ডুমুর এক ধরনের নরম ও মিষ্টিজাতীয় ফল। এটি 'আঞ্জির' নামেই বেশি
পরিচিত। ডুমুরের বেশ কয়েকটি প্রজাতির রয়েছে। বাংলাদেশে যেটি পাওয়া যায়, সেটি 'কাকডুমুর' নামে পরিচিত। ফল আকারে বেশ ছোট এবং খাওয়ার অযোগ্য। এটা মূলত পাখিরাই খেয়ে থাকে। তবে
বেশ কিছু অঞ্চলে এ ফল
তরকারি হিসেবে খাওয়া হয়। যে ডুমুর ফল হিসেবে খাওয়া হয় তা মধ্যপ্রাচ্যে পাওয়া যায়। এটি আকারে বেশ বড় এবং মিষ্টি। এটি ফল হিসেবে
খুবই জনপ্রিয়। মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশেই ডুমুর বানিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়। ডুমুরের আবরণ
খুবই পাতলা এবং অভ্যন্তরে অনেক ছোট ছোট বীজ রয়েছে। ডুমুরের পাতা খসখসে হয়।
ডুমুর যার বৈজ্ঞানিক নাম ‘ফিকাস
হিসপিডিয়া’। ডুমুরের ওপরের আবরণ খুব পাতলা ও নরম। এই ফলের আরবি নাম
‘তীন’। হিন্দি, উর্দু ও ফারসি ভাষায় এটি ‘আঞ্জির’ নামে পরিচিত। সারা বিশ্বে ৬০০
প্রকারেরও বেশি ডুমুর চাষ হয়।
দুঃখের বিষয় আমাদের দেশে
সেই ডুমুরকে পাওয়া যায় পাখির খাদ্য হিসেবে। যদিও গ্রামে অনেকে এটাকে তরকারি হিসেবে
খেয়ে থাকেন। ডুমুর ভেষজ ওষুধ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। বিশ্বজুড়ে যে ডুমুর ফল হিসেবে
অধিক পরিচিত তার নাম হচ্ছে ‘ফিকাস কারিসা’।
পাকা ডুমুর দিয়ে জ্যাম, জেলি, চাটনি
ইত্যাদি তৈরি করা যায়। ডুমুর শুকিয়েও খাওয়া যায়। শুকনো ডুমুর বাদাম, কিসমিসের মতই নানা খাদ্যের উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
ডুমুরের পুষ্টিমানঃ প্রতি ১০০ গ্রাম শুকনো ডুমুরে রয়েছেঃ
উপাদান
|
পরিমাণ
|
কার্বোহাইড্রেট
|
৬৩.৮৭ গ্রাম
|
সুগার
|
৪৭.৯২ গ্রাম
|
আঁশ
|
৯.৮ গ্রাম
|
ফ্যাট
|
০.৯৩ গ্রাম
|
প্রোটিন
|
৩.৩০ গ্রাম
|
থায়ামিন
|
০.০৮৫ মি.গ্রা.
|
রিবোফ্লাভিন
|
০.০৮২ মি.গ্রা.
|
নিয়াসিন
|
০.৬১৯ মি.গ্রা.
|
প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড
|
০.৪৩৪ মি.গ্রা.
|
ভিটামিন বি-৬
|
০.১০৬ মি.গ্রা.
|
ফোলেট
|
৯ আইইইউ
|
ভিটামিন সি
|
১.২ মি.গ্রা.
|
ক্যালসিয়াম
|
১৬২ মি.গ্রা.
|
আয়রন
|
২.০৩ মি.গ্রা.
|
ম্যাগনেসিয়াম
|
৬৮ মি.গ্রা.
|
ফসফরাস
|
৬৭ মি.গ্রা.
|
পটাশিয়াম
|
৬৮০ মি.গ্রা.
|
জিঙ্ক
|
০.৫৫ মি.গ্রা.
|
এনার্জি
|
২৪৯ কিলোক্যালরি
|
ডুমুরের
উপকারিতাঃ
১। হাড় মজবুত করেঃ অনেক সময়
দেহে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এসময় হাত পায়ের গিঁটে ব্যথা, হাড়
ক্ষয়ে যাওয়া, দাঁত ভঙ্গুর ইত্যাদি হয়। এ থেকে নিজেকে
বাঁচাতে এবং প্রতিরোধ গড়ে তুলতে প্রয়োজন ক্যালসিয়ামের। কারণ ক্যালসিয়ামের রয়েছে
হাড় মজবুত এবং ক্ষয়রোধ করার দারুন কার্যকর ক্ষমতা। আর প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়ামের
নির্ভরযোগ্য একটি উৎসের নাম চির পরিচিত ডুমুর।
২। হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখেঃ ডুমুর ও ডুমুরের পাতায় এমন একটি উপাদান আছে
যা মানব দেহের ট্রাইগ্লিসারাইড লেভেল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এই লেভেল নিয়ন্ত্রণে
থাকলে হার্ট সুস্থ থাকে। এ ছাড়া ডুমুরে রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে ম্যাংগানিজ। তাই
খাদ্য তালিকায় ডুমুর রাখা জরুরী।
৩। স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ এক
গবেষণায় দেখা গেছে, খাদ্য আঁশ সমৃদ্ধ ডুমুর নিয়মিত খাওয়ার ফলে
৩৪% নারীর মধ্যে স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কমে গেছে। যেসব নারীরা মেনোপজ
অর্থাৎ মাসিক স্থায়ীভাবে বন্ধ করেন তাদের পরবর্তী সময়ে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে
যায়। এতে স্তন ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায় অনেক বেশি। নিয়মিত ডুমুর খেলে এ
সম্ভাবনাকে ৫০% পর্যন্ত কমিয়ে আনা সম্ভব।
৪। উচ্চ
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেঃ পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
নিয়মিত পটাশিয়ামের যোগান দিতে ডুমুরের জুড়ি নেই। ফল হিসেবে খাবার অভ্যাস না থাকলেও
মাঝে মাঝে সবজি হিসেবে রাখতে পারেন খাবার তালিকায়। তাছাড়া বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে
উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যায় পড়েন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়ায় দুষ্কর। নিজেকে তাদের
তালিকার বাইরে রাখতে এখনই নিতে পারেন ব্যবস্থা।
৫। দেহের
ওজন কমায়ঃ ডুমুরে উপস্থিত পেকটিন রক্তে কোলেস্টেরলের
মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। যারা নিজের ওজন নিয়ে সংশয়ে ভোগেন তারা নিয়মিত ডুমুর খেতে
পারেন।
৬। ডায়াবেটিক
নিয়ন্ত্রণ করেঃ ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণে রাখতে রোগিকে ইনসুলিন
ইনজেকশন নিতে হয়। গবেষণায় জানা গেছে, ডুমুরের পাতায় আছে
অ্যান্টি-ডায়াবেটিক উপাদান। যা রোগিকে ইনসুলিন গ্রহণের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে।
ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ডুমুরের পাতার রস সকালের নাশতায় খেতে পারেন। ইনসুলিনের ওপর
নির্ভরশীল ডায়াবেটিক রোগির জন্য ডুমুর খুবই উপকারি।
৭। পেটের
সমস্যা দুর করেঃ পেটের সমস্যা দূর করতে ডুমুর খুব ভালো কাজ
করে। কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাইলস প্রতিরোধে সহায়ক হিসেবে কাজ করে ডুমুর। এছাড়াও
দুর্বলতায় ভোগেন এরকম ব্যক্তির জন্য ডুমুর উপকারী। পিত্ত ঠাণ্ডা করতেও বেশ উপযোগী।
এছাড়াও ডুমুরের নানাবিধ ব্যবহার প্রচলিত আছে। কাটা ছেড়া বা পোকামাকড়ের কামড়ে
জ্বালা পোড়ারোধে ডুমুরের রস ব্যবহার করলে উপশম হবে। ব্রণ সারাতেও দারুন কার্যকর।
৮। যৌন শক্তি
বৃদ্ধিতে ডুমুরঃ প্রতিদিন ডুমুর সেবন
কারলে শুক্রানু বৃদ্ধি ও যৌন শক্তি বৃদ্ধি পায়। সেবনবিধিঃ ডুমুরঃ ৩-৫ টি ।
সতর্কতা: অতিরিক্ত মাত্রায় ডুমুর সেবন যকৃৎ, পাকস্থলী ও দাঁতের জন্য
ক্ষতিকারক।
৯। মেয়েদের মাসিকের সময় বেশি রক্তস্রাব
হলে কচি ডুমুরের রসের সঙ্গে সামান্য মধু মিশিয়ে খেলে উপকার হয় এবং রক্তপিত্ত সারে
১০। ডুমুর পিত্ত ও আমাশয়
রোগে উপকারী
১১। এতে অধিক পরিমাণে লোহা
আছে (অতিরিক্ত খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে)
১২। রক্তপিত্ত, রক্তপড়া এবং রক্তহীনতা রোগে উপকারী
১৩। জ্বরের পর ডুমুর
রান্না করে খেলে এটি টনিকের কাজ করে
১৪। দুধ ও চিনির সঙ্গে
ডুমুরের রস খেলেও অধিক ঋতুস্রাব বন্ধ হয়
১৫। আমাশয় হলে ৩ দিন কচি
ডুমুরের পাতা আতপ চালের সাথে চিবিয়ে খেলে ভালো হয়
১৬। সাদা ও রক্ত আমাশয় হলে
ডুমুর গাছের ছালের ২ চামচ রস এবং মধু মিশিয়ে দুই বেলা খেলে উপকার হয়
১৭। মাথা ঘোরা রোগে ডুমুর
ভাজি করে খেলে উপকার পাওয়া যায়
১৮। অতিরিক্ত হেঁচকি উঠলে
ডুমুরের বাইরের অংশ কেটে পানিতে এক ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর ঐ পানি ছেঁকে এক
চা চামচ করে খেলে হেঁচকি ওঠা বন্ধ হয়
১৯। ডুমুর গাছের ছাল পানি
সহ সিদ্ধ করে সেই পানি দ্বারা ত্বক ধৌত করলে চর্মের বিবর্ণতা এবং ক্ষত রোগে উপকার
হয়
২০। দুধের সাথে সিদ্ধ করে
প্রলেপ দিলে ফোঁড়া পাকে
২১। ক্ষুধামন্দা রোগে ১ চা
চামচ কাঁচা ডুমুরের রস খাওয়ার পর সেবন করলে ভাল ফল পাওয়া যায়
২২। অপুষ্টিজনিত
রোগে ডুমুরঃ পাকা ডুমুর কেটে শুকিয়ে নিতে হবে। তারপর আধা কাপ দুধে সিদ্ধ
করে নিয়মিত খেতে হবে। এক সপ্তাহ পর ভাল ফল পাওয়া যাবে। সেবনবিধিঃ শুকনো ফলঃ ৫
গ্রাম । সতর্কতা অতিরিক্ত মাত্রায় ডুমুর সেবন যকৃৎ, পাকস্থলী ও
দাঁতের জন্য ক্ষতিকারক।
২৩। ফোঁড়া পাকাতে ডুমুরঃ ডুমুর
দুধের সাথে সিদ্ধ করে প্রলেপ দিলে ফোঁড়া পাকে। সতর্কতাঃ তেমন কোন সতর্কতার প্রয়োজন নেই ।
২৪। মুখ, জিভ বা ঠোঁট ফাটার সমস্যা থাকলে তা নিরাময় করতে ডুমুর সাহায্য করে।
২৫। প্রচুর পরিমাণে ফাইবার
থাকায় ডুমুর কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাইলস প্রতিরোধে সহায়তা করে ।
২৬।
মেনোপজ পরবর্তী পর্যায়ের জন্য উপকারীঃ মেনোপজ পরবর্তী
পর্যায়ে স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে ডুমুর সাহায্য করে। খাদ্যআঁশ সমৃদ্ধ ডুমুর
খাদ্যতালিকায় রাখার ফলে ৩৪% নারীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কম দেখা
দিয়েছে। মেনোপজ পরবর্তী পর্যায়ে যেসব নারীরা হরমোন রিপ্লেসমেন্ট পদ্ধতি নেওয়ার
সাথে সাথে ডায়েটে সিরিয়াল ফাইবার রেখেছেন, তাদের মধ্যে স্তন
ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা ৫০% কম দেখা গিয়েছে।
সতর্কতাঃ
অতিরিক্ত ডুমুর খেলে
কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে এবং যকৃৎ, পাকস্থলী
ও দাঁতের জন্য ক্ষতিকর।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন