শুক্রবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৫

গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ ও পুষ্টিমান



বাংলাদেশে যেসব সবজি চাষ করা হয় তার মধ্যে টমেটো অন্যতম। এর ইংরেজি নাম Tomato ও বৈজ্ঞানিক নাম Solanum lycopersicum. টমেটো  একটি শীতকালীন সবজি। শীতকালীন সবজি ফসল হলেও এর কয়েকটি জাত গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে চাষ করা যায়। তবে আমাদের দেশের প্রায় সব অঞ্চলেই শীতকালীন টমেটো চাষ করা হয়ে থাকে। আমাদের দেশের অনেক স্থানে এখন ব্যবসায়িক ভিত্তিতে গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে চাষ টমেটো চাষ ও বাজারজাত করা হয়।



গ্রীষ্মকালীন টমেটো শীতের চেয়ে অন্তত চার-পাঁচ গুণ দামে বিক্রি হবে। গ্রীষ্মকালীন টমেটো পলিথিনের ছাউনিতে এসব জাত চাষ করা হয়।

পুষ্টিমানঃ    প্রতি ১০০ গ্রামে পুষ্টি উপাদানসমূহ নিম্ন লিখিত পরিমাণে পাওয়া যায়

পুষ্টি উপাদানের নাম
পরিমাণ
পুষ্টি উপাদানের নাম
পরিমাণ
পানি
৯৪ গ্রাম
থায়ামিন
০.০৫ মিলিগ্রাম
আমিষ
০.৯ গ্রাম
রাইবোফ্ল্যাভিন
০.০৩ মিলিগ্রাম
স্নেহ
০.২ গ্রাম
নায়াসিন
০.৬ মিলিগ্রাম
শ্বেতসার
৩.৬ গ্রাম
ভিটামিন সি
১০-১০০ মিলিগ্রাম
আঁশ
০.৮ গ্রাম
ক্যালসিয়াম
৮ মিলিগ্রাম
শক্তি/ক্যালরি
২০ কিলো ক্যালোরি
লোহা
০.৩ মিলিগ্রাম
ভিটামিন সমতুল্য
২০০-৮০০ আই ইউ



বর্ষাকালের চাষের জন্য এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত এবং আগাম জাতের ক্ষেত্রে জুলাই থেকে আগস্ট মাস এবং শীতকালীন চাষের জন্য সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত চারা উৎপাদনের জন্য বীজতলায় বীজ বপন করা যায়।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা উদ্ভাবিত টমেটোর উন্মুক্ত (OP) জাত গুলির সংক্ষিপ্ত বৈশিষ্টঃ

টমেটোর জাত
টমেটোর জাতের বৈশিষ্ট্য
বারি টমেটো ২   ( রতন)
ফলের ওজন ৮৫-৯০ গ্রাম। ফলন ৩০০-৩৫০ কেজি/ শতাংশ।
বারি টমেটো
ফলের ওজন ৮০-৯০ গ্রাম। ফলন ৩০০-৩৫০ কেজি/ শতাংশ।
বারি টমেটো
ফলের ওজন ৩৫-৪০ গ্রাম । ফলন   ৬০-৭০ কেজি/ শতাংশ ।
বারি টমেটো
ফলের ওজন ৪০-৫০ গ্রাম । ফলন   ৬০-৭০ কেজি/ শতাংশ ।
বারি টমেটো ৬   ( চৈতী )
ফলের ওজন ৮০-৯০ গ্রাম । ফলন ৩০০-৩৫০ কেজি/ শতাংশ । গ্রীষ্ম মৌসুমে ১৮০-২০০ কেজি/ শতাংশ ।
বারি টমেটো ৭   ( অপূর্ব )
ফলের ওজন ১৪৫-১৫৫ গ্রাম। ফলন ৩০০-৩৫০ কেজি/শতাংশ ।
বারি টমেটো ৮   ( শিলা )
ফলের ওজন ১০০-১৫৫ গ্রাম। ফলন ৩০০-৪০০ কেজি/শতাংশ ।
বারি টমেটো ৯   ( লালিমা )
ফলের ওজন ৭৫-৮০ গ্রাম। ফলন ৩৩০-৩৫০ কেজি/শতাংশ ।
বারি টমেটো ১০ ( অনুপমা )
ফলের ওজন ২৫-৩০ গ্রাম । ফলন ১৮০-২০০ কেজি/শতাংশ ।
বারি টমেটো ১১ ( ঝুমকা )
ফলের ওজন ৮-১০ গ্রাম । ফলন ১৫০-১৮০ কেজি/ শতাংশ । গ্রীষ্ম মৌসুমে ৬০-৯০ কেজি/ শতাংশ ।
বারি টমেটো ১২ ( সিঁদুর )
ফলের ওজন ৮০-৮৫ গ্রাম। ফলন ৩০০-৩৫০ কেজি/শতাংশ ।
বারি টমেটো ১৪
ফলের ওজন ৯০-৯৫ গ্রাম । ফলন ৩৪০-৩৫০ কেজি/ শতাংশ । আগাম শীত ও গ্রীষ্মের শুরুতে চাষযোগ্য । ব্যাকটেরিয়া জনিত ঢলে পড়া রোগ প্রতিরোধী । ৪৫-৬০ দিন পর্যন্ত টমেটো সংগ্রহ করা যায় ।


আগাম ও গ্রীষ্মকালীন জাতঃ    আগাম টমেটো চাষ করার জন্য প্রধান প্রধান জাত হচ্ছে বিনাটমেটো ৩, বিনাটমেটো ৪, বারিটমেটো ৪, বারিটমেটো ৫ এবং বারিটমেটো ৬ (চৈতী), বারি টমেটো ১১ ( চৈতী) ও বারি টমেটো ১৪ । 



আগাম ও গ্রীষ্মকালীন  ফসলঃ    গ্রীষ্মকালীন টমেটোর জন্য টমাটোটোন নামক হরমোন প্রয়োগের প্রয়োজন হয়। হ্যান্ড স্প্রেয়ারের সাহায্যে ৫ চা চামচ (প্রতি লিটার পানিতে) টমাটোটোন শুধু ফুটন্ত ফুলে ৮ থেকে ১০ দিন অন্তর ২ বার স্প্রে করতে হয়। এ প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ফলে সারা বছর টমেটো চাষ করা সম্ভব। টমাটোটোন দ্বারা উৎপাদিত ফলে বীজ হয় না।

জমি তৈরিঃ   
১. জমি ৪-৫ বার চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝরঝরে করে নিতে হবে।  
২. গ্রীষ্মকালে টমেটো চাষের জন্য ২০-২৫ সে.মি. উঁচু ও ২৩০ সে.মি. চওড়া বেড তৈরি করতে হবে।  
৩. সেচ দেওয়ার সুবিধার জন্য দুটি বেডের মাঝে ৩০ সে.মি. নালা রাখতে হবে।

 বীজ বপন ও চারা রোপণঃ   
১. বীজ বপনের ৩০-৩৫ দিন পর চারা (৪-৬টি পাতা বিশিষ্ট) রোপণের উপযোগী হয়।  
২. প্রতিটি বেডে দুই সারি করে চারা রোপণ করতে হবে। এক সারি থেকে অন্য সারির দূরত্ব ৬০ সে.মি. রাখতে হবে।  
৩. প্রতি সারিতে চারার দূরত্ব ৪০ সে.মি. রেখে ৩০-৩৫ দিন বয়সের চারা রোপণ করতে হবে।
বীজতলা তৈরিঃ
চারা তৈরির দুই মাস আগে বীজ বপনের জন্য বীজতলা তৈরির প্রস্তুতি নিতে হবে। বীজতলায় নির্দিষ্ট পরিমাণ জৈব সার এবং  অন্যান্য সার এবং রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োগ করতে হবে।

সারের নাম
পরিমাণ গ্রাম/শতাংশ
টিএসপি
১০০০ গ্রাম
বোরিক এসিড
৫০ গ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম সালফেট
১৫০ গ্রাম
দস্তা
৬০ গ্রাম
জিপসাম
৪০০ গ্রাম


বীজতলায় বীজ বপনঃ
১। বীজ বোনার আগে  প্রোভক্স/ব্যাভিস্টিন বা ভিটাভ্যাক্স বা সিনকার দ্বারা বীজ শোধন করে নিতে হবে।
২। সুস্থ সবল চারা উৎপাদনের জন্য প্রথমে ১০ গ্রাম মানসম্মত ভাল বীজ ঘন করে প্রতিটি বীজতলায় (বীজ তলার আয়তন হবে দৈর্ঘ্য ১ মিটার ও প্রস্থ ৩ মিটার) বুনতে হয়।
৩। বীজতলায় প্রতি ইঞ্চিতে ৪০-৬০টি ছিদ্রযুক্ত নাইলন নেট দিয়ে ঢেকে চারা উৎপাদন করলে চারা অবস্থায়ই সাদা মাছিপোকার কারণে পাতা কোঁকড়ানো ভাইরাস রোগ ছড়ানোর হাত থেকে নিস্তার পাওয়া যায়। এ রকম সুস্থ সবল ও ভাইরাসমুক্ত চারা রোপণ করে ভালো ফলন পাওয়া যায়।




গ্রীষ্মকালীন টমেটো পলিথিনের ছাউনিতে এসব জাত চাষ করা হয়। একটি ছাউনি ২০ মিটার ´২.৩ মিটার আকৃতির হলে ভালো। ৩০ সেন্টিমিটার চওড়া ২টি বীজতলায় লম্বালম্বিভাবে ১টি করে ছাউনির ব্যবস্থা করে নিতে হবে। ছাউনির খুঁটির উভয় পাশের উচ্চতা ১৫০ সেন্টিমিটার এবং মাঝখানের খুঁটির উচ্চতা ২১০ সেন্টিমিটার হতে হবে। জমি নৌকার ছইয়ের আকৃতি করে পলিথিন দিয়ে ছাউনি দিতে হয়। ২টি ছাউনির মাঝে ৭৫ সেন্টিমিটার চওড়া নিকাশ নালা রাখলে ভালো হয়। প্রতিটি ছাউনিতে ২টি বীজতলা রাখতে হবে।
টমেটো চাষের জন্য জলবায়ুঃ
টমেটো এদেশে রবি বা শীতের ফসল হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট  থেকে গ্রীষ্মকালীন টমেটোর জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। রাতের তাপমাত্রা ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর নিচে থাকলে তা গাছের ফুল ও ফল ধারণের জন্য বেশি উপযোগী। গড় তাপমাত্রা ২০-২৫ ডিগ্রি সে. টমেটোর ভালো ফলনের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। রাতের তাপমাত্রা ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর কম হলে টমেটোতে ফল হয় না।



মাটির বৈশিষ্ট্যঃ
আলো-বাতাসযুক্ত উর্বর দো-আঁশ মাটি টমেটো চাষের জন্য সবচেয়ে ভালো। তবে উপযুক্ত পরিচর্যা বেলে দো-আঁশ থেকে এঁটেল দো-আঁশ সব মাটিতেই টমেটোর ভালো জন্মে। মাটির অম্লতা ৬-৭ হলে ভালো হয়। মাটির অম্লতা বেশি হলে জমিতে চুন প্রয়োগ করা দরকার।
চাষের সময় পরিচর্যাঃ   
১.   ১ম ও ২য় কিস্তি সার দেয়ার আগে পার্শ্বকুশিসহ মরা পাতা ছাঁটাই করতে হবে। নির্বাচিত গাছের নির্বাচিত ফল ছাড়া অতিরিক্ত ফুল ও ফল ভেঙ্গে ফেলতে হবে। এতে রোগ ও পোকার আক্রমণ কম হয় এবং ফলের আকার বড় হয়।
২.   প্রবল বাতাসে গাছ যাতে নুয়ে না পড়ে সেজন্য টমেটো গাছে ঠেকনা দিতে হবে। ৩. জাতের শুদ্ধতা রক্ষার জন্য অন্য জাতের টমেটোর ক্ষেত থেকে বীজ ক্ষেতের দূরত্ব কমপক্ষে ৮০ ফুট রাখতে হবে।
৪.   টমেটো স্বপরাগায়িত ফসল হলেও ২-৫% পর্যন্ত পরাগায়ণ হতে পারে। সেজন্য হাত দিয়ে পরাগায়ণ ঘটানোর মাধ্যমে জাতের শুদ্ধতা বজায় রাখা যায়। পরাগায়ণ ঘটানোর পর কাগজের ব্যাগ দিয়ে ফুলের গুচ্ছ ঢেকে দিতে হবে।
৫.   কোন গাছ অন্যরকম বা ভিন্ন জাতের মনে হলে তা সমূলে তুলে ফেলতে হবে।
সেচ ও নিষ্কাশনঃ
চারা রোপণের ৩-৪ দিন পর পর্যন্ত হালকা সেচ ও পরে প্রতি কিস্তিতে সার উপরি প্রয়োগের পর জমিতে সেচ দিতে হয়। গ্রীষ্ম মৌসুমে টমেটো চাষের জন্য ঘন ঘন সেচের প্রয়োজন হয়। বর্ষা মৌসুমে তেমন একটা সেচের প্রয়োজন হয় না। টমেটো গাছ জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। সেচ অথবা বৃষ্টির অতিরিক্ত পানি দ্রুত নিষ্কাশনের জন্য নালা পরিমিতি চওড়া (৩০-৪০ সেন্টিমিটার) এবং এক দিকে সামান্য ঢালু হওয়া দরকার। সেচ দেওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে, সেচের পানি কখনোই যেন বেডের উপর উঠে না আসে। নালাতে সেচ দিতে হবে, নালা থেকে শোষণের মাধ্যমে বেড ও গাছ পানি সংগ্রহ করতে হবে।

আচ্ছাদনের ব্যবস্থাঃ  সূর্যের প্রখরতা থেকে চারা গাছকে বাঁচানোর জন্য ছায়াদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
মালচিংঃ  প্রতিটি সেচের পরে মাটির উপরি ভাগের চটা বা চাকামাটি ভেঙে দিতে হবে যাতে মাটিতে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল করতে পারে। 

আগাছা দমনঃ   টমেটোর জমিতে প্রয়োজনীয় নিড়ানি দিয়ে আগাছামুক্ত রাখতে হবে।



গ্রীষ্ম ও বর্ষায় চাষ পদ্ধতি:
*       গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে টমেটো চাষ করার জন্য বারি-৪ হাইব্রিড টমেটো জাত অনুমোদন করা হয়েছে।
*       ২৩০ সেন্টিমিটার (প্রায় ৯০ ইঞ্চি) চওড়া (মাঝে ৩০ সেন্টিমিটার নালাসহ) ২টি বেডে লম্বালম্বিভাবে একটি করে ছাউনির ব্যবস্থা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ছাউনির দুপাশে উচ্চতা ১৩৫ সেন্টিমিটার ও মাঝখানের উচ্চতা ১৮০ সেন্টিমিটার হয়।
*       চারা লাগানোর আগেই জমিতে নৌকার ছইয়ের আকৃতি করে ছাউনি দিতে হয়। ছাউনির জন্য বাঁশ, স্বচ্ছ পলিথিন, নাইলনের দড়ি ও পাটের সুতলি প্রয়োজন। পলিথিন যাতে বাতাসে উড়ে না যায় সেজন্য ছাউনির ওপর দিয়ে উভয় পাশ থেকে আড়াআড়িভাবে দড়ি পেঁচানো হয়ে থাকে।
*       পাশাপাশি দুই ছাউনির মাঝে ৫০ সেন্টিমিটার চওড়া নিষ্কাশন নালা রাখতে হবে। জমি থেকে বেডের উচ্চতা ২০-২৫ সেন্টিমিটার হতে হবে। প্রতিটি ছাউনিতে ২টি বেডে ৪টি সারি থাকবে। ২৫-৩০ দিন বয়সের চারা প্রতি বেডে ২ সারি করে রোপণ করতে হবে।
*       গ্রীষ্মকালীন টমেটো গাছে প্রচুর ফুল ও করলেও উচ্চ তাপমাত্রা পরাগায়নে বিঘ্ন ঘটায়। কাজেই আশানুরূপ ফলন পেতে হলে টমাটোটোন নামক কৃত্রিম হরমোন ২ সেমি. ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে ছোট সিঞ্চনযন্ত্রের সাহায্যে সপ্তাহে দুইবার শুধুমাত্র সদ্য ফোটা ফুলে স্প্রে করতে হবে।
*       তবে নতুন উদ্ভাবিত হাইব্রিড জাতসমূহের হরমোন প্রয়োগ ছাড়াও লাভজনক ফলন পাওয়া যায়।


রোগবালাইঃ  
বীজতলায় সাধারনত
ড্যাম্পিং অফ ও আশুধ্বসা রোগের আক্রমন হয়। ড্যাম্পিং অফ একটি ছত্রাক জাতীয় রোগ। এ রোগে আক্রান্ত অংকুরিত চারার রঙ ফ্যাকাসে সবুজ হয় ও কান্ডের নীচের দিকে গাছের গোড়া বরারব বাদামী রঙের পানি ভেজা দাগ পড়ে। আক্রান্ত চারার গোড়া পচে চারা মারা যায়।
আশুধ্বসা রোগ হলে আক্রান্ত পাতার উপর কালো কিংবা বাদামী রঙের বৃত্তাকার দানা পড়ে। ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হলে শেষ পর্যন্ত ফুল ও ফল ঝরে পড়ে। পুস্প মঞ্জুরীর বোঁটা আক্রান্ত হলে ফুল ও অপরিপক্ক ফল ঝরে পড়ে।
ড্যাম্পিং অফ রোগের জন্য ডাইথেন এম-৪৫ অথবা একরোবেট এম জেড (২ গ্রাম/লিটার) অথবা রোভরাল (২ গ্রাম/লিটার) অথবা রিডোমিল এম জেড ৭২ (২ গ্রাম/লিটার) এবং আশুধ্বসা রোগের জন্য একরোবেট এম জেড বা রোভরাল (২ গ্রাম/লিটার) পানিতে মিশিয়ে ১০-১৫ দিন অন্তর জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। রোগ সহনশীল জাত হিসেবে বারির অনুমোদিত জাতগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে।
নাবীধ্বসা রোগ হলে আক্রান্ত পাতার উপর কালো রঙের পোড়া দাগ দেখা যায়। প্রথমে পাতার কিনারা হতে হালকা হলুদ রঙের দাগ দেখা যায়। পরবর্তীতে তা বৃদ্ধি পেয়ে বাদামী বা ঝলসানো/পোড়া রং ধারন করে। অনেক সময় পাতার কিনারা কুকরিয়ে যায়। গাছের কান্ড ও ফলেও আক্রমনের লক্ষণ দেখা যায়। ফল ও কান্ডের উপরে কালচে বাদামী রঙের দাগ দেখা যায়। ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হলে জমির সম্পূর্ণ ফসল নষ্ট হতে পারে। মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, অতিমাত্রায় ঘন কুয়াশা এবং মাত্রাতিরিক্ত ইউরিয়া সারের প্রয়োগ এ রোগ সংক্রমনে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
নাবীধ্বসা রোগ দমনের জন্য ডাইথেন এম-৪৫ অথবা একরোবেট এম জেড / রোভরাল /রিডোমিল এম জেড যে কোন একটি ছত্রাক নাশক ২ গ্রাম/লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০-১৫ দিন অন্তর জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। রোগ সহনশীল জাত হিসেবে বারির অনুমোদিত জাতগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে।
টমেটো গাছে পাতায় দাগপড়া রোগ দেখা যায়। বেভিস্টিন নামক ছত্রাকনাশক (১ গ্রাম/লিটার) পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করলে এ রোগ দমন করা সম্ভব।
মোজাইক রোগে পাতা কুঁকড়ে যায়, গাছ ও ফলের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। এজন্য আক্রান্ত গাছ ধ্বংস করতে হয়। সুস্থ গাছে কীটনাশক ওষুধ ছিটানোর ব্যবস্থা দ্বারা ভাইরাস বহনকারী পোকার আগমন প্রতিরোধ করতে হয়। ফিউজেরিয়াম উইল্ট রোগে গাছ ঢলে পড়ে। পাতা হলুদাভ হয় এবং পাতা ভেতরের দিকে বেঁকে আসে। এ রোগ মাটির মাধ্যমে ছড়ায়। এ রোগে আক্রান্ত গাছ ধ্বংস করতে হয়।

 
পোকামাকড়ঃ
টমেটোর ফল ছিদ্রকারী পোকা অন্যতম গুরুত্বপূর্ন পোকা। এ পোকার কীড়া প্রথমে পাতা ফুল ইত্যাদি খায় এবং পরে ফল ছিদ্র করে ভিতরে ঢুকে ফলের শাঁস খাওয়া শুরু করে। ফলে শাঁস নষ্ট হয় এবং পচন ধরে। এ পোকা দমনের জন্য প্রতি লিটার পানির সাথে ১ মি.লি. ডেসিস ২.৫ইসি/রিপকর্ড মিশিয়ে ছিটাতে হবে।
টমেটো গাছে সাদা মাছি পোকার আক্রমন হতে দেখা যায়। এ পোকা খুব ছোট এবং পাতার নিচের দিকে থাকে বলে সহজে চোখে পড়ে না। পাতা কোঁকড়ানো ভাইরাস রোগের বাহক হিসেবে এ পোকা কাজ করে। এ পোকা দমনের জন্য প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে যে কোন ডিটারজেন্ট পাউডার (গুড়া সাবান) মিশিয়ে ১৫ দিন পর পর পাতার নীচের দিকে স্প্রে করতে হবে। কীটনাশক প্রয়োগের প্রয়োজন হলে ম্যালাথিয়ন / সুমিথিয়ন (২মি.লি/লিটার) পানিতে মিশিয়ে পাতার নিচের দিকে স্প্রে করা যেতে পারে। প্রয়োজনে প্রথম স্প্রের ১৫ দিন পর দ্বিতীয় স্প্রে করতে হয়।

ফল সংগ্রহ
জাতভেদে চারা রোপণের ৬০-৯০ দিনের মধ্যে পাকা টমেটো সংগ্রহ শুরু হয়। প্রতি গাছ থেকে ৭-৮ বার ফল সংগ্রহ করা যায়। ফলের নীচের দিকে একটু লালচে ভাব দেখা দিলে ফল তোলার উপযোগী হয়।




২টি মন্তব্য:

Unknown বলেছেন...

শীতকালীন আগাম টমেটো চাষের জন্য প্রতি শতক জমিতে চারা রোপণের পূর্বে কি পরিমাণ সার দেওয়া প্রয়োজন বিস্তারিত জানাবেন।

Unknown বলেছেন...

ফল ছিলো কারি পোকা অনেক আছে দমন করার জন্য উসুল চাই