মঙ্গলবার, ১২ জানুয়ারী, ২০১৬

সফেদার পুষ্টিমান ও উপকারিতা




সফেদা (Sapota) একটি পুষ্টি মান সমৃদ্ধ অত্যান্ত মিষ্টি, সুস্বাদু ও সুন্দর গন্ধযুক্ত একটি ফল। এটিকে প্রাকৃতিক পুষ্টির দোকান ঘর বলা হয়। এটি খাদ্যশক্তি কিলোক্যালরি শর্করা, আমিষ, ভিটামিন, ফলেট, ক্যালসিয়াম, আয়রন মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়া, ফসফরা, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ও জিংক এর একটি সমৃধ্য উৎস। এছাড়াও এতে রয়েছে, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমূহের, ভিটামিন এ, সি এবং ই, তামা, লোহা, ইত্যাদি।


সফেদার ইংরেজি নাম Sapota ও বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে Achras sapota. সফেদা হচ্ছে একটি সুস্বাদু ও মিষ্টি ফল। কম বেশি প্রায় সারাবছরই ফল ধরে।
জাতঃ     
১. বাংলাদেশে চাষের জন্য ১৯৯৬ সালে বারি সফেদা-১ নামে একটি উচ্চফলশীল জাত অনুমোদন করা হয়। সফেদা বহু বর্ষজীবী বৃক্ষ জাতীয় গাছ। এ জাতটিতে নিয়মিত ফল ধরে।    
২. ফল দেখতে গোলাকার চেপ্টা এবং আকারে বেশ বড়।  
৩. প্রতিটি ফলের ওজন ৮০-৯০ গ্রাম।    
৪. ফলের প্রায় ৯০-৯৫ ভাগই খাওয়ার উপযোগী।  
৫. ফলের রঙ কালচে তামাটে, ডিম্বাকৃতি তবে অঙ্কুরোদগমের দিকের মাথাটি কিছুটা সরু।   

সফেদার পুষ্টিমানঃ
সফেদার প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্যযোগ্য অংশে রয়েছেঃ  
উপাদান
পরিমান
খাদ্য শক্তি
৮৩ কিলো ক্যালোরি
শর্করা
১৯.৯৬ গ্রাম
আমিষ
০.৪৪ গ্রাম
ভিটামিন বি২
০.০২ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি৩
০.২০ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি৫
০.২৫২ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি৬
০.০৩৭ মিলিগ্রাম
ফলেট
১৪ আই ইউ
ভিটামিন সি
১৪.৭ মিলিগ্রাম
ক্যালসিয়াম
২১  মিলিগ্রাম
আয়রন
০.৮ মিলিগ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম
১২ মিলিগ্রাম
ফসফরাস
১২ মিলিগ্রাম
পটাশিয়াম
১৯৩ মিলিগ্রাম
সোডিয়াম
১২ মিলিগ্রাম
জিংক
০.১ মিলিগ্রাম



সফেদার স্বাস্থ্য উপকারিতাঃ
সফেদায় আছে ফাইবার, পলিফেনলিক যৌগ ও ভিটামিন সি যা আমদের দেহকে নীরোগ রাখতে সহায়তা করে। আসুন দেখে নেয়া যাক অনেক গুণ সম্পন্ন সফেদার কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা।

১।  সফেদায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, আয়রন ও ফসফরাস যা হাড়ের গঠন মজবুত করে।
২।  সফেদা কনজেশন এবং কাশি থেকে উপশম করতে সাহায্য করে।
৩।  সফেদা অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান। প্রদাহজনক সমস্যা সমাধানে সমাধান করে। অর্থাৎ গ্যাসট্রিটিস ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
৪।  সফেদায় বিদ্যমান ভিটামিন এ চোখের সুরক্ষায় কাজ করে। রাতকানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমায়।
৫।  সফেদা ওজন কমাতে সাহায্য করে। সফেদা নিয়মিত খেলে স্থুলতা জনিত সমস্যার সমাধান হয়।
৬।  সফেদায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে গ্লুকোজ যা আমাদের শক্তি প্রদান করে।
৭।  শুধুমাত্র সফেদা ফল নয়। সফেদা গাছের পাতারও ঔষধি গুণ রয়েছে। সফেদা গাছের পাতা ছেঁচে সদ্য ক্ষত হওয়া স্থানে দিলে দ্রুত রক্তপাত বন্ধ হয়।
৮।  সফেদা ডায়রিয়া বিরোধী উপাদান হিসেবে কাজ করে ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার হাত থেকে দেহকে রক্ষা করে।
৯।  সফেদা ফলের স্নায়ু শান্ত এবং মানসিক চাপ উপশম করার ক্ষমতা রয়েছে। ডাক্তাররা অনেকেই অনিদ্রা , উদ্বেগ এবং বিষণ্নতা রোগে ভুগছেন এমন ব্যক্তিকে সফেদা ফল খেতে বলেন। এতে অনিদ্রা , উদ্বেগ এবং বিষণ্নতা রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
১০। সফেদা একটি ফাইবার সমৃদ্ধ ফল, তাই একে প্রাকৃতিক জোলাপ হিসেবে ব্যাবহার করা যায়।
এতে পর্যাপ্ত খাদ্য আঁশ রয়েছে যা হজম বদহজম এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। আধাপাকা সফেদা জলে ফুটিয়ে কষ বের করে খেলে ডায়রিয়া ভালো হয়।
১১। এতে প্রদাহ বিরোধী উপাদান রয়েছে যা ক্ষয়কারক গ্যাস্ট্রিক, আন্ত্রিক প্রদাহ, পেট জ্বলা, ইত্যাদি রোগের সমাধান করে।
১২।  সফেদা খেলে মানসিক চাপ ও উদ্বেগ দূর হয়। এছাড়াও সফেদায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং সি রয়েছে। নিয়মিত সফেদা খেলে মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যায় ও দাঁত ভালো থাকে।
১৩।  শরীরের কোষের ক্ষতিসাধন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। নিয়মিত সফেদা খেলে ঘন ঘন ঠাণ্ডা লাগার সমস্যা কমে যায়। শ্বাসকষ্ট দূর করতে সাহায্য করে এবং ফুসফুস ভালো রাখে।
১৪।  ত্বকে বয়সের ছাপ দূর করতে সফেদা সহায়দা করে। সফেদায় প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ আছে। এটি চোখ, ত্বক ও হাড়ের জন্য খুব ভালো।
১৫।  শরীরের ওজন কমাতে চাইলে নিয়মিত সফেদা খেতে পারেন। সফেদায় চর্বি থাকে না। তাই বেশি খেলেও শরীরে মেদ বাড়ার আশঙ্কা থাকে না।



১৬।  সফেদার পুষ্টি এবং কার্বোহাইড্রেট থেকে কর্মজীবী মায়ের জন্য অনেক উপকারী। এটা গর্ভাবস্থায় বমি বমি ভাব এবং মাথা ঘোরা দূর করতে সাহায্য করে।
১৭।  সফেদায় থাকা ডায়াটরি ফাইবার, পলিফেনলিক যৌগ ও ভিটামিন আমাদের শরীরকে রোগমুক্ত রাখতে সহায়তা করে।নিয়মিত সফেদা খেলে শারীরবৃত্তীয় কাজের গতি ত্বরান্বিত হয়।
১৮।  হঠাৎ করে সর্দি, কাশি হলে ওষুধের বিকল্প হিসেবে সফেদা খেতে পারবেন।
১৯।  সফেদায় আছে প্রচুর পরিমাণ গ্লুকোজ। এই গ্লুকোজ শক্তি দেয়। কাজেও আসে গতি।
২০।  সফেদা ফলের স্নায়ু শান্ত করার অসাধারণ এক ক্ষমতা আছে। তাই খেতে পারেন।
২১।  সফেদা একদিকে ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষা করে কোষের ক্ষয় পূরণ করে, অন্যদিকে নতুন কোষ তৈরিতে অংশ নেয়। ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তেও বাধা দেয়।
২২।  সফেদা বীজের চুর্ণ খেলে কিডনির রোগ ভালো হয় এবং এটা মুত্রাশয়ের পাথর অপসারণ করতে  সাহায্য করে।
২৩।  নিয়মিত সফেদা খেলে মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যায় ও দাঁত ভালো থাকে।

সফেদা ফলের মধ্যে আছে অনেক ভিটামিন, খনিজ পদার্থ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমূহ যা আমাদের একটি সুস্থ এবং উজ্জ্বল ত্বক পেতে অনেক সাহায্য করে। জেনে নিন সফেদার কিছু সৌন্দর্য উপকারিতা।

২৪।  সফেদায় রয়েছে ভিটামিন এ ও সি যা ত্বকে সুন্দর ও উজ্জ্বল করতে সহায়তা করে।সফেদা ফলে আরও রয়েছে ভিটামিন ই যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় ও ত্বককে কোমল করে তোলে।
২৫।  সফেদা চামড়ায় ছত্রাকের আক্রমণ রোধে বিশেষ উপযোগী। এছাড়াও ত্বকে ভাইরাস জনিত গোটা উঠা রোগেরও সমাধান সফেদা ফল।
২৬।  সফেদা ফলের বীজের ঔষুধি গুণাগুণ অনেক বেশি। চামড়ার যে কোন ধরণের ইনফেকশন দূর করতে সফেদা বীজের তেল বেশ কার্যকর। সফেদা ফল ত্বকের অয়েন্টমেন্ট হিসেবে কাজ করে।

সফেদা একদিকে ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষা করে কোষের ক্ষয় পূরণ করে, অন্যদিকে নতুন কোষ তৈরিতে অংশ নেয়। তারুণ্য ধরে রাখতে সহায়তা করে।







কোন মন্তব্য নেই: