৩.১ দাম্পত্য ব্যবহার ও রীতি প্রকৃতি
দৈনন্দিন জীবনে নর-নারীর সম্বন্ধ দাম্পত্য জীবনকে সুন্দর মধুময় করে
তোলবার একটি প্রধান উপায়। দুটি
তরুণ-তরুণীকে জীবন সংগ্রামের অজস্র সুখ, দুঃখ, হাসি এবং
কান্নার মধ্য দিয়ে ভারসাম্য রেখে চলবার উপযুক্ত করে
দেখবার জন্যেই এই নিবিড় বন্ধনে বেঁধে দেবার প্রথা-
যার নাম বিয়ে। এমন একদল লোক আছেন যাঁরা মনে প্রাণে
বিশ্বাস করেন যে যৌন মিলনের ছাড়পত্রই হচ্ছে বিয়ে।
এখানে আমি তাঁদের উদ্দেশ্য করে বলছি- তাঁরা জীবনের স্বকীয়তাকে প্রথম
দৃষ্টি থেকেই ভুল ভাবে দেখতে শুরু করেছেন। বিবাহিত ধর্মপত্নী মানে যে কেবলমাত্র যৌন জীবনের দাম্পত্য সঙ্গী তা
নয়। সেটা এখানে আমি বেশ বড় করে তুলতে চাই। পুরুষের এক মধুর আচরণ বন্ধন প্রথারুপেই এই বিয়ে স্বীকৃতি ও বিশ্লেষিত
হয়ে এসেছে। বিয়ের প্রধান নির্দেশ এবং আসল বিষয় হল
স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক স্নেহ, প্রেম, ভালোবাসা,
সুখ-দুঃখ,
হাসি-কান্না,
দায়িত্ব-কর্তব্য,
অধিকার প্রভৃতি।
যাবতীয় উপলব্ধিকে এক ও অভিন্ন করে মিলিয়ে দিয়ে একত্রিত অনুভুতিতে প্রতিষ্ঠা করা। অনেকে হয়তো মনে করতে পারে যে এর সব একটা ঘোর অবিচার।
একজন নারীর একজন পুরুষকে এবং একজন পুরুষের একজন
নারীকে এক বছর ভালো লাগতে পারে। কিন্তু তার পরেই
আসে একঘেয়েমী, অসাড়তা এবং আনন্দহীনতা। এতে যে যৌন জীবনকে দুঃখ-কষ্টে
ভরিয়ে তোলে। কিন্তু প্রাচীন ঋষিরা অনেক ভেবেই
চিন্তেই এ রীতির প্রচলন করেছিলেন। আমিত্ব, আত্ম সংযম কঠোর
সাধনা ও একাগ্রতা, বিপুল ধৈর্য ও অধ্যবসায় দ্বারা যৌন সম্পর্কের অনেক
উর্দ্ধে বিবাহিত জীবনকে একটি শাশ্বত স্থায়িত্বের ও নিড়ত্বের গন্ডিতে মানতে হবে।
সংস্কৃত শাস্ত্রে স্ত্রীকে মাতা, সখী, দাসী এবং বেশ্যা রুপে যে বর্ণনা করা তা এক বিন্দু অতিরঞ্জিত নয়। স্নেহ এবং অধিকারে স্ত্রী হবে মাতার সমান। দৈনন্দিন জীবনে,
অসংখ্য
সংঘাতের দুর্বিপাক থেকে স্বামীকে কিছুটা আড়াল করবার জন্যে স্বামীর
সঙ্গে সঙ্গে থেকে সে হবে সখী। স্বামীর কর্মকেই
নিজের জীবনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেবার জন্যে সে হবে শিষ্যা বা সহধর্মিনী।
স্বামীর নিপুণ সেবার ভার সে নিজ হাতে তুলে নেবে, সে হবে দাসী। স্বামীর সঙ্গে
যৌন সম্পর্কে সে যখন মেতে উঠবে তখন হবে বেশ্যা এটার মধ্যে
অত্যুক্তি
কিছুই নেই। দাম্পত্য জীবনে এটা প্রত্যেক নারীর কর্তব্য।
পুরুষ স্বাভবতই বহুকামী। একঘেয়েমী সে কোনও দিনই সহ্য করতে পারে না। একঘেয়েমী দূর করে তাকে নানারূপ পন্থায়, দাম্পত্য জীবনকে
মধুময় করে তুলতে হয়। সব সময়ই
ভাবতে হবে দু’জনে যেন দুটি নবীন প্রেমিক আর প্রেমিকা। দু’জনের কথার মাঝে ফুটে উঠবে নূতন প্রেমিক-প্রেমিকার কথার সুর। আমাদের দাম্পত্য জীবন নিরানন্দ একঘেয়ে। অপ্রীতি ও নানা মনোমালিন্যের কেন্দ্রে পরিণত হয় অনেক ক্ষেত্রেই প্রকৃত শিক্ষার অভাবে। আর দাম্পত্য
জীবন সুখময় করে তোলবার উপায় না জানবার জন্যে, বহু দাম্পত্য জীবন নারীর জন্যে সুখী হ’তে পারে না।
পৃথিবীর বুকে সুখী দম্পতির সংখ্যা
দিনের পর দিন কমেই আসছে। এর ফলে বিয়ের আগ্রহের অভাব আজকাল
বড়ই
স্পষ্ট হয়ে দেখা দিচ্ছে।
দাম্পত্য জীবনের গোড়া দিকে আগ্রহের অভাব থাকে না। এ কথা বুঝিয়ে না
বললেও চলবে। তখন দেখা যায় যে দু’জনের গভীর
অনুরাগ অপরীসিম নিবিড়তা। কিন্তু যতই দিন যায় ততই যেন
তা মিলিয়ে যায়। অনুরাগ তখন
পরিণত হয় বিরাগে। দাম্পত্য জীবনে ঘনিয়ে আসে তখন কলহ বিবাদ, মনোমালিন্য
গতানুগতিকতা। এমন নারী অবশ্য পুরুষের ঘাড়ে সব দোষ চাপিয়ে নিশ্চিন্ত হবার
প্রয়াস পায়। কিন্তু সত্যি কি তাই? এটা কিন্তু
নিরপেক্ষ মনোভাবের পরিচায়ক নয়। বহু দাম্পত্য
জীবন নারীর জন্যে সুখী হতে পারে না। আবার বহু দাম্পত্য জীবন অসুখী হয় পুরুষের জন্য। অবশ্য এসবের জন্যেই দায়ী আমাদের শিক্ষা।
দাম্পত্য জীবনকে সুখী করে তোলার শিক্ষা আমাদের দেশের
ছেলে-মেয়েরা তাদের পিতা-মাতাদের কাছ থেকে পায়
না। বড় হয়ে তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যথেষ্ট জ্ঞান লাভ করে বটে কিন্তু এই যৌন জীবন সম্বন্ধে থাকে সম্পূর্ণ অজ্ঞ।
এটা মনে রাখা উচিত যে একদিন জোর করে
দাম্পত্য জীবনের বোঝা তরুণ-তরুণীদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিলে প্রথম কিছুদিন তারা এর অপব্যবহার করবে। তারপর একদিন সব কিছুর প্রতি
বীতশ্রদ্ধ হ’য়ে পড়বে। প্রথমতঃ পুরুষের কথা ধরা যাব। পুরুষ অত্যন্ত স্বার্থপর। তারা ভুলে
যায় যে নারীরও ব্যক্তিত্ব বলে একটা জিনিস আছে। তারা সব
সময় নারীর উপর অধিকার এবং প্রভুত্বে দাবী
ঘটায়। পান থেকে চুন খসালেই তার মনে অহেতুক ক্ষোভের সঞ্চার
হয়।
নারী যে দাসী নয়- জীবনসঙ্গিনী এটা মনে রাখা প্রত্যেক পুরুষের কর্তব্য। সহৃদয়তা এবং পরস্পরের প্রতি সহানুভুতি সম্পন্ন হওয়াই সবচেয়ে বড়
সাধনা।
তারপর নারীর কথা। এমন অনেক নারী
আছে, যারা
গৃহকর্ম পূজার্চনা, শ্বশুর-শাশুড়ীর সেবা ও দৈনন্দিন
কার্যাবলীর প্রতি ব্যস্ত। আর তাদের সে ব্যস্ততাও অত্যধিক। এই বিভিন্ন কার্যাবলীর মধ্যে তাদের অধিকাংশ সময় কাটে। তারা হয়ত গৃহিণী
পতে পারে কিন্তু স্বামীর মনতুষ্টি বিধানে অক্ষম।
শারিরীক ও মানসিক মিলন থাকা সত্বেও যৌন
ব্যপারে দু’জনের মধ্যে অনেক সময় গরমিল দেখা যায়। স্ত্রীর ব্যবহারে হয়ত স্বামী আনন্দিত ও গর্বিত।
কিন্তু তার যৌন জীবনে সে স্ত্রী
সাহচর্য্যে বঞ্চিত। সব নারীরই যে সমান যৌন প্রাবল্য থাকবে তা বলছি না।
কিন্তু গোটা দাম্পত্য রতি পর্যায়ের প্রাধান্যকেও অস্বীকার করা যায়
না।
পতির কর্তব্য:
১। স্ত্রীকে
মিত্র ভেবে তার সঙ্গে মিত্রবৎ আচরণ করবে।
২। স্ত্রী যেন
আপনাকে তার একমাত্র নির্ভরস্থল বলে মনে করতে পারে।
৩। পত্নী যদি
পতির চেয়ে সুন্দর না হয়, তথাপি তাকে ঘৃণা বা উপেক্ষা করা উচিত নয়। ভালোবেসে তাকে আপন করে নেওয়াই কর্ত্তব্য।
৪। পত্নীর কাছে
কোন কথা গোপন করা উচিত নয়। নিজের যা কিছু দোষগুণ খুলে বলা
উচিত।
৫। কখনও পত্নীর
সঙ্গে নির্লজ্জের মত ব্যবহার করা উচিত নয়।
৬। পত্নীর কাছে
সর্বদা নিজের গাম্ভীর্য্য বজায় রাখা অনুচিত।
৭। সর্বদা
সুমধুর ভাষায় তাকে আকর্ষণ করে নেওয়া উচিত।
৮। পত্নীর সামনে
কোনও পরস্ত্রীর সঙ্গে মেলামেশা বা তার গুণগান করা উচিত নয়- তাতে তার মনে দুঃখ বা হিংসার ভাব জাগতে পারে।
৯। পত্নী
সাজসজ্জা করলে তার গুণগান করা পতির কর্ত্তব্য।
১০। পত্নী কোনও
ভাল রান্না করে খেতে দিলে তার প্রশংসা করা উচিত।
১১। পত্নীর কোনও
দোষত্রুটি থাকলে তা বুঝিয়ে বলা উচিত। তাকে সেগুলি শুধরে নেবার জন্য
উপদেশ দেওয়া উচিত। জোর জবরদস্তি দ্বারা কখনও তাকে সংশোধন করা যায় না তা মতে রাখা কর্ত্তব্য।
স্ত্রীর কর্তব্য:
১। পতিকে সব সময়
প্রেমিক বা নিজের সাথী বলে ভাবা উচিত। তার সঙ্গে সেই রকম ব্যবহার দ্বারা
তুষ্ট করা সাধ্বী স্ত্রীর অবশ্য কর্তব্য।
২। কোন
রোগব্যাধি হলে তা গোপন না করে পতির কাছে খোলাখুলি ভাবে বলা উচিত।
৩। পতিনিন্দা
শোনা উচিত নয়- কারণ তাতে নৈতিক অধঃপতন ঘটতে পারে।
৪। বেশি খরচ
পত্র করা বা পতির চেয়ে বেশি খরচ করে চালবাজী করা উচিত নয়।
৫। পতি বাইরে
থেকে ফিরলে তার প্রতি যথোচিত সম্মান ও প্রীতি প্রদর্শন করা উচিত।
৬। পতির সব
জিনিসপত্র সব সময় ঠিকমত হাতের কাছে এগিয়ে দেওয়া উচিত।
৭। নারীর সব সময় মন ভার করে থাকা উচিত নয়। এতে
পতি ও পত্নীর আন্তরিকতার অভাব ঘটে।
৮। সহনশীলতা
নারীর শ্রেষ্ঠ গুণ- এটি প্রত্যেক নারী মনে রাখা উচিত।
৯। পতির সঙ্গে
সব সময় মধুর ব্যবহার করা পত্নীর অবশ্য কর্ত্তব্য।
১০। স্বামীকে
কখনও কটু বাক্য বলা বা তার সঙ্গে ঝগড়া করা নারীর উচিত নয়।
১১। পতির
নিত্যব্যবহার্য্য যে সব বস্তু-যেমন কাপড়, ছাতা, জুতো, বইপত্র এ সবের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখা বুদ্ধিমতী নারী মাত্রেরই কর্ত্তব্য।
১২। সংসারের খরচ
পত্রের হিসেব রাখা প্রত্যেক পত্নীর অবশ্য কর্ত্তব্য। আয় বুঝে ব্যয় করবে।
১৩। কোনও
প্রদর্শণী বা উৎসব আনন্দে পতির অনুমতি ছাড়া যোগদান করা স্ত্রীর কর্ত্তব্য নয়।
১৪। পতির উপদেশ
অনুযায়ী এবং তার রুচি অনুযায়ী ঘরের আসবাব পত্রাদি সাজানো এবং পরিষ্কার
রাখা উচিত।
১৫। সখী বা
বান্ধবীদের সঙ্গে বসে কখনও পতির নিন্দা করা উচিত নয়।
১৬। পতিকে
প্রকৃত বন্ধুর মত ভাবা উচিত।
১৭। ঘর পরিষ্কার
এবং ঘরের সব জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখা উচিত।
১৮। চাকরের সাহায্য ছাড়াই
যতটা সম্ভব নিজ হাতে পরিবারের সব কাজ করবে।
১৯। সাধারণতঃ পরিচ্ছন্ন থাকবে- তবে বেশি
বাবুগিরি ভাল নয়।
২০। স্বামীর
খাদ্যদ্রব্য সম্ভব হলে নিজ হাতে রান্না করবে।
এখানে
পতি-পত্নীর বিষয়ে সাধারণ বিষয়গুলি নিয়েই আলোচনা করা হলো। তবে একটা কথা
মনে রাখা উচিত। মেয়েদের পক্ষে
স্বামী ও শ্বশুরের ঘর হলো একটি বিরাট পরীক্ষাগার। উপরের নিয়মগুলি
ছাড়াও আপন বুদ্ধির বলে যে মেয়ে সংসারের সব প্রয়োজনীয় কাজ খুঁজে নিয়ে করে
থাকে, সে
মেয়ের স্বামীর সংসারে সকলের প্রিয় হয়। স্ত্রীর পালনীয়
দায়িত্ব যখনই কোনও তরুণীর সঙ্গে কোন পুরুষের শাস্ত্র
মতে বিয়ে হলো, তখনই নারীর কর্তব্য হবে
স্বামীর সঙ্গে একত্রে জীবন যাত্রা নির্বাহ করা। এই বিশ্বসংসারে
যত রকম দুঃখ কষ্ট বা শোক তাপ আছে, সে সবই স্বামীর সঙ্গে অংশীদার হয়ে ভোগ
করতে হবে। তা হলেই স্বামীর গৃহের সবাই অতি শীঘ্র আপন হয়ে উঠবে। তার পিতৃগৃহের দায়িত্ব ও কর্তব্য খুবই সীমাবদ্ধ হয়ে গেল- সঙ্গে সঙ্গে
তার স্বামীর সংসারে সে একজন গুরুত্বপূর্ণ লোক হয়ে
দাঁড়াল।
বাৎস্যায়নের
আমলে স্ত্রী ছিল দুই প্রকার। এক ধরণের স্ত্রী একা স্বামীর
সঙ্গে
বাস করত, অন্য ধরনের হলো একজন লোক বহু স্ত্রীর সঙ্গে বাস করত। স্ত্রীর কর্তব্য স্বামীর কথা কখনো না করা। তাঁকে পূর্ণভাবে
ভক্তি-শ্রদ্ধা করা। কখনও তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়ানো। এতে
স্বামীর মনে গভীর দুঃখের আদর্শ। স্ত্রী সংসারে
যা কিছু করবে তা যেন স্বামীর মত নিয়ে বা তার সঙ্গে কথাবার্তা বলে করে। সে যেন সর্বদা তাদের গৃহ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখে।
সংসার যে গৃহদেবতা আছেন তাঁকে প্রত্যহ সকালে, দুপুরে ও
সন্ধ্যায় পূজা করবে। পুরোহিত থাকলে
তার পূজার জন্য ফুল, বেলপাতা, নৈবেদ্য, তুলসী ইত্যাদি
যোগাড় করে দেবে যেন তাঁর কোন অসুবিধা না হয়। তাছাড়া স্বামীর ভাই-বোন, আত্নীয়-স্বজন বা পিতামাতাকে অবশ্য বহু
যত্নে তত্ত্বাবধান করবে। স্বামীর বন্ধু-বান্ধবকে
শ্রদ্ধা ও প্রীতির চোখে দেখবে। এতে স্ত্রীও
প্রিয় ও আদরণীয়া হয়ে উঠবে পরিবারের সকলের কাছে।
নারীর উচিত তার রন্ধন গৃহের ভার নেওয়া। রান্না ঘরের পাশে কোনও জমি
পতিত রাখতে নেই। তা থাকলে সেখানে নানা ফলমূল বা
শাকসব্জীর গাছ লাগানো উচিত। অবশ্য এতে
সংসারে খরচও কিছু কমে যাবে। কুমড়া, লাউ, সিম, সরষে, আদা, শাক ইত্যাদি
লাগানো যায়। তাছাড়া একপাশে একটি ফুলের গাছ থাকবে-
যেমন, গাঁদা,
জুঁই,
বেল,
চামেলি,
সূর্য্যমুখি,
জবা
ইত্যাদি ফুল গাছ। সেখানে পুষ্পকুঞ্জের
মধ্যে একটি বা দুটি বসবার বেঞ্চেরে ব্যবস্থা রাখবে অবসর সময় সেখানে
বসে বায়ু সেবন করা যায়। স্বামীর ভাই-বোন,
আত্নীয়-স্বজন,
বৃদ্ধ
পিতা-মাতা-ওদের অবশ্য বহু যত্নে তত্ত্বাবধান
করবে। স্বামীর বন্ধুবান্ধবকেও শ্রদ্ধা করা উচিত।
নারী স্বেচ্ছায় কোন ভিখারিনী, সন্ন্যাসিনী বা
স্বামী যাকে অপছন্দ করেন এমন নারীর সঙ্গে
মিশবে না। যে সব নারী তুকতাক জানে তাদের সহিত মিশবে না। তাদের সঙ্গে মেশামেশি স্বামী পছন্দ করেন আর করেন না তাও সে লক্ষ্য করবে।
পতির মন জুগিয়ে চললে অতিশীঘ্র পতিপ্রাণা হয়ে উঠবে। স্বামী কোন কোন খাদ্য খেতে ভালবাসে তাও স্ত্রীর জানা দরকার। সম্ভব
হলে সে সব খাদ্য রেঁধে দেবে। স্বামীর শরীর কখন কেমন
থাকে তাও লক্ষ্য করা উচিত। স্বামীর পদশব্দ
পেলেই স্ত্রী অলঙ্কার পরে বা ভাল কাপড় পরে তার সামনে যাবে- কখনও নোংরা কাপড় পরে তার সামনে যাবে না।
যদি স্বামী খরচ পরায়ণ হয়, তা হলে তাকে খরচের
বিষয়ে পরামর্শ দেবে। স্ত্রীর উচিত
স্বামীর সঙ্গে মিশে স্বামীর অনুমতি নিয়ে অলঙ্কর ইত্যাদি পরিধান করে
বিবাহাদি উৎসবে যোগদান করা। সাধারণ পূজা বা
কোনরূপ উৎসবে পল্লীর সঙ্গীদের সাথে মিশে যোগদান করা উচিত।
স্বামী
ভোজ করে নিদ্রা গেলে, তারপর স্ত্রীর বিছানায় যাওয়া উচিত। স্বামী নিদ্রিত থাকলে তখন তাকে নিদ্রা থেকে তোলা উচিত না। ভোরে
স্বামী শয্যাত্যাগ করবার পূর্বেই স্ত্রীর বিছানা ছেড়ে
উঠে যাওয়া উচিত।
রান্নাঘর হবে বাড়ির এক বিপরীত দিকে- যাতে বাইরের অতিথি বা স্বজন এসে
দেখতে না পায়। এই রান্নাঘরে যথেষ্ট আলো বাতাস ও পরিষ্কার
থাকা দরকার। যদি স্বামী কোনও অপরাধ করে থাকেন বা
স্ত্রীকে তিরষ্কার করেন তা হলে স্ত্রীর উচিত নয় তাকে
কতকগুলি রূঢ় কথা বলা। অবশ্য স্ত্রী স্বামীর তিরস্কারের উত্তরে কপট
ক্রোধ দেখাতে পারে। কিংবা সে মনমরা বা বিষণ্ন ভাব দেখাতে পারে যখন স্বামী একা থাকবেন তখন তাঁকে সব কথা বোঝাতে পারে। স্ত্রীর কখনও স্বামীর ভালবাসা পাবার জন্যে কোনও যাদুবিদ্যা প্রয়োগ বা তুকতাক করা উচিত নয়। স্ত্রী এসব করলে সে স্বামীর অবিশ্বাস ভাজন হয়ে
যায়।
স্ত্রীর যা করা উচিত নয়:
১। স্বামীর
সঙ্গে রূঢ় ভাষায় কথা বলা।
২। নিরানন্দ
ভাবে কখনও স্বামীর দিকে তাকাতে নেই।
৩। রুষ্ট ভাবে
কখনও স্বামীর দিকে পিছন ফিরে থাকবে না।
৪। কখনও রাস্তার
ধারে দাঁড়িয়ে পথচারীদের দিকে চেয়ে থাকবে না।
৫। স্বামী ছাড়া
অপর পুরুষের সঙ্গে একাকী নির্জনে বা বাগানে কথাবার্তা বলবে না।
৬। অনেকক্ষণ ধরে নির্জনে একাকী সময় কাটাবে না।
৭। দেহ থেকে
বেশি ঘাম বের হয়ে গেলে বা দুর্গন্ধ হলে, সেই ঘাম ধুয়ে
সুগন্ধ লাগাবে। যদি দাঁতে বা মুখে দুর্গন্ধ হয় তা হলে
দাঁত মুখ পরিষ্কার করা উচিত।
৮। যখন স্বামীর
সঙ্গে বা অন্য কারও সঙ্গে দেখা করতে যাবে, কখনও কু-বেশ বা নিম্ন স্তরের বেশ পরে যাবে না।
৯। স্বামীর মত
না নিয়ে কোনও ব্রত সাধন বা ভগবানের উপাসনা করবে না। স্বামীকে তা জানাবে। বলবে- যা করছি, তা তোমরাই
মঙ্গলের জন্যে প্রিয়তম।
১০। স্বামীর মত
না নিয়ে কারও সঙ্গে এমন কি আত্নীয়ের সঙ্গেও বের হওয়া উচিত
নয়।
১১। স্বামীর
শরীর অসুস্থ হয়ে পড়লে, তাঁর কাছে সব সময়ে থাকবে। কি দরকার তা জিজ্ঞাসা করবে। ঠিক মত ওষুধ খাওয়াবে। সময় মত পথ্যাদির ব্যবস্থা করবে। প্রয়োজন হলে হাত পা টিপে দেবে। মোট কথা
তাড়াতাড়ি যাতে স্বামী সেরে ওঠে সে সব কাজ করবে।
বিবাহিতা মেয়েদের পতিই এক মাত্র গতি এ কথা মনে রাখা উচিত। স্ত্রী কি কি
বস্তু সংসারে রাখবে ।
স্ত্রীর উচিত
সংসারের অতি প্রয়োজনীয় সব বস্তুগুলি সংসারে মজুত রাখা। তা
হলো
(১) মাটির তৈরী
হাঁড়ি, বেতের
ঝুড়ি, কাঠের
পাত্র বা সিন্দুক, লোহা বা চামড়ার তৈরী জিনিস।
(২) লবণ, ঘি, তেল, গন্ধদ্রব্য,
মশলা
প্রভৃতি।
(৩) চাল, গম, প্রভৃতি।
(৪) বিরল বা
দুষ্প্রাপ্য ঔষধ।
(৫) কতকগুলি
জিনিসের বীজ সঞ্চয়- যেমন আলু, মূলা, শশা, পেঁয়াজ, বেগুন ইত্যাদি। ঠিক সময়মত ঐ সব মাটিতে পুঁতে দেওয়া দরকার। আর একটি কথা- গৃহস্থের স্ত্রী
হয়ে কখনও ঘরের গোপন খবর বা প্রকৃত অবস্থা কাউকে জানাতে নেই। তাতে
সংসারে অবনতি ঘটে সন্দেহ নাই।
(৬) সংসারের যা দুধ খরচ হয় তা করে, যা অবশিষ্ট থাকে
তার ঘৃত তুলে নিয়ে সঞ্চয় করবে।
সরিষার থেকে, তেল, তূলা, থেকে সূতা প্রভৃতিও সঞ্চয় করবে।
স্ত্রী নিজে
হাতে কি করবে:
(১) পাত্রের
জন্যে ঢাকনা, জল তোলার দড়ি।
(২) ধান ঝাড়া- তা
থেকে প্রয়োজন মত চাল বের করে নেওয়া। ধানের খোসা আলাদা করে
নেওয়া।
(৩) তূষ, ভূষি, ফেন ও খড়ের ঠিক
ব্যবহার জানা।
(৪) পোড়া কয়লা থেকে কয়লা বের করে জমিয়ে রাখা।
(৫) কর্মচারীদের কাজ দেখা- মাহিনার ব্যবস্থা করা;
তাদের
সুখ সুবিধার দিকে লক্ষ্য করা।
(৬) চাষের জন্য উৎকৃষ্ট বীজ সঞ্চয়।
(৭) গরু, বাছুর, হাঁস, মুরগী, ইত্যাদি
গৃহপালিত পশু পাখির যত্ন ও পরিচর্যা।
(৮) বেশি পশু
পাখি থাকলে তাদের হিসাব মিলিয়ে নিয়মিত দেখা।
আয়-ব্যয়ের হিসাব
ও সঞ্চয়:
১। স্বামীর
আয়-ব্যয়ের হিসেব নেবে ও সেই মত খরচ করবে। আয় বুঝে ব্যয় করবে।
২। কিছু সঞ্চয়
করবে।
৩। স্বামীর কাপড়
চোপড় সব ঠিক মত কিনে তৈরী রাখবে। ছিঁড়ে গেলে সেগুলি সেলাই
করে
বা রং করে ঝি, চাকর ও দুঃখীজনকে দেবে।
৪। এই সব ছেঁড়া
কাপড় চোপড় থেকে পর্দা, ঢাকনা প্রভৃতি করতে পারে।
৫। মদ্য বা মাদক
দ্রব্য ব্যবহার করলে তা কিছু সঞ্চয় করবে, প্রয়োজন মত খরচ করবে। তবে মাত্রা ঠিক রাখা অবশ্য কর্তব্য।
৬। স্বামরীর বন্ধু বান্ধব
এলে তাদের ফল মূল ও তাকাম দিয়ে আপ্যায়ন করবে।
৭। স্বামীর
বন্ধু নিজের বন্ধু- তাঁর শত্রু, নিজের শত্রু সম জ্ঞান করবে।
৮। ভৃত্যদের
মাঝে মাঝে গুণ দেখে পুরষ্কার দেবে। এতে তাদের কাজের প্রতি
আগ্রহ
বাড়ে।
৯। সকাল বেলা
শয্যাত্যাগ করা ও বিছানা তুলতে অবহেলা করা উচিত নয়।
১০। সন্ধ্যায়
নিজের হাতে ঘর ঝাঁট দেবে ও ধুপ দীপ দেবে।
স্বামী বিদেশে থাকলে এ সময়ও স্ত্রী
অনেক কর্তব্য আছে যা একে একে বরা হলো-
(১) স্বামীর কল্যাণ ব্রত, উপবাস ইত্যাদি
করবে।
(২) বাড়ির যারা
প্রবীণ প্রবীণা তাদের তাদের আজ্ঞা পালন করা কর্তব্য।
(৩) স্বামী যেমন ব্যবস্থা করে যাবেন সেই অনুযায়ী
অর্থ ব্যয় করবে।
(৪) কেউ ধার নিয়ে থাকলে তা আদায় করতে হবে।
(৫) নতুন কেউ ধার চাইলে দেবে না।
(৬) স্বামী
বিদেশে অর্থাভাবে পড়লে অর্থ পাঠাতে চেষ্টা করবে।
(৭) স্বামী যে সব
কাজ আরম্ভ করে গেছেন সে সব চালাতে হবে।
(৮) সংসারের সব
ব্যয় নির্বাহ করতে হবে।
(৯) বিয়ে বা কারও
মৃত্যু ছাড়া কদাচ পিত্রালয়ে গমন করবে না।
(১০) কারো বিয়ে বা মৃত্যু ঘটলে কোন আত্নীয়কে
সঙ্গে নিয়ে ভাল পোষাক পরিচ্ছদ পরিধান করে
যাবে।
(১১) চিঠিতে
স্বামীকে সান্ত্বনা দেবে।
(১২) স্বামীর চিঠির তাড়াতাড়ি জবাব দেবে।
(১৩) শ্বশুর-শাশুড়ি বা গুরুজনকে জিজ্ঞাসা না করে
কোনও ব্রত বা উপবাস করবে না।
(১৪) বাজে অর্থ
ব্যয় করবে না।
(১৫) বিশ্বাসী
কর্মচারী দিয়ে কাজ চালাবে। বাজার-হাট ও অন্যান্য খরচ কমাবে।
(১৬) অবস্থা
অনুযায়ী বুঝে কিছু কিছু খরচ কমাতে পার।
(১৭) স্বামী বাড়ি
ফিরে যেন অতি সাদা পোষাকে দেখতে পান। তাহার অবর্তমানে স্ত্রী যে
মিতব্যয়িনী ছিলে এটা তাঁকে বোঝাতে হবে।
(১৮) স্বামী যেন
কোনও কু-ধারণা কোন সময়ের জন্য না আনতে পারে।
(১৯) স্বামী ফিরে
এলে গৃহ দেবতার পূজা দেওয়া অবশ্য কর্তব্য। বাৎস্যায়ন বলেন-
যদি বিবাহিতা স্ত্রী না হয়ে বারবনিতা বা রক্ষিতা বিধবা হয়, তারও এই সব
কর্তব্য পালন করা উচিত। এতে পুরুষের
আস্থা ও ভালবাসা প্রভৃতি অনেক বৃদ্ধি পায়। দাম্পত্য প্রেমও মধুময় হয়ে ওঠে।
৩.২ সহপত্নী
সহপত্নীর প্রতি ব্যবহার লোকে সহপত্নী
কেন রাখে?
এ বিষয়ে আলোচনা শুরু করে বাৎস্যায়ন বলেছেন, নিম্নলিখিত
কারণের জন্য লোকে সহপত্নী রাখে।
তা হলো-
১। প্রথম
স্ত্রীর নির্বুদ্ধিতা বশতঃ
২। তার কড়া
মেজাজের জন্য বাধ্য হয়ে।
৩। স্বামীর
উক্তির বিরুদ্ধ ব্যবহারে।
৪। তার কদর্য
রূপ হলে।
৫। সর্বদা রোগ ভোগ করতে থাকলে।
৬। তার গভীর
আলস্য থাকলে। সে একেবারেই কাজকর্ম করতে চায় না।
৭। তার
বন্ধ্যাত্ব বা কেবল কন্যা প্রসব করতে থাকলে।
৮। স্বামীর
কামনা চরিতার্থ করতে না পারলে।
স্ত্রীর উচিত,
যাতে
উপরোক্ত কারণগুলি না ঘটে তার ব্যবস্থা করা। তবে যদি তা
নেহাৎ ঘটে যায় বা সে নিজে বন্ধ্যা হয় তা হলে সহপত্নী গ্রহণ করতে স্বামীকে বাধা দেওয়া উচিত নয়। কিন্তু সহপত্নী
বাড়িতে এলেই যে পূর্ব গৃহিণী নিজেকে অপমানিতা ও ঘৃণিতা মনে করবে, এর যথেষ্ট কারণ না ঘটলে এই মনোভাব হৃদয় মধ্যে পোশণ করা উচিত নয়। তারই তো সংসার ছিল-এখনও তারই সংসার থাকল। তবে স্বামীর ভালবাসার একজন অংশীদার এসেছে বলেই সহ অংশীদারকে কেবলই ঘৃণা এবং অপমান করতে হবে এর
মধ্যে কি কোনও সুনীতি আছে? বরং তার সঙ্গে
একত্রে বাস করে যাতে সংসারের কল্যাণ হয়-পরিবারস্থ অন্যান্য লোকের খাওয়া, পরা বা আর্থিক কষ্ট তারা না পায়, তাই করা উচিত।
সহপত্নী
এলে বড় গৃহিণী তাকে নিজের ছোট বোনের মত আদর করে ঘরে তুলবে। কিন্তু তা না করে অধিকাংশ গৃহিণী সহপত্নীর সঙ্গে ঝগড়া করেন। তাকে হিংসা করেন- এতে তার সংসার কখনও সুখের হতে পারে না। এতে স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ আরও বেড়ে যায়। স্বামী ঝগড়া-হিংসা সব দেখে
বড় বিরক্ত হন্ততিনি হয়তো তখন শান্তির আশায় প্রথমা
স্ত্রীকে ছেড়ে দ্বিতীয়াকে নিয়ে অন্যত্র
চলে গেলেন। পূর্ব পত্নীর সঙ্গে হয়তো সম্বন্ধ একেবারে ত্যাগ করলেন। এতে স্বামীর
আনুকূল্য পাবার যেটুকু আশা ছিল তা নষ্ট হয়ে গেল। সমস্ত পৃথিবীটাই তার
কাছে যেন শূন্য হয়ে গেল। তার চেয়ে তার
উচিত নবাগত সহপত্নীকে সংসারে আনা মাত্র নিজের ছোট বোনের মত নিজের কাছে টেনে নেওয়া। তাকে আপন করে নেওয়া। রাত্রিকালে তার বিছানা
ছেড়ে স্বামীকে এবং নব
বিবাহিতা সহপত্নীকে একত্রে শুতে দেওয়া উচিত। সন্ধ্যাবেলা ঐ
নবাগতা সহপত্নীর চুল বেঁধে দেবে-তাকে ভাল বেশভূষা পরাবে, মুখে গন্ধদ্রব্য
লাগাবে-তারপর তাকে স্বামীর বিছানায় পাঠিয়ে দেবে।
নবাগতা সহপত্নীকে নানা প্রসাধন দ্রব্যে, সজ্জিত করে তাকে
নানাবিধ কামকথা শিখিয়ে দেওয়া
উচিত। কোনও রকম স্বামীকে জানানো উচিত নয় যে তার মনে
মনে ঈর্ষা বা দুঃখ জন্মেছে। বরং স্বামীকে
মাঝে মাঝে বলা দরকার, নতুন বউকে মাঝে মাঝে অলঙ্কার, বস্ত্র ইত্যাদি তিনি ক্রয় করে দেন। সহপত্নীর
সন্তান্তসন্থতিদের নিজের সন্তান সন্ততির মত আদর যত্নে মানুষ করা উচিত-তাদের সেবা, যত্ন করতে হবে নিজহাতে। তারা তার আত্নীয়স্বজন কেউ এলে, তাকে নিজের
আত্নীয়-স্বজনের মতো যত্ন করতে হবে, তাদের শ্রদ্ধা
করতে হবে। এইরূপ করলে তার পূর্বে সংসার টিকে
থাকবে, একথা
মনে রাখা উচিত।
কনিষ্ঠা সহপত্নীর কর্তব্য কনিষ্ঠা সহপত্নী
হয়তো স্বামীর ভালবাসা কিছু কিছু আয়ত্ত করে নিয়েছে- তখনও তার উচিত জ্যেষ্ঠা
সহপত্নীকে প্রথমে শ্রদ্ধা ভক্তি করা-সংসারের সব কিছুর জন্যে তার মতামত
নেওয়া। স্বামীকে প্ররোচনা দেওয়া, যাতে তিনি
জ্যেষ্ঠা সহপত্নীকে কিছু কিছু সম্মান দেন্তমাঝে মাঝে
তাকেও আদর করেন। জ্যেষ্ঠার প্রতি
ঘৃণা, হিংসা
কি কলহপ্রবণতা কখনও করা উচিত নয়। বিধবার কর্তব্য কোন কোন বিধবা তার কাম-বাসনা চরিতার্থ না করতে পেরে বা মনস্কামনা
সিদ্ধ করার জন্য সুদর্শন বলবান যুবা পুরুষকে গ্রহণ
করতে পারে। একে বিবাহ বলা হয় না একে বলে
পূণর্ভূ।
পূণর্ভূ হয়ে নতুন স্বামী পেতে হলে তাকে একটা অনুষ্ঠান করে স্বামীর
বন্ধুদের ভোজন করাবে-কিছু কিছু অর্থ তাদের দান করবে। তারপর নতুন স্বামীর প্রদত্ত অলঙ্কার ও বস্ত্রাদি পরিধান করে স্বামীর আত্নীয়স্বজনের কাছে উপস্থিত হবে। সে পূর্ব গৃহে যাবে না-এই কথা
প্রকাশ করবে। নতুন স্বামীর গৃহে এসে তার সঙ্গে কাম কলা
প্রকাশ করবে। অবহেলিতা পত্নী যখন ওকানও লোকের কতকগুলি পত্নী থাকে, তখন হয়ত একটি
পত্নী হয়-অবহেলিতা। সে হতে পারে
স্বামীর অনাদৃতা। স্বামী তার সঙ্গে হয়তো যৌনকার্যও করেন না। এমন অবস্থা ঐ অবহেলিতা পত্নীর উচিত, যে পত্নী
স্বামীর সবচেয়ে প্রিয়তমা, তার সঙ্গে অন্তরঙ্গ
বন্ধুত্ব স্থাপন করা। তর উচিত
অন্যান্য পত্নীদের সঙ্গে বা বাড়ির অন্য আত্নীয় স্বজনের সঙ্গে সম্ভাব রাখা। তার উচিত কামের
যৌন কলা যা আছে তা নিপুণভাবে শিক্ষা করা হয়ত এই নিপুণতার অভাবেই সে
স্বামীর ভালবাসা হারিয়েছে। তার সপত্নীর
সন্তান-সন্ততিদের প্রতি ভালবাসা হারিয়েছে। সংসারে যে সব
পূজা আছে, ব্রত পার্বণ আছে তাও তার ভালভাবে পালন করা দরকার।
স্বামী যৌন
সম্পর্কের ইচ্ছা প্রকাশ করা মাত্র তার তাতে সাড়া দেওয়া উচিত। ইচ্ছা না থাকলেও স্বামীর মতে মত দেওয়া উচিত। মোট কথা যাতে স্বামীর মন
জয় করা যায় তার চেষ্টা করা উচিত। স্বামীর সঙ্গে কোন পুরানো কলহের কথা বা ঝগড়ার কথা তার না তোলাই
কর্বব্য। এমন কি তখন তার স্বামীর অন্য কোনও পত্নীর
সঙ্গেও তার কলহ করা কদাচ উচিত নয়। যদি কোনও পত্নীর
সঙ্গে স্বামীর বিবাদ হয়, সে তার মীমাংসা করে দিতে চেষ্টা করবে। যে সব কাজ করলে
স্বামী তাকে ভালবাসতে পারে, তাকে পূর্ণভাবে বিশ্বাস করতে পারে, সে সব কাজ করা উচিত। স্বামী তাকে
যাতে ভালবাসতে পারে, প্রতিটি কাজ তার এমন ভাবে করা কর্তব্য।
অন্তঃপুরের
মহিলাদের কর্তব্য রাজার অন্তঃপুরে
সাধারণতঃ প্রত্যেক রাণীর পৃথক পৃথক মহল বা ঘর থাকে। রাজার একজন করে
চাকরানী বা দূতী থাকে। তাকে দিয়ে বলে পাঠান, নির্দিষ্ট রাতে তিনি কোন রাণীর কাছে রাত্রি যাপন করবেন। রাজ অন্তঃপুরে
প্রধান মহিষী থেকে পরস্পর স্তর আছে। মাঝে থাকেন
উপপত্নী, বাঈজী ও বারাঙ্গনা প্রভৃতি-সব শেষে থাকেন রাণীরা। রাণীদের উচিত চাকরানীদের মাধ্যমে রাজার কাছে মালা, চন্দন, সুগন্ধি প্রভৃতি পাঠানো-যাতে রাজা তার কথা আগে মনে করেন। রাজার নিকট থেকে
যেমন আদেশ হয়, সেই অনুযায়ী রাজা ইচ্ছামত অন্তঃপুরিকাদের অনুগৃহীত করে
থাকেন। এই বিষয়ে
রাণীদের উচিত নয়, রাজার বিরুদ্ধে কোন মত প্রকাশ করা।
বহু পত্নীকে
লোকের কর্তব্য বহু পত্নীক লোকের কর্তব্য তার প্রতিটি
স্ত্রীকে সন্তুষ্ট রাখা-তাদের কাউকে অবহেলা না করা। যদি কেউ কোনও দোষ করে থাকে-তবে তার অপরাধ অনুযায়ী শাস্তি দেবেন-
মিথ্যা কাউকে শাস্তি দেবেন না- প্রমাণ না পেলে তা সঠিক
বলে বিশ্বাস করবেন না। সে একজন পত্নীর
সঙ্গে কিরূপ কামকেলি করে থাকে তা অন্যের কাছে প্রকাশ করবে
না। একজনের যোনির গঠন কেমন তা কদাচ অন্যকে বলবে না। এতে মনোমালিন্যের
সৃষ্টি হয়। যদি তাদের মধ্যে
ঝগড়া হয়, সে ধীর স্থিরর মস্তিষ্কে তার বিচার করবে। কদাচ যেন এর অন্যথা না হয়। সঙ্গম সময় কোন
স্ত্রীর কাছে কতটা আরাম পায়, অন্যের কাছে তা বলা অনুচিত। প্রত্যেকের কাছেই তার প্রশংসা করা উচিত। তাতে সকলেই রাজাকে ভালবাসে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন