লটকন হচ্ছে এ দেশের একটি অপ্রচলিত ও খাদ্যমানে সমৃদ্ধ ফল। এ ফলটি
খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি এর চাষও লাভজনক। তবে এটি চাষ করতে বাড়তি কোনো জায়গার
প্রয়োজন হয় না। বাড়ির আঙিনায় বা বড় বড় গাছের নিচে অধিক ছায়াযুক্ত জায়গায় খুব সহজেই
লটকনের আবাদ করা যায়।
লটকন (বৈজ্ঞানিক
নাম Baccaurea motleyana)
এক প্রকার টক মিষ্টি ফল। লটকন নানা নামে পরিচিত, যেমন- Rambai, Rambi, Mafai-farang, Lamkhae, Ra mai ইত্যাদি। গাছটি দক্ষিণ এশিয়ায় বুনো গাছ হিসেবে জন্মালেও বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে বানিজ্যিক চাষ হয়। লটকন বৃক্ষ ৯-১২ মিটার
লম্বা হয়, এর কান্ড বেটে এবং উপরাংশ ঝোপালো। পুং এবং
স্ত্রী গাছ আলাদা; যাতে আলাদা ধরণের হলুদ ফুল হয়,
উভয় রকম ফুলই সুগন্ধি। ফলের আকার দুই থেকে পাঁচ সেমি হয়,
যা থোকায় থোকায় ধরে। ফলের রঙ হলুদ। ফলে ২-৫ টি বীজ হয়,
বীজের গায়ে লাগানো রসালো ভক্ষ্য অংশ থাকে, যা জাতভেদে টক বা টকমিষ্টি স্বাদের। এই ফল সরাসরি খাওয়া হয় বা জ্যাম
তৈরি করা হয়। এর ছাল থেকে রঙ তৈরি করা হয় যা রেশম সুতা রাঙাতে ব্যবহৃত হয়। এর কাঠ নিম্নমানের।
ছায়াযুক্ত স্থানেই এটি ভাল জন্মে।
লটকনের বেশ কয়েকটি নাম রয়েছে; যেমন- হাড়ফাটা, ডুবি, বুবি, কানাইজু,
লটকা, লটকাউ, কিছুয়ান
ইত্যাদি।
পুষ্টিমানঃ ফল
পাকা অবস্থায় হালকা গোলাপী হলদে বর্ণের হয়। ফলের কোষ খোসার দ্বারা ঢাকা থাকে।
কোষের পাতলা আবরণের মধ্যে সুগন্ধযুক্ত টকমিষ্টি রস থাকে। ফলের ওজনের ৬৬% খোসা এবং
বীজ এবং বাকী ৩৪% খাদ্য উপযোগী অংশ। লটকন ফলের রসে ৭২.৪% পানি থাকে। প্রতি ১০০
গ্রাম খাদ্যোপযোগী অংশে পুষ্টির পরিমাণ পুষ্টি উপাদান পরিমাণ আমিষ স্নেহ শর্করা
আঁশ ক্যালসিয়াম ফসফরাস আয়রণ ভিটামিন-এ ভিটামিন-বি১ ভিটামিন-বি২ নায়াসিন এসকরবিক
এসিড ১.০ গ্রাম ০.৫ গ্রাম ২৫.২ গ্রাম ০.৪ গ্রাম ২.০ মি.গ্রাম ৬.০ মি.গ্রাম ০.৩
মি.গ্রাম ২৮.০ আইইউ ০.০৪ মি.গ্রাম ০.০৭ মি.গ্রাম ০.৬০ মি.গ্রাম ৮.০ মি.গ্রাম ।
লটকনের ওষুধিগুণঃ
১। আর্থ্রাইটিস রোগে উপকার পাওয়া যায় ।
২। ফোঁড়া এবং অন্যান্য ত্বকের রোগ সারাতে লটকন ফল অনেক উপকারী।
৩। মিজোরামে পাকস্থলীর ব্যথা, কলিক ও পাকস্থলীর আলসার সারাতে লটকন
ব্যবহার করা হয়।
৪। লটকন ফল খেলে ব্রণ ও ত্বকের দাগ কমে আসে
।
৫। গরমে তেষ্টা মেটানো এবং বমি বমি ভাব
দূর করতে লটকন
ফল কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
৬। লটকন ফল খাওয়ার রুচি বাড়ায়।
৭। মানসিক অবসাদ কমিয়ে আনে।
৮। লটকন গাছের পাতা শুকিয়ে গুঁড়া করে
খেলে ডায়রিয়া থেকে উপশম পাওয়া যায়।
৯। লটকন গাছের ডাল এবং বাকল চর্মরোগ
সারাতে ব্যবহার হয়।
১০। গনোরিয়া রোগ হলে লটকনের বীজ খেলে
উপকার পাওয়া যায় ।
লটকনের জাতঃ বারি লটকন-১ 'বারি লটকন-১' জাতটি বাংলাদেশে চাষের জন্য ২০০৮ সালে অনুমোদন করা হয়। এটি একটি মাঝ
মৌসুমি জাত। জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে এর ফল পরিপক্বতা লাভ করে। গাছপ্রতি ফলের
সংখ্যা ৩৩৩৪টি। এটি একটি নিয়মিত ফলদানকারী উচ্চ ফলনশীল জাত। গাছপ্রতি ফলন ৪৫ কেজি
(১২.৫০ টন/হেক্টর)। মাঝারি আকারের প্রতিটি ফলের গড় ওজন ১৪ গ্রাম। প্রতিটি ফলে
৪-৫টি ক্ষুদ্রাকারের বীজ থাকে এবং ফল গোলাকার, ফলের শাঁস
রসালো, নরম এবং টক-মিষ্টি স্বাদ (ব্রিক্সমান ১৫.৬০)।
প্রতিটি ফলে কোষের সংখ্যা ৪-৫টি। লটকনের এ জাতটি বাংলাদেশের সর্বত্র চাষ উপযোগী।
পরিচিতিঃ লটকন বেঁটে আকারের চিরসবুজ বৃক্ষ। ফল কান্ড ও
বড় বড় ডালে থোকায় থোকায় ঝুলে থাকে। একটি থোকায় ৫-৬টি থেকে ১৫-২০ টি পর্যন্ত ফল
ধরে। প্রতিটি ফলের ওজন প্রায় ১২ থেকে ২০ গ্রাম । প্রতিটি ফলে ৩-৪টি কোষ থাকে। ফল
কাঁচা অবস্থায় সবুজ এবং মার্বেল এর মত গোলাকার থাকে। পাকা অবস্থায় হালকা
গোলাপী-হলুদ বর্ণ ধারণ করে। প্রতিটি ফলের ব্যাস হয় ৩-৪ সেন্টিমিটার। খোসার আবরণের
ভিতর কোষগুলো একটি অন্যটি থেকে পাতলা কাগজের মত সাদা আবরণে পৃথক থাকে। ফলের
কোষগুলো ফলের বোঁটার দিকে যুক্ত না থেকে গোড়ার দিকে যুক্ত থাকে এবং প্রতিটি কোষ
পাতলা আবরনে আবৃত থাকে। ফলের কোষ কমলা লেবুর কোষের মত অর্ধ চন্দ্রাকৃতির এবং
সুগন্ধযুক্ত টকমিষ্টি রসে পূর্ণ থাকে। বাংলাদেশের বাজারে দুই ধরণের লটকন পাওয়া
যায়। এদের মধ্যে একটি ৩ কোষ বিশিষ্ট ছোট আকারের এবং অন্যটি ৪ কোষ বিশিষ্ট বড়
আকারের। বড়টির কোষে রসের পরিমাণ এবং মিষ্টতা বেশি থাকে। চাষের জন্য ৪ কোষ বিশিষ্ট
জাতটি নির্বাচন করাই উত্তম। গাছের বৈশিষ্ট্য লটকনের গাছ ৫-৬ মিটার পর্যন্ত লম্বা
হয় প্রতি গাছে প্রচুর পরিমাণে সরল পত্র থাকে। পাতাগুলো সাধারণত ১০-১২ সেন্টিমিটার
লম্বা এবং ৬-৮ সেন্টিমিটার চওড়া, লটকনের পুরুষ গাছ ও
স্ত্রী গাছ ভিন্ন এবং গাছের গুড়ি থেকে বসন্তকালে থোকায় থোকায় পুস্পমঞ্জরী বের হয়।
তবে পুরুষ এবং স্ত্রী ফুলের পুস্পমঞ্জরী আলাদা গাছে হয় বলে একই বাগানে পুরুষ এবং
স্ত্রী গাছ থাকা বাঞ্চনীয়। একক লিঙ্গের ক্ষুদ্র ফুল আলাদা গাছে থাকে তাই বাতাস এবং
ক্ষুদ্র পোকামাকড় দ্বারা পরাগায়ন হয়। এভাবে পরাগায়নের পর ফলের বৃদ্ধি আরম্ভ হয়।
এবং তা জুন- জুলাই পর্যন্ত চলতে থাকে। প্রতি গাছে যথেষ্ট শাখা প্রশাখা থাকে। গাছে
ফল আসলে তা বাগানের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।
আবহাওয়া
এবং মাটিঃ লটকন উষ্ণ এবং
নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের আর্দ্র আবহাওয়ায় ভাল জন্মে। এ জন্য পানি দাঁড়ায় না অথচ
বৃষ্টিপাত বেশি হয় এমন এলাকার বেলে -দোআঁশ, বা কাদা-দোআঁশ,
ক্ষারবিহীন, সামান্য অম্লযুক্ত মাটি
লটকন চাষের জন্য বেশি উপযোগী। মাটির অম্লমান ৫.৫ থেকে ৬.০ পর্যন্ত হলে ভাল হয়। এ
ফলের গাছ দাঁড়ানো পানি সহ্য করতে পারে না। গাছের গোড়ায় ৮-১০ দিন পানি জমে থাকলে
গাছ মরে যেতে পারে। আংশিক ছায়াযুক্ত স্থানে এ গাছ ভাল হয় বলে আম বা কাঁঠালের মত বড়
গাছের নিচেও চাষ করা যায়। মধুপুর অঞ্চলের চালা জমি এ ফলের জন্য উপযুক্ত।
মাটিঃ সুনিষ্কাশিত
প্রায় সব ধরণের মাটিতেই লটকনের চাষ করা যায়,
তবে বেলে দোঁ-আশ মাটি লটকন চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। লটকন গাছ
স্যাঁতস্যাঁতে ও আংশিক ছায়াময় পরিবেশে ভাল জন্মে কিন্তু জলাবদ্ধতা সহ্য করতে
পারেনা।
জমি তৈরিঃ
চাষ ও মই দিয়ে জমি সমতল এবং আগাছামুক্ত করে নিতে হবে।
গর্ততৈরি ও সার প্রয়োগঃ
১ মিটার চওড়া ও ১ মিটার গভীর গর্ত করে প্রতি গর্তে ১৫-২০ কেজি জৈব সার/গোবর, ৫০০ গ্রাম টিএসপি ও ২৫০ গ্রাম এমপি
সার গর্তের মাটির সাথে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে রাখতে হবে।
চারা রোপনঃ
গর্ত ভরাট করার ১০-১৫দিন পর নির্বাচিত চারা গর্তের মাঝখানে সোজাভাবে লাগাতে
হবে। চারা লাগানোর পরপরই পানি দিতে হবে।
রোপণের সময়ঃ বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য (এপ্রিল-মে) মাস চারা রোপণের
উপযুক্ত সময়। তবে বর্ষার শেষের দিকে অর্থাৎ ভাদ্র-আশ্বিন (সেপ্টেম্বর) মাসেও গাছ
রোপণ করা যেতে পারে।
রোপণের দূরত্বঃ
১. সারি থেকে সারির দূরত্বঃ ৬
মিটার
২. চারা থেকে চারার দূরত্বঃ ৬
মিটার
বংশ বিস্তারঃ বীজ থেকে সহজেই চারা উৎপাদন করে
বংশ বিস্তার করা যায়। তবে তাতে ফলের মাতৃগুণ বজায় থাকে না। এজন্য গুটি কলমের চারা
ব্যবহার করা ভাল। লটকনের বীজের আবরণ অত্যন্ত শক্ত তাই বীজ জমিতে বা পলিব্যাগে
বুনার পূর্বে ১-২দিন পানিতে ভিজিয়ে নিলে চারা দ্রুত গজায়। প্রাথমিক অবস্থায় গাছের
বৃদ্ধি তাড়াতাড়ি হয়। এ জন্য ১২-১৫ মাস বয়সের চারা মূল জমিতে লাগানো যায়। গুটি
কলমের জন্য নির্বাচিত গাছের সুস্থ, সবল, সতেজ এবং
নিরোগ ডালের মধ্যে গ্রীষ্মের প্রথম ভাগে গুটি কলম করতে হয়। আঙ্গুলের মত চিকন ও
সমান্তরাল ডাল এ কাজের জন্য ব্যবহার করা উত্তম। এতে বর্ষার পূর্বেই শিকড় বের হয়
এবং ডাল কেটে গুটি কলম মূল জমিতে বর্ষাকালে লাগানো যায়। বীজের গাছে ফল আসতে ৫-৬
বছর সময় লাগে কিন্তু কলমের গাছে ২-৩ বছর পর ফল ধরা শুরু হয়। চারা লাগানো এবং যতœ
নিষ্কাশন সুবিধাযুক্ত উঁচু বা মাঝারি উঁচু স্থানে বর্ষার পূর্বে
৩০ সে.মি. দৈর্ঘ্য, ৩০ সে.মি. প্রস্থ এবং ৩০ সে.মি. গভীর
গর্ত করে তাতে ১০-১২ কেজি গোবর বা জৈব সার এবং ১.৫-২.০ কেজি ছাই ঝুরঝুরে মাটির
সঙ্গে মিশিয়ে গর্ত বন্ধ করে দিতে হবে এবং গর্ত বন্ধ করার ১ মাস পর কলমের বা বীজের
চারা গর্তের মাটিতে লাগাতে হবে। গর্তের মাঝে চারা বসিয়ে দিয়ে তাতে বাঁশের বা গাছের
ডালের ঠেকনা দিয়ে তাতে নরম পাটের বা প্লাস্টিকের সুতা দিয়ে গাছের চারাটি খুঁটির
সঙ্গে বেঁধে দিতে হবে। প্রয়োজনে গাছের চারপাশে বাঁশের খাঁচা দিয়ে বেড়া দিতে হবে।
সার প্রয়োগঃ পূর্ণ বয়স্ক গাছ প্রতি বছর
১৫-২০ কেজি গোবর, ১ কেজি ইউরিয়া, ৫০০ গ্রাম টিএসপি ও ৫০০ গ্রাম এমপি সার সমান দুইভাগে ভাগ করে বর্ষার
আগে ও পরে ২ বারে প্রয়োগ করা যেতে পারে।
সেচঃ চারা রোপনের প্রথম দিকে ঘন ঘন সেচ দেয়া দরকার। ফল ধরার পর শুকনো মৌসুমে শীতের শেষে গাছে ফুল আসার পর দু’একটা সেচ দিতে পারলে ফলের আকার বড় হয় ও ফলন বাড়ে।
সেচঃ চারা রোপনের প্রথম দিকে ঘন ঘন সেচ দেয়া দরকার। ফল ধরার পর শুকনো মৌসুমে শীতের শেষে গাছে ফুল আসার পর দু’একটা সেচ দিতে পারলে ফলের আকার বড় হয় ও ফলন বাড়ে।
পোকামাকড়ঃ লিচুর বিচিতে যে ধরনের কীড়া দেখা যায় লটকনেও
একই কীড়া দেখা যায়। পূর্ণ বয়স্ক স্ত্রীমথ কচি ফলের গা চিরে চামড়ার নিচে ডিম পাড়ে, পরে
চামড়ার ছিদ্র বন্ধ হয়ে যায়। ফল পাকার সময় এসব ডিম থেকে লার্ভা বের হয় এবং ফলের
বীজের শাঁস খেয়ে বেঁচে থাকে, এতে ফলের মান খারাপ হয়,
ফল পচে যায় এবং বাজার মূল্য কম পাওয়া যায়। গাছে কচি ফল ধরার সাথে
সাথে ডিপটেরেক্র-৮০ এসপি ১.০ গ্রাম অথবা ডিপটেরেক্র-৫০ ইসি ১.৫ মিলিলিটার
প্রতিলিটার পানিতে মিশিয়ে ১৫ দিন পর পর গাছে স্প্রে করতে হবে। পাতাখেকো পোকা কোন
কোন সময় পাতার অংশ বিশেষ পাতাখেকো পোকা খেয়ে থাকে। কীটনাশক প্রয়োগের মাধ্যমে এসব
পোকা নিয়ন্ত্রনে করা যায়। গাছে পোকার আক্রমণ দেখা গেলে প্রতি লিটার পানিতে
কারবারিল (সেভিন/কার্বিন/অন্য নামের) ৮৫ ডব্লিউপি ২.০ গ্রাম অথবা ফেনিট্রোথিয়ন
(সুমিথিয়ন/ফলিথিয়ন/অন্য নামের) ৫০ ইসি ২.০ মিলিলিটার মিশিয়ে গাছের পাতায় স্প্রে
করতে হবে। ছাতরা পোকা ছাতরা পোকার গায়ে একধরণের সাদা পশমি আবরণ থাকে, যার জন্যে এ পোকা বাতাসে উড়তে পারে। পোকা ফলের থোকায় এবং পাতার নিচে
অবস্থান করে রস চুষে খায়। এ পোকা থেকে মিষ্টি রস বের হয় বলে পোকা যেখানে অবস্থান
করে তার চারপাশে কালো ধোঁয়ার মত ছত্রাকের আবরণ পড়ে। এজন্যে ফলের মান খারাপ হয়।
ম্যালাথিয়ন, সেভিন, বাইড্রিন,
ডায়াজিনন বা ডাইমেক্রনজাতীয় কীটনাশক স্প্রে করে এ পোকা দমন করা
যায়।
ফল ছিদ্রকারী পোকাঃ
ফল ছোট অবস্থায় যখন ফলের খোসা নরম থাকে তখন এই পোকা ফলের খোসা ছিদ্র করে
ডিম পাড়ে। পরবর্তী কালে ডিম থেকে লাভা উৎপন্ন হয় এবং ফল পাকলে ফলের নরম শ্বাস খেয়ে
থাকে।
প্রতিকারঃ আক্রান্ত ফল পোকাসহ নষ্ট করে ফেলতে হবে। প্রতি
লিটার পানিতে ২ মিলি হারে পারফেকথিয়ন বা লেবাসিড ৫০ ইসি মিশিয়ে ১৫ দিন অন্তর ২-৩
বার ফল ছোট অবস্থায় গাছে স্প্রে করতে হবে।
মিলিবাগ ও সাদা মাছি পোকাঃ
সাধারণত শীতকালে এদের আক্রমনে পাতায় সাদা সাদা তুলার মত দাগ দেখা যায়। এরা
গাছের পাতার রস শুষে গাছকে দূর্বল করে। রস শোষণের সময় পাতায় বিষ্ঠা ত্যাগ করে এবং
সেই বিষ্ঠার উপরই শুটিমোল্ড নামক ছত্রাক জন্মে।
প্রতিকারঃ
আক্রান্ত পাতা ও ডগা ছাঁটাই করে ধ্বংস করতে হবে। রগর/রক্সিয়ন ৪০ ইসি প্রতি
লিটার পানিতে ২ মিলি হারে মিশিয়ে আক্রান্ত পাতা ও গাছের ডালপালা প্রতি ১০ দিন
অন্তর ২-৩ বার স্প্রে করে ভিজিয়ে দিতে হবে।
চেপার বিটলঃ
এই পোকা পাতার নিচে ডিম পাড়ে এবং ডিম থেকে লার্ভা উৎপন্ন হওয়ার পর লার্ভা
পাতা খেয়ে ছিদ্র করে ফেলে এবং আস্তে আস্তে সমস্ত পাতা খেয়ে জালের মত করে ফেলে।
প্রতিকারঃ
সুমিথিয়ন/ডেবিকুইন ৪০ ইসি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করে এ পোকা দমন
করা যায়।
স্কেল পোকাঃ
এ পোকা প্রথমে পাতার নিচে ডিম পাড়ে। ডিম থেকে বাচ্চা বের হলে এরা পাতার রস
শোষণ করে খেতে থাকে। আস্তে আস্তে এরা কচি ডালেও আক্রমন করে সমস্ত গাছকে মেরে ফেলে।
প্রতিকারঃ এই
পোকার আক্রমন দেখা যাওয়া মাত্র ব্রাশ দিয়ে ঘষে মেরে ফেলতে হবে অথবা সাবানের পানি
দিয়ে স্প্রে করলেও প্রাথমিকভাবে দমন করা যায়। আক্রমন বেশী দেখা দিলে ট্রেসার/(০.২
এম.এল/লিটার)/ফিপ্রোনিল (১ এমএল/লিটার) অথবা একতারা (০.৫ গ্রাম/লিটার) হারে স্প্রে
করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
এ্যানথ্রাকনোজঃ কলেটোট্রিকাম সিডি নামক ছত্রাক লটকনের এ্যানথ্রাকনোজ রোগের কারণ। গাছের পাতা, কান্ড, শাখা-প্রশাখা ও ফল এ রোগ দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। ফলের গায়ে ছোট ছোট কালো দাগই এ রোগের প্রধান লক্ষণ। তাছাড়া ফল শক্ত, ছোট ও বিকৃত আকারে হতে পারে। ফল পাকা শুরু হলে দাগ দ্রুত বিস্তার লাভ করে থাকে এবং ফলটি ফেটে বা পচে যেতে পারে।
এ্যানথ্রাকনোজঃ কলেটোট্রিকাম সিডি নামক ছত্রাক লটকনের এ্যানথ্রাকনোজ রোগের কারণ। গাছের পাতা, কান্ড, শাখা-প্রশাখা ও ফল এ রোগ দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। ফলের গায়ে ছোট ছোট কালো দাগই এ রোগের প্রধান লক্ষণ। তাছাড়া ফল শক্ত, ছোট ও বিকৃত আকারে হতে পারে। ফল পাকা শুরু হলে দাগ দ্রুত বিস্তার লাভ করে থাকে এবং ফলটি ফেটে বা পচে যেতে পারে।
প্রতিকারঃ
গাছের নিচে ঝরে পড়া পাতা ও ফল সংগ্রহ করে পুড়ে ফেলতে হবে। গাছে ফল ধরার পর
টপসিন-এম অথবা নোইন প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম অথবা টিল্ট-২৫০ ইসি প্রতি লিটার
পানিতে ০.৫ মিলি. হারে মিশিয়ে ১৫ দিন অন্তর অন্তর ২-৩ বার ভালভাবে স্প্রে করে এ
রোগ দমন করা যায়।
হটাৎ করে গাছ মারা যাওয়া –
উইল্টঃ ফিউজেরিয়াম উইল্ট নামক রোগের আক্রমনে সমস্যা
হয়। প্রথমে পাতা হলুদ হয়ে আসে এবং পরে শুকিয়ে যায়। এভাবে পাতার পর প্রশাখা-শাখা
এবং ধীরে ধীরে সমস্ত গাছই ৮-১০ দিনের মধ্যে নেতিয়ে পড়ে এবং মারা যায়।
প্রতিকারঃ এ রোগের কোন দমন ব্যবস্থা নেই। তবে নিন্ম লিখিত
ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।
মাঠে/বাগানে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। রোগের প্রাথমিক অবস্থায় বর্দ্দোমিক্সার অথবা কিউপ্রাভিট/কপার অক্সিক্লোরাইড প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করা যেতে পারে। বাগানের মাটির অম্লতা কমানোর জন্য জমিতে ডলোচুন প্রয়োগ করতে হবে ( ২৫০-৫০০ গ্রাম/গাছ)।
মাঠে/বাগানে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। রোগের প্রাথমিক অবস্থায় বর্দ্দোমিক্সার অথবা কিউপ্রাভিট/কপার অক্সিক্লোরাইড প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করা যেতে পারে। বাগানের মাটির অম্লতা কমানোর জন্য জমিতে ডলোচুন প্রয়োগ করতে হবে ( ২৫০-৫০০ গ্রাম/গাছ)।
ফল ঝরে যাওয়াঃ
অধিক খরা বা শীত মৌসুমে এবং ফুল ধরার সময় মাটিতে সেচ না দেয়া, মাটিতে বোরনের অভাব, রোগ বা পোকার আক্রমন ইত্যাদি অনেক কারণে ফল ঝরে যেতে পারে।
প্রতিকারঃ
শীত বা খরা মৌসুমে নিয়মিত সেচ প্রদান করতে হবে। গাছে ফুল ফোটার পর বৃষ্টি
না হলে অবশ্যই সেচ প্রদান করতে হবে। নিয়মিত সার ব্যবহার করতে হবে।
ফল
সংগ্রহঃ সাধারণত জুনের
মাঝামাঝি থেকে জুলাই এর মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে ফল পাকে, তখন
ফলের থোকাটি গাছ থেকে ছিঁড়ে বাঁশের ঝুড়িতে খড় বা ছালার চটের উপর রাখতে হয় যাতে ফলে
কোন প্রকার আঘাত না লাগে। পরে ফলে হলুদ বর্ণ ধারণ করার জন্য ঘরের গরম স্থানে চট
দিয়ে ঢেকে রেখে দিতে হবে। তাহলে ফল তাড়াতাড়ি পাকবে। ফল পাকার পর দ্রুত বাজারজাত
করতে হবে, কারণ পাকা ফল ৩ দিনের বেশি সংরক্ষণ করা হলে
ফলের খোসার উপরে খয়েরি দাগ পড়ে এবং তাতে বাজার মূল্য কমে যায়। ফলন ছোট গাছে ফল কম
ধরে তবে গাছ বড় হয়ে যখন বয়স ৮-১০ বছর হয়, তখন
পূর্ণমাত্রায় ফল ধরে এবং প্রায় ২৫-৩০ বছর পর্যন্ত তা চলতে থাকে। এ ক্ষেত্রে
গাছপ্রতি ২০ কেজি থেকে ১০০ কেজি পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। বসন্তকালে গাছে ফুল ধরে তখন
কুয়াশা পড়লে ফলন কমে যায়, কারণ অধিক আর্দ্রতা পরাগায়ন
বিঘিন্ত করে। ফলের গায়ে সরাসরি রোদ লাগলে সানর্বান হয়ে মান খারাপ হয়। এ কারণে ফল
পুষ্ট হলে গাছের ফল পুরাতন কাপড় দিয়ে ঢেকে দিলে ফলের রং সুন্দর হয় ও বাজারে মূল্য
ভাল পাওয়া যায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন