পাথরকুচি ঔষধি উদ্ভিদ। দেড় থেকে দুই ফুট
উঁচু হয়। পাতা মাংসল ও মসৃণ, আকৃতি অনেকটা ডিমের মতো। চারপাশে আছে ছোট ছোট গোল খাঁজ। এই
খাঁজ থেকে নতুন চারার জন্ম হয়। অনেক সময় গাছের বয়স হলে ওই গাছের খাঁজ থেকে চারা
গজায়। পাতা মাটিতে ফেলে রাখলেই অনায়াসে চারা পাওয়া যায়। কাঁকর মাটিতে সহজেই জন্মে, তবে ভেজা, স্যাঁতসেঁতে
জায়গায় দ্রুত বাড়ে।
পাতা থেকে এ গাছ জন্ম নেয়।উদ্ভিদের ধরণঃ বহু বর্ষজীবী সবুজ পাতা বিশিষ্ট।পরিচিতি: গুল্ম
জাতীয় উদ্ভিদ। এর পাতা মাংসল এবং মসৃন। পাতা দেখতে অনেকটা ডিম্বাকৃতি। কিনারা খাঁজ
কাটা। মুল কান্ডের অগ্রভাগে গুচ্ছবদ্ধ নিম্নামুখি ফুল হয়। দেখতে ঝালর বাতির মত।
ভিতরে ফাঁপা। ফুল লম্বায় এক থেকে দেড় ইঞ্চি হয়ে থাকে। পুস্পের বাহিরের দিকে সবুজ
লাল ও সাদা দাগ থাকে। শীতকালে ফুল ও গ্রীস্মকালে ফল হয়।
স্থানীয় নামঃ পাথর কুচি
অন্য নামঃ পাথর কুচি, পাথান বেইদ, পাষাণ ভেদস্থানীয় নাম : পাথর
কুচিভেজষ
বৈজ্ঞানিক নামঃ Bryophillum বা
ব্রায়োফাইলাম
ভেজষ নামঃ Kalanchoe pinnata
(Lamk.) Pers.
ফ্যামিলিঃ Crassulaceae
অন্য একটি পাথরকুচির পাতা অনেকটা গোল,
তার বোটানিক্যাল নামঃ Berginia ligulata Wall
ফ্যামিলিঃ Saxifragaceae ।
ইউনানি সম্প্রদায় এটিকে বলে আসল
পাথরকুচি, আর কবিরাজরা পূর্বেরটিকে বলে আসল।
ব্যবহার্য অংশ : পাতা
পাথরকুচি পাতার ঔষধি গুনাগুনঃ
মেহ, সর্দি, মুত্র রোধে, রক্তপিত্তে, পেট ফাঁপায়, শিশুদের পেট ব্যথায়, মৃগীরোগে পাথরকুচির ঔষধী গুনাগুন রয়েছে।
১। মেহঃ সর্দি জনিত কারনে শরীরের নানান স্থানে ফোঁড়া দেখা দেয়।
সেইকারনে ব্যথা হয়। যাকে মেহ বলা হয়। এ ক্ষেত্রে পাথরকুচির পাতার রস এক চামুচ করে
সকাল বিকাল একসপ্তাহ খেলে উপকার পাওয়া যায়।
২। সর্দিতেঃ যে সর্দি পুরান হয়ে গেছে সেই ক্ষেত্রে এটি বিশেষ
উপযোগী। এই কফ বিকারে পাথরকুচি পাতা রস করে সেটাকে একটু গরম করতে হবে এবং গরম
অবস্থায় তার সাথে একটু সোহাগার খৈ মেশাতে হবে। ৩ চা চামচের সাথে ২৫০ মিলিগ্রাম যেন
হয়। তা থেকে ২ চা চামচ নিয়ে সকালে ও বিকালে ২ বার খেতে হবে। এর দ্বারা পুরান সর্দি
সেরে যাবে এবং সর্বদা কাসি থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।
৩। কাটা বা থেতলে গেলেঃ টাটকা পাতা পরিমান মত হালকা তাপে পাতা গরম করে
কাটা বা থেতলে যাওয়া স্থানে সেক দিলে আরাম পাওয়া যায়।
৪। রক্তপিত্তেঃ পিত্ত জনিত ব্যথায় রক্ত ক্ষরণ হলে দু’বেলা এক চা চামচ পাথর কুচির পাতার রস
দুইদিন খাওয়ালে সেরে যাবে।
৫। পেট ফাঁপায়ঃ প্রত্যক্ষতঃ দেখা যায় পেটটা ফুলে গেছে, প্রস্রাব
আটকে যাছে, আধোবায়ু, সরছেনা,
সেই ক্ষেত্রে একটু চিনির সাথে এক বা দুই চা চামচ পাথর কুচির
পাতার রস গরম করে সিকি কাপ পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। এর দ্বারা মুত্র সরল
হবে, আধো বায়ুরও নিঃসরণ হবে, ফাঁপাটাও
কমে যাবে।
৬। শিশুদের পেট ব্যথায়ঃ শিশুর পেটব্যথা হলে, ৩০-৬০
ফোঁটা পাথর কুচির পাতার রস পেটে মালিশ করলে ব্যথার ঊপশম হয়।তবে পেট ব্যথা নিশ্চিত
হতে হবে।
৭। মৃগী রোগেঃ রোগাক্রান্ত সময়ে পাথর কুচির পাতার রস ২-১০
ফোঁটা করে মুখে দিতে হবে। একটু পেটে গেলেই রোগের ঊপশম হবে।
৮। শরীর জালাপোড়ায়ঃ দু
চামচ পাথর কুচি পাতার রস আধা কাপ গরম পানিতে মিশিয়ে দুবেলা
সবনে শরীরের জালাপোড়া দুর হয়।
৯। কিডনির পাথর অপসারণে পাথরকুচি পাতাঃ পাথরকুচি পাতা কিডনি এবং গলব্লাডারের পাথর অপসারণ করতে
সাহায্য করে। দিনে দুই বার ২ থেকে ৩ টি পাতা চিবিয়ে অথবা রস করে খান।
১০। জন্ডিস নিরাময়েঃ লিভারের যেকোনো
সমস্যা থেকে রক্ষা করতে তাজা পাথরকুচি পাতা ও এর জুস অনেক উপকারী।
১১। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এবং মুত্রথলির সমস্যা থেকে পাথরকুচি
পাতা মুক্তি দেয়।
১২। পাথরকুচি পাতার রসের সাথে গোল মরিচ মিশিয়ে পান করলে পাইলস্ ও
অর্শ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
১৩। কলেরা, ডাইরিয়া
বা রক্ত আমাশয় রোগ সারাতে পাথরকুচি পাতার জুড়ি নেই। ৩ মি.লি. পাথরকুচি পাতার জুসের
সাথে ৩ গ্রাম জিরা এবং ৬ গ্রাম ঘি মিশিয়ে কয়েক দিন পর্যন্ত খেলে এসব রোগ থেকে
উপকার পাওয়া যায়।
১৪।
ত্বকের যত্নেঃ পাথরকুচি পাতায় প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে যা
ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। সাথে সাথেই এর মধ্যে জ্বালা-পোড়া কমানোর ক্ষমতা থাকে।
যারা ত্বক সম্বন্ধে অনেক সচেতন তারা পাথরকুচি পাতা বেটে ত্বকে লাগাতে পারেন। ব্রণ
ও ফুস্কুড়ি জাতীয় সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন