শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১৩

কোরবানির দিন ও কোরবানির দিনের ফজিলত



দিনের একটি নাম হল ইয়াওমুল হজ্জিল আকবর বা শ্রেষ্ঠ হজের দিন। যে দিনে হাজীগণ তাদের পশু জবেহ করে হজকে পূর্ণ করেন। হাদিসে এসেছেইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত যেরাসূলুল্লাহ . কোরবানির দিন জিজ্ঞেস করলেন এটা কোন দিনসাহাবাগণ উত্তর দিলেন এটা ইয়াওমুন্নাহার বা কোরবানির দিন। রাসূলে কারীম . বললেন : এটা হল ইয়াওমুল হজ্জিল আকবর বা শ্রেষ্ঠ হজের দিন। 

 কোরবানির দিনটি হল বছরের শ্রেষ্ঠ দিন। আব্দুল্লাহ ইবনে কুর্ত রা. থেকে বর্ণিত যেরাসূলে কারীম . বলেছেনআল্লাহর নিকট দিবস সমূহের মাঝে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ দিন হল কোরবানির দিনতারপর পরবর্তী তিনদিন। 



 কোরবানির দিনের করণীয়

·         ঈদের সালাত আদায় করা,
·         এর জন্য সুগন্ধি ব্যবহার,
·         পরিচ্ছন্নতা অর্জন,
·         সুন্দর পোশাক পরিধান করা
·         তাকবীর পাঠ করা
·         কোরবানির পশু জবেহ করা তার গোশত আত্মীয়-স্বজনপাড়া-প্রতিবেশীবন্ধু-বান্ধব দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা
·         সকল কাজের মাধ্যমে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য অর্জন সন্তুষ্টি অন্বেষণের চেষ্টা করা
·         দিনটাকে শুধু খেলা-ধুলাবিনোদন পাপাচারের দিনে পরিণত করা কোন ভাবেই ঠিক নয়

 কোরবানির দিনটি হল ঈদুল ফিতরের দিনের চেয়েও মর্যাদাসম্পন্ন। কেননা দিনটি বছরের শ্রেষ্ঠ দিন  দিনে সালাত কোরবানি একত্র হয়। যা ঈদুল ফিতরের সালাত সদকাতুল ফিতরের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। আল্লাহ তাআলা তার রাসূলকে কাওসার দান করেছেন। এর শুকরিয়া আদায়ে তিনি তাকে দিনে কোরবানি সালাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। 

 - কোরবানি

পশু উৎসর্গ করা হবে এক আল্লাহর এবাদতের উদ্দেশ্যে যার কোন শরিক নেই। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন শুধু তার এবাদত করার জন্য। যেমন তিনি বলেন : ‘আমি জিন মানুষকে জন্য সৃষ্টি করেছি যে তারা শুধু আমার এবাদত করবে।
আল্লাহ তাআলা তার এবাদতের জন্য মানব জাতিকে সৃষ্টি করলেন
এবাদত বলে,—যে সকল কথা কাজ আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ভালোবাসেন পছন্দ করেনহোক সে কাজ প্রকাশ্যে বা গোপনে। আর এবাদতের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল তার উদ্দেশ্যে পশু জবেহ করা।  কাজটি তিনি শুধু তার উদ্দেশ্যে করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। বলেছেন :—

 ‘বলআমার সালাতআমার কোরবানিআমার জীবন আমার মরণ জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে। তার কোন শরিক নাই এবং আমি এর জন্য আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই প্রথম মুসলিম।’ 

 ইবনে কাসীর রহ. বলেন : আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নির্দেশ দিয়েছেন যে সকল মুশরিক আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে পশু জবেহ করে তাদের যেন জানিয়ে দেয়া হয় আমরা তাদের বিরোধী। সালাতকোরবানি শুধু তার নামেই হবে যার কোন শরিক নাই।  কথাই আল্লাহ তাআলা সূরা কাওসারে বলেছেন : ‘তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর পশু কোরবানি কর।’ 
 অর্থাৎ তোমার সালাত কোরবানি তারই জন্য আদায় কর। কেননা মুশরিকরা প্রতিমার উদ্দেশে প্রার্থনা করে পশু জবেহ করে। আর সকল কাজে এখলাস অবলম্বন করতে হবে। এখলাসের আদর্শে অবিচল থাকতে হবে
 যে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে পশু উৎসর্গ বা জবেহ করবে তার ব্যাপারে কঠোর শাস্তির কথা
আবু তোফায়েল থেকে বর্ণিত তিনি বলেন : আমি আলী ইবনে আবি তালেবের কাছে উপস্থিত ছিলাম। এক ব্যক্তি তার কাছে এসে বলল :‘নবী কারীম . গোপনে আপনাকে কি বলেছিলেন ?’ বর্ণনাকারী বলেন : আলী রা. কথা শুনে রেগে গেলেন এবং বললেন : ‘নবী কারীম . মানুষের কাছে গোপন রেখে আমার কাছে একান্তে কিছু বলেননি। তবে তিনি আমাকে চারটি কথা বলেছেন। বর্ণনাকারী বলেন,এরপর লোকটি বলল : ‘হে আমিরুল মোমিনীন ! সে চারটি কথা কি ? তিনি বললেন :
·         . যে ব্যক্তি তার পিতামাতাকে অভিশাপ দেয় আল্লাহ তাকে অভিশাপ দেন
·         . যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে পশু জবেহ করে আল্লাহ তার উপর লানত করেন
·         . ব্যক্তির উপর আল্লাহ লানত করেন যে ব্যক্তি কোন বেদআতীকে প্রশ্রয় দেয়
·         . যে ব্যক্তি জমির সীমানা পরিবর্তন করে আল্লাহ তাকে লানত করেন। []

কাজগুলো এমনযে ব্যক্তি তা করল সে ইসলামের গণ্ডি থেকে বের হয়ে কুফরির সীমানায় প্রবেশ করল
হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমাম নবভী রহ. বলেন : আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে পশু জবেহ করার অর্থ এমনযেমন কোন ব্যক্তি প্রতিমার নামে জবেহ করল অথবা কোন নবীর নামে জবেহ করল বা কাবার নামে জবেহ করল।  ধরনের যত জবেহ হবে সব না-জায়েজ তা খাওয়া হারাম। জবেহকারী মুসলিম হোক বা অমুসলিম
যা আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে জবেহ করা হয় তা হারাম ঘোষণা করা হয়েছে:
তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত জন্তুরক্তশুকর মাংসআল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে জবেহকৃত পশু আর শ্বাস রোধে মৃত জন্তু,শৃংগাঘাতে মৃত জন্তু এবং হিংস্র পশুতে খাওয়া জন্তু ; তবে যা তোমরা জবেহ করতে পেরেছ তা ব্যতীতআর যা মূর্তি পূজার বেদীর উপর বলি দেয়া হয় তা এবং জুয়ার তীর দ্বারা ভাগ্য নির্ণয় করা সব হল পাপ-কার্য...  ইবনে কাসীর রহ. বলেছেন যা কিছু আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে জবেহ করা হয় তা যে হারাম ব্যাপারে মুসলিমদের ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত

- যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে পশু জবেহ করে সে জাহান্নামে যাবে

সালমান রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন : এক ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে একটি মাছির কারণে। অন্য এক ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করবে একটি মাছির কারণে।  কথা শুনার পর লোকেরা জিজ্ঞেস করল এটা কীভাবে হবে ? তিন বললেন : দু ব্যক্তি এক সম্প্রদায়ের কাছ দিয়ে যাচ্ছিল। সে সম্প্রদায়ের নিয়ম হল যে ব্যক্তি তাদের কাছ দিয়ে যাবে তাকে তাদের প্রতিমার উদ্দেশ্যে কিছু উৎসর্গ করতে হবে। সে সম্প্রদায়ের লোকেরা দুজনের একজনকে বলল : আমাদের প্রতিমার জন্য কিছু উৎসর্গ কর ! লোকটি উত্তর দিল আমার কাছে তো এমন কিছু নেই যা আমি প্রতিমার জন্য উৎসর্গ করতে পারি। তারা বলল একটি মাছি হলেও উৎসর্গ কর। সে একটি মাছি উৎসর্গ করল। তারা তাকে ছেড়ে দিল। ফলে সে জাহান্নামে যাবে।তারপর তারা দ্বিতীয় ব্যক্তিকে অনুরূপ কথা বলল। সে উত্তরে বলল আমি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য কিছু উৎসর্গ করি না। তারা তাকে হত্যা করল। ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করল।
বর্ণিত হাদিস থেকে আমারা কয়েকটি শিক্ষা লাভ করতে পারি
·         শিরক কত বড় মারাত্মক অপরাধ তা অনুধাবন করা যায়। যদি তা খুব সামান্য বিষয়েও হয়। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেছেন : ‘যে আল্লাহর সাথে শরিক করবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত অবশ্যই নিষিদ্ধ করবেন এবং তার আবাস জাহান্নাম। জালেমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই।’ 
·         যে লোকটি জাহান্নামে গেল সে কিন্তু উক্ত কাজ করতে ইচ্ছুক ছিল না। কিন্তু সে মুশরিকদের ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য কাজটি করেছিল
·         যে লোকটি জাহান্নামে গেল সে মুসলিম ছিল, কিন্তু সামান্য বিষয়ে শিরক করার কারণে জাহান্নামে গেল
·         তাওহীদ এখলাসের ফজিলত কত বেশি তা অনুধাবন করা যায়
·         যে লোকটি জান্নাতে প্রবেশ করল সে তাওহীদের জন্য নির্যাতন সহ্য করল, নিহত হল তবু শিরকের সাথে আপোশ করল না

- কোরবানির অর্থ তার প্রচলন
কোরবানি বলা হয় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য অর্জন তার এবাদতের জন্য পশু জবেহ করা। আর আল্লাহর উদ্দেশ্যে পশু জবেহ করা তিন প্রকার হতে পারে :
. হাদী . কোরবানি . আকীকাহ
তাই কোরবানি বলা হয় ঈদুল আজহার দিনগুলোতে নির্দিষ্ট প্রকারের গৃহপালিত পশু আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য জবেহ করা
ইসলামি শরিয়তে এটি এবাদত হিসেবে সিদ্ধযা কোরআনহাদিস মুসলিম উম্মাহর ঐক্যমত দ্বারা প্রমাণিত। কোরআন মজীদে যেমন এসেছে : ‘তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর পশু কোরবানি কর।’ 
বলআমার সালাতআমার কোরবানিআমার জীবন আমার মরণ জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে। তার কোন শরিক নাই এবং আমি এর জন্য আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই প্রথম মুসলিম। 
হাদিসে এসেছেবারা ইবনে আযিব রা. থেকে বর্ণিত যে রাসূলুল্লাহ . বলেছেন : যে ঈদের সালাতের পর কোরবানির পশু জবেহ করল তার কোরবানি পরিপূর্ণ হল সে মুসলিমদের আদর্শ সঠিকভাবে পালন করল। 
আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন : আল্লাহর রাসূল . নিজ হাতে দুটি সাদা কালো বর্ণের দুম্বা কোরবানি করেছেন। তিনি বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবর বলেছেন। তিনি পা দিয়ে দুটো কাঁধের পাশ চেপে রাখেন। তবে বোখারিতে ‘সাদা-কালো’ শব্দের পূর্বেশিংওয়ালা’ কথাটি উল্লেখ আছে

- কোরবানির বিধান

কোরবানির হুকুম কি ? ওয়াজিব না সুন্নত ?  বিষয়ে ইমাম ফকীহদের মাঝে দুটো মত রয়েছে

প্রথম মত : কোরবানি ওয়াজিব। ইমাম আওযায়ীইমাম লাইসইমাম আবু হানীফা রহ. প্রমুখের মত এটাই। আর ইমাম মালেক ইমাম আহমদ রহ. থেকে একটি মত বর্ণিত আছে যে তারাও ওয়াজিব বলেছেন

দ্বিতীয় মত : কোরবানি সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। এটা অধিকাংশ উলামাদের মত। এবং ইমাম মালেক শাফেয়ী রহ.-এর প্রসিদ্ধ মত। কিন্তু মতের প্রবক্তারা আবার বলেছেন : সামর্থ্য থাকা অবস্থায় কোরবানি পরিত্যাগ করা মাকরূহ। যদি কোন জনপদের লোকেরা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও সম্মিলিতভাবে কোরবানি পরিত্যাগ করে তবে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হবে। কেননাকোরবানি হল ইসলামের একটি শিয়ার বা মহান নিদর্শন। 
যারা কোরবানি ওয়াজিব বলেন তাদের দলিল :
·         (এক) আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়েছেন : ‘তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর পশু কোরবানি কর।’  আর আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নির্দেশ পালন ওয়াজিব হয়ে থাকে
·         (দুই) রাসূলে কারীম . বলেছেন : ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহের ধারে না আসে।
যারা কোরবানি পরিত্যাগ করে তাদের প্রতি হাদিস একটি সতর্ক-বাণী। তাই কোরবানি ওয়াজিব
·         (তিন) রাসূলে কারীম . বলেছেনহে মানব সকল ! প্রত্যেক পরিবারের দায়িত্ব হল প্রতি বছর কোরবানি দেয়া। 

 যারা কোরবানি সুন্নত বলেন তাদের দলিল :
(এক) রাসূলুল্লাহ . বলেছেন : ‘তোমাদের মাঝে যে কোরবানি করতে চায়যিলহজ মাসের চাঁদ দেখার পর সে যেন কোরবানি সম্পন্ন করার আগে তার কোন চুল নখ না কাটে।’ 
হাদিসে রাসূল .-এর ‘যে কোরবানি করতে চায়’ কথা দ্বারা বুঝে আসে এটা ওয়াজিব নয়
(দুই) রাসূল . তার উম্মতের মাঝে যারা কোরবানি করেনি তাদের পক্ষ থেকে কোরবানি করেছেন। তার কাজ দ্বারা বুঝে নেয়া যায় যে কোরবানি ওয়াজিব নয়
শাইখ ইবনে উসাইমীন রহ. উভয় পক্ষের দলিল-প্রমাণ উল্লেখ করার পর বলেন: সকল দলিল-প্রমাণ পরস্পর বিরোধী নয় বরং একটা অন্যটার সম্পূরক। সারকথা হল যারা কোরবানিকে ওয়াজিব বলেছেন তাদের প্রমাণাদি অধিকতর শক্তিশালী। আর ইমাম ইবনে তাইমিয়ার মত এটাই
 - কোরবানির ফজিলত

() কোরবানি দাতা নবী ইবরাহিম . মুহাম্মদ সা.-এর আদর্শ বাস্তবায়ন করে থাকেন

() পশুর রক্ত প্রবাহিত করার মাধ্যমে কোরবানি দাতা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য অর্জন করেন। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন :—
আল্লাহর নিকট পৌঁছায় না তাদের গোশত এবং রক্তবরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া। এভাবে তিনি এগুলোকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন যাতে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর এজন্য যেতিনি তোমাদের পথ-প্রদর্শন করেছেন ; সুতরাং আপনি সুসংবাদ দিন সৎকর্মপরায়ণদেরকে।’ 

() পরিবার-পরিজনআত্মীয়-স্বজনপাড়া-প্রতিবেশী অভাবীদের আনন্দ দান। আর এটা অন্য এক ধরনের আনন্দ যা কোরবানির গোশতের পরিমাণ টাকা যদি আপনি তাদের সদকা দিতেন তাতে অর্জিত হত না। কোরবানি না করে তার পরিমাণ টাকা সদকা করে দিলে কোরবানি আদায় হবে না
   

কোরবানির শর্তাবলি

(এমন পশু দ্বারা কোরবানি দিতে হবে যা শরিয়ত নির্ধারণ করে দিয়েছে। সেগুলো হল উটগরুমহিষছাগলভেড়া,দুম্বা।  গুলোকে কোরআনের ভাষায় বলা হয় ‘বাহীমাতুল আনআম।’ যেমন এরশাদ হয়েছে :—
আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য কোরবানির নিয়ম করে দিয়েছি ; তিনি তাদেরকে জীবনোপকরণ স্বরূপ যে সকল চতুষ্পদ জন্তু দিয়েছেন,সেগুলোর উপর যেন তারা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে।
 হাদিসে এসেছে :—
তোমরা অবশ্যই নির্দিষ্ট বয়সের পশু কোরবানি করবে। তবে তা তোমাদের জন্য দুষ্কর হলে ছয় মাসের মেষ-শাবক কোরবানি করতে পার। ’ আর আল্লাহর রাসূল সা. উটগরুমহিষছাগলভেড়াদুম্বা ছাড়া অন্য কোন জন্তু কোরবানি করেননি কোরবানি করতে বলেননি। তাই কোরবানি শুধু এগুলো দিয়েই করতে হবে
ইমাম মালিক রহ.-এর মতে কোরবানির জন্য সর্বোত্তম জন্তু হল শিংওয়ালা সাদা-কালো দুম্বা। কারণ রাসূলে কারীম সা. ধরনের দুম্বা কোরবানি করেছেন বলে বোখারি মুসলিমের হাদিসে এসেছে। উট গরু-মহিষে সাত ভাগে কোরবানি দেয়া যায়। যেমন হাদিসে এসেছে,‘আমরা হুদাইবিয়াতে রাসূলুল্লাহ .-এর সাথে ছিলাম। তখন আমরা উট গরু দ্বারা সাত জনের পক্ষ থেকে কোরবানি দিয়েছি। ’ গুণগত দিক দিয়ে উত্তম হল কোরবানির পশু হৃষ্টপুষ্টঅধিক গোশত সম্পন্ননিখুঁতদেখতে সুন্দর হওয়া

() শরিয়তের দৃষ্টিতে কোরবানির পশুর বয়সের দিকটা খেয়াল রাখা জরুরি। উট পাঁচ বছরের হতে হবে। গরু বা মহিষ দু বছরের হতে হবে। ছাগলভেড়াদুম্বা হতে হবে এক বছর বয়সের

() কোরবানির পশু যাবতীয় দোষ-ত্রটি মুক্ত হতে হবে। যেমন হাদিসে এসেছে :—
সাহাবি আল-বারা ইবনে আযেব রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ আমাদের মাঝে দাঁড়ালেন তারপর বললেন : চার ধরনের পশুযা দিয়ে কোরবানি জায়েজ হবে না। অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে পরিপূর্ণ হবে নাঅন্ধ ; যার অন্ধত্ব স্পষ্ট,রোগাক্রান্ত ; যার রোগ স্পষ্টপঙ্গু ; যার পঙ্গুত্ব স্পষ্ট এবং আহত ; যার কোন অংগ ভেংগে গেছে। নাসায়ির বর্ণনায়আহত’ শব্দের স্থলে ‘পাগল’ উল্লেখ আছে।  আবার পশুর এমন কতগুলো ত্রুটি আছে যা থাকলে কোরবানি আদায় হয় কিন্তু মাকরূহ হবে।  সকল দোষত্রটিযুক্ত পশু কোরবানি না করা ভাল। সে ত্রটিগুলো হল শিং ভাংগাকান কাটালেজ কাটাওলান কাটা,লিংগ কাটা ইত্যাদি
() যে পশুটি কোরবানি করা হবে তার উপর কোরবানি দাতার পূর্ণ মালিকানা সত্ত্ব থাকতে হবে। বন্ধকি পশুকর্জ করা পশু বা পথে পাওয়া পশু দ্বারা কোরবানি আদায় হবে না

কোরবানির নিয়মাবলিকোরবানির পশু কোরবানির জন্য নির্দিষ্ট করা
কোরবানির জন্য পশু পূর্বেই নির্ধারণ করতে হবে। এর জন্য নিম্নোক্ত দুটো পদ্ধতির একটি নেয়া যেতে পারে
() মুখের উচ্চারণ দ্বারা নির্দিষ্ট করা যেতে পারে। এভাবে বলা যায় যে ‘ পশুটি আমার কোরবানির জন্য নির্দিষ্ট করা হল।’ তবে ভবিষ্যৎ বাচক শব্দ দ্বারা নির্দিষ্ট হবে না। যেমন বলা হল—‘আমি পশুটি কোরবানির জন্য রেখে দেব।

() কাজের মাধ্যমে নির্দিষ্ট করা যায় যেমন কোরবানির নিয়তে পশু ক্রয় করল অথবা কোরবানির নিয়তে জবেহ করল। যখন পশু কোরবানির জন্য নির্দিষ্ট করা হল তখন নিম্নোক্ত বিষয়াবলী কার্যকর হয়ে যাবে

প্রথমত :  পশু কোরবানি ছাড়া অন্য কোন কাজে ব্যবহার করা যাবে নাদান করা যাবে নাবিক্রি করা যাবে না। তবে কোরবানি ভালভাবে আদায় করার জন্য তার চেয়ে উত্তম পশু দ্বারা পরিবর্তন করা যাবে

দ্বিতীয়ত : যদি পশুর মালিক ইন্তেকাল করেন তাহলে তার ওয়ারিশদের দায়িত্ব হল কোরবানি বাস্তবায়ন করা

তৃতীয়ত :  পশুর থেকে কোন ধরনের উপকার ভোগ করা যাবে না। যেমন দুধ বিক্রি করতে পারবে নাকৃষিকাজে ব্যবহার করতে পারবে নাসওয়ারি হিসেবে ব্যবহার করা যাবে নাপশম বিক্রি করা যাবে না। যদি পশম আলাদা করে তাবে তা সদকা করে দিতে হবে,বা নিজের কোন কাজে ব্যবহার করতে পারবেবিক্রি করে নয়

চতুর্থত : কোরবানি দাতার অবহেলা বা অযতেœ কারণে যদি পশুটি দোষযুক্ত হয়ে পড়ে বা চুরি হয়ে যায় অথবা হারিয়ে যায় তাহলে তার কর্তব্য হবে অনুরূপ বা তার চেয়ে ভাল একটি পশু ক্রয় করা
আর যদি অবহেলা বা অযতেœ কারণে দোষযুক্ত না হয়ে অন্য কারণে হয়তাহলে দোষযুক্ত পশু কোরবানি করলে চলবে
যদি পশুটি হারিয়ে যায় অথবা চুরি হয়ে যায় আর কোরবানি দাতার উপর পূর্ব থেকেই কোরবানি ওয়াজিব হয়ে থাকে তাহলে সে কোরবানির দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি লাভ করবে। আর যদি পূর্ব থেকে ওয়াজিব ছিল না কিন্তু সে কোরবানির নিয়তে পশু কিনে ফেলেছে তাহলে চুরি হয়ে গেলে বা মরে গেলে অথবা হারিয়ে গেলে তাকে আবার পশু কিনে কোরবানি করতে হবে

কোন মন্তব্য নেই: