মঙ্গলবার, ৩ জুন, ২০১৪

মেজর জিয়াউর রহমান ১৯৩৬ থেকে ১৯৭১





জিয়াউর রহমান ১৯৩৬ সালের ১৯শে জানুয়ারি বাংলাদেশের বগুড়া জেলার বাগবাড়ী গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন তাঁর পিতার নাম ছিল মনসুর রহমান এবং মাতার নাম ছিল জাহানারা খাতুন ওরফে রানী পাঁচ ভাইদের মধ্যে জিয়াউর রহমান ছিলেন দ্বিতীয় তাঁর পিতা কলকাতা শহরে এক সরকারি দপ্তরে রসায়নবিদ হিসেবে কর্মরত ছিলেন তাঁর শৈশবের কিছুকাল বগুড়ার গ্রামে ও কিছুকাল কলকাতা শহরে অতিবাহিত হয় 

ভারতবর্ষ বিভাগের পর তাঁর পিতা পশ্চিম পাকিস্তানের করাচি শহরে চলে যান তখন জিয়া কলকাতার হেয়ার স্কুল ত্যাগ করেন এবং করাচি একাডেমী স্কুলে ভর্তি হন ঐ স্কুল থেকে তিনি ১৯৫২ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন এবং তারপর১৯৫৩ সালে করাচিতে ডি.জে. কলেজে ভর্তি হন একই বছর তিনি কাকুল মিলিটারি একাডেমীতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করেন




স্বাধীনতার ঘোষনা পাঠ হল যে ভাবেঃ
কিভাবে তারঁ এই সুভাগ্য হল- আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে অনেকরই অনেক রকম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল, যা আমরা অনেকেই জানি না বলা যায় বেলাল মোহাম্মদ সেইসব অচেনাদের একজন(বেলাল মোহাম্মদ, আমাদের মুক্তিযুদ্ধে যার ভূমিকা ছিল অপরিসীম বেলাল মোহাম্মদ একাধারে কবি, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের এক মহা সৈনিক, মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক বেলাল মোহাম্মদের জন্ম ১৯৩৬ সালের ২০ শে ফেব্রুয়ারী চট্টগ্রাম জেলার স্বন্দ্বীপ উপজেলার মুছাপুর গ্রামে মৃত্ত্যু৩০-০৭-২০১৩) তিনি বরাবরই প্রচার বিমূখ ছিলেন বলে আমরা এই গুনি মানুষটি সম্বন্ধে ভালো ভাবে জানতে পারি নি
১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনালগ্নে যে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র স্থাপিত হয়ে ছিল, বেলাল মোহাম্মদ ছিলেন তার প্রতিষ্ঠাতা ও অন্যতম সংগঠক তিনি সাংবাদিকতা করেন এবং রেডিও পাকিস্তানের চট্টগ্রাম কেন্দ্রের স্ক্রিপ্ট রাইটার হিসেবে যোগ দেন সেই থেকেই তার রেডিওর সাথে পথ চলা
১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চে আরো কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে বেলাল মোহাম্মদ স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র নামে বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেনসেই দিনই বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষনার লিফলেট বেলাল মোহাম্মদের হাতে এসে পৌঁছায় দুপুর বেলা এম এ হান্নানসহ আরো কয়েকজন এই লিফলেট নিয়ে আসেন বলে কথিত আছে তবে বেলাল মোহাম্মদ একটি সাক্ষাত্কারে বলেছেন, (এই সাক্ষাত্কারটি bdnews24.com এ ছাপা হয়এ ছিল) ২৬শে মার্চ সকাল বেলা স্বাভাবিক ভাবে আমরা লক্ষ করলাম, ঢাকা কেন্দ্র থেকে সামরিক বাহিনীর কথা বলা হচ্ছে ওদের বক্তব্যই শুধু বলা হচ্ছে কাজেই আমরা আর যাইনি রেডিওতে আমি আর আমার সমমনা যারা আছি তারা চিন্তা ভাবনা করছি, যে কী করা যায় এখন ঢাকা কেন্দ্র হলো ১০০ কিলোওয়াট ট্রান্সমিটার আর চট্টগ্রাম মাত্র ১০ কিলোওয়াট আমাদের ৫০ মাইল ব্যাসার্ধ রেডি আছে, ঐ ১০ কিলোওয়াট দিয়েই একটা কাউন্টার প্রোগ্রাম করার উদ্যোগ নেওয়া যায় প্রস্তুতি যখন নেওয়া হচ্ছিল প্রথমে আমি ছিলাম এনায়েতগঞ্জে, দাদা ডা. শফির বাড়িতে, সেখান থেকে আওয়ামী লীগের একটা অফিস ছিল জহুর হকার্স মার্কেটে, সেখানে গেলাম আমি তিন দিনই তার সঙ্গে দেখা করার জন্য গেলাম, কিন্তু তার দেখা পেলাম না ওখানে তরুণ যারা আমাকে একটা জীপ গাড়ি দিলেন, গাড়িটা নিয়ে প্রস্তুতি পর্বে সর্ব প্রথম কেন্দ্রকে পাহারা দেওয়ার জন্য গেলাম ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলামের কাছে তাকে পাওয়া গেল তিনি বললেন, হ্যাঁ আমি পাহারার ব্যবস্থা করছি আপনি কাজ আরম্ভ করেন তো এক পর্যায়ে ব্রডকাস্টিং হাউজের সামনে পেলাম গোসাইলডাঙ্গা আওয়ামীলীগ ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট ডা. আনোয়ার আলীকে তিনি বললেন, রেডিও যে চালু করবেন তাতে কী প্রচার করবেন? আমি বললাম, কী আর প্রচার করবো বঙ্গবন্ধু আর স্বাধীনতাতিনি আমার হাতে একটা কাগজ ধরিয়ে দিলেন কাগজটা হলো ২৬শে মার্চ সকাল বেলা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা মাইকিং করেছে চট্টগ্রামের প্রধান প্রধান সড়কে যে ঢাকায় আক্রমণ হয়েছে এই প্রেক্ষিতে আমাদের মহান নেতা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন এই বক্তব্যটুকু তার বার্তা আকারে গিয়েছিল ডা. আনোয়ার আলী বললেন তিনি সেটাকে বাংলায় অনুবাদ করে তখনকার দিনে হাতে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে রেকর্ড করা হতো এবং সেটা দিয়েই আমরা শুরু করেছি আমরা সন্ধ্যা ৭ টা ৪০ মিনিটে চালু করতে পেরেছি এবং বিভিন্ন কণ্ঠে নাম ছাড়া ওই বক্তব্যটুকু প্রচার করেছি
কিছুক্ষণ পর ওখানে এলেন এম এ হান্নান তাকে আমি চিনতাম না ডা. জাফর ছিলেন তখন জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ তিনি আমাকে পরিচয় করে দিলেন যে ইনি আমদের হান্নান ভাই হান্নান ভাই বললেন, আমার নাম অ্যানাউন্স করো না, আমি একটা ভাষণ দেবো
আমি বললাম, আপনার নাম অ্যানাউন্স করবো না আপনি এমনি ভাষণ দেবেন কারণ আমরা ঘোষণা করেছি আগামী কাল, পরশু ও তরশু এমনি ভাবে প্রচার করবো ধারাবাহিক ভাবে আমাদের পরিচিত নাম প্রচার হলে শত্রুপক্ষ বুঝে ফেলবে যে এটা কোথা থেকে হচ্ছে আপনার কণ্ঠস্বর টাই যথেষ্ট
উনি বললেন, যে দুপুর বেলা আমি কিন্তু আপনার এই কেন্দ্র থেকে ছোট্ট আকারে একটি ঘোষণা প্রচার করেছিলাম সেটা আমি জানি না অর্থাৎ সেই একই দিন ২৬ শে মার্চ দুপুর বেলা উনি (এম এ হান্নান) রেডিওর কয়েক জন পরিচিতকে নিয়ে যারা অনিচ্ছুক ছিল এই রকম কয়েকজনকে নিয়ে রেডিও অন করিয়ে ওটাকে বলা হবে চট্টগ্রাম বেতারের বিক্ষিপ্ত একটা অধিবেশন সেখানে বঙ্গবন্ধু দেশের স্বাধীনতা করেছেন এই মর্মে একটা বক্তব্য রয়েছে
একই বক্তব্য তখন একটু বড় করে লিখে এনেছেন উনি সেটা আবার দ্বিতীয় বার প্রচার করলেন এবারও নাম ছাড়া এম এ হান্নান সাহেব ২৬ তারিখে দুই বার আসার পরে আর আসতে পারেন নি এর পর উনি অন্য কাজে ব্যস্ত ছিলেন
অন্যদিকে রফিকুল ইসলাম সাহেবকে আমি যে বলে ছিলাম সৈন্য পাঠিয়ে পাহারার ব্যবস্থা করার জন্য কিন্তু তিনি পাঠান নাই যার ফলে অত্যন্ত অসহায় বোধ করেছিলাম রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত অনুষ্ঠান শেষ করার পর দেখা গেল ওখানে কেউ নেই যে দুইজন ইঞ্জিনিয়ারকে জোর করে কাজ করিয়ে ছিলাম তারা চলে গেছে লিসেনারদের বলেছি, আপনারা আগামী দিন সকাল ৯টায় আমাদের অনুষ্ঠান শুনবেন যদি পর্যাপ্ত সংখ্যক সহকর্মী না আসে তাহলে তো প্রচার করা যাবে না
এখন দুঃশ্চিন্তা হলো প্রথমত কালুর ঘাট থেকে এনায়েত বাজার পর্যন্ত আমরা হেঁটে পার হয়ে গেছি, আগামী কাল প্রোগ্রাম কীভাবে করবো এদিক সেদিক টেলিফোন করেছি টেলিফোন দেওয়ার পর চন্দনপুরের তাহের সোবাহান নামে আমার এক বন্ধু ছিল, তিনি বললেন, রফিকুল ইসলাম ক্যাপ্টেন কেন যে কথা দিয়ে কথা রাখলেন না জানি না তার চেয়ে বড় একজন উচ্চ পদের মেজরের সন্ধান আমি জানি, তবে নাম জানি না তিনি পটিয়াতে আছেন তিনি হেড কোয়ার্টারের বাইরে এসেছিলেন বাবর এবং সোয়াত জাহাজের অস্ত্র খালাশের জন্য তিনি আজ রাতে, মানে ২৬ শে মার্চ দিবাগত রাতে সিচুয়েশন অবজার্ভ করার জন্য পটিয়াতে আছেন
আমাকে উনি অ্যাডভাইজ করলেন, ২৭ তারিখ যদি পটিয়াতে যেতে পারেন নিশ্চয়ই ওনাকে ওখানে পাবেন যেহেতু বাইরে আছেন নিশ্চয়ই উনি বঙ্গবন্ধুর সাপোর্টার হবেন আমার আর এক বন্ধুর সাহায্যে আমরা একটা গাড়ির ব্যবস্থা করে পরের দিন সকাল বেলা রওনা হয়েছি পটিয়ায় আর আমার সহকর্মীদের বলে দিয়েছি কালুর ঘাটের দিকে আস্তে আস্তে যাবে আমি পটিয়া থেকে আসার পর প্রোগ্রাম শুরু হবে
পটিয়ায় পৌঁছেই দেখা গেল আর্মি গিজ গিজ করছে ওখানকার দারোগা আমার পরিচিত মানিক মিয়া ওনাকে জনালাম, এখানে যে আর্মি অফিসার আছে তার নাম মেজর জিয়াউর রহমান তার সঙ্গে দেখা হলো তাকে বললাম, আপনি তো এখানে ব্রডকাস্ট শুনেছেন
তিনি বললেন, আমরা যে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার করেছি তা শুনেছেন এবং খুশি হয়েছেন
আমি বললাম, আপনি যদি দয়া করে আপনার এই ছাউনিটা এখান থেকে সরিয়ে কালুর ঘাটে নিয়ে যেতেন তা হলে বাড়িটা প্রটেক্ট হবে আমরাও ওখানে স্থায়ীভাবে থাকতে পারবো স্থায়ীভাবে না থাকতে পারলে কোনো কমিটমেন্ট করা যাবে না ঠিক টাইমে রেডিওতে প্রোগ্রাম দেওয়া অ্যাডভেঞ্চার নয় বেশ কিছু লোক লাগে সব রকমের পয়েন্টে লোক বসে থাকা লাগে
তার পর উনি আর দেরি করেন নাই সৈন্যদেরকে রওনা করিয়ে দিলেন নিজেও একটা জীপে করে রওনা হলেন আমাদের গাড়িটা ওনার গাড়ির পেছনে পেছনে চললো পথে যেখানেই উনি বেশি মানুষের জটলা দেখেছেন, যারা কর্মস্থল ছেড়ে পোটলা-পাটলি নিয়ে চলে যাচ্ছে সেখানে তিনি দাঁড়িয়ে একটা বক্তৃতা দিলেন আপনারা যার যার কাজের জায়গায় চলে যান ইনশাল্লাহ দুএক দিনের মধ্যে আমরা পাঞ্জাবিদের খতম করে দেবো আর উর্দু ভাষায় যারা কথা বলে তারা সব আমাদের দুশমন তাদেরকে শেষ করে দেন
এটাই ছিল ওনার বক্তব্য এই দশ জায়গায় থেমে থেমে যাওয়ার জন্য আমাদের কালুর ঘাটে পৌঁছতে সন্ধ্যা হয়ে গেল গিয়ে দেখলাম কালুর ঘাটে পাহাড়ার ব্যবস্থা হয়ে গেছে হুইসেল পড়লো, একজন সেন্ট্রি হাত বাড়িয়ে দিল আমাদের দুটো গাড়ি ঢুকলোআমার সহকর্মী যারা উপস্থিত ছিল, তারা প্রোগ্রাম শুরু করলো এক সময় জিয়াউর রহমান ও আমি একটা রুমে বসেছি আমার এক সহকর্মী আমাকে কিছু কাগজপত্র দেখাচ্ছে আমি কী মনে করে বললাম, আচ্ছা মেজর সাহেব, এখানে তো আমরা সবাই মাইনর আপনিই একমাত্র মেজর আপনি কি নিজের কণ্ঠে কিছু বলবেন?
উনি বললেন, হ্যাঁ সত্যিই তো, কী বলা যায়?
একটা কাগজ এগিয়ে দেওয়া হলো তার প্রতিটি শব্দ তিনিও উচ্চারণ করেছেন এবং আমিও উচ্চারণ করেছি এইভাবে লেখা শুরু হলো
আই মেজর জিয়া অন বিহাফ অব আওয়ার গ্রেট ন্যাশনাল লিডার বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান ডু হেয়ার বাই ডিক্লেয়ার ইন্ডিপেনডেন্স অব বাংলাদেশ” 










কোন মন্তব্য নেই: