মধু হলো লক্ষ লক্ষ মৌমাছির অকান্ত শ্রম আর সেবাব্রতী জীবনের
দান। মৌমাছিরা ফুলে ফুলে বিচরণ করে ফুলের রেনু ও মিষ্টি রস সংগ্রহ করে পাকস্থলীতে
রাখে। তারপর সেখানে মৌমাছির মুখ নিঃসৃত লালা মিশ্রিত হয়ে রাসায়নিক জটিল বিক্রিয়ায়
মধু তৈরী হয়। এরপর মুখ হতে মৌচাকের প্রকোষ্ঠে জমা করা হয়।
মধু হচ্ছে একটি তরল আঠালো মিষ্টি জাতীয়
পদার্থ, যা মৌমাছিরা ফুল থেকে নেকটার বা পুষ্পরস হিসেবে সংগ্রহ করে মৌচাকে জমা
রাখে। পরবর্তীতে জমাকৃত পুষ্পরস প্রাকৃতিক নিয়মেই মৌমাছি বিশেষ প্রক্রিয়ায়
পূর্ণাঙ্গ মধুতে রূপান্তর এবং কোষ বদ্ধ অবস্থায় মৌচাকে সংরক্ষণ করে। বিশ্ব
স্বাস্থ্য সংস্থা এবং খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মতে মধু হচ্ছে এমন একটি অগাজানোশীল
মিষ্টি জাতীয় পদার্থ যা মৌমাছিরা ফুলের নেকটার অথবা জীবন্ত গাছপালার নির্গত রস
থেকে সংগ্রহ করে মধুতে রূপান্তর করে এবং সুনির্দিষ্ট কিছু উপাদান যোগ করে মৌচাকে
সংরক্ষণ করে।
মধুর ধরনঃ বিভিন্ন ফুল থেকে মধু হয়,
যেমনঃ সরিষা ফুল, লিচু, সুন্দর বন, কালজিরা থেকে আহরিত মধু । এ ছাড়া রয়েছে ধনিয়া
ফুল, গুজি তিল ও ত্রিসির মধুও হয় । প্রায় সবার গুনাগুণ একই।
সবচেয়ে সেরা মধুঃ নিউজিল্যান্ডের মানুকা
হানী বাজারে প্রাপ্য সকল মধুর চেয়ে বেশী ঔষধি গুন সম্পন্ন গণ্য করা হয় । মানুকা
নামিয়ো এক প্রকার ঝোপ জাতীয় উদ্ভিদের ফুল থেকে উৎপন্ন মধু “মানুকা হানি” নামে
পরিচিত ।
মধুর উপাদাণঃ
মধুতে প্রায় ৪৫টি খাদ্য উপাদান থাকে। ফুলের পরাগের মধুতে থাকে ২৫ থেকে ৩৭ শতাংশ গ্লুকোজ, ৩৪ থেকে ৪৩ শতাংশ ফ্রুক্টোজ, ০.৫ থেকে ৩.০ শতাংশ সুক্রোজ এবং ৫-১২ শতাংশ মন্টোজ। আরো থাকে ২২ শতাংশ অ্যামাইনো এসিড, ২৮ শতাংশ খনিজ লবণ এবং ১১ ভাগ এনকাইম। এতে চর্বি ও প্রোটিন নেই। ১০০ গ্রাম মধুতে থাকে ২৮৮ ক্যালরি।
মধুতে প্রায় ৪৫টি খাদ্য উপাদান থাকে। ফুলের পরাগের মধুতে থাকে ২৫ থেকে ৩৭ শতাংশ গ্লুকোজ, ৩৪ থেকে ৪৩ শতাংশ ফ্রুক্টোজ, ০.৫ থেকে ৩.০ শতাংশ সুক্রোজ এবং ৫-১২ শতাংশ মন্টোজ। আরো থাকে ২২ শতাংশ অ্যামাইনো এসিড, ২৮ শতাংশ খনিজ লবণ এবং ১১ ভাগ এনকাইম। এতে চর্বি ও প্রোটিন নেই। ১০০ গ্রাম মধুতে থাকে ২৮৮ ক্যালরি।
মধুর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন বি১, বি২,
বি৩, বি৫, বি৬,
আয়োডিন, জিংক ও কপার সহ
অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান যা আমাদের শুধুমাত্র দেহের
বাহ্যিক দিকের জন্যই নয়, দেহের
অভ্যন্তরীণ অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সুরক্ষায় কাজ করে।
খাটি মধুতে
যা থাকা আবশ্যকঃ
১। পানি
শতকরা ২১ ভাগের বেশী না ।
২।
সুক্রোজ ৫ ভাগের বেশী না ।
৩।
অ্যাশ শতকরা ১ ভাগের বেশী না ।
৪। রিডিউসিং
সুগার শতকরা ৬৫ ভাগের কম নয় ।
মধুর ভৌত বৈশিষ্ট্যঃ
বাংলাদেশের জাতীয় মধু বোর্ডের সংজ্ঞা অনুযায়ী "মধু হল একটি বিশুদ্ধ পদার্থ যাতে পানি বা অন্য কোন মিষ্টকারক পদার্থ মিশ্রিত করা হয় নাই।"মধু চিনিরচাইতে অনেক গুণ মিষ্টি। তরল মধু নষ্ট হয় না, কারণ এতে চিনির উচ্চ ঘনত্বের কারণে প্লাজমোলাইসিস প্রক্রিয়ায় ব্যাকটেরিয়া মারা যায়। প্রাকৃতিক বায়ুবাহিত ইস্ট মধুতে সক্রিয় হতে পারে না, কারণ মধুতে পানির পরিমাণ খুব অল্প। প্রাকৃতিক, অপ্রক্রিয়াজাত মধুতে মাত্র ১৪% হতে ১৮% আর্দ্রর্তা থাকে। আর্দ্রর্তার মাত্রা ১৮% এর নিচে যতক্ষণ থাকে, ততক্ষণ মধুতে কোন জীবাণু বংশবৃদ্ধি করতে পারে না। পাস্তুরাইয্ড মধুতে মধুর প্রাকৃতিক ঔষধি গুণাবলী হ্রাস পায়।
বাংলাদেশের জাতীয় মধু বোর্ডের সংজ্ঞা অনুযায়ী "মধু হল একটি বিশুদ্ধ পদার্থ যাতে পানি বা অন্য কোন মিষ্টকারক পদার্থ মিশ্রিত করা হয় নাই।"মধু চিনিরচাইতে অনেক গুণ মিষ্টি। তরল মধু নষ্ট হয় না, কারণ এতে চিনির উচ্চ ঘনত্বের কারণে প্লাজমোলাইসিস প্রক্রিয়ায় ব্যাকটেরিয়া মারা যায়। প্রাকৃতিক বায়ুবাহিত ইস্ট মধুতে সক্রিয় হতে পারে না, কারণ মধুতে পানির পরিমাণ খুব অল্প। প্রাকৃতিক, অপ্রক্রিয়াজাত মধুতে মাত্র ১৪% হতে ১৮% আর্দ্রর্তা থাকে। আর্দ্রর্তার মাত্রা ১৮% এর নিচে যতক্ষণ থাকে, ততক্ষণ মধুতে কোন জীবাণু বংশবৃদ্ধি করতে পারে না। পাস্তুরাইয্ড মধুতে মধুর প্রাকৃতিক ঔষধি গুণাবলী হ্রাস পায়।
চিনির উচ্চ ঘনত্বের কারণে প্লাজমোলাইসিস প্রক্রিয়ায় ব্যাকটেরিয়া মারা
যায়। ফলে দীর্ঘদিন অটুট থাকে মধু। মধুতে পানির পরিমাণ খুব অল্প থাকায় প্রাকৃতিক
বায়ু বাহিত ইস্ট মধুতে সক্রিয় থাকতে পারে না। মাত্র ১৪% হতে ১৮% আর্দ্রতা থাকে
প্রাকৃতিক, অপ্রক্রিয়াজাত
মধুতে। আর্দ্রতার মাত্রা ১৮% এর নিচে থাকলে মধুতে কোন জীবাণু বংশবৃদ্ধি করতে পারে
না। তবে পাস্তুরীকৃত মধুতে তার প্রাকৃতিক ঔষধি গুণাবলী হ্রাস পায়।
মধু সম্পর্কে মতবাদঃ আল
কোরআনে আছে- আপনার পালনকর্তা মৌমাছিকে আদেশ দিলেন: পর্বতে, গাছে ও উঁচু চালে
বাড়ি তৈরী কর,এরপর সর্বপ্রকার ফল থেকে খাও এবং আপন
পালনকর্তার উন্মুক্ত পথে চলো। তার পেট থেকে বিভিন্ন রঙের পানীয় নির্গত হয়। তাতে
মানুষের জন্য রয়েছে রোগের প্রতিকার। নিশ্চই এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে
নিদর্শন রয়েছে। (সূরা নাহলের ৬৮ ও ৬৯ নম্বর আয়াত)
পবিত্র হাদীস শরীফে মধু
সম্পর্কে প্রচুর রেওয়ায়েত আছে। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)- এর মতে সকল পানীয়
উপাদানের মধ্যে মধু সর্বোৎকৃষ্ঠ। তিনি বলেন- মধু এবং কোরআনের মাধ্যমে তোমাদের
চিকিৎসা নেয়া উচিৎ। -(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাকেম) হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন যে,
“রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- যে ব্যক্তি প্রত্যেক মাসে তিন
দিন ভোরে মধু চেটে খায় তার কোন বড় বিপদ হতে পারে না।” -(ইবনে মাজাহ, বয়হাকী) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) স্বয়ং
সকাল বেলা খালি পেটে মধুর শরবত পান করতেন। যারা নিয়মিত ভাবে মধুর শরবত পান করতে না
পারবে তাদের জন্য তিনি বলেন- যে ব্যক্তি মাসে তিন দিন সকাল বেলা মধু চেটে সেবন
করবে, ঐ মাসে তার কোন কঠিন রোগ ব্যাধি হবে না।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- যে কেহ আরোগ্য কামনা করে, তার
ভোরের নাস্তা হিসাবে পানি মিশ্রিত মধু পান করা উচিৎ।
বিখ্যাত মুসলিম চিকিৎসক ইবনে সিনা তাঁর
বিশ্বখ্যাত- Medical Test
book The canon of medicine গ্রন্হে বহু রোগের প্রতিষেধক হিসেবে
মধু ব্যবহারের সুপারিশ করেছেন। তিনি মধুর উপকারিতা সম্পর্কে বলেছেন, মধু আপনাকে সুখী করে, পরিপাকে সহায়তা করে,
ঠান্ডার উপশম করে, ক্ষুধা বাড়ায়,
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি ও তীক্ষ্ম করে, জিহ্বা
স্পষ্ট করে এবং যৌবন রক্ষা করে।
মধু চিনার উপায়ঃ
১।
খাটি মধুতে কখনো কটু গন্ধ থাকে না ।
২।
খাটি মধু পানির গ্লাসে ড্রপ আকারে ছাড়লে টা সরাসরি ড্রপ অবস্তাতেই গ্লাসের নিচে
চলে যায় ।
৩। ফ্রিজিং পরীক্ষাঃ মধুকে ফ্র্রিজের মধ্যে রেখে দিন । খাঁটি মধু জমবে না । ভেজাল মধু পুরাপুরি না
জমলেও জমাট তলানী পড়বে ।
৪। পিঁপড়া পরীক্ষাঃ এক টুকরা কাগজের মধ্যে কয়েক ফোঁটা মধু নিন । তারপর যেখানে পিঁপড়া আছে সেখানে রেখে দিন । পিঁপড়া যদি মধুর ধারে কাছে না ঘেসে তবে তা খাঁটি মধু । আর পিঁপড়া যদি তা পছন্দ করে তবে মধুতে ভেজাল আছে ।
৫। চক্ষু পরীক্ষাঃ খুব অল্প পরিমাণ মধু চোখের ভেতরে দিন । যদি মধু খাঁটি হয় তবে প্রথমে চোখ জ্বালাপোড়া করবে ও চোখ থেকে পানি বের হবে এবং খানিক পরে চোখে ঠান্ডা অনুভূতি হবে । (এই পরীক্ষায় অনুৎসাহিত করছি)
৬। দ্রাব্যতা পরীক্ষাঃ এক গ্লাস পানি নিয়ে এর মধ্যে এক টেবিল চামচপরিমাণ মধু নিন । খুব ধীরে ধীরে গ্লাসটি শেক করুন। যদি মধু পানিতে পুরাপুরি দ্রবীভূত হয়ে যায় তবে তা ভেজাল মধু । আর মধু যদি পানিতে ছোট ছোট পিন্ডের আকারে থাকে তবে তা খাঁটি মধু ।
৪। পিঁপড়া পরীক্ষাঃ এক টুকরা কাগজের মধ্যে কয়েক ফোঁটা মধু নিন । তারপর যেখানে পিঁপড়া আছে সেখানে রেখে দিন । পিঁপড়া যদি মধুর ধারে কাছে না ঘেসে তবে তা খাঁটি মধু । আর পিঁপড়া যদি তা পছন্দ করে তবে মধুতে ভেজাল আছে ।
৫। চক্ষু পরীক্ষাঃ খুব অল্প পরিমাণ মধু চোখের ভেতরে দিন । যদি মধু খাঁটি হয় তবে প্রথমে চোখ জ্বালাপোড়া করবে ও চোখ থেকে পানি বের হবে এবং খানিক পরে চোখে ঠান্ডা অনুভূতি হবে । (এই পরীক্ষায় অনুৎসাহিত করছি)
৬। দ্রাব্যতা পরীক্ষাঃ এক গ্লাস পানি নিয়ে এর মধ্যে এক টেবিল চামচপরিমাণ মধু নিন । খুব ধীরে ধীরে গ্লাসটি শেক করুন। যদি মধু পানিতে পুরাপুরি দ্রবীভূত হয়ে যায় তবে তা ভেজাল মধু । আর মধু যদি পানিতে ছোট ছোট পিন্ডের আকারে থাকে তবে তা খাঁটি মধু ।
৭। মেথিলেটেড স্পিরিট পরীক্ষাঃ সমান অনুপাতে মধু
এবং মেথিলেটেড স্পিরিট মিশ্রিত করে নাড়াতে থাকুন। খাঁটি মধু দ্রবীভুত না হয়ে
তলনীতে জমা হবে । আর ভেজাল মধু দ্রবীভূত হয়ে মেথিলেটেড স্পিরিটকে মিল্কি করবে ।
৮। শিখা পরীক্ষাঃ একটি কটন উয়িক নিয়ে উহার এক প্রান্তকে মধুর মধ্যে ডুবিয়ে নেই । তারপর উঠিয়ে হালকা শেক করে নিই । একটি মোমবাতি জ্বালিয়ে বা লাইটার জ্বলিয়ে তা আগুনের শিখায় ধরি । যদি তা জ্বলতে থাকে তবে মধু খাঁটি আর যদি না জ্বলে তবে মধুতে পানি মেশানো আছে । যদি মধুতে অল্প পরিমাণ পানি মেশানো থাকে তবে কটন উয়িক জ্বলতে থাকবে কিন্তু ক্র্যাকলিং সাউন্ড শোনা যাবে ।
৮। শিখা পরীক্ষাঃ একটি কটন উয়িক নিয়ে উহার এক প্রান্তকে মধুর মধ্যে ডুবিয়ে নেই । তারপর উঠিয়ে হালকা শেক করে নিই । একটি মোমবাতি জ্বালিয়ে বা লাইটার জ্বলিয়ে তা আগুনের শিখায় ধরি । যদি তা জ্বলতে থাকে তবে মধু খাঁটি আর যদি না জ্বলে তবে মধুতে পানি মেশানো আছে । যদি মধুতে অল্প পরিমাণ পানি মেশানো থাকে তবে কটন উয়িক জ্বলতে থাকবে কিন্তু ক্র্যাকলিং সাউন্ড শোনা যাবে ।
৯। শোষণ পরীক্ষাঃ কয়েক ফোঁটা মধু একটি ব্লটিং পেপারে নিন ও পর্যবেক্ষণ করুন । খাঁটি মধু ব্লটিং পেপার কর্তৃক শোষিত হবে না । ভেজাল মধু ব্লটিং পেপারকে আর্দ্র করবে ।
১০। কলংক পরীক্ষাঃ একটুকরা সাদা কাপড়ের উপর সামান্য পরিমাণ মধু নিন এবং এবং কিছুক্ষন পর কাপড়টি ধৌত করুন । ধোয়ার পর কাপড়টিতে যদি কোন দাগ থাকে তবে মধুতে ভেজাল আছে । আর যদি কোন দাগ না থাকে তবে মধু খাঁটি ।
১১। হানি কম্ব পরীক্ষাঃ একটি কাঁচের বা সাদা রংয়ের বোলের মধ্যখানে দেড় থেকে দুই চা চামচ (প্লস্টিকের তৈরি) মধু নেই। তারপর বোলের চারদিক দিয়ে ধীরে ধীরে ঠান্ডা পানি ঢালতে থাকি । যখন পানি মধুকে ঢেকে ফেলবে তখন পানি ঢালা বন্ধ করি । তারপর বোলটিকে তুলে ধরে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে দুই মিনিট ধরে ঘুরাতে থাকি । খাঁটি মধু এই মুভমেন্টের পরেও পানিতে দ্রবীভূত হবে না এবং হেক্সাগোনাল আকৃতি ধারণ করবে যা দেখতে প্রায় হানি কম্ব এর মত ।
মধুর দানাদার সমস্যাঃ অনেক মধু দানার আকার
ধারণ করে । যদি কোন মধুতে গ্লুকোজের পরিমাণ ফ্রুকটোজের চেয়ে বেশী থাকে তখন সে মধু
অতি দ্রুত দানাদার হয় । যেমনঃ সরিষা ফুলের মধু । আবার মধুতে পর্যাপ্ত পোলেন,
ধুলোবালি ও বুদবুদ থাকলে সে মধু সহজে দানাদার হয় । সাধারণত ১১ থেকে ১৮ ডিগ্রি
সেলসিয়েস তাপমাত্রায় মধু জমতে পারে । তবে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়েস তাপমাত্রায় মধু অতি
দ্রুত জমতে সহায়ক । পানির পরিমাণ বেশী থাকলে মধুকে দানাদার হতে ত্বরান্বিত করবে ।
তবে দানাদার মধু খেতে কোন সমস্যা নাই । দানাদার মধুকে পরোক্ষ তাপ প্রয়োগ করে তরল
করা যায় বা ক্রিম মধুতে রূপান্তর করা যায় । দানাদার মধু ছয় মাসের মধ্যে ব্যবহার
উত্তম ।
মধুর উপকারিতাঃ
১। শক্তি প্রদায়ীঃ মধু ভালো শক্তি প্রদায়ী খাদ্য। মধু তাপ
ও শক্তির ভালো উৎস। মধু দেহে তাপ ও শক্তি জুগিয়ে শরীরকে সুস্থ রাখে।
২। হজমে সহায়তাঃ এতে যে শর্করা থাকে তা সহজেই হজম হয়।
কারণ এতে যে ডেক্সট্রিন থাকে তা সরাসরি রক্তে প্রবেশ করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে
ক্রিয়া করে।পেটরোগা মানুষদের জন্য মধু বিশেষ উপকারি।
৩। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ মধুতে রয়েছে ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য
দূর করে।১ চা চামচ খাঁটি মধু ভোরবেলা পান করলে কোষ্ঠবদ্ধতা এবং অম্লত্ব দূর হয়।
৪। রক্তশূন্যতায়ঃ মধু রক্তের হিমোগ্লোবিন গঠনে সহায়তা
করে বলে এটি রক্তশূন্যতায় বেশ ফলদায়ক।কারণ এতে থাকে খুব বেশি পরিমাণে কপার, লৌহ ও ম্যাঙ্গানিজ।
৫। ফুসফুসের যাবতীয় রোগ ও শ্বাসকষ্ট নিরাময়েঃ বলা হয়ে থাকে, ফুসফুসের যাবতীয় রোগে মধু উপকারী।
যদি একজন অ্যাজমা (শ্বাসকষ্ট) রোগীর নাকের কাছে ধরে শ্বাস টেনে নেয়া হয় তাহলে সে
স্বাভাবিক এবং গভীরভাবে শ্বাস টেনে নিতে পারবেন। কেউ কেউ মনে করেন, এক বছরের পুরনো মধু শ্বাসকষ্টের রোগীদের জন্য বেশ ভালো।
৬। অনিদ্রায়ঃ মধু অনিদ্রার ভালো ওষুধ। রাতে শোয়ার
আগে এক গ্লাস পানির সঙ্গে দুই চা চামচ মধু মিশিয়ে খেলে এটি গভীর ঘুম ও সম্মোহনের
কাজ করে।
৭। যৌন দুর্বলতায়ঃ পুরুষদের মধ্যে যাদের যৌন দুর্বলতা
রয়েছে তারা যদি প্রতিদিন মধু ও ছোলা মিশিয়ে খান তাহলে বেশ উপকার পাবেন।
৮। প্রশান্তিদায়ক পানীয়ঃ হালকা গরম দুধের সঙ্গে মিশ্রিত মধু একটি
প্রশান্তিদায়ক পানীয়।
৯। মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য রক্ষায়ঃ মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য রক্ষায় মধু
ব্যবহৃত হয়। এটা দাঁতের ওপর ব্যবহার করলে দাঁতের ক্ষয়রোধ করে। দাঁতে পাথর জমাট
বাঁধা রোধ করে এবং দাঁত পড়ে যাওয়াকে বিলম্বিত করে।মধু রক্তনালিকে সম্প্রসারিত
করে দাঁতের মাড়ির স্বাস্থ্য রক্ষা করে। যদি মুখের ঘায়ের জন্য গর্ত হয়। এটি সেই
গর্ত ভরাট করতে সাহায্য করে এবং সেখানে পুঁজ জমতে দেয় না। মধু মিশ্রিত পানি দিয়ে
গড়গড়া করলে মাড়ির প্রদাহ দূর হয়।
১০। পাকস্থলীর সুস্থতায়ঃ মধু পাকস্থলীর কাজকে জোরালো করে এবং
হজমের গোলমাল দূর করে। এর ব্যবহার হাইড্রোক্রলিক এসিড ক্ষরণ কমিয়ে দেয় বলে অরুচি, বমিভাব, বুক
জ্বালা এগুলো দূর করা সম্ভব হয়।
১১। দেহে তাপ উৎপাদনেঃ শীতের ঠান্ডায় এটি দেহকে গরম রাখে। এক
অথবা দুই চা চামচ মধু এক কাপ ফুটানো পানির সঙ্গে খেলে শরীর ঝরঝরে ও তাজা থাকে।
১২। পানিশূন্যতায়ঃ ডায়রিয়া হলে এক লিটার পানিতে ৫০
মিলিলিটার মধু মিশিয়ে খেলে দেহে পানিশূন্যতা রোধ করা যায়।
১৩। দৃষ্টিশক্তি বাড়াতেঃ চোখের জন্য ভালো।গাজরের রসের সাথে মধু
মিশিয়ে খেলে দৃষ্টিশক্তি বাড়ে।
১৪। রূপচর্চায়ঃ মেয়েদের রূপচর্চার ক্ষেত্রে মাস্ক
হিসেবে মধুর ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়। মুখের ত্বকের মসৃণতা বৃদ্ধির জন্যও মধু ব্যবহূত
হয়।
১৫। ওজন কমাতেঃ মধুতে নেই কোনো চর্বি। মধু পেট পরিষ্কার
করে,মধু ফ্যাট কমায়,
ফলে ওজন কমে। হজমে সহায়তা করে ।
১৬। মধু প্রাকৃতিকভাবেই মিষ্টি। তাই মধু সহজে হজম হয় এবং হজমে সহায়তা করে।
১৬। মধু প্রাকৃতিকভাবেই মিষ্টি। তাই মধু সহজে হজম হয় এবং হজমে সহায়তা করে।
১৭। গলার স্বরঃ গলার স্বর সুন্দর ও মধুর করে।
১৮। তারুণ্য বজায় রাখতেঃ তারুণ্য বজায় রাখতে মধুর ভূমিকা
অপরিহার্য। মধু এন্টি অক্সিডেন্ট, যা ত্বকের রং ও ত্বক সুন্দর করে। ত্বকের ভাঁজ পড়া ও বুড়িয়ে যাওয়া
রোধ করে।শরীরের সামগ্রিক শক্তি বাড়ায় ও তারুণ্য বাড়ায়।
১৯। হাড় ও দাঁত গঠনেঃ মধুর গুরুত্বপূর্ণউপকরণ ক্যালসিয়াম।
ক্যালসিয়াম দাঁত, হাড়,
চুলের গোড়া শক্ত রাখে, নখের ঔজ্জ্বল্য
বৃদ্ধি করে, ভঙ্গুরতা রোধ করে।
২০। রক্তশূন্যতা ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেঃ মধুতে রয়েছে ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স, যা রক্তশূন্যতা,কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
২১। আমাশয় এবং পেটের পীড়া নিরাময়েঃ পুরনো আমাশয় এবং পেটের পীড়া নিরাময়সহ
নানাবিধ জটিল রোগের উপকার করে থাকে। কচি বেল ও আমগাছের কচি চামড়া (বাকল) বাটার
সাথে গুড় ও মধু মিশিয়ে খেলে আমাশয় ভাল হয়ে যায়। কুল বা বড়ই গাছের ছাল চূর্ণের সাথে
মধু মিশিয়ে খেলে আমাশয় ভাল হয়।
২২। হাঁপানি রোধেঃ আধা গ্রাম গুঁড়ো করা গোলমরিচের সাথে সমপরিমাণ মধু এবং আদা মেশান। দিনে অন্তত
তিন বার এই মিশ্রণ খান। এটা হাঁপানি রোধে সহায়তা করে।
২৩। উচ্চ রক্তচাপ কমায়ঃ দু চামচ মধুর সাথে এক চামচ রসুনের রস
মেশান। সকাল-সন্ধ্যা দুবার এই মিশ্রণ খান। প্রতিনিয়ত এটার ব্যবহার উচ্চ রক্তচাপ
কমায় ।প্রতিদিন সকালে খাবার এক ঘণ্টা আগে খাওয়া উচিত ।
২৪। রক্ত পরিষ্কারকঃ এক গ্লাস গরম পানির সাথে এক বা দুই চামচ
মধু ও এক চামচ লেবুর রস মেশান। পেট খালি করার আগে প্রতিদিন এই মিশ্রন খান। এটা
রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। তাছাড়া রক্তনালীগুলোও পরিষ্কার করে।
২৫। রক্ত উৎপাদনে সহায়তাঃ রক্ত উৎপাদনকারী উপকরণ আয়রন রয়েছে
মধুতে। আয়রন রক্তের উপাদানকে (আরবিসি,
ডব্লিউবিসি, প্লাটিলেট) অধিক কার্যকর ও
শক্তিশালী করে।
২৬। হৃদরোগেঃ এক চামচ মৌরি গুঁড়োর সাথে এক বা দুই চামচ মধুর মিশ্রণ হৃদরোগের টনিক হিসেবে
কাজ করে। এটা হৃদপেশিকে সবল করে এবং এর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
২৭। রোগ প্রতিরোধশক্তি বাড়ায়ঃ মধু শরীরের রোগ প্রতিরোধশক্তি বাড়ায়
এবং শরীরের ভেতরে এবং বাইরে যে কোনো ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ প্রতিহত করার ক্ষমতাও
যোগান দেয়।মধুতে আছে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধকারী উপাদান, যা অনাকাঙ্ক্ষিত সংক্রমণ থেকে দেহকে
রক্ষা করে।
২৮। জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াইঃ গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছেযে মধুতে রয়েছে উচ্চশক্তিসম্পন্ন অ্যান্টি
মাইক্রোবিয়াল এজেন্ট। এই এজেন্ট শরীরের ক্ষতিকর রোগ জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে।
২৯। ব্যথা নিরাময়েঃ আপনার শরীরের জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যথা? প্রচুর বাতের ওষুধ খেয়েও কোনো ফল
পাননি? মধু খান। যে অবাঞ্ছিত রসের কারণে শরীরে বাতব্যামোর
জন্ম, সে রস অপসারিত করবে মধু। আপনার বাত সেরে যাবে।
৩০। গ্যাস্ট্রিক-আলসার থেকে মুক্তিঃ হজম সমস্যার সমাধানেও কাজ করে মধু।একটি
গবেষণায় বলা হয়েছে, গ্যাস্ট্রিক-আলসার
থেকে মুক্তি পেতে একজন ব্যক্তি দিনে তিনবেলা দুই চামচ করে মধু খেতে পারে।
৩১। মধু খেলে বুদ্ধি বাড়েঃ মধু যে শুধু কায়িক শক্তি বাড়ায়, তা নয়। আপনি প্রতিদিন রাতে শোয়ার
আগে এক চামচ মধু খাবেন, ঘুমানোর আগে এক চামচ মধু
মস্তিষ্কের কাজ সঠিকভাবে চালাতে সাহায্য করে ফলে আপনার মস্তিষ্কের শক্তি তথা
বুদ্ধির জোর বেড়ে যাবে। যে কোনো কাজেকর্মে আপনার মগজ আগের চেয়ে বেশি খেলবে।
যাদের মাথা খাটিয়ে কাজ করতে হয়, তাদের জন্য মধু এনে
দেবে নতুন উদ্যম ও সৃষ্টিশীলতা। মনে রাখবেন, আপনি ঘুমিয়ে
পড়লেও আপনার মস্তিষ্ক কিন্তু জেগে থাকে। সুতরাং তখনও তার শক্তি দরকার। আর এ
শক্তির ভালোই যোগান দেয় মৌমাছির চাক ভেঙে পাওয়া এই প্রাকৃতিক মধু। আপনার লিভারে
মধু থেকে পাওয়া ফলজ শর্করা বা ফ্রুকটোজ নামের পদার্থটিই মস্তিষ্কের জ্বালানি
হিসেবেই কাজ করে থাকে।মানুষের লিভারে শক্তি সংরক্ষণ করে এবং রাতব্যাপি মস্তিষ্কে
শক্তি সরবরাহ করে থাকে।
৩২। ঠান্ডা দূর করে মধুঃ মধু নিয়মিত খেলে অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগার
প্রবণতা দূর হবে। চা, কফি ও
গরম দুধের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে হাঁচি, কাঁশি, জ্বর জ্বর ভাব, জ্বর, গলাব্যথায়,টনসিল, নাক
দিয়ে পানি পড়া,জিহ্বার ঘা (ঠান্ডাজনিত) ভালো হয়।
৩৩। সমপরিমাণ আদারস এবং মধুর মিশ্রণ কাশির সাহায্যে
শ্লেষ্মা বের করে ফেলার একটি সহায়ক ওষুধ হিসেবে কাজ করে। এটি ঠান্ডা, কাশি, কণ্ঠনালির
ক্ষত, নাক দিয়ে পানি পড়া ইত্যাদি থেকে দ্রুত পরিত্রাণ
দেয়।
৩৪। শিশুদের বৃদ্ধি ও বিকাশেঃ শিশুদের ছয় মাস বয়সের পর থেকে অল্প
করে (তিন-চার ফোঁটা) মধু নিয়মিত খাওয়ানো উচিত। এতে তাদের পুরো দেহের বৃদ্ধি, মানসিক বিকাশ ভালো হবে। তবে শিশুকে
মধু নিয়মিত খাওয়াতে হবে ঠান্ডা ঋতুতে, গরমের সময়
নয়।শিশুদের দুর্বলতা দূর করার জন্যমধুতে রয়েছে জিংক ও ফসফরাস।বড়দের তুলনায়
বাড়ন্ত শিশুদের (বিশেষ করে যারা স্কুলে যায়) জন্য পরিমাণে মধু বেশি প্রয়োজন।
৩৫। আয়ু বৃদ্ধিঃ গবেষণায় আরও দেখা গেছে, নিয়মিত মধু ও সুষম খাবারে অভ্যস্ত
ব্যক্তিরা তুলনামূলকভাবে বেশি কর্মক্ষম ও নিরোগ হয়েবেঁচে থাকে।
৩৬। ক্ষত সারাতে মধুঃ উপকারী।প্রাচীন কাল তেকে গ্রিস ও মিশরে
ক্ষত সারাইয়ে মধু ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ২০০৭-এ সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পরীক্ষায়
দেখা গেছে অধিকাংশ ক্ষত ও জখমের উপশমে মধু ডাক্তারী ড্রেসিং-এর চেয়েও বেশী
কার্যকর। অগ্নিদগ্ধ ত্বকের জন্যও মধু খুব উপকারী।
৩৭। ত্বক উজ্জ্বল করতেঃ বাইরে থেকে ঘরে ফিরে মধু ও আটা মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে
মুখে ১০ মিনিট রেখে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। মুখে নিয়মিত এই প্যাক লাগালে
মুখের দাগ দূর হয়ে ত্বক হবে উজ্জ্বল।ত্বক উজ্জ্বল করতে কয়েকটি বাদাম পানিতে ভিজিয়ে
কিছুক্ষণ রেখে দিন। বাদাম পেস্ট করে এর সঙ্গে মধু মিশিয়ে নিন। ভালো করে মুখে
লাগান। ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই ফেসপ্যাক সপ্তাহে তিন
দিন ব্যবহার করুন।
৩৮। মুখের
বলিরেখা ও দাগ দূর করতেঃ ময়দার সঙ্গে মধু
ও পানি মিশিয়ে মুখে লাগান। শুকিয়ে গেলে অল্প পানি দিয়ে ভিজিয়ে কিছুক্ষণ ম্যাসাজ
করুন। এরপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি একদিন পর পর করতে পারেন।যাদের ত্বক
তৈলাক্ত তারা শসার রসের সঙ্গে মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে প্যাক তৈরি করতে পারেন। তুলার
প্যাড দিয়ে আলতোভাবে মুখে লাগিয়ে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে
ধুয়ে ফেলুন।
৩৯। ত্বকের ডেডসেল দূর করতেঃ চালের
গুঁড়ার সঙ্গে মধু মিশিয়ে স্ক্রাব তৈরি করে মুখে ভালো করে ম্যাসাজ করুন। যখন ত্বক
শুষ্ক লাগবে তখন হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। স্কার্ব সপ্তাহে দুই দিন
ব্যবহার করতে পারেন।টমেটোর রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে তৈরি করতে পারেন ন্যাচারাল
টোনার। এটি নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক হবে কোমল ও মসৃণ।ব্লেন্ডারে একটি আপেল এর সঙ্গে
এক চামচ মধু দিয়ে ভালো করে ব্লেন্ড করুন। এটি ত্বকে টোনার হিসাবে ভালো কাজ করে।
৪০। ত্বকের সুরক্ষায়ঃ ত্বকে ১৬ মিনিট রেখে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে
ফেলুন।মধু, চিনি,
বেসনের সঙ্গে অল্প পরিমাণ পানি নিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করুন।তারপর
সাবানের পরিবর্তে এই মাস্কটি মুখে এবং শরীরে লাগান। এতে ত্বক পরিস্কার হবে এবং
মধুর সঙ্গে কমলার রস ও গোলাপ জল মিশিয়ে মুখে লাগাতে পারেন। ১৫ মিনিট পর ধুয়ে
ফেলুন। আসা করা যায় এতে আপনার ত্বকের সতেজতা ফিরে আসবে।আরো মজার বিষয় হলো মধুতে
রয়েছে পটাশিয়াম যা ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে ও ত্বকের অনেক সমস্যা হতে
ত্বককে সুরক্ষা দেয়। মধু নিয়মিত খেলে ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ে।
৪১। মুখের ত্বকে ভাঁজ পড়া রোধেঃ মধু
হিউম্যাকটেন্ট যৌগে সমৃদ্ধ। এই যৌগটি ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখার কাজ করে এবং
ত্বকের উপরিভাগের ইলাস্টিসিটি বজায় রাখে। হিউম্যাকটেন্ট যৌগটি ত্বককে নমনীয় করতেও
সাহায্য করে। ফলে ত্বক থাকে দীর্ঘদিন বার্ধক্যের ছাপ মুক্ত। প্রতিদিন সকালে এক
চামচ মধু রঙ চা কিংবা দুধের সাথে খেতে পারেন। সেই সাথে আপনার রোজকার ফেস প্যাকেও
ব্যবহার করতে পারেন মাত্র এক চামচ মধু। মধু ত্বকের উপরিভাগের মৃত কোষ দূর করে ও
মুখের ত্বকে ভাঁজ পড়া রোধ করে।
৪২। কালো দাগ দূর করতেঃ মধুতে আছে
প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমূহ যা সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির বিরুদ্ধে কাজ করে
শরীরের চামড়াকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। অনেকটা প্রাকৃতিক সানস্ক্রিনের কাজ করে
মধু। রোদে পোড়া ত্বককে স্বাভাবিক করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এক চামচ মধুর
সাথে পানি মিশিয়ে প্রতিদিন মুখে ফেস প্যাকের মতন লাগান। রোদে পোড়া জনিত কালো দাগ
দূর হয়ে চেহারা হবে ঝলমলে।
৪৩। ঠোটের উজ্জ্বলতা বাড়াতেঃ মধু
ঠোঁটের ওপরের শুষ্ক ত্বক ও কালচে ভাব দূর করে ঠোঁটকে নরম ও গোলাপি করে তুলতে
সহায়তা করে। রাতে ঘুমের পূর্বে নিয়মিত ঠোঁটে মধু লাগান। ঠোঁট হয়ে উঠবে নজর কাড়া
সুন্দর।
৪৪। শক্তি বাড়ায়ঃ মধুতে আছে
প্রাকৃতিক চিনি। এই প্রাকৃতিক চিনি শরীরে শক্তি যোগায় এবং শরীরকে কর্মক্ষম রাখে।
বিশেষ করে যাদের মিষ্টি খাবারের নেশা আছে তারা অন্য মিষ্টি খাবারের বদলে মধু খেয়ে
নিন। কিছু মানুষ আছে যারা সারাক্ষন দূর্বলতায় ভোগেন এবং এই সমস্যা দূর করার জন্য
কিছুক্ষন পর পর চা কফি খায়। এই সমস্যায় যারা ভুগছেন তারা প্রতিদিন সকালে এক চামচ
মধু খেয়ে নিন এবং সারা দিন সবল থাকুন।
৪৫। কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণঃ মধুর
ভিটামিন বি১, বি২,
বি৩, বি৫, বি৬,
সি কপার , আয়োডিন ও জিংক দেহে এইচডিএল
(ভালো) কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে এবং খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়।
ফলে মধু কোলেস্টেরল সংক্রান্ত রোগ থকে দেহকে মুক্ত রাখে। দিনে অন্তত এক চামচ মধু
খেয়ে নিন,যেভাবে আপনার ভালো লাগে।
৪৬। হৃৎপিণ্ডের সমস্যার ঝুঁকি হ্রাসঃ মধুর সাথে দারচিনির গুঁড়ো মিশিয়ে খেলে তা
রক্তনালীর সমস্যা দূর করে এবং রক্তের খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ ১০% পর্যন্ত
কমিয়ে দেয়। মধু ও দারচিনির এই মিশ্রণ নিয়মিত খেলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুকি কমে এবং
যারা ইতিমধ্যেই একবার হার্ট অ্যাটাক করেছেন তাদের দ্বিতীয়বার অ্যাটাকের ঝুকি কমে
যায়।
৪৭। চুল প্রাকৃতিকভাবে হাইলাইটস করতেঃ চুল
প্রাকৃতিকভাবে হাইলাইটস বা কালার করতে চুল কতটা লম্বা সে অনুযায়ী মধু নিন এবং এতে
টক দই দিন, যাতে মধুর আঠালো ভাবটা দূর হয়। এবার চুলের
যে জায়গা হাইলাইট করতে চান, সেখানে মিশ্রণটি ভালোমতো
লাগান এবং ২ ঘণ্টা রেখে চুল ধুয়ে ফেলুন। পর পর চার দিন লাগান।
৪৮। চুল বৃদ্ধিতে সহায়তাঃ ২ চামচ
মধু, ৩ চামচ অলিভ অয়েল এবং টক দই একসঙ্গে ভালোমতো মিশিয়ে চুলে লাগান। ৩০
মিনিট রেখে চুল শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। চুলের রুক্ষ ভাব দূর করে ময়েশ্চার এবং
হেয়ার ফলিকল উজ্জীবিত করে চুল বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
৪৯। চুলের ফ্রিজি ভাব দূর করতেঃ চুলের
ফ্রিজি ভাব দূর করতেও সিল্কি রাখতে শ্যাম্পু করার পর কন্ডিশনারের সঙ্গে এক চামচ
মধু মিশিয়ে চুলের নিচের অংশে ভালোভাবে লাগিয়ে কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলুন। চাইলে
কন্ডিশনারের বোতলে পরিমাণমতো মধু মিশিয়ে রেখে দিতে পারেন।
ব্যবহার পদ্ধতি : উপরের
ব্যবহারের পাশাপাশি সাধারণ একটি পদ্ধতিতে ব্যবহার করতে পারেন এই মধু। এর জন্য চুলে
প্রথমে ভালোভাবে শ্যাম্পু করে একটি বাটিতে দুই টেবিল চামচ মধু সমপরিমাণ পানির
সঙ্গে মিশিয়ে চুলে লাগাতে হবে। এটি চুলে ভালোভাবে মেশাতে হবে। তবে এটি যেনো
তালুতে কোনোভাবেই না লাগে তা লক্ষ্য রাখতে হবে। তারপর এটি ১০-১৫ মিনিট রেখে
ভালোভাবে পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। মধু ব্যবহারে চুল অনেক বেশি মসৃণ ও
উজ্জ্বল হয়। তবে এই ট্রিটমেন্টটি কোঁকড়া চুলের জন্য বেশি উপকারী, যা
চুলে ঝলমলে ভাব এনে দেয়।
৫০। যক্ষ্মা রোগ ভাল হওয়ার জন্যঃ আধাতোলা পিঁয়াজের রস, ২৫০ গ্রাম ঘি এবং
২৫০ গ্রাম মধু মিশিয়ে একটা পাত্রে রেখে দিয়ে প্রতিদিন সকাল বিকাল খেলে এবং
প্রতিরাতে শোয়ার সময় চিনি দিয়ে অল্প পরিমাণ গরম দুধ খেলে ৪/৫ দিনের মধ্যে যক্ষ্মা
ভাল হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী।
সতর্কতাঃ
মধু সব রোগের মহৌষধ হলেও একটি কথা থেকেই যায়, সেটি হলো ডায়াবেটিস রোগের ক্ষেত্রে মধু খুবই বিপজ্জনক। কারণ এটি রক্তে সরাসরি শোষিত হয় বলে সহজেই দেহের রক্ত শর্করাকে উচ্চস্তরে নিয়ে আসবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। সুতরাং ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মধু গ্রহণ নিষেধ।
মধু সব রোগের মহৌষধ হলেও একটি কথা থেকেই যায়, সেটি হলো ডায়াবেটিস রোগের ক্ষেত্রে মধু খুবই বিপজ্জনক। কারণ এটি রক্তে সরাসরি শোষিত হয় বলে সহজেই দেহের রক্ত শর্করাকে উচ্চস্তরে নিয়ে আসবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। সুতরাং ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মধু গ্রহণ নিষেধ।
1 টি মন্তব্য:
নাইচ আর্টিকেল ধন্যবাদ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন