বেদানা, আনার বা ডালিম এক রকমের ফল । এর ইংরেজি নাম pomegranate। হিন্দি, উর্দু, ফার্সি ও পশতু ভাষায় একে আনার বলা হয়। কুর্দি ভাষায় 'হিনার' এবং আজারবাইজানি ভাষায়
একে 'নার' বলা হয়। সংস্কৃত এবং
নেপালি ভাষায় বলা হয় 'দারিম'।
বেদানা গাছ গুল্ম জাতীয়, ৫-৮ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়।
পাকা ফল দেখতে লাল রঙের হয় । ফলের খোসার ভিতরে স্ফটিকের মত লাল রঙের দানা দানা
থাকে । সেগুলি খাওয়া হয় । এর আদি নিবাস ইরান এবং ইরাক। ককেশাস অঞ্চলে এর চাষ
প্রাচীনকাল থেকেই হয়ে আসছে। সেখান থেকে তা ভারত উপমহাদেশে বিস্তার লাভ করেছে।
বর্তমানে
এটি তুরস্ক, ইরান, সিরিয়া, স্পেন,
আজারবাইজান, আর্মেনিয়া, আফগানিস্তান, ভারত, পাকিস্তান,
বাংলাদেশ, ইরাক, লেবানন, মিশর, চীন,
বার্মা, সৌদি আরব, ইসরাইল, জর্ডান, ফিলিপাইন,
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শুস্ক অঞ্চল, ভূমধ্যসাগরীয়
অঞ্চল, দক্ষিণ ইউরোপ এবং ক্রান্তীয় আফ্রিকায় ব্যাপকভাবে
চাষ করা হয়। স্পেনীয়রা ১৭৬৯ সালে ল্যাটিন আমেরিকা এবং ক্যালিফোর্নিয়াতে বেদানা
নিয়ে যায়। ফলে বর্তমানে ক্যালিফোর্নিয়া ও এরিজোনায় এর চাষ হচ্ছে। উত্তর
গোলার্ধে এটি সেপ্টেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মৌসুমে জন্মে। দক্ষিণ
গোলার্ধে মার্চ থেকে মে পর্যন্ত এটি জন্মে।
ডালিম
উষ্ণ ও অবউষ্ণ এবং আর্দ্র অঞ্চলের ফল। বিশ্বের অনেক দেশে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হলেও
বাংলাদেশে এই ফলের চাষ তেমন লক্ষ কারা যায় না। তবে অনেক বাড়িতে ফল ও শোভাবর্ধনের
জন্য এ গাছ লাগানো হয়। ইরানে ডালিমের জন্মস্থান হলেও দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশে এর
চাষ হয়ে থাকে। এ গাছের উচ্চতা ৩-৫ মিটার, পাতা চিকন, ফুল লাল
বর্ণের এবং গাছ খুব সুন্দর বর্ণের হওয়ায় বাংলাদেশে এর শোভাবর্ধন হিসেবে বাড়ির
আঙ্গিনায়, আনাচেকানাচে, প্রবেশ
পথে, ছাদে লাগানো হয়।
বাংলাদেশে ডালিমের জাত প্রকরণ নিয়ে কোন কাজ হয়নি, তাই এর কোন উন্নত জাত এ দেশে নেই। পৃথিবীর উন্নত জাতের মধ্যে রুবি, পেপার সেল, ওয়ান্ডারফুল, মাসকেট রেড প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। ফুল ভেদে ডালিমকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। এক প্রকার গাছে শুধুমাত্র পুং ফুল ফোটে অন্যটিতে পুং এবং স্ত্রী দু’প্রকার ফুলই ফোটে।
ডালিম ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ এবং পাকলে হলুদ এবং লাল হয়। ফলের ভিতরে বীজের কোষ হয় এবং কোষের উপর পাতলা আবরণ থাকে। পাকা ফলে বীজ গোলাপী ও সাদা হয়। সাধারণত মে মাসে ফুল ও আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে ফল পাকে। তিন প্রকার স্বাদের ডালিম দেখা যায় যথা, মিষ্টি, টক মিষ্টি এবং অম্লরস। দেশ ভেদে ডালিমের আকৃতি ও স্বাদের পার্থক্য দেখা যায়। ডালিমের সবচেয়ে ভালো প্রজাতির নাম— স্পেনিশ রুবি। এ ছাড়া অন্যান্য ভালো প্রজাতিগুলো হলো— ঢোল্কা, ভাদকি ও জিবিজিআই, পেপার শেল, মাসকেড রেড, বেদানা ও কান্ধারী। ডালিম ফলের মোট ওজনের বৃহত্তর অংশই খোসা ও বীজ।
ডালিম গাছ বেশ সহনশীল বলে অনুর্বর মাটিতেও এটি সহজেই জন্মায়। নিয়মিত পরিচর্যা নিলে ডালিম গাছ থেকে সারা বছর ফল পাওয়া যায়। বাংলাদেশে ডালিমের চাহিদা ও বাজার মূল্যও বেশ ভালো। আয়ের দিক থেকে বিবেচনা করলে অন্য যেকোন ফলের তুলনায় ডালিমের চাষাবাদ কোন অংশেই কম নয়। কেননা, ডালিমের মূল্য বেশি হওয়ায় মধ্যম আকৃতির একটি ডালিম গাছ থেকে বছরে ৩০০০-৪০০০ টাকা পর্যন্ত আয় করা যেতে পারে। তাই বাংলাদেশে ডালিমের চাষাবাদ বেশ লাভজনক ও সম্ভাবনাময়।
পুষ্টিমান
ও ব্যবহারঃ ডালিমের
পুষ্টিমান, ওষুধি গুণ ও বহুবিদ ব্যবহার অনেক ধর্মীয় বই থেকে অনেক স্থানে লেখা আছে।
প্রতি ১০০ গ্রাম ডালিমে ৭৮ ভাগ পানি, ১.৫ ভাগ আমিষ,
০.১ ভাগ স্নেহ, ৫.১ ভাগ আঁশ, ১৪.৫ ভাগ শর্করা, ০.৭ ভাগ খনিজ, ১০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১২ মিলিগ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম, ১৪ মিলিগ্রাম অক্সালিক এসিড, ৭০ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ০.৩ মিলিগ্রাম
রাইবোফ্লাভিন, ০.৩ মিলিগ্রাম নায়াসিন, ১৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি ইত্যাদি থাকে। আয়ুর্বেদ চিকিৎসা বিজ্ঞানে এর
ব্যবহার সর্বজনস্বীকৃত।
ভিন্নমতে
এর পুষ্টিমানঃ
ডালিমের ভক্ষণযোগ্য
অংশের পুষ্টির পরিমাণ (প্রতি ১০০ গ্রামে)
|
৭৮ ভাগ জলীয় অংশ
১৪.৬ ভাগ শর্করা ১.৬ ভাগ আমিষ ০.১ ভাগ স্নেহ ৫.১ ভাগ আঁশ ৬৫ কিলোক্যালরি তাপশক্তি ০.০৬ মিলিগ্রাম থায়ামিন ০.১ মিলিগ্রাম রাইবোফ্লেভিন ০.৩ মিলিগ্রাম নায়াসিন ১৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি ১০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম ০.৭ মিলিগ্রাম ফসফরাস ০.৩ মিলিগ্রাম লৌহ । |
ঔষধিগুণঃ ডালিম
ফল আয়ুর্বেদিক ও ইউনানী চিকিৎসায় পৈথ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ডালিমে বিউটেলিক এসিড, আরসোলিক
এসিড এবং কিছু আ্যলকালীয় দ্রব্য যেমন- সিডোপেরেটাইরিন, পেপরেটাইরিন,
আইসোপেরেটাইরিন, মিথাইলপেরেটাইরিন
প্রভৃতি মূল উপাদান থাকায় ইহা বিভিন্ন রোগ উপশমে ব্যবহৃত হয়। কবিরাজী মতে ডালিম
হচ্ছে হৃদয়ের শ্রেষ্ঠতম হিতকর ফল। এ ফল কোষ্ঠ রোগীদের জন্য উপকারী বলে মনে করা হয়।
গাছের শিকড়, ছাল ও ফলের খোসা দিয়ে আমাশয় ও উদরাময় রোগের
ওষুধ তৈরি হয়। ইহা ত্রিদোষ বিকারের উপশামক, শুক্রবর্ধক,
দাহ-জ্বর পিপাসানাশক, মেধা ও বলকারক,
অরুচিনাশক ও তৃপ্তিদায়ক। ডালিমের ফুল রক্তস্রাবনাশক।
১. রক্তপাত বন্ধ করতে ডালিম ফুল অত্যন্ত কার্যকরী। হঠাৎ দুর্ঘটনায় শরীরের
কোনো অংশ ছিঁড়ে গেলে, থেঁতলে
গেলে বা কেঁটে রক্তপাত হলে ডালিম ফুল কচলিয়ে ক্ষতস্থানে লাগিয়ে চেপে ধরলে রক্তপাত
বন্ধ হয়ে যায়। ফুল না পেলে পাতাও ভালো কাজ করে।
২. হঠাৎ নাক দিয়ে রক্ত পড়া রোগের মহৌষধ ডালিম ফুলের রস।
নাক দিয়ে রক্ত পড়া বা রক্তঝরা একটি সাধারণ রোগ। বহু মানুষের এরকম হয়। অনেকের বিনা
কারণে নাক দিয়ে রক্ত যায়। শিশুদের মাঝেও এটা লক্ষ্য করা যায়। হঠাৎ করেই এরকম হয়।
আঘাত, পলিপ বা কোনো কারণ
ব্যতীত যদি নাক দিয়ে রক্ত পড়ে বা রক্ত যায় ডালিম ফুল কচলিয়ে রস নিয়ে নাকে শ্বাস
নিলে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায়।
৩. আমাশয় নিরাময়ে ডালিমের খোসা। যারা আমাশয়ের রোগী, ডালিমের খোসা সিদ্ধ করে সেবন করলে
আমাশয় নিরাময়ে ভলো ফল পাওয় যায়। আমাশয় নিরাময়ে ডালিমের কাঁচা খোসা এবং শুকনা খোসা
দুটোই কার্যকরী। তাই ডালিম খেয়ে খোসা ফেলে না দিয়ে শুকিয়ে ঘরে রেখে দেয়া ভালো।
৪. ডালিম গাছের ছাল গুঁড়ো করে ছড়িয়ে দিলে শরীরের যে কোনো
স্থানের বাগি বা উপদংশ নিরাময়ে ভালো কাজ করে। মহিলাদের প্রদররোগ নিরাময়ে ডালিম ফুল
উপকারী। প্রদর একটি জটিল মেয়েলি রোগ। প্রদর দু’প্রকার।
শ্বেতপ্রদর ও রক্তপ্রদর। উভয় প্রকার প্রদরে ৪/৫টি ডালিম ফুল বেটে মধুর সাথে মিশিয়ে
কিছুদিন সেবন করলে রোগ সেরে যায়।
৫. গর্ভপাত নিরাময়ে ডালিমের গাছের পাতা উপকারী। বহু
মহিলার গর্ভসঞ্চারের দুই তিন মাসের মধ্যে গর্ভপাত হয়ে যায়। কোনো কোনো মহিলার
একাধিকবার এরকম হয়। ডালিম গাছের পাতা বেটে মধু ও দধি একসাথে মিশিয়ে সেবন করলে
গর্ভপাতের আশংকা দূর হয়।
৬. ডালিম গাছের শিকড় ক্রিমিনাশক। ক্রিমির সমস্যা আমাদের
জাতীয় সমস্যা। ক্রিমির কারণে শিশু থেকে বুড়ো পর্যন্ত সবাই নানাবিধ জটিলতায় ভোগে।
ডালিম গাছের মূল বা শিকড় থেকে ছাল নিয়ে চূর্ন করে চুনের পানির সাথে মিশিয়ে সেবন
করলে আনায়াসেই ক্রিমিনাশ হয়। বয়স ভেদে ১-৩ গ্রাম পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে।
৭. শিশুদের পেটের রোগ নিরাময়ে ডালিম গাছের ছাল। শিশুরা
বিভিন্ন প্রকার পেটের পীড়ায় ভোগে। যেসব শিশু পেট বড় হওয়াসহ বিভিন্ন প্রকার পেটের
পীড়ায় ভোগে তাদেরকে জন্য ডালিম গাছের শিকড় থেকে ছাল নিয়ে গুঁড়ো করে মধুর সাথে
মিশিয়ে সেবন করতে দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
মূলত, ডালিম গাছ- ফল, ফলের খোসা, পাতা থেকে শুরু করে শিকড় পর্যন্ত কোনোটাই ফেলনা নয়। আগাগোড়া মানুষের
উপাকরী।
জাতঃ বাংলাদেশে ডালিমের কোন
নির্দিষ্ট অনুমোদিত জাত নেই। বাংলাদেশে যেসব ডালিমের গাছ দেখা যায় তার অধিকাংশই
বীজ থেকে উৎপাদিত গাছ। তবে ভারতে ডালিমের বেশ কিছু জাত রয়েছে যেমন- ঢোল্কা, ভাদকি
ও জিবিজিআই, পেপার শেল, মাসকেড
রেড, বেদানা ও কান্ধারী। ঢোল্কা জাতের ফলের শাঁস সাদা ও
বীজ নরম। অন্যদিকে ভাদকি ও জিবিজিআই জাতের শাঁস
গোলাপি ও বীজ শক্ত। এছাড়া বিভিন্ন দেশে ডালিমের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ জাত হচ্ছে স্পেনিশ
রুবী।
জলবায়ু ও মাটিঃ সুনিষ্কাশিত সব ধরনের মাটিতে ডালিমের চাষ হলেও দোআঁশ, বেলে দোআঁশ মাটিতে
ডালিমের চাষ ভাল হয়। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ১৬০০ মিটার উঁচু পর্যন্ত স্থানে এর চাষ করা
যায়। এ ফসল চাষের জন্য উষ্ণ ও শুষ্ক আবহাওয়া ভাল, তবে
আর্দ্রতা বেশি হলে ফলের স্বাদ কমে। বীজ থেকে সাধারণত চারা তৈরি করা হয়। এর শাখা বা
গুটি কলমের দ্বারাও অঙ্গজ বংশ বিস্তার করা যায়। ৪-৫ মিটার দূরে ৭০-৮০ সে. মি. গভীর
গর্ত করে ১০-১৫ কেজি জৈব সার দিয়ে ২০-২৫ দিন পরে চারা রোপণ করতে হয়।
ডালিম গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলের গাছ। বাংলাদেশের সর্বত্রই এটি চাষ করা যায়। এছাড়া বাংলাদেশের আবহাওয়া সারা বছরই ডালিম চাষের উপযোগী। শীতকালের শীত ও গরমকালের গরম ডালিম চাষের জন্য বেশ অনুকূল। এছাড়া ফলের বৃদ্ধি ও পরিপক্বতার সময় শুষ্ক আবহাওয়া দরকার। কেননা, আর্দ্র আবহাওয়ায় উৎপাদিত ডালিম সুমিষ্ট ও সুস্বাদু হয় না। এজন্য উষর এলাকা ডালিম চাষের জন্য বেশ উপযোগী।
যেকোন মাটিতে জন্মালেও ডালিম চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী মাটি
হচ্ছে বেলে দোআঁশ বা পলি মাটি। অনুর্বর মাটিতে এটি টিকে থাকতে পারলেও ফলন ভালো হয়
না। এটি চুন বা ক্ষারযুক্ত মাটিও সহ্য করতে পারে।
বংশবিস্তারঃ বীজ, শাখা কলম, গুটি কলম ও শেকড়-সাকারের সাহায্যে
ডালিমের বংশবিস্তার হয়ে থাকে। এছাড়া বীজ থেকে সহজেই ডালিমের চারা উৎপাদন করা যায়।
তবে বীজ থেকে উৎপাদিত গাছে মাতৃগুণাগুণ ও ফলের গুণগতমান বজায় থাকে না। ডালিমের
চারা উৎপাদনের সবচেয়ে সহজ ও সাধারণ পদ্ধতি হচ্ছে শাখা কলম পদ্ধতি। এপদ্ধতিতে কলম
তৈরির জন্য এক বছর পূর্ণ বয়সের শক্ত ডাল নির্বাচন
করতে হবে যা দৈর্ঘ্যে ২৫-৩০ সেন্টিমিটার হতে হবে। গুটিকলম পদ্ধতিতেও ডালিমের চারা উৎপাদন করা যায়। কাটিং বা শাখা কলম
এর নিচের অংশ ২০০০ পিপিএম ইনডোল অ্যাসেটিক অ্যাসিড (IBA) বা ৩০০০ পিপিএম ইনডোল বিউটিরিক অ্যাসিড (IBA)-এর
পানির মিশ্রণে চুবিয়ে নিলে সবচেয়ে ভালো হয় কেননা, এতে
শিকড় গজানোর হার ত্বরান্বিত হয়। গুটিকলম পদ্ধতিতে
চারা উৎপাদনের ক্ষেত্রে শিকড় গজানোর হার ত্বরান্বিত
করার জন্য ১০,০০০ পিপিএম (IBA) এর
পানির মিশ্রণ ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
চাষ
পদ্ধতি, চারা
তৈরি ও রোপণঃ সুনিষ্কাশিত সব
ধরনের মাটিতে ডালিমের চাষ হলেও দোআঁশ, বেলে দোআঁশ মাটিতে ডালিমের চাষ ভাল হয়।
সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ১৬০০ মিটার উঁচু পর্যন্ত স্থানে এর চাষ করা যায়। এ ফসল চাষের
জন্য উষ্ণ ও শুষ্ক আবহাওয়া ভাল, তবে আর্দ্রতা বেশি হলে
ফলের স্বাদ কমে। বীজ থেকে সাধারণত চারা তৈরি করা হয়। এর শাখা বা গুটি কলমের
দ্বারাও অঙ্গজ বংশ বিস্তার করা যায়। ৪-৫ মিটার দূরে ৭০-৮০ সে. মি. গভীর গর্ত করে
১০-১৫ কেজি জৈব সার দিয়ে ২০-২৫ দিন পরে চারা রোপণ করতে হয়।
জমি নির্বাচন ও তৈরিঃ ডালিম চাষের জন্য বর্ষা মৌসুমে পানি জমে থাকে না এমন উঁচু থেকে মাঝারি নিচু জমি নির্বাচন করতে হবে। ডালিমের জন্য উন্মুক্ত জায়গা একান্ত প্রয়োজন। ছায়যুক্ত স্থানে ডালিম গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং ফলন কম হয়। চারা রোপণের আগে জমিতে ভালোভাবে আড়াআড়ি চাষ দিয়ে জমি তৈরি করতে হবে।
রোপণ পদ্ধতি ও রোপণের সময়ঃ ডালিম গাছ বর্গকার বা ষড়ভূজাকার পদ্ধতিতে রোপণ
করা যেতে পারে। চারা রোপণের উপযুক্ত সময় হচ্ছে জুন-জুলাই মাস।
রোপণ দূরত্বঃ বাগান আকারে ডালিম চাষ করতে হলে ৫ x ৫ মিটার দূরত্বে গাছ লাগাতে হবে।
মাদা তৈরিঃ বর্গকার বা ষড়ভূজাকার পদ্ধতিতে জমির নকশা তৈরির
পর নির্দিষ্ট দূরত্বে ৬০x৬০x৬০ সেন্টিমিটার মাপের মাদা বা গর্ত তৈরি করতে হবে।
গর্ত তৈরির পর থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত গর্তটিকে রোদে শুকানোর পর গর্ত পিছু ১৫-২০ কেজি
পচা গোবর বা আবর্জনা সার মাটির সাথে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করতে হবে। গর্ত ভরাটের অন্তত
১৫ দিন পর সেখানে গাছ লাগাতে হবে।
চারা/কলম রোপণঃ গর্তের মাঝখানে চারা বসিয়ে চারাটিকে সোজা রাখার
জন্য একটি কাঠি দিয়ে বেঁধে দিতে হবে। তারপর গোড়ার মাটি হাতের সাহায্যে চাপ দিয়ে
শক্ত করে চেপে দিতে হবে। রোপণের পর চারার গোড়ায় নিয়মিত পানির সেচ দিতে হবে। গরু বা
ছাগলে যাতে গাছ নষ্ট করতে না পারে তার জন্য বাগানের চারদিকে বেড়ার ব্যবস্থা করতে
হবে।
·
গাছে সার প্রয়োগঃ চারা লাগানোর আগে গর্তে সার প্রয়োগ ছাড়াও প্রতি
বছর গাছে নিয়মিত সার প্রয়োগ করতে হবে। গর্ত করার ৮-১০ দিন পর গর্তের মাটির সাথে
নিম্নলিখিত হারে সার মিশিয়ে গর্ত ভরাট করতে হবে৷ গর্ত ভরার ২০/২৫ দিন পর চারা রোপণ
করতে হবে ৷
সারের নাম
|
পরিমাণ/গর্ত
|
কমপোস্টের গুঁড়া
|
৫০০ গ্রাম
|
ইউরিয়া
|
১৫০ গ্রাম
|
টিএসপি
|
১০০ গ্রাম
|
এমপি
|
১০০ গ্রাম
|
জিপসাম
|
৭০ গ্রাম
|
এক বছর বয়সের প্রতিটি গাছে ১০ কেজি গোবর সার ১২৫ গ্রাম ইউরিয়া
১২৫ গ্রাম ট্রিপুল সুপার ফসফেট ও ১২৫ গ্রাম মিউরেট অব পটাশ সার প্রয়োগ করতে হবে
এবং প্রতি বছর সারের মাত্রা কিছু কিছু বাড়াতে হবে এভাবে একটি পূর্ণ বয়স্ক গাছের
সারের মাত্রা হবে ৬০ কেজি গোবর সার, ১.৫ কেজি ইউরিয়া,
১.৫ কেজি ট্রিপল সুপার ফসফেট ও ১.৫ কেজি মিউরেট অব পটাশ।
উপরোক্ত পরিমাণ সার দুভাগে ভাগ করে একভাগ জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাসে ও
আরেক ভাগ আশ্বিন-কার্তিক মাসে গাছের গোড়ায় প্রয়োগ করতে হবে।
আগাছা দমনঃ ডালিমের চাষাবাদ
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হওয়া একান্ত প্রয়োজন। ডালিম গাছের গোড়ায় যেন কোন আগাছা লেগে না
থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এজন্য নিয়মিতভাবে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।
পানি সেচ ও নিষ্কাশনঃ ফলন্ত গাছে নিয়মিত হাল্কা সেচ দিতে হবে। গাছের
গোড়ার মাটি কখনই বেশি শুকনো বা পানি জমে থাকবে না। ছোট অবস্থায় ও সার প্রয়োগের পর
মাটিতে পর্যাপ্ত রস না থাকলে অবশ্যই সেচ দিতে হবে।
ডাল ছাঁটাইঃ ডালিম গাছ ঘন শাখা-প্রশাখা যুক্ত বেশ ঝোপালো
গাছ তাই একে নিয়মিত ছাঁটাই করা একান্ত প্রয়োজন। ডালিম গাছের একটি কাণ্ড এবং তার
সাথে ৪-৬ টি প্রধান শাখা গাছের সুঠাম কাঠামো তৈরিতে যথেষ্ট। এজন্য ছোট অবস্থায় জমি
থেকে এক মিটার উপরে গাছের মাথা কেটে দিতে হয়। জমি থেকে দেড় ফুট উপরে ৪-৬ টি প্রধান
শাখাকে মূল কাণ্ডের সাথে সমতা রেখে বাড়তে দিতে হয়। ছয় মাস পরে দেড় ফুট করে রেখে
প্রধান শাখাগুলোকে ছেঁটে দিতে হয়। এভাবে নিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে দিলে গাছের রূপ নিতে
৩-৪ বছর সময় লাগবে। ডালিম গাছের কাণ্ড ও প্রধান শাখা থেকে উৎপন্ন ডাল এবং শিকড়
থেকে উৎপাদিত সাকার নিয়মিত ছেঁটে দেয়া দরকার। কারণ এগুলো থাকলে গাছের ফলন কমে যায়।
যেহেতু ডালিম গাছের পুরাতন ডাল থেকে উৎপন্ন ছোট শাখার মাথায় ফুল আসে সেহেতু নতুন
শাখা বের করার জন্য ফলন্ত গাছকে মাঝে মধ্যে ছেঁটে দিতে হয়।
শিকড় ছাঁটাইঃ গাছে সারা বছরই ফুল ও ফল হয়৷ তবে বসন্তে ও
বর্ষায় বেশি ফুল আসে৷ বসন্তের ফুল থেকে গ্রীষ্মকালে ফল পাওয়া যায় এবং এর গুণাগুণ
খুবই নিম্নমানের হয়ে থাকে৷ কিন্তু বর্ষার ফুল থেকে প্রাপ্ত ফল অক্টোবর-নভেম্বরে
সংগ্রহ করা হয় যার গুণগত মান খুবই ভাল হয়৷ তাই গাছকে বর্ষায় ফুল আসতে বাধ্য করার
জন্য মার্চ-এপ্রিল মাসে ১৫সেমি.গভীর করে মাটি খুঁড়ে শিকড়গুলোকে ১৫ দিন উন্মুক্ত
করে রাখা হয় এবং পরে জৈব সারসহ মাটি চাপা দিয়ে সেচ দিতে হবে৷
বিশেষ পরিচর্যাঃ ডালিম গাছে সারা বছরই কিছু না কিছু ফুল আসে। তবে
সব সময়ের ফুল থেকে ফল উৎপন্ন হয় না। বসন্তকালে যে ফুল হয় সেই ফুল থেকে
গ্রীষ্মকালের ফল হয় যদিও এই ফলের মান খুব একটা ভালো হয় না। বর্ষার শুরুতে যে ফুল
আসে এবং সেই ফুল থেকে যে ফল হয় তা কার্তিক অগ্রহায়ণ মাসে সংগ্রহের উপযুক্ত হয় এবং
এ ফলের মান বেশ ভালো হয়। তাই বর্ষার শুরুতে ফুল আনার জন্য পৌষ মাস থেকে বৈশাখ মাস
পর্যন্ত গাছের বিশেষ পরিচর্যা নিতে হয়। এই সময়ে গাছে পানির সেচ দেয়া বন্ধ রাখতে হয়
ফলে গাছের বৃদ্ধি বন্ধ থাকে। চৈত্র মাসে গাছে সেচ দিতে হয় এবং কোদাল দিয়ে
কুপিয়ে গাছের গোড়ার মাটি আল্গা করে দিতে হয়। চৈত্র মাসে গাছের পাতা ঝরে যায় ও
বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত গাছ ঘুমন্ত অবস্থায় থাকে। বর্ষা শুরু হওয়ার আগে দু-একটা
সেচ দিলে ভালো হয়। বর্ষা শুরু হওয়ার সাথে সাথে গাছের বদ্ধি ও ফুল ফল ধারণ শুরু হয়
এবং কার্তিক অগ্রহায়ণ মাসে এই ফল সংগ্রহের উপযুক্ত হয়।
ডালিমের রোগবালাই তার প্রতিকারঃ
ডালিমের প্রজাপতি বা ফলছিদ্রকারী পোকাঃ ডালিম ফলের মারাত্মক শত্রু হচ্ছে ডালিমের প্রজাপতি বা ফলছিদ্রকারী পোকা। এই প্রজাতির শূঁককীট ফলের ক্ষতি করে থাকে। স্ত্রী প্রজাপতি ফুলের বৃস্তৃতি ও ছোট ফলের ওপর ডিম পাড়ে। ডিম থেকে শূঁককীট বের হয়ে বর্ধনশীল ফলে ছিদ্র করে ভেতরে ঢুকে পড়ে এবং ফলের বীজ ও অন্যান্য অংশ খেয়ে ফেলে। পরে মূককীটে পরিণত হওয়ার পূর্বে ফলের ত্বকে গোলাকার ছিদ্র করে ফল থেকে বের হয়ে আসে। এই পোকায় আক্রান্ত ফলে মাধ্যমিক সংক্রমণ হিসেবে ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ হতে পারে।
প্রতিকারঃ আক্রান্ত ফল গাছ থেকে পেড়ে বা মাটিতে পড়ে থাকা
ফল কুড়িয়ে নষ্ট করে ফেলতে হবে। গাছে ফলধারণের পর ফলের বৃদ্ধি শুরু হলে কাপড় বা
পলিথিন বা বাটার কাগজ দিয়ে বৃদ্ধিমান ফল ব্যাগিং করে দিলে এ পোকার আক্রমণ থেকে
রক্ষা পাওয়া যাবে।
প্রতি লিটার পানিতে এক মিলিলিটার হারে ম্যালাথিয়ন বা কার্বরিল
বা ফস্ফামিডন গ্রুপের কীটনাশক দিয়ে ১৫ দিন অন্তর অন্তর গাছে ও ফলে সেপ্র করতে
হবে।
কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকাঃ কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকা সাধারণত পরিচর্যাবিহীন
গাছে আক্রমণ করে থাকে। এই পোকার শূঁককীট রাতের বেলা কাণ্ড ও শাখার ছাল ছিদ্র করে
ভেতরে প্রবেশ করে এবং ভেতরের অংশ খেতে থাকে। দিনের বেলা ডালের গর্তের মধ্যে এরা
লুকিয়ে থাকে ও বর্জ্য পদার্থ ত্যাগ করে। কাণ্ড বা শাখায় ছোট ছোট ছিদ্র বা বর্জ্য
পদার্থ দেখে এ পোকার আক্রমণ লক্ষ করা যায়।
প্রতিকারঃ গর্তের মধ্যে সরু তার ঢুকিয়ে পোকার কীড়াকে
খুঁচিয়ে মারার ব্যবস্থা করতে হবে।
গর্ত থেকে এ পোকার কীড়ার বর্জ্য পদার্থ পরিষ্কার করে গর্তে ইনজেকশনের সিরিঞ্জ বা তুলার সাহায্যে কেরোসিন বা পেট্রোল ঢুকিয়ে কাদা দিয়ে গর্ত বন্ধ করে দিলে পোকা মারা যাবে।
গর্ত থেকে এ পোকার কীড়ার বর্জ্য পদার্থ পরিষ্কার করে গর্তে ইনজেকশনের সিরিঞ্জ বা তুলার সাহায্যে কেরোসিন বা পেট্রোল ঢুকিয়ে কাদা দিয়ে গর্ত বন্ধ করে দিলে পোকা মারা যাবে।
রস শোষণকারী পোকাঃ ছাতা পোকা, সাদা মাছি, শুল্ক বা আঁশ পোকা, থ্রিপস, জাব পোকা ও মাকড় ডালিমের রস শোষণকারী পোকা হিসেবে চিহ্নিত। এসব পোকার
আক্রমণে পাতা, মুকুল, ফুল ও ছোট
ফল খসে পড়ে। সাদা মাছি ও জাব পোকা পাতা ও কচি ডগার রস চুসে খায় ফলে আক্রান্ত অংশ
বিবর্ণ ও বিকৃত হয়ে যায়। এছাড়া এসব পোকা দেহ থেকে এক ধরনের মধু নিঃসৃত করে যা
পাতায় লেগে থাকে। পরে পাতার গায়ে এই নিঃসৃত মধুর ওপর এক প্রকার ছত্রাক জন্মায়। ফলে
গাছের খাদ্য তৈরি প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হয়। মাকড় ও থ্রিপস পোকা পাতা, ফুলের বোঁটা, বৃতি ও দলমণ্ডলে ক্ষত করে এবং
ক্ষত থেকে বের হওয়া কোষরস খায়। ফলে পাতার আগা কুঁকড়ে যায় এবং ফুল ঝরে যাওয়ায়
ফলধারণ বিঘ্নিত হয়।
প্রতিকারঃ ছাতা পোকা ও শুল্ক পোকার কীট দমনের জন্য
আক্রমণের প্রথম অবস্থায় আক্রান্ত অংশ কেটে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। এর পর প্রতি লিটার
পানিতে এক মিলিলিটার হারে মনোক্রোটোফস বা ডায়াজিনন গ্রুপের কীটনাশক মিশিয়ে গাছে
সেপ্র করতে হবে।
জাব পোকা বা সাদামাছি দমনের জন্য প্রতি লিটার পানিতে এক
মিলিলিটার হারে ডাইমিথয়েট বা আধা মিলিলিটার হারে ফসফামিডন বা ডায়াজিনন গ্রুপের
কীটনাশক মিশিয়ে ১৫ দিন অন্তর অন্তর গাছে দুই বার সেপ্র করতে হবে।
মাকড় দমনের জন্য প্রতি লিটার পানিতে এক মিলিলিটার হারে কেলথেন
বা দুই গ্রাম হারে সালফার ছত্রাকনাশক মিশিয়ে গাছে সেপ্র করতে হবে।
ফলের দাগ রোগঃ এটি একটি ছত্রাকঘটিত রোগ। এ রেগে আক্রান্ত ফলের ওপর ছোট ও অনিয়মিত দাগ পড়ে। দাগগুলোর চারিদিকে সবুজ হলদে দাগ থাকে। পরবর্তীতে দাগগুলো লম্বা দাগে পরিণত হয় এবং ফলের খোসার নিচের বীজগুলো বাদামি বর্ণের হয়ে যায়। আক্রান্ত ফলের গুণাবলী নষ্ট হয়ে যায় এবং ফলের বাজার মূল্য কমে যায়।
প্রতিকারঃ রোগাক্রান্ত
অংশ কেটে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
প্রতি লিটার পানিতে ২.৫ গ্রাম হারে মেনকোজেব বা ১ গ্রাম হারে কার্বান্ডিজম ছত্রাকনাশক গুলে ১০ দিন অন্তর অন্তর ৩-৪ বার ফলে ও গাছে ভালোভাবে সেপ্র করতে হবে।
প্রতি লিটার পানিতে ২.৫ গ্রাম হারে মেনকোজেব বা ১ গ্রাম হারে কার্বান্ডিজম ছত্রাকনাশক গুলে ১০ দিন অন্তর অন্তর ৩-৪ বার ফলে ও গাছে ভালোভাবে সেপ্র করতে হবে।
ফল পচা রোগঃ ছত্রাকঘটিত এ রোগটি সাধারণত বর্ষাকালে দেখা
যায়। এ রোগের জীবাণু দ্বারা ফুল আক্রান্ত হলে ফলধারণ বিঘ্নিত হয় এবং কচি ফল ঝরে
যায়। ফলের গায়ে, বিশেষ করে বোঁটায় হলদে বা কালো দাগ দেখে এ
রোগের আক্রমণ বোঝা যায়। এরোগের আক্রমণে ফলের খোসা কুঁচকে যায় ও ফলের ওজন কমে যায়।
আক্রান্ত ফল কাঁচা থাকে, আকার ছোট হয় ও ফলের চাকচিক্য
নষ্ট হয়ে যায় এবং শেষে ফল নরম হয়ে পচে যায়।
প্রতিকারঃ এ রোগের প্রতিকার ফলের
দাগ রোগের প্রতিকারের অনুরূপ।
ফল ফেটে যাওয়াঃ ডালিমের ফল ফেটে যাওয়া
একটি মারাত্মক সমস্যা। এটি কোন ছত্রাকজনিত রোগ নয়। এটি সাধারণত পুষ্টি উপাদানের
অভাবজনিত কারণে বা মাটিতে রসের তারতম্যের কারণে হয়ে থাকে। ফলের বৃদ্ধির সময় শুকনো
আবহাওয়ায় মাটিতে রসের অভাব দেখা দিলে ফলের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং ফলের ত্বক শক্ত
হয়ে যায়। এরপর হঠাৎ বৃষ্টি হলে মাটিতে রসের আধিক্য ঘটে, ফলে
ফলের ভেতরের অংশ দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পায় এতে ভেতরের চাপ সহ্য করতে না পেরে ফলের
খোসা ফেটে যায়।
প্রতিকারঃ ফলধারণের পর থেকে ডালিম গাছে ঘন ঘন পানি সেচ দিতে হবে।
মাটিতে বোরনজনিত সার যেমন বোরিক এসিড গাছপ্রতি ৪০ গ্রাম হারে মাটিতে প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া ফলের বৃদ্ধির সময় প্রতি লিটার পানিতে পাঁচ গ্রাম হারে বোরিক এসিড এর মিশ্রণ ১০ দিন অন্তর অন্তর ফলে ও গাছে সেপ্র করতে হবে।
ডালিমের যেসব জাতে ফল ফাটা সমস্যা নেই সেসব জাত চাষাবাদ করতে
হবে।
ফল সংগ্রহঃ কলমের গাছে ৩-৪ বছর থেকেই ফলন শুরু হয়। ফুল
আসার পর থেকে ফল পাকা পর্যন্ত ৬ মাস সময় লাগে। পুষ্ট ফলের খোসার রঙ হলদে-বাদামি
হয়ে এলেই ফল পাড়ার উপযুক্ত হয়। গাছে ফল বেশি দিন রেখে দিলে ফল ফেটে যাওয়ার
সম্ভাবনা থাকে। ফল ফেটে যাওয়া জাতের ওপর নির্ভরশীল। যেসব গাছে ফল ফেটে যাওয়ার
প্রবণতা থাকে সেসব গাছের ফল পুষ্ট হওয়ার কিছু আগেই পেড়ে নিতে হয়। তবে অপুষ্ট ফলের
স্বাদ ও গুণাগুণ খুব একটা ভালো হয় না। ডালিমের খোসা বেশ শক্ত এজন্য পাকা ফল অনেক
দিন সংরক্ষণ করা যায় এবং পরিবহনেও নষ্ট হয় না।
ফলনঃ ডালিম গাছ চার-পাঁচ বছর বয়স থেকে ফল দিতে শুরু করে। তবে শুরুর দিকে ফলন তেমন একটা আশানুরূপ হয় না। সাধারণত ৮-১০ বছর বয়স থেকে ডালিম গাছ ভালো ফলন দিয়ে থাকে। প্রথম ফল ধরার সময় গাছপ্রতি ২০-২৫টির বেশি ফল পাওয়া যায় না। বয়স বাড়ার সাথে সাথে ফলন বাড়তে থাকে। দশ বছর বয়সের গাছে গড়ে ১০০-১৫০ টি ফল ধরে। তবে ভালো পরিচর্যা নিলে গাছপ্রতি ২০০-২৫০টি ফল পাওয়া যেতে পারে। একটি ডালিম গাছ ত্রিশ বছর পর্যন্ত লাভজনক ফলন দিয়ে থাকে।
1 টি মন্তব্য:
অনেক সুন্দর ভাবে সব বিষয়গুলো উপস্থাপন করেছেন আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন