তেঁতুল এর বোটানিকাল নাম, তামারিন্দুস ইন্ডিকা (Tamarindus indica)। দক্ষিণ এশিয়ার সবচাইতে মূল্যবান খাবারের মধ্যে তেতুল অন্যতম। তেতুলের সুরেলা নামটি "তামর-ই-হিন্দ" ফার্সি ভাষা থেকে এসেছে যার অর্থ "ভারতের খেজুর"। এটি সারাবিশ্বের কাছে রস আস্বাদনের একটি ফল হিসেবে পরিচিত। আফ্রিকার স্থানীয়রাক বলেন, এই বহিরাগত ফল অতি লম্বা একধরণের গাছে জন্মায় যা এশিয়া, মেক্সিকো, ভারত এবং বাংলাদেশের শুষ্ক অঞ্চলে জন্মায়।
তেঁতুল দেখতে শিমের মতো, হলেও এটি কোনো সবজি নয়, এটি টক জাতীয় একটি ফল। তেঁতুল বিচিযুক্ত কোষ আকারে হয়। কাঁচা অবস্থায় এটি সবুজ, পাকা অবস্থায় গাঢ় বাদামি। এটি পাল্পযুক্ত ও বাইরে শক্ত আবরণ দ্বারা আবৃত। এর রসালো পাল্প থেকেই সবকিছু তৈরি করা হয়, তবে এর বিচিও বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
তেঁতুলের নাম শুনলেই জিভে জল আসে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া
যাবে না। টক তেঁতুল মুখে দিলে আমাদের যে ভিন্ন এক অনুভূতি হয় তা নিশ্চয়ই বলতে
হবে না। আমাদের অনেকেরই ধারণা তেঁতুল খেলে রক্ত পানি হয়ে যায়। কিন্তু বাস্তবতা
হচ্ছে তেঁতুল কোনোভাবেই আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়। বরং হৃদরোগসহ বিভিন্ন
রোগে খুব উপকারী। তেঁতুল বসন্ত-কালের ফল হলেও বছরের সব সময়ই পাওয়া যায়।
অনেকেই মনে করে তেঁতুল মস্তিষ্কের ক্ষতি করে। কিন্তু আসলে এই
ধারনাটি সঠিক নয়। তেঁতুল মস্তিষ্কের জন্য উপকারি। তেঁতুলের এসকর্বিক এসিড খাবার
থেকে আয়রন আহরণ, সংরক্ষণ এবং তা বিভিন্ন কোষে পরিবহন করে। যা
মস্তিষ্কের জন্য খুব প্রয়োজন। মস্তিষ্কে আয়রনের পর্যাপ্ত সরবরাহ চিন্তা ভাবনার
গতি বৃদ্ধি করে।
ব্যবহারঃ
১। খাদ্যদ্রব্য, জ্যাম, সিরাপ, চাটনি, সস, বিভিন্ন কনফেশনারি।
২। ওষুধ হিসেবে।
৩। ধাতু পরিষ্কারক হিসেবে।
১। খাদ্যদ্রব্য, জ্যাম, সিরাপ, চাটনি, সস, বিভিন্ন কনফেশনারি।
২। ওষুধ হিসেবে।
৩। ধাতু পরিষ্কারক হিসেবে।
তেঁতুলগাছের পাতা, ছাল, ফলের শাঁস (কাঁচা ও পাকা), পাকা ফলের খোসা,
বীজের খোসা সব কিছুই উপকরী। এর কচিপাতায় রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে
এমাইনো এসিড। পাতার রসের শরবত সর্দি-কাশি, পাইলস ও
প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ায় বেশ কাজ দেয়। পুরোনো তেঁতুলের কার্যকারিতা বেশি।
প্রতি ১০০
গ্রাম পাকা তেঁতুলের পুষ্টিমানঃ
পুষ্টি উপাদান
|
পাকা তেঁতুল
|
কাঁচা তেঁতুল
|
বিলাতি তেঁতুল
|
জলীয় অংশ (গ্রাম)
|
২০.৯
|
৮৩.৬
|
৭৯.২
|
মোট খনিজ পদার্থ (গ্রাম)
|
২.৯
|
১.২
|
০.৭
|
আঁশ (গ্রাম)
|
৫.৬
|
–
|
১.০
|
খাদ্যশক্তি
(কিলোক্যালরি)
|
২৮৩
|
৬২
|
৭৮
|
আমিষ (গ্রাম)
|
৩.১
|
১.১
|
২.৭
|
চর্বি (গ্রাম)
|
০.১
|
০.২
|
.০৪
|
শর্করা (গ্রাম)
|
৬৬.৪
|
১৩.৯
|
১৬
|
ক্যালসিয়াম (মিলিগ্রাম)
|
১৭০
|
২৪
|
১৪
|
আয়রন (মিলিগ্রাম)
|
১০.৯
|
–
|
১.০
|
ক্যারোটিন
(মাইক্রোগ্রাম)
|
৬০
|
–
|
–
|
ভিটামিন বি১ (মিলিগ্রাম)
|
–
|
০.০১
|
.০২২
|
ভিটামিন বি ২
(মিলিগ্রাম)
|
০.০৭
|
০.০২
|
.০০৩
|
ভিটামিন সি (মিলিগ্রাম)
|
৩
|
৬
|
১০৮
|
ফসফরাস
|
১১৩ মিলিগ্রাম
|
-
|
-
|
পটাশিয়াম
|
৬২৮ মিলিগ্রাম
|
-
|
-
|
ভিটামিন ‘ই’
|
০.১ মিলিগ্রাম
|
-
|
-
|
বিটা ক্যারোটিন
|
৬০ মাইক্রোগ্রাম
|
-
|
-
|
সেলেনিয়াম
|
১.৩ মিলিগ্রাম
|
-
|
-
|
সোডিয়াম
|
২৮ মিলিগ্রাম
|
-
|
-
|
দস্তা
|
০.১২ মিলিগ্রাম
|
-
|
-
|
ম্যাগনেসিয়াম
|
৯২ মিলিগ্রাম
|
-
|
-
|
তামা
|
০.৮৬ মিলিগ্রাম
|
-
|
-
|
তেঁতুলের উপকারিতাঃ
তেঁতুলগাছের পাতা, ছাল, ফলের শাঁস (কাঁচা ও পাকা), পাকা ফলের খোসা, বীজের খোসা সবকিছুই ব্যবহার হয়ে থাকে।
তেঁতুলগাছের পাতা, ছাল, ফলের শাঁস (কাঁচা ও পাকা), পাকা ফলের খোসা, বীজের খোসা সবকিছুই ব্যবহার হয়ে থাকে।
১। এটি পরিপাকবর্ধন ও রুচিকারক। তেঁতুলের কচিপাতার মধ্যে রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে এমাইনো এসিড।
২। পাতার রসের শরবত সর্দি-কাশি, পাইলস ও প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ায় বেশ কাজ দেয়।
৩। তেঁতুল মেদ বা চর্বি কমানোয় বেশ বড় ভূমিকা রাখে। তবে তা দেহের কোষে নয়, রক্তে। এতে কোলস্টেরল ও ট্রাইগ্রাইসেরাইডের মাত্রা এবং রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
৪। দেখা যায়, পুরোনো তেঁতুলের কার্যকারিতা বেশি। যদি পেট ফাঁপার সমস্যা থাকে এবং বদহজম হয়, তাহলে পুরোনো তেঁতুল এক কাপ পানিতে ভিজিয়ে সামান্য লবণ, চিনি বা গুড় দিয়ে খেলে অসুবিধা দূর হয়। আবার হাত-পা জ্বালা করলেও এই শরবতে উপকার পাওয়া যায়।
৫। তেতুলের বীজও বিভিন্ন শিল্পে কাজে লাগে।
৬। পাকা ফলের শাঁস শুকিয়ে সংরক্ষণ করা হয়।
৬। তেঁতুলের পাতা বেটে মরিচ ও সামান্য লবণ দিয়ে বড়া তৈরি করে পান্তাভাতের সঙ্গে খেলে শরীরে এমাইনো এসিড পাওয়া যায়।
৭। তেঁতুলের সঙ্গে রসুনবাটা মেশানো যায়, তাহলে রক্তের চর্বি কমানোর কাজে ভালো ফল দেয়।
৮। তেঁতুল এমনই এক ভেষজ, যার সব অংশই কাজে লাগে।
৯। তেঁতুল রক্তের কোলেস্টেরল কমায়। দেহে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং হৃদরোগীদের জন্য খুব উপকারী।
১০। পেটে গ্যাস, হজম সমস্যা, হাত-পা জ্বালায় তেঁতুলের শরবত খুব উপকারী। এটি খিদে বাড়ায়।
১১। গর্ভাবস্থায় বমি বমি বমি ভাব দূর করে।
১২। মুখের লালা তৈরি হয়।
১৩। তেঁতুল রক্ত পরিস্কার করে
১৪। বাত বা জয়েন্টগুলোতে ব্যথা কমায়।
১৫। ভিটামিন সি-এর বড় উৎস।
১৬। পুরনো তেঁতুল খেলে কাশি সারে।
১৭। পাকা তেঁতুলে খনিজ পদার্থ অন্য যে কোনো ফলের চেয়ে অনেক বেশি।
১৮। খাদ্যশক্তিও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে।
১৯। ক্যালসিয়ামের পরিমাণ সব ফলের চেয়ে ৫ থেকে ১৭ গুণ
বেশি।
২০। আর আয়রনের পরিমাণ নারকেল ছাড়া সব ফলের চেয়ে ৫ থেকে ২০ গুণ বেশি।
২১। তেঁতুল পাতার ভেষজ চা ম্যালেরিয়া জ্বর কমানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।
২২। মুখে ঘাঁ ও ত্বকের প্রদাহ সারাতে সাহায্য করে।
২৩। পাইলস্ চিকিত্সার জন্য ব্যবহার করা হয়।
২৪। তেঁতুল ক্যান্সারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সাহায্য করে।
২৫। শিশুদের পেটের কৃমিনাশক।
২৬। অনেকেরই ভ্রান্ত ধারণা আছে তেঁতুল খেলে সেক্স কমে যায়, কিন্তু নিয়মিত তেঁতুল খেলে শরীর থেকে অতিরিক্ত ফ্যাট বের হয়ে সেক্স আরো বাড়িয়ে দেয়। পাকা তেঁতুল কফ ও বায়ুনাশক, খিদে বাড়ায় ও উষ্ণবীর্য হয়।
২০। আর আয়রনের পরিমাণ নারকেল ছাড়া সব ফলের চেয়ে ৫ থেকে ২০ গুণ বেশি।
২১। তেঁতুল পাতার ভেষজ চা ম্যালেরিয়া জ্বর কমানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।
২২। মুখে ঘাঁ ও ত্বকের প্রদাহ সারাতে সাহায্য করে।
২৩। পাইলস্ চিকিত্সার জন্য ব্যবহার করা হয়।
২৪। তেঁতুল ক্যান্সারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সাহায্য করে।
২৫। শিশুদের পেটের কৃমিনাশক।
২৬। অনেকেরই ভ্রান্ত ধারণা আছে তেঁতুল খেলে সেক্স কমে যায়, কিন্তু নিয়মিত তেঁতুল খেলে শরীর থেকে অতিরিক্ত ফ্যাট বের হয়ে সেক্স আরো বাড়িয়ে দেয়। পাকা তেঁতুল কফ ও বায়ুনাশক, খিদে বাড়ায় ও উষ্ণবীর্য হয়।
২৭।
তেঁতুল খাওয়ার পরে যদি পাতলা পায়খানা হয় তাহলে বোঝা যাবে তেঁতুল শরীরে ভাল কাজ
করছে। অবশ্য একবারের বেশি পাতলা পায়খানা হবে না। পাতলা পায়খানার সাথে ফ্যাট গলে
বের হয়ে যায়। পাতলা পাযখানা না হলেও উপকার হবে।
২৮। যদি
কেউ প্রতিদিন নিয়মিত এক ঘন্টা দ্রুত হাটে ও কমপক্ষে ২৫ গ্রাম করে তেঁতুল খায়, তাহলে
তার হাটে ব্লক হতে পারবে না। তেঁতুল ভরাপেটে খাওয়াই ভাল।
২৯। তেঁতুল শরীরের ত্বকের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে ও ত্বক ভাল রাখে।
২৯। তেঁতুল শরীরের ত্বকের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে ও ত্বক ভাল রাখে।
৩০।
তেঁতুল শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়।
৩১। তেঁতুল হার্ট ভাল রাখে।
৩১। তেঁতুল হার্ট ভাল রাখে।
৩২। তেঁতুল ডায়াবেটিস কমায়।
৩৩। তেঁতুল জন্ডিস রোগে উপকারী।
৩৩। তেঁতুল জন্ডিস রোগে উপকারী।
তেঁতুল
নিয়ে আমাদের মাঝে অনেক ভ্রান্ত ধারণা আছে, অনেকে আবার মনে করেন তেতুল খেলে শরীরের
রক্ত জল হয়ে যায় বুদ্ধি কমে যায় ইত্যাদি। কিন্তু তা আসলে ঠিক না। তেতুলে রয়েছে
প্রচুরপরিমানে ভেষজ গুণাবলী ও পুশটিগুন। তাই আপনিও যে কোনো সময় তেতুল খেতে পারেন
আপনার ইচ্ছে মতো।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন