২৫ মার্চ ১৯৭১ কলো রাতেই শুরু হয় বুদ্ধিজীবীদের নিধন। পরিকল্পিতভাবে ১৪ ডিসেম্বরে সবচেয়ে বেশী বুদ্ধিজীবী নিধন করা হয়েছিল।
রাও ফরমান আলী এদেশের ২০,০০০
বুদ্ধিজীবীকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু এই পরিকল্পনা মতো হত্যাযজ্ঞ
চলেনি। কারণ ফরমান আলীর টার্গেট ছিল শীর্ষ বুদ্ধিজীবীদেরকে গভর্নর হাউজে নিমন্ত্রণ
করে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলা। বুদ্ধিজীবী তদন্ত কমিটির প্রধান জহির রায়হান বলেছিলেন, এরা নির্ভুলভাবে বাংলাদেশের গণতন্ত্রমনা বুদ্ধিজীবীদেরকে বাছাই
করে আঘাত হেনেছে। উল্লেখ্য,ওই কমিশনের আহবায়ক ছিলেন চলচিচত্রকার জহির
রায়হান যিনি নিখোঁজ হন ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারী। প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত তাজউদ্দিন আহমেদ একটি
তদন্ত কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নেন ১৯৭১ সালের ৩১ শে ডিসেম্বর ।
কিন্ত ,তার সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি। “আর একটা সপ্তাহ গেলেই ওরা বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের সবাইকেই মেরে
ফেলত- আল বদর বাহিনীর মাস্টার প্ল্যান”---- ‘দৈনিক আজাদ
১৯৭১ সালের ২৭ ডিসেম্বর’ সেখানে লেখা
হয়েছিল: পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর গণহত্যার সাহায্যকারী দলগুলির মধ্যে জামাতে
ইসলামীর ভূমিকা ছিল সবচেয়ে ঘৃণ্য ও জঘন্য। মওদুদী-গোলাম আযম-আবদুর রহীমের
নেতৃত্বে পরিচালিত জামাতে ইসলামী বাংলাদেশের স্বাধীনতার শুধু ঘোর বিরোধিতাই করেনি-
লক্ষ লক্ষ বাঙালীকে পাইকারীভাবে হত্যা করার কাজে সক্রিয় সহযোগিতাও করেছে। এরাই আর
একটা সপ্তাহ গেলেই ওরা বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের সবাইকেই মেরে ফেলত। এদের সাথে
প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিল ইসলামী ছাত্র সংঘ (বর্তমান ছাত্র শিবির)।
পাকিস্তানীরা যেহেতু বুঝতে পেরেছিল এদেশে তাদের
দিন শেষ হয়ে আসছে তারা এদেশের মানুষকে একটা মরণ কাঁমড় দেবার জন্য
মরীয়া হয়ে উঠে।তাদের এই কুৎসিত ইচ্ছায়
আরো সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে
দেয় এদেশের স্বাধীনতাবিরোধী দালালচক্র। এই স্বাধীনতাবিরোধী, দেশের
মানুষের সাথে
বিশ্বাসঘাতকতা করা দালালগুলো বুঝতে পেরেছিল
এতদিন পাকিস্তানী প্রভুদের পা চাটার ,তাদের সাথে হাত
মিলিয়ে হত্যা-ধর্ষণ-লুঠতরাজের যে জঘন্য
ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে তার ফলশ্রুতিতে এদেশের মাটিতে
বসবাস করা তাদের জন্যও অসম্ভব হয়ে উঠবে।কাজেই ঘাতক-দালাল চক্রের একটাই উদ্দেশ্য যেভাবে যতটুকু সম্ভব এদেশের
ক্ষতি করা। দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান,
জাতির যে কোন বিপর্যয়ে অগ্রনী ভূমিকা নিয়ে সমস্যা সমাধানের পন্থা নির্ধারণ করার যোগ্যতাসম্পন্ন ধীমান
ব্যক্তিবর্গ তাদের এই
ধবংস-প্রক্রিয়ার প্রধান
লক্ষ্যে পরিণত হন।এদেশকে মেধাশূন্য করে পঙ্গু করে ফেলার এক ভয়াবহ নীলনকশার
পরিকল্পনা করে তারা । যার ফল হবে এদেশের মানুষের জন্য মারাত্মক এবং সুদূরপ্রসারী।
কোন জাতির অগ্রসরমানতা বা সার্বিক বিকাশের ধারাকে প্রতিহত করতে এর থেকে মোক্ষম অস্ত্র আর কি হতে পারে?
শিক্ষাবিদ,চিকিৎসক,প্রকৌশলী,সাহিত্যিক,সাংবাদিক,ব্যবসায়ী,রাজনীতিক,ছাত্র কেউই এই ঘাতকদের হাত থেকে রেহাই
পাননি।প্রতিদিনই কারো না কারো বাসায় ঢুকে বিশেষ
কোন ব্যক্তিকে ধরে চোখ বেঁধে
নিয়ে যাওয়া হতো অজ্ঞাত কোন স্থানে।যাদের
ধরে নিয়ে যাওয়া হতো নারকীয় নির্যাতনের পরে তাদের সবাইকেই মেরে ফেলা হতো।ওরা কেউ আর ঘরে ফিরে আসেনি।দু,একটা
ব্যতিক্রম হয়তবা ছিল।কিন্তু সেইসব
ভাগ্যবানের সংখ্যা উল্লেখ করার মতো ছিলনা।
ঘাতক-দালাল চক্র এই পৈশাচিক-নির্মম
নিধন যজ্ঞের পর ঢাকার মিরপুর, রায়েরবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে বুদ্ধিজীবীদের লাশ ফেলে রেখে যায়। ১৬ই ডিসেম্বরপাক-বাহিনীর আত্মসমর্পণের
পরে আত্মীয়-স্বজনেরা মিরপুর ও রায়েরবাজার
বধ্যভূমিতে তাঁদের লাশ
খুঁজে পায়। ঘাতকবাহিনী আমাদের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের
পৈশাচিকভাবে নির্যাতন করেছিল।
যুদ্ধকালীন সমস্ত সময় জুড়েই বুদ্ধিজীবীদের
হত্যা করা হলেও ১৪ই ডিসেম্বরের মতো একসাথে এত বুদ্ধিজীবীকে এর আগে হত্যা করা
হয়নি ,এজন্যই এই দিনটিকেই
“শহীদ বুদ্ধীজীবী দিবস” রূপে পালন করা
হয়। বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ ১৪ই ডিসেম্বরকে ‘শহীদ
বুদ্ধিজীবী দিবস” বলে ঘোষণা
দেন। প্রতি বৎসর এই দিনটিতে আমরা আমাদের অকাল-প্রয়াত শ্রেষ্ট সন্তানদের আবেগ-আপ্লুত হয়ে স্মরণ করি ।
মামলাটি সিআইডিতে পাঠানোর পর তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিআইডির তৎকালীন সিনিয়র এএসপি মুন্সী আতিকুর রহমানকে (বর্তমানে অবসরে)। তিনি মামলার তদন্ত পর্যায়ে ১৯৯৮ সালের ১৮ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুদ্ধাপরাধ আইনে মামলা দায়েরের জন্য অনুমতি চান। তদন্ত চলাকালে তিনি শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মীয়সজনদের ৪০ জনের সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করেন। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় আন্তর্জাতিক আইনে মামলাটি নতুন করে দায়েরের জন্য সিআইডিকে প্রস্ততি নেওয়ার নির্দেশ দেয়।
সিআইডি সূত্র জানায়, ওই আইনে মামলা দায়ের করার জন্য রমনা থানার মামলাটিতে চূড়ান্ত রিপোর্ট দিয়ে আন্তর্জাতক যুদ্ধাপরাধ আইনে অনুমতি চেয়ে পুরো প্রক্রিয়া জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ২০০২ সালে পুর্ণাঙ্গ প্রস্তাবনাও পাঠানো হয়। ওই প্রস্তাবনা বলা হয়, কলাবরেটর অ্যাক্ট বাতিল হয়ে যাওয়ায় প্রচলিত আইনে বুদ্ধিজীবী হত্যা মামলায় বিচার পাওয়ার সম্ভবনা কম। কিন্তু ১৯৭৩ সালের প্রণীত আর্ন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আইনে এর বিচার সম্ভব। এ আইনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিধানও রয়েছে। তবে এই আইনটি কার্যকর করতে হলে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের প্রয়োজন। রাষ্ট্রপতি এ ব্যাপারে অধ্যাদেশ জারি করলেই ওই আইনে মামলা দায়ের সম্ভব।
সূত্র জানায়, এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় থেকে আর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। উপরন্ত মামলাটির কাগজপত্র কোথায় কী অবস্থায় আছে সে ব্যাপারেও কঠোর গোপনীয়তা অবলম্বন করা হচ্ছে। এক পর্যায়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে থাকা কাগজপত্র সিআইডির তৎকালীন অ্যাডিশনাল আইজি নিয়ে যান।
১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের ১৮ ,মতান্তরে ২৯ তারিখে বেসরকারীভাবে গঠিত ‘বুদ্ধিজীবী নিধন তদন্ত কমিশন’এর রিপোর্ট ও
আলোর মুখ দেখেনি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমেই পুলিশের
অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ২০০২ সালে বুদ্ধিজীবী হত্যা মামলার চুড়ান্ত
প্রস্তাবনা দেয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রহস্যজনক কারণে সে মামলা দায়েরের অনুমতি
দেয়নি।
মামলার নথিটিও উধাও করে দিয়েছিল তৎকালীন জোট
সরকার। অভিযোগ উঠেছে, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার পরিকল্পিত ভাবে
মামলাটিকে ধ্বংস করেছে।
স্বাধীনতার
২৫ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকারের
শাসনামলে ১৯৯৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যার
ঘটনায় রমনা থানায় প্রথম মামলা দায়ের করা হয় (মামলা নম্বর ১৫)। ওই হত্যা
মামলায় আলবদর বাহিনীর চৌধুরী মাইনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামানকে আসামি করা হয়।
মামলাটি দায়ের করেন শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিনের বোন ফরিদা বানু। মামলাটি সিআইডিতে পাঠানোর পর তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিআইডির তৎকালীন সিনিয়র এএসপি মুন্সী আতিকুর রহমানকে (বর্তমানে অবসরে)। তিনি মামলার তদন্ত পর্যায়ে ১৯৯৮ সালের ১৮ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুদ্ধাপরাধ আইনে মামলা দায়েরের জন্য অনুমতি চান। তদন্ত চলাকালে তিনি শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মীয়সজনদের ৪০ জনের সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করেন। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় আন্তর্জাতিক আইনে মামলাটি নতুন করে দায়েরের জন্য সিআইডিকে প্রস্ততি নেওয়ার নির্দেশ দেয়।
সিআইডি সূত্র জানায়, ওই আইনে মামলা দায়ের করার জন্য রমনা থানার মামলাটিতে চূড়ান্ত রিপোর্ট দিয়ে আন্তর্জাতক যুদ্ধাপরাধ আইনে অনুমতি চেয়ে পুরো প্রক্রিয়া জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ২০০২ সালে পুর্ণাঙ্গ প্রস্তাবনাও পাঠানো হয়। ওই প্রস্তাবনা বলা হয়, কলাবরেটর অ্যাক্ট বাতিল হয়ে যাওয়ায় প্রচলিত আইনে বুদ্ধিজীবী হত্যা মামলায় বিচার পাওয়ার সম্ভবনা কম। কিন্তু ১৯৭৩ সালের প্রণীত আর্ন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আইনে এর বিচার সম্ভব। এ আইনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিধানও রয়েছে। তবে এই আইনটি কার্যকর করতে হলে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের প্রয়োজন। রাষ্ট্রপতি এ ব্যাপারে অধ্যাদেশ জারি করলেই ওই আইনে মামলা দায়ের সম্ভব।
সূত্র জানায়, এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় থেকে আর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। উপরন্ত মামলাটির কাগজপত্র কোথায় কী অবস্থায় আছে সে ব্যাপারেও কঠোর গোপনীয়তা অবলম্বন করা হচ্ছে। এক পর্যায়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে থাকা কাগজপত্র সিআইডির তৎকালীন অ্যাডিশনাল আইজি নিয়ে যান।
শহীদ শিক্ষাবিদ বিশ্ববিদ্যালয় , বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া ও আইনজীবীদের তালিকাঃ
জেলা ও বিভাগ
|
শিক্ষাবিদ
|
আইনজীবী
|
||
প্রাথমিক
|
মাধ্যমিক
|
কলেজ
|
||
ঢাকা
|
৩৭
|
৮
|
১০
|
৬
|
ফরিদপুর
|
২৭
|
১২
|
৪
|
৩
|
টাঙ্গাইল
|
২০
|
৭
|
২
|
|
ময়মনসিংহ
|
৪৬
|
২৮
|
১
|
২
|
ঢাকা বিভাগ
|
১৩০
|
৫৫
|
১৭
|
১০
|
চট্টগ্রাম
|
৩৯
|
১৬
|
৭
|
১
|
পার্বত্য চট্টগ্রাম
|
৯
|
৪
|
১
|
১
|
সিলেট
|
১৯
|
৭
|
২
|
|
কুমিল্লা
|
৪৫
|
৩৩
|
১
|
৪
|
নোয়াখালী
|
২৬
|
১৩
|
৪
|
২
|
চট্টগ্রাম বিভাগ
|
১৩৮
|
৭৩
|
১৩
|
১০
|
খুলনা
|
৪৮
|
১৫
|
২
|
২
|
যশোর
|
৫৫
|
৩১
|
৫
|
৪
|
বরিশাল
|
৫০
|
২১
|
৪
|
|
পটুয়াখালী
|
৩
|
১
|
||
কুষ্টিয়া
|
২৮
|
১৩
|
৪
|
|
খুলনা বিভাগ
|
১৮৪
|
৮১
|
১৫
|
৬
|
রাজশাহী
|
৩৯
|
৮
|
৩
|
৫
|
রংপুর
|
৪১
|
২২
|
৯
|
৪
|
দিনাজপুর
|
৫০
|
১০
|
১
|
২
|
বগুড়া
|
১৪
|
১২
|
২
|
|
পাবনা
|
৪৩
|
৯
|
১
|
২
|
রাজশাহী বিভাগ
|
১৮৭
|
৬১
|
১৪
|
১৫
|
সারা বাংলাদেশ
|
৬৩৯
|
২৭০
|
৫৯
|
৪১
|
শহীদ শিক্ষাবিদের
(বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া) মোট সংখ্যা = ৯৬৮
|
||||
শহীদ বিশ্ববিদ্যালয়ের
শিক্ষক সংখ্যা = ২১
|
||||
শহীদ শিক্ষাবিদের মোট
সংখ্যা = ৯৮৯
|
জাতিকে মেধাশূন্য করার যে প্রক্রিয়া একাত্তরের ঘাতকচক্র শুরু করেছিল তাদের উত্তরসূরিরাও একই উদ্দেশ্যে এই দেশের নতুন প্রজন্মের কাছে নানা ভুল তথ্য ,ভুল ইতিহাস পরিবেশন করে যাচ্ছে যাতে করে এদেশের মানুষ একটা বিভ্রান্ত জাতিতে পরিণত হয়ে তাদের ইচ্ছার দাসত্বতা গ্রহন করুক। এই ঘাতকদালালদের সম্পূর্ণরূপে নির্মুল করা নাহলে জাতির সামনে আরো ভয়াবহ সময় আসবে তখন তারা এই স্বাধীন বাংলার অস্তিত্বের উপর আঘাত হানবে। এই ঘাতকদালাল চক্র এবং এদের দ্বারা মগজধোলাইকৃত উত্তরসূরিরা এদেশের আনাচে-কানাচে প্রবলভাবে সক্রিয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন