রসুনের বৈজ্ঞানিক নাম
অ্যালিয়াম স্যাটিভাম (Allium sativum)। রসুন
খুবই পুষ্টিকর ৷ এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও ১৭ টি এমাইনো এসিড ময়শ্চার,
প্রোটিন, ফ্যাট, মিনারেল, ফাইবার ও কার্বোহাইড্রেট। ভিটামিন ও
মিনারেলের মধ্যে আছে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, থিয়ামিন, রিবোফ্লাভিন,
নিয়াসিন, এবং আয়োডিন, সালফার এবং ফ্লোরিনও আছে অল্প পরিমাণে। রসুন স্বাস্থ্যের জন্য কত
উপকারী তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আর এই কারণে বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি রসুনকে ‘বিস্ময়কর
ওষুধ’
নামে অভিহিত করেছেন।
রসুনে রয়েছে একশরও
বেশি রাসায়নিক উপাদান। এতে রয়েছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল,
এন্টি-ভাইরাল, এন্টি ফাংগাল এবং এন্টি
অক্সিডেন্ট উপাদান। আর সেই কারণেই রসুন জীবাণুর সংক্রমণের বিরুদ্ধে দেহে যুদ্ধ
করার শক্তি জোগায়।
১ থেকে ৩ কোয়া (৩-৯
গ্রাম) রসুনে পাওয়া যায় কার্বোহাইড্রেট ৩৩ দশমিক শূন্য ৬ গ্রাম,
শূন্য দশমিক ৫ গ্রাম ফ্যাট, প্রোটিন ৬
দশমিক ৩৬ গ্রাম, ৩১ দশমিক ২ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি,
ক্যালসিয়াম ১৮১ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেশিয়াম
২৫ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ১৫৩ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৪০১ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ১৭ মিলিগ্রাম,
লৌহ ১ দশমিক ৭ মিলিগ্রাম, ম্যাঙ্গানিজ ১
দশমিক ৬৭২ মিলিগ্রাম, জিঙ্ক ১ দশমিক ১৬ মিলিগ্রাম।
কাঁচা
রসুন খাওয়া অনেকেই একেবারে পছন্দ করেন না। মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার ভয়ে অনেকেই কাঁচা
রসুনের কাছ থেকে দূরেই থাকেন। কিন্তু বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায় কাঁচা রসুনের
স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেক বেশি।
খালি পেটে রসুন খাওয়া
দেহের জন্য ভীষণ স্বাস্থ্যকর একটি ব্যাপার। বরং খালি পেটে রসুন খেলে এমন কিছু
উপকার হয়, যেটা অন্য খাবারের সাথে
রান্না করা অবস্থায় খেলে হয় না। খালি পেটে রসুন অবশ্যই খেতে হবে সকালে,
নাস্তা করার আগে। চিবিয়ে খেতে না চাইলে পানি দিয়ে গিলে ফেলুন দুই
কোয়া রসুন। তবে হ্যাঁ, অবশ্যই টুকরো করে নেবেন।
খালি পেটে রসুন খাওয়া
মূলত রসুনের ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়, একে পরিণত করে
একটি শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিকে। গবেষকদের মতে খালি পেটে রসুন খাওয়া হাইপারটেনশন
ও স্ট্রেস কমাতে সহায়তা করে, অন্যদিকে হজমের গণ্ডগোল রোধ
করে। স্ট্রেস থেকে পেটে গ্যাসের সমস্যা হলে সেটাও প্রতিরোধ করে খালি পেটে রসুন।
অন্যদিকে পেটের গণ্ডগোল জনিত অসুখ, যেমন ডায়রিয়া হলে এই
খালি পেটে রসুন দ্রুত তা সারিয়ে দেয়। সকালে খালি পেটে রসুন খাওয়া শরীরের রক্ত
পরিশুদ্ধ করে ও লিভারের ফাংশন ভালো রাখতেও সহায়তা করে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার
তথ্যমতে, প্রতি মিলি লিটার শুক্রাণুতে ২০ মিলিযেনর কম স্পার্ম থাকলে যেকোনো পুরুষ অনুর্বর হতে পারেন। বাজে খাদ্যাভ্যাস, ধূমপান, অ্যালকোহল, অনিযন্ত্রিত জীবন, ব্যাযামে
অনীহা প্রভৃতি কারণে দিন দিন অনুর্বরতা বাডেছে। এক্ষেত্রে বিশেষ সহাযক রসুন। কেননা সুস্থ বীর্য তৈরিতে রসুনের জুড়ি মেলা ভার।
আপনার যৌন ইচ্ছা ফিরে আনার ক্ষেত্রে এর ব্যবহার খুবই কার্যকরী। কোন
রোগের কারণে বা দুর্ঘটনায আপনার যৌন ইচ্ছা কমে গেলে এটি আপনাকে তা পুনরায ফিরে
পেতে সাহায্য করে।
এ ছাড়া যদি কোন ব্যক্তির যৌন ইচ্ছা খুব বেশী হয বা তা
মাত্রাতিরিক্ত হয যার অত্যধিক প্রযোগ তার নার্ভাস সিস্টেমের ক্ষতি করতে পারে এমন
ক্ষেত্রে ও রসুন খুব ই কার্যকরী।
প্রতিদিন নিয়ম করে কয়েক কোয়া কাঁচা রসুন খেলে শরীরের যৌবন দীর্ঘ
স্থায়ি হয়। যারা পড়ন্ত যৌবনে চলে গিয়েছেন, তারা প্রতিদিন দু’কোয়া
রসুন খাঁটি গাওয়া ঘি-এ ভেজে মাখন মাখিয়ে খেতে পারেন। তবে খাওয়ার শেষে একটু গরম জল
বা দুধ খাওয়া উচিৎ। এতে ভাল ফল পাবেন।
যৌবন রক্ষার জন্য রসুন অন্যভাবেও খাওয়া যায়। কাঁচা আমলকির রস দুই
বা এক চামচ নিয়ে তার সঙ্গে এক বা দুই কোয়া রসুন বাটা খাওয়া যায়। এতে স্ত্রী-পুরুষ
উভয়ের যৌবন দীর্ঘস্থায়ি হয়।
বিশেষ
করে নানা ধরণের শারীরিক সমস্যা দূর করতে কাঁচা রসুনের জুড়ি নেই। ইউনিভার্সিটি অফ
হেলথ অ্যান্ড মেডিক্যাল সাইন্সের গবেষণায় রসুনের এইসকল গুণাবলী প্রকাশ পায়।
আজ
জেনে নিন রসুনের এমনই অসাধারণ কিছু গুণাবলী সম্পর্কে। জেনে নিন প্রতিদিন মাত্র ২
কোয়া রসুন খাওয়ার উপকারিতা।
১.
হৃদপিণ্ডের সুস্থতায় কাজ
করে। কোলেস্টেরল কমায়। এতে করে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে।
২.
শিরা উপশিরায় প্লাক জমতে
বাঁধা প্রদান করে। রক্ষা করে শিরা উপশিরায় মেদ জমার মারাত্মক রোগ
অথেরোস্ক্লেরোসিসের হাত থেকে।
৩.
উচ্চ রক্ত চাপের সমস্যা
দূর করে।
৪.
গিঁট বাতের সমস্যা থেকে
রক্ষা করে।
৫.
ফ্লু এবং শ্বাস
প্রশ্বাসের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে।
৬.
অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান দেহে খারাপ ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ, জন্ম এবং বংশবিস্তারে বাঁধা প্রদান করে।
৭.
যক্ষ্মা রোগের হাত থেকে
রক্ষা করে।
৮.
দেহের বিভিন্ন অংশের
পুঁজ ও ব্যথাযুক্ত ফোঁড়ার যন্ত্রণা কমায়।
৯.
যৌনমিলনের অসাবধানতা বশত
রোগ ট্রিকোমোনিয়াসিসের হাত থেকে রক্ষা করে।
১০.
হজমশক্তি বাড়ায় ও
কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে।
১১.
কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ
করে।
১২.
গলব্লাডার ক্যান্সার
মুক্ত রাখে।
১৩.
স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি
কমায়।
১৪.
রেক্টাল ক্যান্সারের হাত
থেকে রক্ষা করে।
১৫.
প্রোস্টেট ক্যান্সার
প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।
১৬.
পরিপাকতন্ত্রের নানা
সমস্যা দূর করে।
১৭.
ইষ্ট ইনফেকশন দূর করে।
১৮.
শিরা উপশিরায় জমাট বাঁধা
রক্ত ছাড়াতে সহায়তা করে।
১৯.
ক্ষুধামন্দা ভাব দূর
করে।
২০.
দেহের অভ্যন্তরীণ
ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া এবং কৃমি ধ্বংস করে।
২১.
চোখে ছানি পড়ার হাত থেকে
রক্ষা করে।
২২.
হাতে পায়ে জয়েন্টের
ব্যথা দূর করে এবং বাতের ব্যথা সারায়।
২৩.
ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে
সহায়তা করে।
২৪.
স্টাফিলোকোক্কাস ইনফেকশন
দূর করে।
২৫.
দাঁতের ব্যথা সারাতে
সহায়তা করে।
২৬.
ব্রণ সমস্যা দূরে রাখে। ব্রনের
উপর রসুনের কোঁয়া ঘষে নিন,তাড়াতাড়ি মিলিয়ে যাবে।
২৭.
আঁচিলের সমস্যা সমাধান
করে।
২৮.
দাদ, খোস-পাঁচড়া ধরণের চর্মরোগের হাত থেকে রক্ষা করে।
২৯.
চামড়ায় ফোসকা পড়ার
যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেয়।
৩০.
রসুনের ফাইটোনসাইড
অ্যাজমা সমস্যা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
৩১.
দীর্ঘমেয়াদী হুপিং কাশি
ও ব্রঙ্কাইটিসের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
৩২.
ঘুম না হওয়া, অনিদ্রা রোগ মুক্ত রাখে।
৩৩.
ত্বককে বুড়িয়ে যাওয়ার
হাত থেকে রক্ষা করে।
৩৪.
দেহের রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
সতর্কতাঃ দিনে ২ কোয়ার বেশি কাঁচা রসুন খাওয়া যাবে না। রান্নায় রসুন ব্যবহার
হলেও দিনে মাত্র ২ কোয়া রসুন খাওয়া যায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন