সজিনা
পুষ্টি ও বিভিন্ন খাদ্যগুণসমৃদ্ধ সবজি। সজিনা গাছকে প্রচলিত বিভিন্ন খাদ্য
প্রজাতির মধ্যে সর্বোচ্চ পুষ্টিমানসম্পন্ন উদ্ভিদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
বহুবিধ খাদ্যগুণসম্পন্ন হওয়ায় দক্ষিণ আফ্রিকায় সজিনা গাছকে ‘জাদুর গাছ’ হিসেবেও আখ্যায়িত করা
হয়েছে।
সজিনা
৩০০ প্রকার ব্যাধির প্রতিষেধক হিসেবে ব্যাবহৃত হয়।শরীরের প্রয়োজনীয় প্রায় সব
ভিটামিনের সাথে আবশ্যকীয় প্রায় সবগুলি এমাইনো এসিড সজিনা পাতায় বিদ্যমান বলে
বিজ্ঞানীরা একে “পুষ্টির
ডিনামাইট ” হিসেবে
আখ্যায়িত করেছেন । প্রধান ঔষধি
রাসায়নিক পদার্থ হচ্ছে–বিটা
সিটোস্টেরোল,এক্যালয়েডস-মোরিনাজিন।আর ফুলে আছে জীবানুনাশক
টিরিগোজপারমিন। এর মধ্যে
আছে ভিটামিন এ, বি, সি, নিকোটিনিক এসিড, প্রোটিন ও চর্বি জাতীয়
পদার্থ, কার্বোহাইড্রেট ইত্যাদি।
সাধারণ
নাম ‘সাজনা’আর শুদ্ধ ভাষায় সজিনা। এর বৈজ্ঞানিক নাম Moringa oleifera . এর বহু রকম গুনের জন্য আমার অনেক সম্বলকৃত নাম আছে।যেমনঃ শোভাঞ্জন,
সুপত্রক, উপদংশ, তীক্ষ্মগন্ধ, সুখামোদ, দংশমূল, শিগ্রু, রুচিরঞ্জক,মধুশিঘ্রক।
ওষধি উদ্ভিদ সজিনার বৈজ্ঞানিক নাম মোরিনগা অলিফেরা (Moringa Oleifera Lam). সজিনা বা সজনে এর বাংলা নাম। সজিনা মোরিনগেসি (Moringaceae) গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। সজিনা আমাদের দেশে একটি বহুল পরিচিত গাছ। এর কাঁচা লম্বা ফল সবজি হিসেবে খাওয়া হয়।
ইংরেজরা
এতো বেরসিক যে তারা আমার নাম দিয়েছে-Horse radish ও Drumstick.
কিন্তু ভেষজ পন্ডিতরা সেই পুরাকাল থেকে যেমন-চরক, শ্রুত, বাগভাঁটা, বঙ্গসেন,
চক্রদত্ত সবাই আমার নানা রকমের গুনের উল্লেখ করেছেন।আমার মূল,
ছাল, ফল, ফুল,
বীজ সবার মধ্যেই আছে ঔষৌধি গুন।
সাধারণত
এ গাছের উচ্চতা ২৩ ফুট থেকে ৩৩ ফুট বা তারও বেশি হয়ে থাকে। সজিনা গাছের কাঠ
অত্যন্ত নরম, বাকলা আঠাযুক্ত ও কর্কি। সজিনা তিন ধরনের নীল, শ্বেত ও রক্ত সজিনা।
ড্রামস্টিক, মরিঙ্গাসহ দেশ-বিদেশে সজিনার বিভিন্ন নাম রয়েছে।
ড্রামস্টিক, মরিঙ্গাসহ দেশ-বিদেশে সজিনার বিভিন্ন নাম রয়েছে।
বাংলাদেশে
সজিনা নামেই পরিচিত। ইংরেজিতে সজিনার নাম ‘ড্রামস্ট্রিক’, যার অর্থ ঢোলের লাঠি।
নামটি অদ্ভুত হলেও এটি একটি অতিপ্রয়োজনীয় জীবনরক্ষাকারী উদ্ভিদ। বাংলাদেশে এটি
নিয়ে তেমন গবেষণা না হলেও বিশ্বের বহু দেশে এ নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে; বিশেষ করে গাছ বৃদ্ধিকারক হরমোন, ওষুধ,
কাগজ তৈরি ইত্যাদি।
আমাদের দেশে এটি সবজির পাশাপাশি ওষুধ হিসেবেও ব্যবহার হয়ে আসছে। সজিনার অ্যানিমিয়া, জয়েন্ট পেইন, ক্যান্সার, কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়াবেটিস, ডায়রিয়া, হার্ড পেইন, ব্লাডপেসারসহ বিভিন্ন রোগে উপকারী ওষধি গুণ রয়েছে। সজিনায় রয়েছে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও ভিটামিন।
সজিনার পাশাপাশি সজিনা পাতা পুষ্টি ঘাটতি পূরণে
বিশেষ ভূমিকা রাখে।
সজিনার পাতার গুঁড়োরও বিশেষ গুণাগুণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এতে দুধের চেয়েও বেশি ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম ও জিংক রয়েছে। সজিনা পাতাকে শাক হিসেবে খাওয়া হয়। এতে তাদের শ্রমজনিত ক্লান্তি, শরীরের ব্যথা ইত্যাদি দূর হয়।
সজিনার পাতার গুঁড়োরও বিশেষ গুণাগুণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এতে দুধের চেয়েও বেশি ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম ও জিংক রয়েছে। সজিনা পাতাকে শাক হিসেবে খাওয়া হয়। এতে তাদের শ্রমজনিত ক্লান্তি, শরীরের ব্যথা ইত্যাদি দূর হয়।
সজিনা ফুল শাকের মতো রান্না করে বসন্তকালে খেলে বসন্তের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ হয়। এছাড়া সর্দি, কাশিতে, শ্লোথ, প্লীহা ও যকৃতের কার্যকারিতা কমে গেলে এবং কৃমিনাশক হিসেবে সজিনা ব্যবহার করা যায়। এর পাতা অগ্রহায়ণ-মাঘ মাসে হলুদ হয়ে ঝরে পড়ে। মাঘ-ফাল্গুনে থোকা থোকা সাদা ফুল প্রায় পত্রশূন্য গাছ ছেয়ে থাকে।
সজিনা পাতা শাকের মতো রান্না করে আহারের সময় অল্প পরিমাণে খেলে বল বৃদ্ধি পায় ও ক্ষুধা বাড়ে। পাতা কেটে ফোঁড়া বা টিউমারে দিলে উপকার পাওয়া যায়। বাতের ব্যথায় তা ভালো কাজ দেয়। সজিনা বীজের তেল আমাদের দেশে তেমন পাওয়া যায় না। একে ‘বেন অয়েল’ বলে। এটি ঘড়ি মেরামতের কাজে লাগে।
কুষ্ঠ রোগে বীজের তেল অথবা বীজের তেলের অভাবে বীজ বেটে প্রলেপ দিলে উপকার হয়। সজিনা মূল ও বীজ সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়।
সজিনা,
সজিনা পাতার গুনাগুণঃ
সজনা,
সজনা পাতা ও সজনা বীজের গুনাগুণঃ
১। মুখে রুচি বাড়েঃ সজনে ডাঁটার মতো এর পাতারও
রয়েছে যথেষ্ট গুণ। সজনে পাতা শাক হিসেবে, ভর্তা করেও খাওয়া যায়।
এতে মুখের রুচি আসে।
২। শ্বাসকষ্ট কমাতেঃ সজনে পাতার রস খাওয়ালে শ্বাসকষ্ট সারে। তাছাড়া পাতাকে অনেকক্ষণ সিদ্ধ করে তা থেকে যেই ঘন রস পাওয়া যায় হিং (এক ধরনের বৃক্ষ বিশেষ) ও শুকনো আদার গুঁড়ো মিশিয়ে খাওয়ালে পেটের গ্যাস বেরিয়ে যায়।
৩। রক্ত চাপ কমাতেঃ বার্মিজ চিকিৎসকদের মতে সজনের পাকা পাতার টাটকা রস দু’বেলা খাবাবের ঠিক আগে ২-৩ চা চামচ করে খেলে উচ্চ রক্ত চাপ কমে যায়। তবে ডায়াবেটিস থাকলে তা খাওয়া নিষেধ।
৪। সজনে পাতার বেটে অল্প গরম করে ফোঁড়ার ওপর লাগালে ফোঁড়া ফেটে যায়।
৫। সজনে পাতার রস মাথায় ঘষলে খুসকি দূর হয়।
৬। সজনা পাতার রসে ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করার ক্ষমতাও রয়েছে।
২। শ্বাসকষ্ট কমাতেঃ সজনে পাতার রস খাওয়ালে শ্বাসকষ্ট সারে। তাছাড়া পাতাকে অনেকক্ষণ সিদ্ধ করে তা থেকে যেই ঘন রস পাওয়া যায় হিং (এক ধরনের বৃক্ষ বিশেষ) ও শুকনো আদার গুঁড়ো মিশিয়ে খাওয়ালে পেটের গ্যাস বেরিয়ে যায়।
৩। রক্ত চাপ কমাতেঃ বার্মিজ চিকিৎসকদের মতে সজনের পাকা পাতার টাটকা রস দু’বেলা খাবাবের ঠিক আগে ২-৩ চা চামচ করে খেলে উচ্চ রক্ত চাপ কমে যায়। তবে ডায়াবেটিস থাকলে তা খাওয়া নিষেধ।
৪। সজনে পাতার বেটে অল্প গরম করে ফোঁড়ার ওপর লাগালে ফোঁড়া ফেটে যায়।
৫। সজনে পাতার রস মাথায় ঘষলে খুসকি দূর হয়।
৬। সজনা পাতার রসে ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করার ক্ষমতাও রয়েছে।
৭। উচ্চ রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণেঃ সজনে ডাঁটা খাওয়া উচ্চ রক্ত চাপের রোগীদের জন্য বেশ উপকারী।
সজনে দেহের কোলেস্টোরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া উচ্চ রক্ত চাপের
চিকিৎসায় সজনের পাতাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সজনের পাতার (কচিনয়) রস প্রতিদিন নিয়ম করে
৪-৬ চা চামচ খেলে উচ্চ রক্ত চাপের সমস্যা অনেকাংশে কমে যায়।
৮। টিউমার বা আঘাত জনিত ফোলা উপশমেঃ টিউমার যখন একেবারে প্রাথমিক অবস্থায় থাকে তখন সজনের পাতা এই
টিউমার নিরাময় করতে পারে। প্রাথমিক অবস্থায় টিউমার ধরা পরলে তাতে সজনে পাতা বেটে
প্রলেপের মতো ব্যবহার করলে টিউমারের ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া ব্যথা বা
আঘাত পেলে দেহের কোনো অংশ ফুলে উঠলে একই উপায়ে তা নিরাময় করা সম্ভব।
৯। বাতের ব্যথা উপশমেঃ বাতের ব্যথা উপশমে সজনে গাছের ছাল বেশ কার্যকর। এই পদ্ধতি বেশ
প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে। সজনে গাছের ছাল তুলে তা বেটে রস চিপে নিয়ে এই
রস নিয়মিত প্রতিদিন ৪-৬ চা চামচ খেলে বাতের ব্যথা প্রায় ৬৫% উপশম হয়।
১০। দাঁতের মাড়ির সুরক্ষায়ঃ অনেক সময় দাঁতের মাড়ির সমসসায় ভুগে থাকেন অনেকে। দাঁতের গোড়া
থেকে রক্ত পড়া এবং মাড়ি ফুলে যাওয়া সমস্যায় ইদানীং অনেককে পড়তে দেখা যায়। এই
সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে সজনে পাতা। সজনে পাতা ১/২ মগ পানিতে ফুটিয়ে নিয়ে সেই
পানি দিয়ে ভালও করে প্রতিদিন কুলকুচা করতে হবে। এতে মাড়ির সকল সমস্যার সমাধান হয়।
১১। হেঁচকি ওঠা উপশমেঃ হেঁচকি ওঠা যে কতো কষ্টের তা যারা ভুক্তভোগী তারা ঠিকই জানেন।
একবার হেঁচকি উঠা শুরু করলে তা বন্ধ হতে চায় না সহজে। কিন্তু সজনে এই সমস্যার
সমাধান করতে পারে বেশ সহজে। সজনে পাতার রস ৯/১০ ফোঁটা আধ গ্লাস দুধের সাথে মিশিয়ে
পান করে ফেলুন এক নিঃশ্বাসে। দেখবেন হেঁচকি ওঠা দ্রুত বন্ধ হয়ে যাবে।
১২। পেটের সমস্যা সমাধানেঃ বহুকাল আগে থেকে সজনে
হজমের সহায়ক খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। পেটে গ্যাস হলে, বদহজম হলে এবং পেটে
ব্যথা হলে সজনের তৈরি তরকারীর ঝোল খেয়ে নিন। দেখবেন পেটের গোলমাল অনেক উপশম হয়ে
গিয়েছে।
১৩। শরীর ব্যাথাঃ শরীরের
কোন স্থানে ব্যথা হলে বা ফুলে গেলে সজিনার শিকড় বেটে প্রলেপ দিলে ব্যথা এবং ফোলা
সেরে যায়।
১৪। কান ব্যথাঃ শেকড়ের রস কানে দিলে কানের ব্যথা ভাল হয়ে যায়।
১৫। মাথা ব্যথাঃ সজিনার আঠা দুধের সাথে খেলে মাথা ব্যথা সেরে যায়। আঠা কপালে মালিশ করিলে মাথা ব্যথা সেরে যায়। ফোড়া হলে সাজিনার আঠা প্রলেপ দিলে সেরে যায়।
১৬। মুত্রপাথরীঃ সজিনা ফুলের রস দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে মুত্রপাথরী থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
১৭। শিশুদের পেটের গ্যাসঃ সজিনা পাতার রসের সাথে লবণ মিশিয়ে খেতে দিলে বাচ্চাদের পেটে জমা গ্যাস দূর হয়।
১৮। কুকুরে কামড়েঃ সজিনা পাতা পেষণ করে তাতে রসুন, হলুদ, লবণ ও গোল মরিচ মিশিয়ে সেবন করলে কুকুরের বিষ নষ্ট হয়।
১৯। জ্বর, সর্দিঃ পাতার শাক খেলে জ্বর ও যন্ত্রণাদায়ক সর্দি আরোগ্য হয়।
২০। গর্ভপাতকারকঃ সজিনা গর্ভপাত কারক। সজিনার ছাল গর্ভাশয়ের মুখে প্রবেশ করালে গর্ভাশয়ের মুখ প্রসারিত হয়ে যায় এবং গর্ভপাত ঘটে।
২১। সজিনা শরীরে
কোলেস্টরেলের মাত্রা ঠিক রাখে।
২২। মানুষের শরীরে চিনির
মাত্রা সমান রাখে ও ডায়াবেটিসের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে। এতে শরীরের জন্য
প্রয়োজনীয় অ্যামিনো এসিড পাওয়া যায়।
২৩। হজমে সাহায্য করে ও
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
২৪। শরীরে পুষ্টি ও শক্তি
জোগায়।
২৫। সজিনা লিভার ও কিডনি
সুরক্ষিত রাখে।
২৬। শরীরের বাড়তি ওজন কমাতে
সাহায্য করে।
২৮। ব্যাকটেরিয়াবিরোধী
সজিনার পেস্ট ত্বকের জন্য উপকারী।
২৯। পুরুষের যৌনশক্তি
বৃদ্ধি ও দীর্ঘস্থায়ী করে ।
৩০। মেয়েদের বিলুপ্ত যৌন বাসনাকে উজ্জীবিত ও
দীর্ঘায়িত করে।
৩১। কৃমিনাশক হিসেবে সজিনা
ব্যবহার করা যায়।
৩২। কুষ্ঠ রোগে বীজের তেল
অথবা বীজের তেলের অভাবে বীজ বেটে প্রলেপ দিলে উপকার হয়।
৩৩। সজিনা মূল ও বীজ সাপে
কামড়ানোর চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়।
৩৪। মূলের ছালের প্রলেপে
দাদ উপশম হয়।
1 টি মন্তব্য:
সজনে পাতার গুড়া খাওয়ার নিয়ম টা কি?
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন