শুক্রবার, ২৫ মার্চ, ২০১৬

করলার পুষ্টিমান ও উপকারিতা




করলা ( করল্লা, উচ্ছা, উচ্ছে) এক প্রকার ফল জাতীয় সবজি । ইংরেজিতে একে Balsam pear, alligator pear, bitter gourd, bitter melon, bitter cucumber ইত্যাদি বলা হয় । করলা গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Momordica charantia যা  Cucurbitaceae পরিবারভুক্ত এক প্রকার লতা জাতীয় উদ্ভিদ । এ ছাড়া ওকিনাওয়ার আদি ভাষা থেকে উদ্ভূত গয়া এবং সংস্কৃতি থেকে উদ্ভূত কারাভেলা নাম দুটিই ইংরেজি ভাষায় প্রচলিত । করলার আদি নিবাস ভারতীয় উপমহাদেশ, যা ১৪শ শতাব্দিতে চীনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ।



করলা জন্মায় ট্রপিক্যাল অঞ্চলে। যেমন-এশিয়া, পূর্ব আফ্রিকা, ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ, দক্ষিণ আমেরিকা।বাংলাদেশে করল্লার আরেকটি নাম প্রচলিত আছে- উস্তা

বিটার মেলন যার বাংলা নাম করল্লা এমন একটি সবজি যা দূর করতে পারে কান্সা, ডায়বেটিস এবং অন্যান্য অনেক মারাত্মক সব শারীরিক সমস্যা। যদিও এর তেতো স্বাদের কারণে কারো মুখে রোচে না, কিন্তু শুধুমাত্র স্বাদের কথা ভেবে স্বাস্থ্যের কথা একেবারে ভুলে বসলেও চলে না।

শত বছর ধরে চীন এবং ভারতে তথা সম্পূর্ণ এশিয়াতেই করল্লা ব্যবহৃত হয়ে আসছে ডায়বেটিসের ওষূধ হিসেবে। এতে প্ল্যান্ট ইনসুলিন আছে যা রক্তে গ্লুকোজ লেভেল কম রাখে। দক্ষিণ আমেরিকার আমাজান অঞ্চলের আদিবাসীরাও বহু বছর ধরেই করলাকে ডায়াবেটিস, পেটের গ্যাস, হাম ও হিপাটাইটিসের ওষুধ হিসাবে ব্যবহার করে আসছে। ব্যবহার করে আসছে উচ্চ রক্তচাপ কমাতে, ম্যালেরিয়া জ্বরে এবং মাথা ব্যথায়ও।

দ্য নেভাডা সেন্টার অফ আল্টারনেটিভ অ্যান্ড অ্যান্টি এইজিং মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ, ডঃ ফ্রাংক শ্যালেনবার্গার এম.ডি দেখতে পান এই করল্লার রয়েছে ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধির প্রতিরোধ ক্ষমতা। এবং তিনি তার রোগীদের এই প্রাকৃতিক ক্যান্সার নিরাময়ের সবজিটি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধি প্রতিরোধের জন্য। তিনি তার নতুন গবেষণায় দেখতে পান করল্লার রস পানিতে মাত্র ৫% মিশ্রিত হয় যা প্রমাণ করে এটি অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করে। করল্লার প্রায় ৯০%- ৯৮% পর্যন্ত ক্যান্সারের কোষ ধ্বংসের ক্ষমতা রয়েছে।

দ্য ইউনিভার্সিটি অফ কলোরাডোর একটি গবেষণায় দেখা যায় করল্লা অগ্ন্যাশয়ের টিউমার প্রায় ৬৪% কমিয়ে আনতে সক্ষম। এছাড়াও ডঃ শ্যালেনবার্গার তার গবেষণায় দেখতে পান, উচ্চ রক্ত চাপের সমস্যা, অ্যাজমা, ত্বকের ইনফেকশন, ডায়বেটিস এবং পাকস্থলীর নানা সমস্যা প্রতিরোধ করতে পারে শুধুমাত্র এই একটি সবজি করল্লা। খুব কম ক্যালরি সমৃদ্ধ করল্লায় রয়েছে পটাশিয়াম, বেটাক্যারোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাংগানিজ, হাই ডায়াটেরি ফাইবার, ভিটামিন বি১, বি২, বি৩ ও সি, ফোলায়েট, জিংক এবং ফসফরাস।

করল্লা ভাইরাস নাশক হিশাবেও সমান কার্যকারী। হিপাটাইটিস এ, হারপিস ভাইরাস, ফ্লু, ইত্যাদির বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ সৃষ্টি করে। লিভার ক্যান্সার, লিউকেমিয়া, মেলানোমা ইত্যাদি প্রতিরোধ করতে পারে জীবাণুনাশী-বিশেষ করে ই কোলাই নামক জীবাণুর বিরুদ্ধে কার্যকর। ফলে ডায়রিয়াও প্রতিরোধ হয়।




পুষ্টিমানঃ

প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্যোপযোগী করল্লায় পুষ্টি থাকে
উপাদান
পরিমাণ
আমিষ
২.৫ গ্রাম
শর্করা
৪.৩ গ্রাম
ক্যালসিয়াম
১৪ মিলিগ্রাম
আয়রন
১.৮ মিলিগ্রাম
ক্যারোটিন ( ভিটামিন এ)
১৮৫০ মাইক্রোগ্রাম
ভিটামিন বি ১
০.০৪ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি ২
০.০২ মিলিগ্রাম
ভিটামিন সি
৬৮ মিলিগ্রাম
খনিজ পদার্থ
০.৯ মিলিগ্রাম
খাদ্য শক্তি
২৮ কিলোক্যালরি


শক্তি
৭৯ কিলোক্যালরি
শর্করা
৪.৩২ গ্রাম
চিনি
১.৯৫ গ্রাম
খাদ্যে ফাইবার
২ গ্রাম
স্নেহ পদার্থ
০.১৮ গ্রাম
প্রোটিন
০.৮৪ গ্রাম
ভিটামিন এ সমতুল্য
৬ মাইক্রোগ্রাম
বেটা ক্যারোটিন
৬৮ মাইক্রোগ্রাম
লুটিন জিজানথেন
১৩২৩ মাইক্রোগ্রাম
থায়ামিন বি১
০.০৫১ মিলিগ্রাম
রিবোফ্লাভিন বি২
০.০৫৩ মিলিগ্রাম
ন্যায়েসেন বি৪
০.২৮ মিলিগ্রাম
প্যানটোথেনিক অ্যাসিড বি৫
০.১৯৩ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি৬
০.০৪১ মিলিগ্রাম
ফোলেট বি৯
৫১ মাইক্রোগ্রাম
ভিটামিন সি
৩৩ মিলিগ্রাম
ভিটামিন ই
০.১৪ মিলিগ্রাম
ভিটামিন কে
৪.৮ মাইক্রোগ্রাম
ক্যালসিয়াম
৯ মিলিগ্রাম
লোহা
০.৩৮ মিলিগ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম
১৬ মিলিগ্রাম
ম্যাঙ্গানিজ
০.০৮৬ মিলিগ্রাম
ফসফরাস
৩৬ মিলিগ্রাম
পটাশিয়াম
৩১৯ মিলিগ্রাম
সোডিয়াম
৬ মিলিগ্রাম
দস্তা
০.৭৭ মিলিগ্রাম
পানি
৯৩.৯৬ গ্রাম



কী কী রয়েছে করল্লায়ঃ 

পরীক্ষিত ভাবে প্রমাণিত যে করল্লা স্ট্যামিনা ও এনার্জি লেভেল বাড়ায়।
গর্ভধারণের প্রাথমিক সময়ে নারীরা করল্লা নিয়মিত খেলে শিশুদের নিউট্রাল টিউব ডিফেক্ট হতে রক্ষা করে।    
৩। প্রচুর পরিমানে আয়রণ রয়েছে। আয়রণ হিমোগ্লোবিন তৈরি করতে সাহায্য করে।
৪। করল্লায় যথেষ্ট পরিমানে বিটা ক্যারোটিন আছে। এমনকি ব্রকলি থেকেও দ্বিগুণ পরিমানে বিটা ক্যারোটিন রয়েছে এতে। দৃষ্টি শক্তি ভাল রাখতে ও চোখের সমস্যা সমাধানে বিটা ক্যারোটিন উপকারী।    
৫। পালংশাকের দ্বিগুণ ক্যালসিয়াম ও কলার দ্বিগুণ পরিমান পটাশিয়াম করল্লায় রয়েছে। দাঁত ও হাড় ভাল রাখার জন্য ক্যালসিয়াম জরুরী। ব্লাড প্রেশার মেনটেন করার জন্য ও হার্ট ভাল রাখার জন্য পটাশিয়াম প্রয়োজন।     
৬। করল্লায় যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন-সি রয়েছে। ভিটামিন সি ত্বক ও চুলের জন্য একান্ত জরুরী। ভিটামিন সি আমাদের দেহে প্রোটিন ও আয়রন যোগায় এবং ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধক ক্ষমতা গড়ে তোলে।     
৭। করল্লার ল্যাক্সেটিভ পায়খানাকে নরম রাখে, ফাইবার সমৃদ্ধ করল্লা কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা কমায়।  
৮। করল্লার রস নিয়মিত পান করার ফলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং নানা ধরণের ইনফেকশনের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
৯। করল্লার রস লিভার পরিস্কারে সহায়ক এবং লিভারকে টক্সিনমুক্ত রাখতে সহায়তা করে। এছাড়াও এটি রক্ত সঞ্চালনের মাত্রা উন্নত করে।
১০। নিয়মিত করল্লার রস পানের অভ্যাস সোরাইসিসের অবস্থা উন্নত করে এবং ফাঙ্গাস জনিত সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়। 
১১। করল্লায় রয়েছে ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স, ম্যাগনেসিয়াম, ফলিক এসিড, জিঙ্ক, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম। অসুখ নিরাময়ে সাহায্য করে।   
১২। ডায়বেটিসের পেশেন্টের ডায়েটে করল্লা রাখুন। করল্লায় রয়েছে পলিপেপটাইড পি, যা ব্লাড ও ইউরিন সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রনে রাখতে সাহায্য করে। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে করল্লার রস ও করল্লা সিদ্ধ খেতে পারেন।   
১৩। নানা রকমের ব্লাড ডিজঅর্ডার যেমন স্ক্যাবিজ, রিং ওয়র্ম এর সমস্যায় করল্লা উপকারী। ব্লাড পিউরিফিকেশনে সাহায্য করে।    
১৪। স্কিন ডিজিজ ও ইনফেকশন প্রতিরোধে সাহায্য করে।
১৫। রক্তের চর্বি তথা ট্রাইগিস্নসারাইড কমায় করল্লা। এবং ভাল কলেস্টেরল এইচডিএল কে বাড়ায়। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
১৬। ক্রিমিনাশক হিশাবেও করল্লার তুলনা মেলা ভার।





করল্লা পাতার রসের উপকারিতাঃ 
    
১। করল্লা পাতার রস খুবই উপকারী। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে, নানা ধরনের ইনফেকশন থেকে সুরক্ষা প্রদান করে। এনার্জি ও স্টেমিনা বাড়িয়ে তুলতেও করল্লা পাতার রস সাহায্য করে।     
২। অতিরিক্ত এলকোহল খাওয়ার অভ্যাস থেকে লিভার ড্যামেজড হলে , সে সমস্যায় করল্লা পাতার রস দারুন কাজে দেয়। শরীর থেকে অতিরিক্ত টক্সিন ফ্লাশ আউট করতে সাহায্য করে।
৩।  কলেরা বা ডায়রিয়ার প্রথম পর্যায়ে উচ্ছে পাতার রস খেতে শুরু করলে ভাল। উচ্ছে পাতার রস, লেবুর রস ও পেঁয়াজের রস মিশিয়ে খেলে উপাকার হয়।     
৪। ব্লাড ডিজঅর্ডার সমস্যায় লেবুর রস ও করল্লা পাতার রস মিশিয়ে খেতে পারেন।    
৫। করল্লা পাতার রসে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। অ্যাজমা, ব্রঙ্কাইটিস, ফেরেনজাইটিসের মতো সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।    
৬। সোরিয়াসিসের সমস্যা, ফাংগাল ইনফেকশন প্রতিরোধ করা সম্ভভ হয়।




রোগ নিরাময়ঃ

১। ডায়াবেটিস রোগেঃ  প্রতিদিন সকালে খালি পেটে নিয়মিত করলার রস খেলে ও খাওয়া-দাওয়ার নিয়ম মেনে চললে  ডায়াবেটিস থাকবে না। তেতো বের না করে তরকারি হিসেবে ভাজি, ভর্তা হিসেবে খাওয়া। কচি  টুকরো করে কেটে ছায়ায় শুকিয়ে নিয়ে মিহি করে পিষে নিতে হবে। এ গুঁড়ো সকাল ও সন্ধ্যায় নিয়মিত দুই চা চামচ করে চার মাস খেলে এ রোগ নিশ্চয় সারবে। তবে নিয়মকানুন মানতেই হবে। এতে প্রস্রাবের সাথে শর্করা বের হওয়া একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে। করল্লা একটি করে শসা, টমেটো ও করলা নিয়ে রস বের করে সকালে খালি পেটে খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

 

২। বাতরক্তঃ  এ ক্ষেত্রে চার চা-চামচ করল্লা বা উচ্ছে পাতার রস একটু গরম করে সেই সাথে এক-দেড় চা চামচ বিশুদ্ধ গাওয়া ঘি মিশিয়ে ভাতের সাথে খেতে হয়।

 

৩। গুঁড়ো কৃমিঃ   এ ক্ষেত্রে  বয়স্ক হলে ১-২ চা চামচ এবং শিশু হলে আধা চা চামচ সকালে ও বিকেলে অল্প পানি মিশিয়ে খেতে হয়।পাতার রস বয়স্ক হলে ১-২ চা চামচ এবং শিশু হলে আধা চা চামচ সকালে ও বিকেলে অল্প পানি মিশিয়ে খেতে হয়।

 

৪। পিত্ত শ্লেষ্মাজনিতঃ   অনেক সময় ম্যালেরিয়া জ্বরেও পিত্ত শ্লেষ্মার বিকার হয়। এর প্রধান উপসর্গ হলো, শরীর কামড়ানি, পিপাসা ও বমি; এ ক্ষেত্রে উচ্ছে বা করল্লা পাতার রস এক চা চামচ একটু গরম করে অথবা গরম পানির সাথে মিশিয়ে সারা দিনে ২-৩ বার করে খেলে জ্বরের উপসর্গগুলো চলে যাবে ও জ্বরের প্রকোপ কমে যাবে।

 

৫। প্লীহা রোগের উপক্রম হওয়াঃ   এ রোগের লক্ষণ হলো বিকেলে চোখ-মুখ জ্বালা করা, নাক-মুখ দিয়ে গরম নিঃশ্বাস-বের হওয়া, মুখে স্বাদ না থাকা। নোনা স্বাদ ও ভাজাপোড়া জিনিসে রুচি বেশি এ ক্ষেত্রে বুঝতে হবে, রক্তবহ স্রোত দূষিত হচ্ছে এবং এর আধার প্লীহা বিকারগ্রস্থ হচ্ছে। এ সময় করল্লা বা উচ্ছে পাতার রস দুই চা চামচ একটু গরম করে সিকি কাপ পানিতে মিশিয়ে দিনে দু-তিন বার খেতে হয়। এভাবে পাঁচ-ছয় দিন খেলে অসুবিধাগুলো আস্তে আস্তে চলে যাবে।

 

৬। বাতঃ    পিত্ত শ্লেষ্মাজনিত বাত রোগের লক্ষণ হলো অমাবস্যা, পূর্ণিমা এবং একাদশী এলে হাত-পা-কোমর, সারা শরীরে ব্যথা যন্ত্রণা হয়; ব্যথা নিবারক বড়ি খেয়ে চলাফেরা করতে হয়; শীতকাল এলে কথাই নেই, তবে গরম বেশি পড়লে ব্যথা-বেদনা ও যন্ত্রণা একটু কম হয়। এ ক্ষেত্রে করলা বা উচ্ছে পাতার রস ৩ চা চামচ গরম করে অল্প পানিতে মিশিয়ে দিনে ২ বার করে খেতে হবে।

 

৭। অরুচি দূর করতেঃ   বৈদিক শাস্ত্র মতে, পিত্ত শ্লেষ্মার বিকার না হলে অরুচি রোগ হয় না। এ ক্ষেত্রে এক চা চামচ করল্লা  রস সকাল ও বিকেলে খেলে দোষটা চলে যায়।

 

৮। রক্তপিত্তঃ    যাদের কোনো জ্বালা-যন্ত্রণা ছাড়াই পায়খানার সাথে টাটকা রক্ত পড়ে, অথচ অর্শ্বরোগ নেই এ ক্ষেত্রে রক্ত পিত্ত যে আছে তা নিশ্চিত করে বলা যায়। এতে করল্লা বা উচ্ছের ফুল ৮-১০টা নিয়ে দিনে ৩ বার খেতে হয়।

 

৯। অগ্নিমান্দ্যঃ    করল্লার বীজ বাদ দিয়ে পুরো শাঁসের রস ছেঁকে একটু গরম করে প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে খেলে অগ্নিমান্দ্য রোগ সেরে যায়।

 

১০। এলার্জিঃ    ক্ষেত্রে করল্লা রস ২ চা চামচ করে দিনে ২ বেলা খেতে হয়।

 

১১। দুষ্ট ক্ষতঃ    যে ঘায়ে রস গড়ায় কিছুতেই শুকাতে চায় না এতে করল্লা গাছ পুরোটা শুকিয়ে গুঁড়ো করে ঘায়ের ওপর ছিটিয়ে দিলে এবং গাছ সিদ্ধ পানি দিয়ে ধুয়ে দিতে থাকলে কয়েক দিনেই তা শুকিয়ে যাবে।


১২। আধকপালে মাথাব্যথায়ঃ   করল্লা পাতার রস রগড়ে নিয়ে একটু ন্যাকড়ায় পুরে যে দিকে যন্ত্রণা হচ্ছে সে নাকে রসটা ফোঁটায় ফেলে টানলে কয়েক মিনিটেই ব্যথা সেরে যায়।

 

১৩। ভিটামিনের অভাবঃ    পাকা করল্লা বা উচ্ছের বীজ শুকিয়ে রেখে প্রতিদিন প্রায় ১ চা চামচ (৩/৪ গ্রাম) মাখনের মতো বেটে তাতে ৭/৮ চা চামচ পানি মিশিয়ে চা ছাঁকনিতে ছেঁকে সে পানি প্রতিদিন একবার করে খেতে হয়। তাতে এ অভাব পূরণ হবে।

 

১৪। শিশুদের বমিঃ    তিনটি করল্লা বিচি ও তিনটি গোলমরিচের গুঁড়ো সামান্য পানি মিশিয়ে খেলে শিশুর বমি বন্ধ হয়।

 

১৫। অর্শ্বঃ    করল্লা পাতা বা ফলের রস এক চা চামচ অল্প চিনিসহ খেলে অর্শ্ব ও তা থেকে রক্ত পড়া বন্ধ হয়।

 

১৬। চর্মরোগঃ    করল্লা পাতার রস মালিশ করলে চর্মরোগ সারে। তা ছাড়া এ রস শুকনো ত্বকের জন্য উপকারি।

 

১৭। আগুনে পোড়াঃ    পোড়া ঘায়ে করল্লা পাতার রস লাগালে তা সারে।

 

১৮। রক্তদুষ্টিঃ   করল্লা রস খেলে রক্তের দূষিত বর্জ্য বের হয়ে যায়।

 

১৯। স্ক্যাবিসঃ করল্লার রসে জীবাণুনাশক ক্ষমতা রয়েছে। বিভিন্ন রকম ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে করল্লার উপকারিতা অপরিসীম।

২০। এ্যাকজিমাঃ করল্লার রসে জীবাণুনাশক ক্ষমতা রয়েছে যা বিভিন্ন রকম ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করে। এ্যাকজিমা প্রতিরোধে করল্লার উপকারিতা অনেক।

২১। লিভার ডিজিজঃ লিভার ডিজিজ খাওয়ার রুচি কমিয়ে দেয়। খাওয়ায় আবার রুচি ফিরিয়ে আনতে করল্লার উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না।

২২। এনিমিয়াঃ ভিটামিন সি প্রোটিন ও আয়রন শোষণে সাহায্য করে। করল্লায় প্রচুর ভিটামিন সি আছে যা আয়রন শোষণ করে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায়।

২৩। চুলের ক্ষতিঃ যথেষ্ট পরিমানে ভিটামিন সি থাকায় চুলের জন্য করল্লার উপকারিতা অনেক।

২৪। এন্টিএজেনঃ অ্যান্টিওক্সিডেন্ট বার্ধক্য ঠেকিয়ে রাখে ও শরীরের কোষ গুলি কে রক্ষা করে। এতে আছে লুটিন ও লাইকোপিন। এগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। লাইকোপিন একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। করল্লায় প্রচুর লাইকোপিন থাকে। বার্ধক্য ঠেকিয়ে রাখতে করল্লার উপকারিতা অপরিসীম।

২৫। রাতকানা রোগঃ  করল্লাতে যথেষ্ট পরিমাণে বেটা ক্যারোটিন রয়েছে। দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে ও চোখের সমস্যা সমাধানে বেটা ক্যারোটিন খুবই উপকারী।

২৬। মূত্রকৃচ্ছ্রতা (প্রস্রাব বন্ধ হওয়া)ঃ  ১০ চা চামচ করলা পাতার রস একটু হিংসহ খেলে এ রোগ সারে।
২৭। ক্যান্সার প্রতিরোধঃ  গবেষনায় দেখা গেছে যে টেস্ট টিউবে রাখা মানুষের অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার কোষে করল্লার জুস প্রয়োগে কোষের মৃত্যুর হার বেড়েছে। মূলত দ্রূত বর্ধনশীল ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন প্রচুর গ্লুকোস বা চিনি। করল্লা ইন্সুলিন এর নিঃসরন বাড়িয়ে এই গ্লুকোস মেটাবলিজম ভেঙ্গে ফেলার ব্যবস্থা করে। ফলে ক্যান্সার কোষ বাড়তে না পেরে মরে যায়।
২৮।  রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণঃ   এছাড়াও রক্তের চর্বি তথা ট্রাইগ্লিসারাইড কমায় করল্লা। এবং ভাল কোলেস্টেরল এইচডিএল কে বাড়ায়। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
২৯।  ভাইরাস নাশকঃ   করল্লাতে আছে এন্টি অক্সিডেন্ট, যা ভাইরাস নাশক হিশাবেও সমান কার্যকারী। হেপাটাইটিস এ, হারপিস ভাইরাস, ফ্লু ইত্যাদির বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ সৃষ্টি করে। করল্লার রস নিয়মিত পান করার ফলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং নানা ধরণের ইনফেকশনের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
৩০।  লিউকেমিয়া প্রতিরোধঃ    করল্লার এন্টি অক্সিডেন্ট লিভার ক্যান্সার, লিউকেমিয়া, মেলানোমা ইত্যাদি প্রতিরোধ করতে পারে। করল্লার রস লিভার পরিষ্কারে সহায়ক এবং লিভারকে টক্সিনমুক্ত রাখতে সহায়তা করে। এছাড়াও এটি রক্ত সঞ্চালনের মাত্রা উন্নত করে।
৩১।  নিউট্রাল টিউবঃ  গর্ভধারণের প্রাথমিক সময়ে নারীরা করল্লা নিয়মিত খেলে তা গর্ভের শিশুদের নিউট্রাল টিউব ডিফেক্ট হতে রক্ষা করে।
৩২।  ফাঙ্গাস জনিত সমস্যা প্রতিরোধঃ   নিয়মিত করল্লার রস পানের অভ্যাস সোরাইসিসের অবস্থা উন্নত করে এবং ফাঙ্গাস জনিত সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়।



 


যেভাবে খেতে পারেন করল্লাঃ 
বাজার থেকে ভালো করল্লা কেনার পর ঠাণ্ডা পানিতে ভালো করে ধুয়ে নরম ব্রাশ দিয়ে আলতো ঘষে পরিষ্কার করে নিন।
১) যে কোনো আমিষ খাবারের সাথে বা অন্যান্য সবজির সাথে ভাজি করে খেতে পারেন।
২) করল্লার শুকনো গুঁড়ো তৈরি করে রেখে আইসড ও দুধ চায়ে মিশিয়েও পান করতে পারেন।
৩) আচার তৈরি করে খেতে পারেন।
৪) শুধু করল্লার রস দিয়ে জুস তৈরি করে পান করতে পারেন।


করল্লা সংরক্ষণের টিপসঃ      
১। ফ্রিজের ভেজিটেবল বাস্কেটে করল্লা রাখুন। বেশিদিন উচ্ছে ফেলে রাখবেন না। বাজার থেকে কেনার ৩-৪ দিনের মধ্যেই খেয়ে ফেলা ভাল।     
২। রুম টেম্পারেচারে অন্যান্য সবজির সঙ্গে করল্লা রাখলে পেকে গিয়ে হলুদ হয়ে যেতে পারে। করল্লা আলাদা রাখার চেষ্টা করুন।     
৩। পরিষ্কার পানিতে করল্লা ভাল করে ধুয়ে রান্না করুন।


সতর্কতাঃ     
১। একদিনে অতিরিক্ত পরিমানে করল্লা খাবেন না। তলপেটে সামান্য ব্যথা হতে পারে।    
২। ডায়বেটিস পেশেন্টরা ডাক্তারের কাছ থেকে জেনে নিন সারাদিনে কতটা পরিমাণে তেতো খেতে পারবেন। সুগারের ওষুধের সঙ্গে তেতোর ভারসাম্য বজায় রাখা দরকার।    
৩। প্রেগনেন্ট মহিলারাও ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে করল্লার রস খাবেন।


কোন কোন ক্ষেত্রে করলা খাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ আনবেনঃ 
১। কিডনী ডিজিজঃ যাদের রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি তাদের করল্লা না খাওয়াই ভাল। করল্লার উপকারিতা থাকলেও কিডনি ডিজিজের রোগীদের করল্লা এড়িয়ে চলা উচিৎ।
২। ডায়ারিয়াঃ এটি আশঁযুক্ত খাবার বলে ডায়ারিয়া রোগীদের দেওয়া হয় না।
৩। লিভার সিরোসিসঃ তিতা বেশি খেলে লিভারে ক্ষতি করে। কারণ এটি বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে।








কোন মন্তব্য নেই: