বুধবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৫

বিস্ময়কর ফসল সীতালাউ



একবার রোপণের পর ১০ বছর পর্যন্ত একই লতা থেকে বছরের ১২ মাস পাওয়া যাবে সবুজ লাউ। সীতা লাউ একটি বহুবর্ষজীবী লতানো উদ্ভিদ । বারি সীতা লাউ-১ জাতটি ২০১০ সালে অনুমোদন করা হয় । 



চারা লাগানর ৫-৬ মাস পর ফুল আসে । ৩০ দিন পর ফল সবজি হিসাবে খাওয়ার উপযোগী হয় । সারা বছর ফল দিতে থাকে । ৫-৭ বছরের একটি গাছ থেকে ২০০ টি ফল পাওয়া যাবে । গড়ে প্রতিটি ফলের ওজন ৭৫০ গ্রাম হয় । যেহেতু গাছ ১০-১৫ বছর বেঁচে থাকে এবং ফল দেয় তাই মজবুত মাচা তৈরি করতে হবে । 

উর্বর দোআঁশ বা বেলে দোআঁশ মাটি এবং পানি নিষ্কাশনের সুবিধাযুক্ত শীত এলএইউ চাষের জন্য সবচেয়ে বেশী উপযুক্ত । শীত লাঊ জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না । 

সিত লাউ বীজ বা শাখা কাটিং এর মাধ্যমে চারা উৎপাদন করা যায় । 

চারা রোপণঃ জমিতে সারি থেকে সারি ৩ মিটার এবং গাছ থেকে গাছ ৩ মিটার দূরত্ব বজায় রেখে চারা রোপণ করতে হয় । 

রোপণের সময়ঃ প্রধানত জুন-জুলাই মাস, তবে সেচের সুবিধা থাকলে বছরের যে কোন সময় রোপণ করা যায় ।

বিশেষ জত্নঃ যেহেতু এই ফসলটি ১০-১৫ বছর বেঁচে থাকে এবং ফল দিতে থাকে সুতরাং মজবুত মাচা তৈরি , প্রুনিং ( ছাঁটাই) এবং ফলের আকৃতি ঠিক রাখতে কয়েকবার বোরন সার দিতে হবে । 


সারের পরিমাণ এবং প্রয়োগ পদ্ধতিঃ
সারের নাম
সারের পরিমাণ/ হেক্টর
প্রতি পইতে
পচা গোবর
১০০০০ কেজি
১০ কেজি
ইউরিয়া
৫০০ কেজি
৫০০ গ্রাম
টি এস পি
৪০০ কেজি
৪০০ গ্রাম
এমওপি
৩০০ কেজি
৩০০ গ্রাম
বোরন
২ কেজি
০২ গ্রাম

সমুদয় গোবর, টিএসপি, অর্ধেক এমওপি, বোরন, এবং এক পঞ্চমাংশ ইউরিয়া পিট তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হবে । বাকি এমওপি এবং ইউরিয়া ৪ কিস্তিতে বছরে প্রয়োগ করতে হবে ।   



কৃষি বিজ্ঞানী ড. হারুনুর রশীদ জানানকাপ্তাই কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের উদ্ভাবনে উৎপাদিত সীতা লাউ একটি দীর্ঘজীবী লতানো উদ্ভিদ।একবার একটি সীতা লাউয়ের লতা জন্মানোর পর এই লতা থেকে ১০ বছর পর্যন্ত বছরের ১২ মাস লাউ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। লতা এবং লতা ছড়ানোর জন্য মাচাং-এর যত্ন নিলেই প্রায় প্রতিদিনই একটি লতা থেকে লাউ সংগ্রহ করা সম্ভব হবে। সীতা লাউ সবজি হিসেবে খুবই সুস্বাদুসাধারণ লাউ-এর মত এই লাউ রান্না করা যায়। এ ছাড়া গরুর মাংসের সাথে এই লাউ রান্না করা হলে আরো বেশি সুস্বাদু হয়।


পুষ্টিকর ও সারাবছর উৎপাদন সম্ভব এই সবজির চাষাবাদ সারাদেশে সম্প্রসারিত করা গেলে গ্রীষ্মকালে সবজির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে। সীতা লাউয়ের গাছ লতানো বিধায় লাউ কুমড়ার মত বাউনি দিতে হয়। পরিচর্যা ভালো করতে পারলে গাছ ১০-১৫ বছর পর্যন্ত ফল দিতে সক্ষম। মাঝে-মধ্যে ডালপালা ছাঁটাই করে দিলে নতুন শাখা-প্রশাখা বের হয়ে ফল উৎপাদন বেড়ে যায়।

চারা লাগানোর ৫/৬ মাসের মধ্যে গাছে ফুল আসে এবং ফুল ফোটার ২৫/৩০ দিনের মধ্যে ফলের ওজন ৪০০ থেকে ৮০০ গ্রাম হয়। একটি গাছ থেকে বছরে ২০০ টি পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। কচি অবস্থায় ফলত্বকসহ পুরো ফলটিই সবজি হিসেবে ব্যবহার হয়। এর স্বাদঅনেকটা চালকুমড়ার কাছাকাছিতবে একটু মিষ্টি ভাব থাকে। আবার সীতা লাউ পূর্ণ পেকে গেলে এটি সুমিষ্ট রসালো হয়। সীতা লাউয়ের রস দিয়ে শরবত অতি চমৎকার হয়। পাকা ফলে খোসা ছাড়িয়ে টুকরো করে কেটে তা পেঁপেআনারস বা কলার সাথে চমৎকার মিশ্র ফল ও ডেজার্ট হিসেবে খাওয়া যায়।

রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের সীতা লাউ গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়দক্ষিণ আমেরিকাভারতমিয়ানমারথাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে সীতা লাউয়ের চাষ হলেও বাংলাদেশে এই লাউয়ের চাষ বিস্তৃতি লাভ করেনি প্রয়োজনীয় গবেষণার অভাবে। কাপ্তাইয়ের রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্র ১২ বছর গবেষণার পর বারি সীতা লাউ-১ নামের একটি জাত উদ্ভাবন ও চাষের জন্য অবমুক্ত করেছে।

কোন মন্তব্য নেই: