেঁয়াজের রস দারুণ কার্যকর। পেঁয়াজের রস মাথায় নতুন চুল গজাতেও সাহায্য করে। মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং জীবাণুমুক্ত রাখতে সাহায্য করে। ১টি বড় পেঁয়াজ ভালো করে পিষে ছাকনি দিয়ে ছেকে রস বের করে নিতে হবে। তারপর এই রস পুরো মাথার ত্বক ও চুলে লাগিয়ে একঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে। একঘণ্টা পর মাথা শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
২১। পেঁয়াজে প্রচুর পরিমাণে কোয়ারসেটিন আছে যা পেয়াজের বাইরের হালকা বেগুনী ত্বকে থাকে। কোয়ারসেটিন রক্তের খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায় এবং ভালো কোলেস্টেরল বাড়ায়, রক্ত জমাট বাঁধা রোধ করে



২২। শরীরকে বিষ মুক্ত করেঃ পেঁয়াজে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক সালফার যৌগ আছে যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। সালফারে এমিনো এসিড আছে যা রসুন ও ডিমে পাওয়া যায়। এই এমিনো এসিড গুলোকে মিথিওনাইন ও সিস্টাইন বলা হয়। এই উপাদান গুলো শরীরকে বিভিন্ন ক্ষতিকর ধাতুর থেকে মুক্তি দেয়। এমন কি এগুলো শরীর থেকে সীসা, আর্সেনিক ও ক্যাডমিয়াম বের করে দেয়। পেঁয়াজ ভিটামিন সি আছে যা শরীরকে বিশুদ্ধ করে এবং সীসা, আর্সেনিক ও ক্যাডমিয়াম থেকে শরীরকে রক্ষা করে।
২৩। যৌন ক্ষমতা বাড়ায়ঃ পেঁয়াজ যৌন ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। প্রতিদিন অন্তত এক গ্লাস করে পেঁয়াজের রস খেলে যৌন ক্ষমতা বাড়ে। এভাবে নিয়মিত খেলে যৌন ক্ষমতা প্রায় ২০০% বেড়ে যায়। যারা পেঁয়াজের রস খেতে পছন্দ করেন না তাঁরা খাবারের সাথে কাঁচা পেঁয়াজ খেলেও উপকার পাবেন।
 ২৪। লাল পেঁয়াজ মাসিক রোগ সংশোধন করতে সাহায্য করে । মাসিক শুরু হবার কিছু দিন আগে    লাল পেয়াজ খান।
২৫। শরীরের কালো দাগঃ  হলুদের সাথে পেয়াজের রস মিশ্রিত করে শরীরে কোন কাল দাগ থাকলে সেখানে ব্যবহার করুন। কালো দাগ চলে যাবে ।
২৬। পেয়াজ হজম শক্তি বাড়ায়।
২৭।  সাদা পেয়াজ Piles থেকে রক্ত ঝরা বন্ধ করবার জন্যেও সুপারিশ করা হয়।
২৮। প্রতিদিন একটা পেঁয়াজ আপনার ঘুমের অভাব দূর করবে।
২৯। জয়েন্ট পেইন দূর করে।
৩০। কৃমি সমস্যা থাকলে এক চামচপেঁয়াজের রস খেলে উপকার পাওয়া যায় ।
৩১। দাঁতের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে পেয়াজ।
৩২। পেয়াজ মেমরি ও স্নায়ুর উন্নতি ঘটায়।
৩৩। কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করে।
৩৪। প্রতিদিন চিনি দিয়ে পেয়াজ খেলে তা শিশুদের উচ্চতা লাভ করতে সাহায্য করে।
৩৫।  বারবার বমি হলে চার-পাঁচ ফোঁটা পেঁয়াজের রস পানিতে মিশিয়ে সে পানি খেলে বমি হওয়া বন্ধ  হয়ে যাবে।
৩৬।  হেঁচকি উঠলে পেঁয়াজের রস মিশিয়ে পানি খেলে হেঁচকি ওঠা বন্ধ হয়ে যাবে।
৩৭।  পেঁয়াজ খেলে শরীরের অতিরিক্ত ইউরিক এসিড বের হয়ে যায়।
৩৮। বিষফোঁড়ায় পেঁয়াজের রস লাগালে টাটানি ও ব্যথা সেরে যায়।
৩৯। পেঁয়াজ ধমনিতে ময়লা (চষধয়ঁব) জমতে দেয়া না। তাই  বস্নাড প্রেসার কমায়।
৪০। আমাশয় ও ডায়রিয়া কমায়।
৪১। পেঁয়াজ এর রস মুখে দিলে ব্রন দূর হয়।
৪২। শরীরের খতো বা পোড়া স্থানে পেঁয়াজ এর রস উপকারি। ঘা যুক্ত স্থানে পেঁয়াজ এর রস দিয়ে ধুয়ে দিলে তাড়াতাড়ি সেরে যাবে।
৪৩। ঠান্ডা লেগে মাথাব্যথা হলে ১ চামচ পেঁয়াজের রসের সঙ্গে দ্বিগুণ পানি মিশিয়ে একবার খেলে    ব্যথা কমে যাবে।
৪৪। পেঁয়াজ খেলে গলা পরিষ্কার হয়, মুখমণ্ডল পরিষ্কার হয়, দাঁত দুধের মত সাদা হয়
৪৫।  পেঁয়াজের রসের করলার রস মিশিয়ে ছোট সাইজের কাপের ১/২ কাপ খেলে ভীষণ রকমের      আজীর্ণ সেরে যায়।
৪৬।  যে সব শিশুদের ঘুম কম এবং রাত্রিতে ঘুম না আসার জন্য মাকে ঘুমাতে দেয় না তাদের ঘুমের ঔষধও এই পেঁয়াজ। প্রথমে এক লিটার পানি ভাল করে ফুটিয়ে নিয়ে আঁচ থেকে নামিয়ে নিন। দুটি মাঝারি সাইজের পেঁয়াজ কুরুনি দিয়ে কুরে নিয়ে সেটা সেই পানিতে ঢেলে দশ মিনিট রাখুন। পানি ঠাণ্ডা হলে ছেঁকে নিন। খুব ছোট শিশু হলে এক চা চামচ পানি নিয়ে পাঁচ ফোঁটা বিশুদ্ধ মধু মিশিয়ে বাচ্চাকে খাইয়ে দিন। বাচ্চার শিগগিরই অনিদ্রা কেটে ঘুম আসবে।
৪৭।  ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়ঃ বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে পেঁয়াজের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট কোষের ডিএনএ কে ক্ষতির থেকে বাঁচিয়ে ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। এমনকি গবেষণায় দেখা গেছে যে পেঁয়াজের রস টেস্ট টিউবের টিউমার সেল কে ধ্বংস করে । পেঁয়াজের রস বিষাক্ত নয় এবং এর কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। তাই যত খুশি তত খেলেও কোনো সমস্যা নেই।

পেঁয়াজ টাটকা খাওয়া উচি  পেঁয়াজ কেটে বাসী না করে টাটকা-টাটকাই খেয়ে নেওয়া উচিত। পেঁয়াজকে বায়ু-নাশক বলা হয়। কিন্তু রান্না করা পেঁয়াজ কেটে রাখলে পেঁয়াজের গুণ নষ্ট হয়ে যা






কোন মন্তব্য নেই: