কউমি মাদ্রাসার শিক্ষা
ব্যাবস্থা অনেকটাই বিত্তবানদের দান খয়রাতের উপর নির্ভরশীল । সে কারনেই এই সব
মাদ্রাসার শিক্ষকদের আর্থিক অবস্থা খুব একটা স্বচ্ছল নয় । আর্থিক অস্বচ্ছলতার
কারনেই এই শিক্ষকরা দেশীয় রাজনীতিতে খুব একটা নাক গলায় নাই । আর এই আর্থিক
অস্বচ্ছলতা ও কিছু শিক্ষকের আর্থিক ও ক্ষমতার লোভকে কাজে লাগায় জামাত-বিএনপি চক্র
। এই সব লোভীদের স্বপ্ন দেখায় আর্থিক সচ্ছলতার ও ক্ষমতার । আর এই লোভ থেকেই সৃষ্টি
হয় হেফাজতে ইসলাম নামের দলটির ।
জামাত-বিএনপির বাজে স্বার্থ হাসিল করার
জন্য কউমি মাদ্রাসার লোভী ও রাজনৈতিক ভাবে
অজ্ঞ শিক্ষকদের মোটা টাকার বিনিময়ে ২০১০ সালে “হেফাজতে ইসলাম” নামে একটি অরাজনৈতিক
দল গঠন করে । এর পর থেকে তারা জামাতের টাকায় ও বিএনপির ছত্রছায়ায় নিজেদের সংগঠিত
করতে থাকে জামাত-বিএনপির হীন স্বার্থ হাসিল করার জন্য । তাদের জনবল হিসাবে
নির্বাচন করে মাদ্রাসায় পড়তে আসা কোমল শিশু শিক্ষার্থীদের । তাদের সংগঠনের
গঠনতন্ত্রও তৈরি হয় জামাত-বিএনপির চাহিদা মোতাবেক । এমন কি জামাতের আদলে নিজেদের
সংগঠনে খুন-লুট-অগ্নিসংযোগ ও যে কোন ধ্বংসাত্মক কাজ করার জন্য কর্মীও তৈরি করে ।
জামাতের মতই তারাও ইসলামের কথা বলে ইসলাম ভীরু জনসাধারনের সমর্থন নেওয়ার চেষ্টা
করে যাচ্ছে ।
জামাত-বিএনপির প্রথম এজেন্ডা
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করার জন্য “Blogger রা নাস্তিক” নামের
এক হাস্যকর আন্দোলন শুরু করে ।
এ ব্যাপারে
কোরআনের কিছু আয়াত দেয়া যাকঃ
১ # “যারা ধর্ম সম্পর্কে নানা
মতের সৃষ্টি করেছে ও বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে তাদের কোন কাজের দায়িত্ব তোমার নেই, তাদের
বিষয় আল্লাহর এখতিয়ারভুক্ত ।”
–আল কোরআন (সুরা আনআমঃ১৫৯)
২ # “তুমি মানুষকে হিকমত ও সৎ
উপদেশ দিয়ে তোমার প্রতিপালকের (আল্লাহর)পথে ডাক এবং তাদের সাথে ভালভাবে আলোচনা কর। তাঁর (আল্লাহর) পথ ছেড়ে যে
বিপথে যায় তার
সম্পর্কে আল্লাহ্ই ভাল জানেন, আর যে সৎ পথে আছে তা-ও তিনিই ভাল করে জানেন” –
আল কোরআন (সুরা নাহলঃ১২৫)
৩ # “তোমাদের কাজ তো কেবল প্রচার করা, আর
হিসাব-নিকাশ তো আমার কাজ”
–আল কোরআন (সুরা রাদঃ৪০)
৪ # “আর তোমাদের এই যে জাতি
(মানবজাতি), এ তো একই জাতি। আর আমিই (আল্লাহ্)
তোমাদের
প্রতিপালক। তাই আমাকেই ভয় কর। কিন্তু
তারা (মানুষ) নিজেদের বহু ভাগে বিভক্ত করেছে।
প্রত্যেক দলই নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে সন্তুষ্ট। সুতরাং ওদেরকে কিছু কালের জন্য বিভ্রান্তিতে থাকতে দাও।” –আল কোরআন (সুরা মুমিনুনঃ৫২-৫৪)
৭১ এ উলঙ্গ করে বাঙ্গালীর লিঙ্গ পরীক্ষা করে দেখতো পাকি হায়েনা, খৎনা থাকলেই মুসলমান, নাইলেই "বিধর্মী"! বর্তমান অবস্থা কিন্তু অনেকটা এইরকমই ।
কিন্তূ হেফাজতিরা কি দেখে কাউকে মুনাফিক, কাফির
কিংবা নাস্তিক বলছে । কে মুমিন আর কে
কাফির তা নির্ধারণ করবেন স্বয়ং
আলাহ
তায়ালা । হেফাজতিদের এই নাস্তিক আস্তিকের বিষয়টি প্রচলিত শিক্ষা
ব্যাবস্থাকে ব্যাঙ্গ করে ধর্মান্ধ মুসলমানদের কাছ থেকে সস্তা ভোট বাণিজ্যেরই
বহিঃপ্রকাশ ।
কিন্তূ হেফাজত
নিজেদের আর্থিক ও তাদের কথিত প্রভুদের স্বার্থে ঢালাও ভাবে Blogger দের কাফের বলতে থাকল । এটাও তাদের
ভবিষ্যৎ রাজনীতির একটি পরিকল্পিত অংশ ।
অথচ এই লোভী অজ্ঞ শিক্ষকরা জানেই না Blog কি বা Blog এ কি করে । তাহলে Blog নিয়ে তাদের এত
আন্দোলন কেন ! কারন একটাই, যুদ্ধাপরাধীদের
বিচারের দাবিতে সোচ্চার ছিল Blogger রা ও বিভিন্ন তথ্য উপাথ্য
দিয়ে দেশের জনগন সহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনকে সজাগ করেছিল Blogger & Facebook
এর মাদ্যমে কিছু দেশপ্রেমিক । তাই এই অজ্ঞ
,লোভী, ধর্ম ব্যবসায়ীরা ভেবেছিল সরকারকে চাপের মুখে Blog বন্ধ করে দিতে পারলে দেশের জনগন ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনকে অন্ধকারে রাখা
যাবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে । আর এই সুযোগে জামাতের লবিস্টরা এই বিচারকে
আন্তর্জাতিক চাপের মুখে বন্ধ করে দিতে পারবে ।
কিন্তু এই অজ্ঞ- লোভী হেফাজতিরা ভুলে গেছে
৭১ এর দামাল তরুণদের কথা , ভুলে গেছে এই বাংলার ছেলেরা দেশের জন্য নিজেদের জীবন
দিয়েছিল হাঁসতে হাঁসতে । তারা ভুলে গেছে ৭১ এর দামালেরা এখনও আছে সারা বাংলায় ।
জন্ম নিয়েছে অসংখ্য দেশপ্রেমী দামাল ছেলে-মেয়ে । এই দামালেরা অজ্ঞ নয় , লোভী নয় , আসা করে না কোন
পুরষ্কারের ।
যখন হেফাজতিরা দেখল এই দাবিতে জনগন তেমন
সায় দিচ্ছে না , বাংলার দামাল দেশপ্রেমিকরা জেগে উঠছে তাদের রুখতে, তখন শুরু করল
১৩ দফা আন্দোলন । যার মূল বিষয় নারীদের ঘড়ে আটকে রেখে নারী শিক্ষা সহ নারী রাজনীতি
নিষিদ্ধ করার আন্দোলন । এই অজ্ঞ-লোভীরা নারীদের তেঁতুলের সঙ্গে তুলনা করতেও পিছপা
হয় নি । অথচ জামাত-হেফাজত-বিএনপির কর্ণধার একজন নারী । এই হেফাজতিরা নারীদের ভোগের ও শুধু সন্তান জন্মদানের মেশিন হিসাবে কল্পনা করে । কি জঘন্য
তাদের চিন্তা চেতনা , ভাবতেও গাঁ শিওরে উঠে ।
প্রকাশ্যে নারী
বিদ্বেষের কারন হিসাবে বলা যায় জামাতের রূপরেখা । জামাতের যেমন নারী সংঘটন
আছে পর্দার অন্তরালে তেমনি আছে হেফাজতের । ভোট বাণিজ্যে এগিয়ে যাওয়ার জন্য অজ্ঞ ধর্মান্ধ তাদের
অনুসারী সাধারনদের কাছ থেকে সমর্থন লাভ করা ও যে কোন নির্বাচনে তাদের অস্র হিসাবে
ব্যাবহার করা ।
শুরুতে তারা বলেছিল হেফাজতে ইসলাম একটি
অরাজনৈতিক সংগঠন । সাধারন জনগন তাই ভেবেছিল । কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকগন ও রাজনীতির
সঙ্গে জড়িতরা বুঝেছিল এই হেফাজতে ইসলাম জামাতের মদদ পুষ্ট ও তাদেরি আদর্শের একটি
দল এবং অচিরেই এরা রাজনীতিতে আসবে ও জামাত-বিএনপির সঙ্গে থেকে জাতীয় নির্বাচন করবে
।
জামাতের রাজনৈতিক নিবন্ধন যখন বাতিল হল এর
পর থেকেই শুরু হয় হেফাজতে ইসলামের চরিত্র উম্মোচন । শুরু হয় ধর্মকে ঢাল হিসাবে
রেখে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড । হেফাজতের বিভিন্ন নেতারা সামনের জাতীয় নির্বাচন করার
প্রস্তুতি নিচ্ছে । শুরু করেছে তাদের নেতা নির্বাচন । কোন কোন আসনে, কয়টি আসনে ,
কে কে নির্বাচন করবে তা নিয়ে চলছে জামাত-বিএনপির সঙ্গে দর কষাকষি । বিভিন্ন বিশ্লেষকদের
মতে যে যে আসনের জামাত নেতাদের ফাঁসির আদেশ হয়েছে ও বিচার কাজ চলছে, সেই সব আসনে
হেফাজতের ব্যানারে জামাত বা হেফাজতের নেতারা নির্বাচনে অংসগ্রহন করবে । ইতিমধ্যেই হেফাজতের নির্বাচন কমিটি গঠন করা হয়ে
গেছে বলে শুনা যাচ্ছে । তাদের কার্যনির্বাহী কমিটির প্রায় সকলেই জাতীয় নির্বাচনের প্রার্থী । আগামী
কিছুদিনের মধ্যেই তাদের আসন সংখ্যা ও প্রার্থীদের নাম জানা যাবে বলে শুনা যাচ্ছে ।
যদি জামাতে ইসলাম নামের দলটি নিষিদ্ধ হয়ে যায় তবে হেফাজতে ইসলাম হয়ে যাবে বর্তমান জামাতের সংগঠন । তখন বর্তমান
হেফাজতিরা হয়ে যাবে প্রচুর অর্থের মালিক ও রাজনৈতিক ভাবে পাকাপোক্ত ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন