জলপাইয়ের আদি নিবাস এশিয়া, আফ্রিকা ও ভূমধ্যসাগরীয় কিছু অঞ্চলে। লেবানন, সিরিয়া,
তুরস্ক, ইরানে জলপাই খুবই ভালো জন্মে। এ
অঞ্চলে জলপাইয়ের তেলকে ডাকা হয় Liquid Gold বা 'তরল সোনা' নামে। গ্রীক সভ্যতায় জলপাইয়ের
পাতাকে পবিত্র এবং শান্তির প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হতো। গ্রীক সভ্যতার শুরু থেকেই
জলপাইয়ের তেল দিয়ে রন্ধন ও চিকিৎসার কাজ করা হতো।
যুদ্ধে শান্তির প্রতীক হলো জলপাইয়ের পাতা এবং মানুষের শরীরের শান্তির দূত
হলো জলপাইয়ের তেল বা অলিভ ওয়েল। আরবিতে জয়তুন নামে ডাকা হয়। ভেষজ গুণে ভরা এই
ফলটি লিকুইড গোল্ড বা তরল সোনা নামেও পরিচিত।
গ্রীক সভ্যতার প্রারম্ভিক কাল থেকে এই তেল ব্যাবহার হয়ে আসছে রন্ধন কর্মে ও চিকিৎসা শাস্ত্রে। আকর্ষণীয় এবং মোহনীয় সব গুণ এই জলপাইয়ের তেলের মধ্য রয়েছে।
বিজ্ঞানীরা বলেন, জলপাই
তেলে এমন উপাদান রয়েছে, যেগুলো আমাদের শরীরকে সুস্থ এবং
সুন্দর রাখে।
জলপাই তেল পেটের জন্য খুব ভালো। এটা শরীরে এসিড কমায়, লিভার পরিষ্কার করে। যাদের
কোষ্টকাঠিণ্য রয়েছে, তারা দিনে এক চা চামচ জলপাই তেল
খেলে উপকার পাবেন। গবেষকরা বলেন, জলপাই তেল গায়ে মাখলে
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্বক কুচকানো প্রতিরোধ হয়।
গবেষকরা ২৫ মিলিয়ন লোকজনের উপর গবেষণা করে দেখিয়েছেন প্রতিদিন দুই চা চামচ
জলপাই তেল ১ সপ্তাহ ধরে খেলে তা দেহের ক্ষতিকর এলডিএল কোলেস্টেরল কমায় এবং উপকারী
এইচডিএল কোলেস্টেরল বাড়ায়।
অন্যদিকে স্পেনিশ গবেষকার দেখিয়েছেন,
খাবারে জলপাই তেল ব্যবহার করলে কোলন বা মলাশয় ক্যান্সার
প্রতিরোধ হয়। এটা পেইন কিলার হিসাবেও কাজ করে।
গবেষকরা আরো জানান, গোসলের
পানিতে চার ভাগের এক ভাগ চা চামচ জলপাই তেল ঢেলে গোসল করলে রিলাক্স পাওয়া যায়।
মেয়েদের রূপ বাড়াতে এটা অনেকটা কার্যকর।
ইসলাম ধর্মেও জলপাইয়ের তেল খাওয়া এবং ব্যবহারের গুরত্ব দেয়া হয়েছে।
আল্লাহর রাসুল (স.) বলেছেন, “কুলু আয যাইতু ওয়াদ দাহিনু বিহি, ফা ইন্নাহু মিন শাজারাতিন
মুবারাকাতিন” অর্থ-
তোমরা এই তেলটি খাও, তা শরীরে মাখাও।”
জলপাই শীতকালীন ফল। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই এই ফলটি পাওয়া যায়। আমাদের
দেশে সবুজ জলপাই সহজলভ্য। পৃথিবীর অনেক দেশে কালো জলপাই জন্মে। জলপাইয়ের পাতা ও
ফল দুটোই ভীষণ উপকারী। জলপাইয়ের রস থেকে যে তেল তৈরি হয় তার রয়েছে যথেষ্ট
পুষ্টিগুণ।
প্রচণ্ড পরিমাণে টক এই ফলে রয়েছে উচ্চমানের ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ভিটামিন
ই। এই ভিটামিনগুলো দেহের রোগজীবাণু ধ্বংস করে, উচ্চ
রক্তচাপ কমায়, রক্তে চর্বি জমে যাওয়ার প্রবণতা কমিয়ে
হূৎপিণ্ডের রক্তপ্রবাহ ভালো রাখে। ফলে হূৎপিণ্ড থেকে অধিক পরিশোধিত রক্ত মস্তিষ্কে
পৌঁছায়, মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ে। ত্বকের কাটাছেঁড়া
দ্রুত শুকাতে সাহায্য করে। উচ্চরক্তচাপ ও রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে এর
রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
সেদ্ধ জলপাইয়ের চেয়ে কাঁচা জলপাইয়ের পুষ্টিমূল্য অধিক। এই ফলের আয়রন
রক্তের আরবিসির কর্মশক্তি বৃদ্ধি করে।
জলপাইয়ের খোসায় রয়েছে আঁশজাতীয় উপাদান। এই আঁশ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়ায়, কোলনের পাকস্থলীর ক্যানসার দূর করতে রাখে অগ্রণী ভূমিকা।
জলপাইয়ের পাতারও রয়েছে যথেষ্ট ঔষধি গুণ। এই পাতা ছেঁচে কাটা, ক্ষত হওয়া স্থানে লাগালে কাটা দ্রুত শুকায়। বাতের ব্যথা, ভাইরাসজনিত জ্বর, ক্রমাগত মুটিয়ে যাওয়া, জন্ডিস, কাশি, সর্দিজ্বরে জলপাই পাতার গুঁড়া জরুরি পথ্য হিসেবে কাজ করে।
মাথার উকুন তাড়াতে, ত্বকের ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাকজনিত সমস্যা দূর করার জন্য এই পাতার গুঁড়া ব্যবহূত হয়। রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসে জলপাই পাতার গুঁড়া ও জলপাইয়ের তেল ব্যবহারে হাড় ও মাংসপেশির ব্যথা কমে।
জলপাইয়ের তেল কুসুম গরম করে চুলের গোড়াতে ম্যাসাজ করলে চুলের পুষ্টি ও বৃদ্ধি ভালো হয়, চুলের ঝরে যাওয়া তুলনামূলকভাবে কমে।
সর্দি-কাশি হলে শরীর একেবারে রোগা-পাতলা হয়ে যায়। এই
রোগে রান্নায় জলপাইয়ের তেল ব্যবহার করতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়। কারণ এই তেলের
ফ্যাট খুব সহজে হজম করা যায়। এই তেল কডলিভার অয়েলের চেয়েও ভালো কাজ করে। তা
ছাড়া কডলিভার অয়েলের বদলে জলপাইয়ের তেলও কাঁচা খেতে পারলে দারুণ উপকার পাওয়া
যায়। কাঁচা খেতে অসুবিধা হলে কমলালেবুর রস বা অন্য যেকোনো ফলের রসের সঙ্গে
মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
জলপাইয়ের পুষ্টিমানঃ
পুষ্টিগুণ
সমৃদ্ধ এই তেলের প্রতি ১০০ গ্রামে পাওয়া যায়ঃ
খাদ্যশক্তি
|
১৪৬ কিলোক্যালরি
|
শর্করা
|
৩.৮৪ গ্রাম
|
চিনি
|
০.৫৪ গ্রাম
|
খাদ্য আঁশ
|
৩.৩ গ্রাম
|
চর্বি
|
১৫.৩২ গ্রাম
|
আমিষ
|
১.০৩ গ্রাম
|
ভিটামিন ‘এ’
|
২০ আই ইউ
|
বিটা ক্যারোটিন
|
২৩১ আই ইউ
|
থায়ামিন
|
০.০২১ মিলিগ্রাম
|
রিবোফ্লেভিন
|
০.০০৭ মিলিগ্রাম
|
নিয়াসিন
|
০.২৩৭ মিলিগ্রাম
|
ভিটামিন বি৬
|
০.০৩১ মিলিগ্রাম
|
ফোলেট
|
৩ আই ইউ
|
ভিটামিন ‘ই’
|
৩.৮১ মিলিগ্রাম
|
ভিটামিন ‘কে’
|
১.৪ আই ইউ
|
ক্যালসিয়াম
|
৫২ মিলিগ্রাম
|
আয়রন
|
৩.১ মিলিগ্রাম
|
ম্যাগনেসিয়াম
|
১১ মিলিগ্রাম
|
ফসফরাস
|
৪ মিলিগ্রাম
|
পটাশিয়াম
|
৪২ মিলিগ্রাম
|
সোডিয়াম
|
১৫.৫৬ মিলিগ্রাম
|
ভিটামিন ‘সি’
|
৩৯ মিলিগ্রাম
|
উপকারিতাঃ
১। হৃদযন্ত্রের
যত্নে জলপাইঃ যখন
কোনো মানুষের রক্তে ফ্রি রেডিকেল
অক্সিডাইজড কোলেস্টোরেলের মাত্রা বেড়ে যায় তখন হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেশি থাকে।
জলপাইয়ের তেল হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়। জলপাইয়ের এ্যান্টি অক্সিডেন্ট রক্তের
কোলেস্টেরেলের মাত্রা কমায়। ফলে কমে যায় হৃদরোগের ঝুঁকি।
২। ক্যান্সার প্রতিরোধকঃ কালো জলপাই 'ই' ভিটামিনে সমৃদ্ধ। এটা শরীরের চর্বিকে
নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। শরীরের ডিএনএ সেল নষ্ট হয়ে গেলে ক্যান্সারে আক্রান্ত
হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ আশঙ্কা থেকে রক্ষা করতে পারে জলপাই তেল। এ তেল ব্যবহারে
ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ভয় কম থাকে। মাছের তেলেও এ উপকার পাওয়া যায়।
৩। ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্যঃ কালো জলপাই ফ্যাটি এসিড এবং
অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসে সমৃদ্ধ। এতে আছে ভিটামিন 'ই'। এটা শরীরে যেভাবে প্রয়োগ করা হোক না কেন আলট্রাভায়োলেট রেডিয়েশন থেকে
চামড়াকে রক্ষা করে। যা স্কিন ক্যান্সার থেকে মানুষকে রক্ষা করে। হালকা গরম পানি
দিয়ে মুখ ধোয়ার পর কয়েক ফোঁটা জলপাই তেল মুখে মাখলে দারুণ উপকার পাওয়া যায়। গোসলের
আগেও জলপাই তেল শরীরে মাখলে অনেক ধরনের সমস্যা থেকে চামড়া ভালো থাকে। নিজেকে
শক্তপোক্ত এবং কর্মক্ষম রাখতে যেমন খাবারের প্রয়োজন তেমনি চুলের স্বাস্থ্য ঠিক
রাখার জন্য চুলেরও খাবারের প্রয়োজন। চুলের খাবার হিসেবে জলপাই তেল দারুণ কার্যকরী।
ডিমের কুসুমের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা জলপাই তেল নিয়ে চুলে ব্যবহার করে ভালো ফল পাওয়া
যায়।
৪। হাড়ের ক্ষয়রোধ
করেঃ জলপাইয়ের মনোস্যাটুরেটেড ফ্যাটে থাকে এন্টি ইনফ্লামেটরি । আছে ভিটামিন ‘ই’ ও
পলিফেনাল । যা কিনা অ্যাজমা ও বাতব্যাথা জনিত রোগের হাত থেকে বাঁচায় । বয়স জনিত
কারণে অনেকেরই হাড়ের ক্ষয় হয় । হাড়ের ক্ষয় রোধ করে জলপাইয়ের তেল ।
৫।পরিপাকক্রিয়ায় সাহায্য করেঃনিয়মিত জলপাই খেলে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে।খাবার পরিপাকক্রিয়ায় সাহায্য করে জলপাই শুধু তাই নয়,গ্যাস্টিক ও আলসারে হাত থেকেও বাঁচায় জলপাই।জলপাইয়ের তেলে প্রচুর পরিমানে ফাইবার থাকে। যা বিপাকক্রিয়ায় সাহায্য করে।
৬। আয়রনের ভালো উৎসঃ কালো জলপাই আয়রনে সমৃদ্ধ। শরীরে আয়রনের অভাব
দেখা দিলে আমাদের টিস্যুগুলো পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না। আর তখনই আমরা শারীরিকভাবে
দুর্বল হয়ে পড়ি অথবা আমাদের ঠাণ্ডা লাগে। শুধু তা-ই নয়, আয়রন
শরীরে শক্তি উৎপাদনের দারুণ এক উৎস। সর্বোপরি শরীরের সব অঙ্গের কাজ সুষ্ঠুরূপে
সম্পাদনের জন্য পর্যাপ্ত আয়রন প্রয়োজন।
৭। চোখের উপকারে জলপাইঃ কালো জলপাই চোখের জন্য দারুণ উপকারী। একজন
পূর্ণবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন যে পরিমাণ ভিটামিন 'এ'
প্রয়োজন হয় তার দশ ভাগের এক ভাগ সহজেই পাওয়া যায় এক কাপ কালো
জলপাইয়ে। এই পরিমাণ ভিটামিন চোখের স্বাস্থ্যের জন্য জরুরি। ভিটামিন 'এ'র অভাব হলে রাতকানা রোগ দেখা দিতে পারে।
গ্লুকোমাসহ চোখের অন্য সব রোগ থেকে মুক্ত থাকার জন্য ভিটামিন 'এ' দরকার।
৮। বিভিন্ন
রোগ দূর করে জলপাইঃ সংক্রামক
ও ছোঁয়াচে রোগগুলোকে রাখে অনেক দূরে। নিয়মিত জলপাই খেলে পিত্তথলির পিত্তরসের কাজ
করতে সুবিধা হয়। পরিণামে পিত্তথলিতে পাথরের প্রবণতা কমে যায়। এই তেলে চর্বি বা
কোলেস্টেরল থাকে না। তাই ওজন কমাতে কার্যকর। যেকোনো কাটা-ছেঁড়া, যা ভালো করতে অবদান রাখে। জ্বর,
হাঁচি-কাশি, সর্দি ভালো করার জন্য জলপাই
খুবই উপকারী।
৯। রোগপ্রতিরোধ
ক্ষমতা বাড়ায় জলপাইঃ জলপাইয়ে প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্টও রয়েছে প্রচুর
পরিমাণে, যা
দেহের ক্যান্সারের জীবাণুকে ধ্বংস করে এবং রোগ প্রতিরোধ শক্তিকে বাড়ায় দ্বিগুণ
পরিমাণে।
১০। রক্তে
কোলস্টেরলের মাত্রাটা বেশি থাকলে জলপাই তেলের কোনো বিকল্প নেই। বিভিন্ন রান্নায় ও
সালাদে এই তেল ব্যবহারে স্বাদ ও পুষ্টি দুটোই ঠিক রাখতে পারেন আবার কোলেস্টেরল
নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন।
১১। ত্বকে
চুলকানির সমস্যা দূর করতে এই তেল ম্যাসাজ করতে পারেন। শিশুর ত্বকেও নিরাপদ তেল
হিসেবে জলপাই তেল ব্যবহার করা যেতে পারে।
১২। জলপাই
তেল মাথার ত্বকের খুশকি দূর করার জন্যও উপকারী।
১৩। সম্প্রতি
এক আবিষ্কারে দেখা গেছে, খাবারে
নিয়মিত অলিভ অয়েল ব্যবহার করলে সিস্টোলিক এবং ননসিস্টোলিক রক্তচাপ দূর করে।
১৪। অলিভ
অয়েল মোটা হওয়ার প্রবণতা দূর করে।
১৫। বয়ষ্কদের
হাড়ের ভঙ্গুরতা দূর করতেও অলিভ অয়েলের দারুণ গুণ রয়েছে।
১৬। জলপাই
চোখ ওঠা, চোখের
পাতায় ইনফেকশন সারাতে দারুণভাবে সাহায্য করে।
১৭। ত্বকের
ক্ষত দ্রুত সারাতে জলপাই তেল সহায়তা করে।
১৮। অলিভ অয়েল বাথঃ সোফিয়া লরেন, সুন্দরী ইটালিয়ান অভিনেত্রী একবার
নিজের সৌন্দর্যের গোপন রহসের পেছনে অলিভ অয়েল বাথের অবদানের কথা জানিয়েছিলেন। এক
বালতি পানিতে ৫ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিন আর গোসলের পর অনুভব করুন
তুলতুলে নরম, সিল্কি ত্বকের স্পর্শ অথবা আপনি যদি গোসলের
আগে অভিল অয়েল দিয়ে শরীর ম্যাসাজ করে নেন তাহলেও সেই একই ফলাফল পাবেন।
১৯। নখের ভঙ্গুরতা রোধঃ শখ করে নখ বড় করেছেন কিন্তু এত সাবধান
থাকা স্বত্তেও নখ ভেঙ্গে যাচ্ছে। আর মন খারাপ করবেন না। তেলটিকে হালকা গরম করে নিন
তারপর নখ গুলো ডুবিয়ে রাখুন ৫-১০ মিনিট। তারপর দেখুন আপনার নখ গুলো কেমন শাইন
দিচ্ছে আর এভাবে নিয়মিত করতে থাকলে নখগুলো শক্তও হয়ে যাবে।
২০। আই ক্রিমঃ অলিভ অয়েল চোখের চারপাশের কুঁচকে থাকা
ত্বককে হাইড্রেট করে আর নরম করে তোলে। রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে আপনার রিং ফিঙ্গার
দিয়ে আলতো হাতে অলিভ অয়েল বুলিয়ে দিন। অতিরিক্ত তেল নরম টিস্যু পেপার দিয়ে
মুছে নিতে পারেন।
২১। পা ফাটা সমস্যার সমাধানঃ পায়ের দুরবস্থার কারণে কারও সামনে পা
বের করতে বিব্রত হচ্ছেন? রাতে
ঘুমাতে যাওয়ার আগে পায়ে অলিভ অয়েল ম্যাসাজ করে নিন, তারপর
মোজা পরে ঘুমান। সকালে নরম তুলতুলে পায়ে পছন্দের স্যান্ডেল গলিয়ে চলে যান
গন্তব্যস্থলে।
২২। ঠোঁটের যত্নে অলিভ অয়েলঃ নিম্নমানের কসমেটিকস বা সূর্যের ক্ষতিকর
প্রভাবের কারণে আপনার নরম কোমল ঠোঁট তার কোমলতা হারিয়ে রুক্ষ হয়ে আসে, হারিয়ে ফেলে উজ্জ্বলতা। তাই নিয়ম
করে যদি অল্প অলিভ অয়েল ঠোঁটে বুলিয়ে নেয়া যায় তাহলে এই সমস্যা থেকে সহজেই
নিস্তার পাওয়া যাবে।
২৩। মেক-আপ রিমুভারঃ জমকালো সাজে সবাইকে মন্ত্রমুগ্ধ করেছেন।
এবার সঠিক উপায়ে মেকা-আপ তোলার পালা। আঙ্গুলের ডগায় অথবা কটন প্যাডে অলিভ অয়েল
লাগিয়ে নিন। তারপর সার্কুলার মোশনে আস্তে আস্তে সমস্ত মেক-আপ তুলে ফেলুন। তারপর
ভালো মানের ক্লিনজার দিয়ে শেষ করুন আপনার মেক-আপ তোলার প্রক্রিয়া। যাদের
সেনসেটিভ স্কিন তারা নিরাপদে মেক-আপ তোলার কাজ সেরে নিতে পারেন।
২৪। অলিভ অয়েলে মুখের যত্নঃ মাস্ক – একটি ডিমের কুসুমের সাথে ১ টেবিল চামচ
অলিভ অয়েল আর ৩ ফোটা লেবুর রস মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। তারপর মুখে লাগিয়ে ৫-১০
মিনিট অপেক্ষা করে প্রথমে হালকা গরম পানি তারপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
ঠাণ্ডা পানি খুলে যাওয়া পোরস বন্ধ করে। নরমাল অথবা শুষ্ক ত্বকে এই মাস্ক আর্দ্রতা
বজায় রাখবে সেই সঙ্গে নরম কোমল করে তুলবে।
২৫। ময়েশচারাইজারঃ অলিভ অয়েলে আছে linolic acid, যা পানি বাষ্প হতে
দেয়না। তাই ১/২ কাপ অলিভ অয়েল, ১/৪ কাপ ভিনেগার আর ১/৪
কাপ পানি মিশিয়ে একটি সলিউশন তৈরি করুন যা রাতে ঘুমানোর সময় নাইট ক্রিমের মত
ব্যবহার করতে পারবেন। অলিভ অয়েল স্কিনকে নরম করে, ভিনেগার
ত্বকে থাকা ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে।
২৬। সান প্রোটেকশনঃ অভিল অয়েলে ভিটামিন এ এবং ই আছে সেই
সঙ্গে ৩ রকমের antioxidants আছে, যা আপানাকে সূর্যের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে
রক্ষা করবে। তাই যদি বাইরে যাওয়ার আগে অলিভ অয়েলের প্রলেপ দিয়ে বের হন তবে সান্
টান থেকে অনেকটাই মুক্তি লাভ করবেন।
২৭। ব্রণ প্রতিরোধকঃ অলিভ অয়েল ব্রণের বংশ ধ্বংস করার জন্য
উপকারী। ৪ টেবিল চামচ লবণের সাথে ৩ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি
করুন। তারপর সেই পেস্ট ২ মিনিট ধরে মুখে ম্যাসাজ করুন। এভাবে এক সপ্তাহ করুন। আপনি
অবশ্যই পরিবর্তন দেখতে পারবেন। লবণ exfoliation
করে pore পরিষ্কার করে আর অলিভ অয়েল
মুখের আর্দ্রতা ধরে রাখে।
২৮। চুলের যত্নঃ
ফ্রিজি চুলের সমাধানঃ একটি চিরুনি অলিভ অয়েলের মধ্যে ডুবিয়ে
নিন তারপর ফ্রিজি চুলে আঁচড়ে নিন। এতে চুল ময়েশচার হয়ে ফ্রিজিনেস কেটে যাবে।
হেয়ার কন্ডিশনারঃ শ্যাম্পু করার পর হাতের তালুতে কয়েক
ফোঁটা অলিভ অয়েল নিয়ে ভালো ভাবে দুই হাতে ঘষে ফেলুন। তারপর চুলে কন্ডিশনারের
বদলে লাগিয়ে ফেলুন।
ডিপ কন্ডিশনঃ সপ্তাহে অন্ততপক্ষে একবার হালকা গরম অলিভ
অয়েল চুলে ভালো ভাবে ম্যাসাজ করে লাগান। এভাবে ২/৩ ঘণ্টা চুলে তেল লাগিয়ে রেখে
শ্যাম্পু করুন। তারপর নিজেই লক্ষ করবেন শাইনি আর স্বাস্থ্যকর চুলের বাহার।
খুশকি থেকে মুক্তিঃ সমপরিমাণ জলপাই তেল আর বাদামের তেল
একসাথে মিশিয়ে চুলের গোড়ায় ঘষে ঘষে লাগিয়ে ১ ঘণ্টা অপেক্ষা করে শ্যাম্পু করে
ফেলুন। এভাবে ৩ সপ্তাহ করলে খুশকি অনেকটা কমে আসবে।
নতুন চুল গজানোঃ মাথায় অলিভ অয়েল ম্যাসাজ করে গরম
পানিতে ডুবানো তোয়ালে দিয়ে মাথা পেঁচিয়ে নিতে হবে। খেয়াল রাখবেন তাপমাত্রা যেন
সহ্য ক্ষমতার মধ্যে থাকে। তোয়েল ঠাণ্ডা হয়ে গেলে মাইক্রোওয়েভে আবার গরম করে
নিন। এভাবে কয়েকবার করুন।
হেয়ার মাস্কঃ একটি ডিমের কুসুমের সাথে ২ টেবিল চামচ
অলিভ অয়েল, ৫
ফোঁটা লেবুর রস মেশান। চুলে ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখুন তারপর ধুয়ে ফেলুন। আপনার চুল
হয়ে উঠবে নরম আর উজ্জ্বল।
২৯। কোষ্ঠকাঠিন্য রোধেঃ পেট পরিষ্কার না থাকার কারণে আমাদের
অনেকেরই মুখে ব্রণ দেখা দেয়। তাই ব্রণের সমসসা সমাধানের সাথে সাথে পেটের সমস্যাও
সমাধান করতে হবে আমাদের। প্রতিদিন সকালে কিছু খাওয়ার আগে ১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল
খাবেন। কয়েকদিনের মধ্যেই আপনার সমস্যার সমাধান হবে।
৩০। চোখের সৌন্দর্যেঃ মাশকারার
বদলে চোখের পাপড়ি, ভ্রু
তে অলিভ অয়েল লাগান, আর বাড়িয়ে তুলুন আপনার চোখের
সৌন্দর্য।
৩১। শরীরে এসিড কমায়, যকৃৎ (Liver)
পরিষ্কার করে, যেটা প্রতিটি মানুষের ২/৩
দিনে একবার করে দরকার হয়।
৩২।
সাধারণত
সন্তান হওয়ার পর মহিলাদের পেটে সাদা রঙের স্থায়ী দাগ পড়ে যায় । গর্ভধারণ করার
পর থেকেই পেটে জলপাই তেল (Olive
Oil) মাখলে কোন জন্মদাগ পড়ে না।
৩৩।
কানের সমস্যায় জলপাই তেলঃ কানের মধ্যে চুলকানি ও গন্ধ হওয়া এমন কিছু সমস্যা
অনেকেরেই রয়েছে । এসব সমস্যা সমাধানের করে জলপাই তেল বা অলভ অয়েল । কটন বার অলিভ
অয়েলে ভিজিয়ে খুব সাবধানে কানের মধ্যে দিলে বেশ উপকার পাওয়া যায় । ড্রপারে করে এক
বা দুই ফোটা অলিভ অয়েল কানে দেওয়া যায় । এতে কানের চুলকানি ও গন্ধ কমবে ।
হেলেন অফ ট্রয় খ্যাত লেখক হোমার অলিভ
অয়েলকে তরল সোনা বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। এমন কি Thomas Jefferson – আমেরিকার
তৃতীয় প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন হেভেনের সবচেয়ে মূল্যবান উপহার অলিভ অয়েল। বহিরাগত
সৌন্দর্য ছাড়াও অলিভ অয়েল আমাদের অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য রক্ষায় অনেক বেশি
উপকারী।এটি ব্লাড প্রেসার কমিয়ে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। অলিভ অয়েলে
আছে polyphenol নামের এক উপাদান যা LDL কোলেস্টেরলকে স্বাস্থ্যকর লেভেলে রাখে। তাই শুধু হাত পা বা মুখে মেখে
নয় অলিভ অয়েল সেবন করেও নিজেদের সুস্থ সবল রাখতে হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন