বৃহস্পতিবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৩

চলে গেলেন বিনোদ বিহারী চৌধুরী না ফেরার দেশে




“বিনোদ বিহারী চৌধুরী”  আজ ১০-০৪-২০১৩ বাংলাদেশ সময় রাত সোয়া ১০টার দিকে কলকাতার ফর্টিস হাসপাতালে মারা যান ।
এই বিপ্লবী চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার উত্তর ভূর্ষি গ্রামে ১৯১১ সালের ১০ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। পিতা স্বর্গীয় কামিনী কুমার চৌধুরী প্রখ্যাত আইনজীবী ছিলেন। তাঁর শিক্ষাস্থল ছিলো চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি থানার রাঙ্গামাটি বোর্ড স্কুল, করোনেশন উচ্চ বিদ্যালয়, বোয়ালখালীর পি.সি. সেন সারোয়াতলী উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। তিনি ১৯২৯ সালে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে রায়বাহাদুর বৃত্তি লাভ করেন। তৎকালীন বৃটিশ রাজ্যের রাজপুতনার দেউলি ডিটেনশেন ক্যাম্পে বন্দি থাকাবস্থায় ১৯৩৪ ও ১৯৩৬ সালে যথাক্রমে প্রথম বিভাগে ও ডিস্টিংশন নিয়ে তিনি আইএ ও বিএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং পরবর্তীতে বিএল ডিগ্রি লাভ করেন।

১০ জানুয়ারি ২০১৩ সোমবার ১০১ বছরে পা রেখেছিলেন তিনি।  ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের মহান বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্যসেনের প্রীতিধন্য বিনোদ বিহারী চৌধুরী শত বর্ষ পুরণ করলেন। 

মাত্র ষোল বছর বয়সে ১৯২৭ সালে বিপ্লবী দল 'যুগান্তরে' যোগ দেয়ার পর বিনোদ বিহারী শহীদ মাস্টারদা সূর্য সেন, তারকেশ্বর দস্তিদার, রামকৃষ্ণ বিশ্বাস ও শহীদ মধুসূদন দত্তের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে আসেন। শুরু হয় তাঁর বিপ্লবী জীবন।
মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে ১৯৩০ সালের ১৮ থেকে ২০ এপ্রিল সংঘটিত ঐতিহাসিক চট্টগ্রাম যুববিদ্রোহে অংশ নেন তিনি। বিদ্রোহের অংশ হিসেবে ১৮ এপ্রিল বিপ্লবী অনন্ত সিংহ ও গণেশ ঘোষের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম পুলিশ অস্ত্রাগার দখল করে বৃটিশ পতাকা নামিয়ে ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের পতাকা উত্তোলন করেন। এ সময় মাস্টারদা সূর্য সেনকে রাষ্ট্রপতি পদে বরণ করে অস্থায়ী গণতন্ত্রী বিপ্লবী সরকারের ঘোষণা দেন। ২২ এপ্রিল মাস্টারদা' নেতৃত্বে ঐতিহাসিক জালালাবাদ যুদ্ধে বৃটিশ বহিনীর সাথে সম্মুখ সমরে অংশ নিয়ে তিনি গুরুতর আহত হয়েছিলেন।

 ১৯৩০ থেকে অজ্ঞাতবাসে থাকাবস্থায় বৃটিশ সরকার বিনোদ বিহারীকে গ্রেফতারের জন্য শুধু হুলিয়াই জারি করেনি, জীবিত বা মৃত ধরে দেয়ার জন্য তৎকালীন ৫শ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করে। ১৯৩০ থেকে অজ্ঞাতবাসে থাকাবস্থায় বৃটিশ সরকার ১৯৩৩ সালে তাঁকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায়। প্রায় ৫ বছর চট্টগ্রাম জেল, কলকাতা প্রেসিডেন্সি জেল, দেউলি ডিটেনশন ক্যাম্প ও বহরমপুর জেলে কাটিয়ে ১৯৩৮ সালে মুক্তি পান। ১৯৩৯ সালে আবারো তাঁকে এক বছর গৃহবন্দি করে রাখা হয়। দু'বছর পর আবারো তাঁকে গ্রেফতার করে চট্টগ্রাম জেল, হিজলী বন্দি শিবির, খোকশা বন্দি শিবিরে আটক রাখা হয়। পাকিস্তান আমলেও স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের বন্দিশালায় তাকে ১৯৬৫ থেকে ১৯৬৬ পর্যন্ত এক বছর কারা বরণ করতে হয়। বৃটিশ ভারতের কারাগারে আটক থাকাবস্থায় তিনি মহাত্মা গান্ধীর আদর্শে অনুসারী হয়ে ওঠেন এবং ১৯৩৯ সালে কারাগার থেকে মুক্তির পর ভারতের জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দেন। ১৯৪০ থেকে ১৯৪৬ পর্যন্ত বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস নির্বাহী কমিটির সদস্য থাকাবস্থায় তিনি ১৯৪৬ সালে দলের চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর অনেকের মতো স্বদেশত্যাগী না হয়ে সে বছরই পাকিস্তান জাতীয় কংগ্র্রেস প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব দেন। 
১৯৪৮ সালে অনুষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান আইন পরিষদ নির্বাচনে কংগ্রেস দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। এ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে আরো বিকশিত করার লক্ষে অসম্প্রদায়িক রাষ্ট্রব্যবস্থার জন্য কংগ্রেস নেতা শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নেতৃত্বে পৃথক নির্বাচনের বিপরীতে যুক্ত আন্দোলনে অংশ নেন। ১৯৬৯ সালে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়ে ১৯৭১-এ প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠন করেন। এরপর স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে অবসর নিয়ে বিকল্পে সামাজিক-মানবাধিকার আন্দোলনে সক্রিয় নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করে আসছেন। 

দৈনিক পাঞ্চজন্য পত্রিকার সহকারী সম্পাদক হিসেবে ১৯৩৯ সালে শ্রী চৌধুরী তার কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৪০ সালে আইনজীবী হিসেবে চট্টগ্রাম আদালতেও যোগ দেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শিকতাকে আজীবনের পেশা হিসেবে বেছে নেন। দেশপ্রিয় ব্যারিস্টার যতীন্দ্র মোহন সেন গুপ্তের সহধর্মিনী ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের এককালীন সভানেত্রী শ্রীমতী নেলী সেন গুপ্তার মৃত্যু পর্যন্ত তিনি তার একান্ত সচিবের দায়িত্ব পালন করেন।


কোন মন্তব্য নেই: