বৃহস্পতিবার, ৭ মে, ২০১৫

কামসূত্রে রক্ষিতা __কামসূত্রঃ পর্ব –৪



৪.১ পতিতাদের ইতিবৃত্ত


পতিতা অর্থাৎ বেশ্যারা। এরা হলো সেই সমপ্রদায়ভুক্ত নারী যারা পুরুষকে যৌন সুখ ভোগ করতে নিজেদের দেহ দিয়ে আপনাদের জীবিকা অর্জন করে। অবশ্য তারা যে কোনও পুরুষকে দেহ দানের বিনিময়ে নিজেদের প্রয়োজনীয় অর্থ উপার্জন করে, তা নয়। তারাও মানুষ- তাদেরও মন আছে, অভিরুচি আছে, ভাল-মন্দ বিবেচনা শক্তি। তাই তাদের বিষয়ে অনেক কিছু সাধারণ মানুষের শিক্ষা করা উচিত। অনেক সময় যাদের সঙ্গে যৌন মিলন করতে পারে হাতে তাদের পয়সাও আছে, তবু তারা সেই লোককে ফেরৎ দেয়। কারণ সেই নারী তাকে পছন্দ করে না।



যৌন মিলনে কিছুটা মনের মিলেরও প্রয়োজন হয়। বেশ্যারা প্রয়োজনমত নিজেকে সর্বদা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও অলঙ্কারে ভূষিতা রাখে। যেন এক প্রকার পণ্য দ্রব্য। তাই তার বাড়ি এমন থাকবে যেন বাইরের লোক তাকে দেখতে পায় এবং সেও বাইরের লোককে দেখতে পায়। তার আরও জানা উচিত, সৌন্দর্য্য দিয়ে পুরুষকে জয় করতে পারলে তবে তার অর্থ মিলবে বেশ্যাদেরও আবার ঘটক বা দূত থাকে। তারা অন্য লোককে তার গুণ পণ্য বলে তাকে আকর্ষন করে নিয়ে আসে। বেশ্যা যাদের খুশী রাখবে নিম্নলিখিত লোকদের বেশ্যাদের সর্বদা খুশী রাখা উচিত। তা না হলে ব্যবসা চলে না।
তা হলো-

 (১) নগরের নগরপাল ও পুলিশের কর্তা।
(২) দেশের কোনও বিচারক বা বিখ্যাত আইনবিদ।
 (৩) কোনও গণৎকার বা জ্যোতিষ।
 (৪) কোনও ব্যায়ামবীর লোক।
(৫) কোনও সতীর্থ বা সমব্যবসায়ী
(৬) কোনও শিল্পপতি।
 (৭) কোনও পীঠমর্দ বা বিট বা বিদূষিকা, সুগন্ধি দ্রব্য বিক্রেতা বা মদ্য বিক্রেতা, কোন রজক বা নাপিত।

বাৎস্যায়ন বলেন উপরোক্ত লোকদের উপরে বেশ্যার কোন যৌন আকর্ষন থাকা উচিত নয়। তাদের কেবল অর্থ দ্বারা বশীভূত করে ব্যবসায়ে উন্নতি করবে। বেশ্যারা যাদের পছন্দ করে বেশ্যা কোন্‌ কোন্‌ ধরনের ব্যক্তিকে মনে প্রাণে কামনা করবে তাও বাৎস্যায়ন বলে গেছেন।

তারা হলো-
১। কোনও স্বাধীন ধনশালী লোক।
২। রাজ্যের কোন উচ্চপদস্থ কর্মচারী।
৩। যে ব্যক্তি অল্পদিনে প্রচুর সম্পত্তি বা টাকাকড়ি পেয়েছে।
৪। বেশ্যার সমব্যবসায়ী ব্যক্তির সঙ্গে যে সম্প্রতি কলহ করেছে।
৫। যে লোকের স্থায়ী নিশ্চিত উপার্জন আছে।
৬। যে কুৎসিৎ হলেও নিজেকে সুন্দর বলে মনে করে।
৭। যে আত্নপ্রশংসায় খুব বিরত।
৮। কোনও রতি অক্ষম লোক- সে নিজে মনে করে যে সে খুব রতি পারদর্শী।
৯। যে লোক আত্নপ্রশংসা ভালবাসে।
১০। যে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাস্ত করতে খুবই ইচ্ছুক।
১১। খুব দানশীল ব্যক্তি।
১২। যে লোক রাজা, ধনী বা সম্ভ্রান্ত লোকের সঙ্গে দিন যাপন করে।
১৩। যে নিজ ভাগ্যকে খুব বিশ্বাস করে।
১৪। অপরিমিত ব্যয়শীল লো্‌ক। টাকা খরচ করতে যার দরদ নাই।
১৫। যে লোক পিতামাতার অবাধ্য।
১৬। কোন ধনীর একমাত্র সন্তান।
১৭। নিঃসন্তান ধনী ব্যক্তি।
১৮। যে কামুক লোক তার কামক্রিয়া গোপন রাখতে পারে।
১৯। যে সন্ন্যাসী গোপনে কামক্রিয়া চরিতার্থ করে।
২০। কোনও সাহসী যোদ্ধা।
২১। কোন চিকিৎসক বা বৈদ্য।
২২। বহু দিনের পরিচিত লোক।
 




বেশ্যার পছন্দমত যুবকের গুণাবলী বাৎস্যায়ন বলেছেন ভালবাসা, সুখ্যাতি ও ধন অর্জন করতে হলে বেশ্যার প্রয়োজন একজন বিলাসী যুবক। তার কি কি গুণ থাকবে, তা হলা হচ্ছেঃ-

 ১। সে উচ্চবংশীয় হবে।
তর্কশাস্ত্রে বেশ বুৎপন্ন হবে।
৩। রাজনীতিতে পারদর্শী হবে।
৪। কবি বা শিল্পী হবে।
৫। বেশ গল্প বলতে পারদর্শী হবে।
 ৬। সু-বক্তা ও বুদ্ধিমান লোক।
বিভিন্ন কথায় যারা পাণ্ডিত্য দেখায়।
৮। মনে উচ্চাশা থাকবে।
৯। প্রাচীন লোকদের যারা শ্রদ্ধা করবে।
১০। প্রচুর গুণ থাকবে।
১১। সৎসাহসী হবে।
১২। একনিষ্ঠ প্রেমিক হবে।
১৩। বন্ধুদের প্রতি সৌহার্দ্যশীল হবে।
১৪। নানাবিধ বাকবিতণ্ডায় কুশলী হবে।
১৫। শরীর নীরোগ হবে।
১৬। কামশক্তি পরায়ণ হবে।
১৭। মদ্যপানদোষ থাকবে না।
১৮। সব নারীর প্রতি স্নেহ ভালবাসা দেখাবে।
১৯। স্বাধীনচেতা লোক হবে।
২০। মনে সন্দেহ থাকবে না।

বেশ্যার গুণাবলী বেশ্যারও কতকগুলি বিশেষ গুণ থাকা একান্ত প্রয়োজন।
তা হলো-
১। সে সুন্দরী হবে।
২। সে যুবতী হবে।
৩। দেহে সুলক্ষণ যুক্ত চিহ্ন থাকবে।
৪। মধুরভাষিণী হবে। সলজ্জ ভাব দেখাবে।
৫। অর্থের কথা চিন্তা না করে নিজের স্বামীর মত উপপতিকে ভালবাসে, এমন ভাব দেখাবে।
৬। দু-একটি মাত্র উপপতির সঙ্গে রতি মিলন করবে।
৭। স্থির চিন্তা করবে।
৮। উপপতির সঙ্গে প্রবঞ্চনা করবে না। ভাল ব্যবহার করা উচিত।
৯। কৃপণী হবে না। এতে উপপতি সরে পড়তে পারে।
১০। সাধারণ সমিতি বা যাত্রায় যোগদান করবে। এতে চাহিদা বাড়বে সন্দেহ নাই। ১১। নানা শিল্পের অনুরাগিণী হবে।
১২। সুকণ্ঠী গায়িকা হলে আরও ভাল হয়।


নারী পতিতা হয় কেনঃ  
১। অর্থাভাবে বা দারিদ্র্যতাবশতঃ অনেক সময়ে মেয়েরা পতিতা বৃত্তি গ্রহণ করে।
২। সংসারের অনাদর বা অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে পতিতা বৃত্তি গ্রহণ করে। ৩। স্বামীর অনাদর অত্যাচারও এ পথে যাবার মস্ত বড় একটি কারণ।
৪। অতি কামুকতা। যে স্বামীর দ্বারা পূর্ণ তৃপ্তি পায় না।
৫। একাধিক পুরুষে আকর্ষণ।
৬। অতিরিক্ত বিলাসের প্রতি আকর্ষণ।
৭। বৈধব্য।
৮। অন্যের প্ররোচনায় প্রভাবিত হওয়া।
৯। একজনকে ভালবেসে গৃহত্যাগ, পরে তার দ্বারা প্রত্যাখ্যান।
১০। সামপ্রদায়িক দাঙ্গা বা যুদ্ধের জন্য কুলত্যাগিনী।
১১। আজীবন কুমারী থাকা। পরে অন্য পথে গমন।
১২। গ্রামাদি থেকে সংগৃহিতা নারী।
১৩। গোপন প্রেম ও স্বামী কর্তৃক ধৃত ও স্ত্রী ত্যাগ।
১৪। স্ত্রীর সংসারে বিতৃষ্ণা-স্বামী হয়ত আজীবন চরিত্রহীন।
১৫। দারিদ্রতার জন্য কুমারী কন্যা বা স্ত্রীকে বিক্রয়।
 



পতিতাদের প্রকারভেদঃ  
১। একমাত্র উপপিতিতে আকৃষ্ট।
২। নাচ গান জানা কলারসিক পতিতা- দেহমিলন বেশি চায় না। নির্দিষ্ট একজন নায়ককে রাখে।
৩। বাড়িউলি বা কোনও নারীর অধীনে বাস করা পতিতা।
৪। কোন রাজ অনুগৃহীত বিশেষ ধনী পতিতা, সে উপপত্নীর মত পৃথক প্রাসাদে বাস করে।





  ৪.২ পতিতার উপপতি


পতিতার উপপতির যে সব গুণ থাকবে
১। সাধারণ জ্ঞানসম্পন্ন হওয়া দরকার।
২। সদবুদ্ধি ও বিবেক থাকবে।
৩। সৎব্যবহার।
৪। সরলতা।
৫। পরস্পরের প্রতি কৃতজ্ঞতার ব্যবহার।
৬। দূরদর্শিতা।
৭। কাজের প্রতি ঔদাসীন্য।
 ৮। স্থান কাল অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা।
৯। আইন মান্য করে চলা।
১০। দারিদ্র্যে মুহ্যমানতা।
১১। যথাসময়ে হাস্য করা।
১২। পরনিন্দা ও জনশ্রুতি বৃদ্ধি না করা।
১৩। দুর্নাম থেকে আত্নরক্ষার শক্তি।
১৪। রোষ, হিংসা, আত্নগর্ব থাকা উচিত।
১৫। চপলতা থেকে মুক্ত ভাব।
১৬। যার সঙ্গে দেখা হবে তাকে অভিবাদন।
১৭। কাম ক্রীড়ায় বৈচিত্র্য।
১৮। মনে সব সময় স্ফুর্তি থাকা দরকার।
১৯। অন্তঃকরণ হবে উদার।
২০। মুক্ত হসে- খরচ করবে।
২১। পতিতার মন জুগিয়ে চলবে।
২২। শৃঙ্গার দক্ষতা থাকবে।
 



বেশ্যারা যেসব পুরুষকে পছন্দ করে নাঃ  

১। যক্ষ্মা বা কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত লোক।
২। যে লোক মেহ বা প্রমেহ রোগে ভুগছে।
৩। যে পুরুষের মুখ থেকে দুর্গন্ধ বের হয়।
৪। যে লোক বহু নারীর সঙ্গে মিলন করে।
যে লোক তার স্ত্রীকে খুব ভালবাসে।
৬। যে লোক কটুভাষী, দয়ামায়া শূন্য।
৭। যে সাধু লোক বলে মোটেই গণ্য নয়।
৮। যে চুরি কার্য্য করে।
৯। যে আত্নরক্ষার জন্যে মিথ্যা কথা বলে।
১০। যে টাকার জন্যে সব কিছু করতে পারে।
১১। যে প্রেমের জন্যে বা গুপ্ত প্রেমের জন্যে লজ্জিত বা ভীত হয় না।
১২। যে লোক সুরত কার্যে অক্ষম।
১৩। যে পুরুষ পয়সা খরচ করতে কুণ্ঠিত।


পত্নীরূপে বেশ্যা যে বেশ্যা অনেকদিন ধরে কোন একজন পুরুষের উপপত্নীরূপে বাস করে, তার সঙ্গে ধর্ম পত্নীর মত ঘর করা ও সহবাস করা যায়। পত্নীরূপে বেশ্যার কর্তব্য

১। নায়কের মর্দন চাওয়া। নিজেও চুম্বন, আলিঙ্গন, দংশন প্রভৃতি করতে পারে।
২। ধর্ম কর্মে মন দেওয়া।
৩। নিত্য নূতন কামকেলি।
৪। নিজে অর্থ না চাওয়া। দাসদাসী বা কোন ধাত্রীকে দিয়ে সাংসারিক প্রয়োজন জানাবে।
৫। মর্য্যাদা দিয়ে নায়ককে সন্থষ্ট রাখতে চেষ্টা করবে।
৬। নায়ক ক্রুদ্ধ হলে হাসবে। যথাসাধ্য তাকে সন্থষ্ট করবার চেষ্টা করবে।
৭। নায়কের মনে কোন ব্যথা দেবে না।
৮। কখনও কটু কথা বলবে না। নিজের স্বামীর মত তাকে প্রাণ দিয়ে ভালবাববে।
৯। অন্য পুরুষের প্রতি আকৃষ্ট হবে না। তাতে নায়কের আগ্রহ কমে যাবে।
১০। নায়কের বিরুদ্ধে কেউ নিন্দা করলে তার প্রতিবাদ করবে-না হয় তা শুনবে না। এতে নায়কের অতি প্রিয় হয়ে উঠবে।
১১। নায়কের অসুখে সেবা করবে।
১২। সন্তানলাভের আকাঙ্খা থাকবে। সন্তান একটি কি দুটি হরে ভাল হয়। এর বেশী হওয়া উচিত নয়।


বিতৃষ্ণাযুক্ত উপপতির লক্ষণ যখন কোন উপপতির কোনও বেশ্যার উপরে বিতৃষ্ণা আসে তখন যে সব লক্ষণ দেখা যায়-তা এবারে বলা হচ্ছে-
১। উপপত্নীকে দেয় টাকা সম্পূর্ণ দেয় না।
২। যাদের সঙ্গে তার হিংসা দ্বেষ থাকে, তাদের সঙ্গে সে হেসে কথা বলে।
৩। উপপত্নীর মতের বিরুদ্ধে কাজ করে। অন্য বারাঙ্গনার নিকট যাওয়া আসা করে। ৪। উপপতি তার প্রতিশ্রুতি রাখে না।
 ৫। নিজের মনোভাব উপপতীকে গোপন করে। এই নায়িকার প্রতি ভালবাসার বন্ধন কমে যায়।
৬। উপপতীকে সর্বদা বিদ্রুপ করে। যাতে সে রেগে যায়।
৭। প্রায়ই তাকে ছেড়ে ছেড়ে থাকতে চায়।
৮। উপপত্নীর পূর্বের সব বিরুদ্ধ-চারীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে কথাবার্তা বলে।
৯। তাকে ঘৃণার ভাব দেখায়।


এ সকল লক্ষণ নায়কের মধ্যে দেখা গেলে, বুঝতে হবে নায়ক তাকে ত্যাগ করবে। উপপত্নীর নায়ক ত্যাগের চিহ্ন বেশ্যারা যখন উপপতিকে ছেড়ে দেবার চেষ্টা করবে এবং যে সব চিহ্ন দেখাবে, তা হলো-

১। উপপতি যা পছন্দ করে না এমন কাজ উপপতী করবে।
২। উপপতিকে কেবল ব্যথা দেবেঅপমানসূচক কার্যকলাপও করতে পারে
৩। এমন লোকের সঙ্গে কথাবার্তা বলবে-যাদের সঙ্গে উপপতির সদ্ভাব নেই।
৪। তার নিন্দা করবে-মর্যাদাহীন করবে।
৫। তাকে প্রত্যেক বিষয় তিরষ্কার করবে।
৬। অন্য বেশ্যাদের উপপতির প্রশংসা করবে, নিজের উপপতির কাছে।
৭। উপপতির যত দোষ অবাধে অন্যের কাছে জানাবে ও তার প্রচণ্ড নিন্দা করবে। ৮। উপপতি ডাকলে তার কাছে আসবে না-তাড়াতাড়ি সাড়া দেবে না।
৯। রতি কার্য করতে চাইবে না।
১০উপপতি চুম্বন করতে চাইলে মুখ ফেরাবে। ঘৃণার ভাব দেখাবে।
১১। আলিঙ্গনে বাধা দেবে। দূরে দূরে থাকবে।
১২। রতি কাজের জন্য জোরাজুরি করলে ঊরু দুটি চেপে রাখবে।
১৩। উপপতির কোন কথা গ্রাহ্য করবে না। তার যা ইচ্ছা তাই করবে।
১৪। সুরতের সময় উপপতি ঘুমের ভান করবে।
১৫। সুরতকালে উপপতি ক্লান্ত হয়ে পড়লে তাকে উপহাস করবে।
১৬। দিনের বেলায় উপপতি সঙ্গম করতে চাইলে, সে অন্যত্র চলে যাবে।
১৭। উপপতির সামনে অন্য পুরুষের সঙ্গে প্রেমালাপণ করবে।
১৮। শৃঙ্গারের শেষে বীর্য স্খলনের সময়ে, উপপতিকে ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে দেবে। উপপতি এমন সব কার্যকলাপ করলে বুঝবে যে, সে তাকে আর চায় না।




এর পর পড়ুন: 

কামসূত্র পরনারী__কামসূত্রঃ পর্ব




 

কোন মন্তব্য নেই: