তৎকালীন ইউরোপীয় দেশ স্পেনে মুসলিম সেনাপতি তারিক বিন যিয়াদ
এর নেতৃত্বে ৭১১ খ্রীস্টাব্দে ইসলামি পতাকা উড্ডীন হয় এবং মুসলিম সভ্যতার
গোড়াপত্তন হয়। সুদীর্ঘ প্রায় আটশ বছর পর্যন্ত সেখানে মুসলমানদের গৌরবময় শাসন
বহাল থাকে।
হিজরী প্রথম শতাব্দীর শেষের দিক । যখন সারাবিশ্ব মুসলমানদের
বিজয়ের বাতাস বয়ে চলছে । সে বাতাস ইউরোপের মাটিতে দোলা দেয় । ইউরোপের একটি
দেশের নাম আন্দুলুস বা স্পেন । ইউরোপের দক্ষিন পশ্চিমে অবস্থিত রুপসি স্পেন ।
উত্তরে ফ্রান্স, পশ্চিমে র্পতুগাল , র্পূবে ও
দক্ষিনে ভূমধ্যেসাগর । স্পেনের রাজা লডারিক ছিলেন একজন কট্ররপন্থী জালিম খৃস্টান ।
তার জুলুমে জনগন ছিল অতিস্ঠ । তার জুলুম নির্যাতনে হাপিয়ে উঠেছিল মাজলুম মানবতা।
কিন্তু তার বিরুধ্যে টু শব্দ করার সাহস ছিল না কারো। যখন গোটা ইউরোপের
ক্রান্তিকাল চলছিল, মুসলিম রণক্ষেত্রে কমান্ডার প্রধান
ছিলেন মূসা বিন নুসায়ের।
তিনি তখন দক্ষিন মরেক্কো জয় করে কায়রোয়ানে অবস্থান করছিল ।
তখন তার সাথে কাউন্টার রাজা জুলিয়ান সাক্ষাত করে মাজলুম মানবতাকে রক্ষা করার জন্য
মূসা বিন নুসায়েরকে আহবান করেন । মূসা বিন নুসায়ের তার অধিনের সেনাপতি তারেক বিন
যিয়াদের নেতৃত্বে ৭,০০০ (সাত হাজার) সৈন্যর একটি মুজাহিদ বাহিনি
প্রেরন করেন । ৯২ হিজরী ২৮ রমযান মোতাবেক ৭১১ খ্রিঃ জুলাই মাসে স্পেনে অবতরন করেন
মুজাহিদ বাহিনি । শুরু হয় খ্রিস্টানদের সাথে প্রচন্ড লড়াই ।মর্মস্পর্শী তাকবীর
ধব্বনিতে মূখরিত হয় আকাশ বাতাস । দীর্ঘ জিহাদের পর খৃস্টান বাহিনি পর্যদস্ত হয় ।
একের পর এক স্পেনের সকল শহর করায়ত্ব হয় মুসলমানদের ।সলিল সমাধি হয় জালিম শাসকের ।
তারপর থেকে ১৪৯২ সাল পযর্ন্ত প্রায় ৮০০ বছর মুসলমানেরা শান্তি আর সাম্য বজায় রেখে
স্পেন শাসন করে।
তাদের ন্যায়-ইনসাফ আর ভালবাসায় মুগ্ধ হয়ে মানুষ দলে দলে আশ্রয়
নেয় ইসলামের ছায়া তলে । শিক্ষা-সাংস্কৃতি ,জ্ঞান-বিজ্ঞান ,শিল্প-বাণিজ্যে ইত্যাদির কেন্দ্র-বিন্দুতে পরিণিত হয় স্পেন । কালের
প্রবাহে এক সময় মূসলমানেরা শিক্ষা-সাংস্কৃতি , জ্ঞান-বিজ্ঞান
ছেড়ো আরাম- আয়েশে মত্ত হতে শুরু করল। শাসকদের মাঝে অর্থের লোভ, ভোগ- বিলাসিতা ও বিজাতিয় আচার-আচরনসহ সব ধরনের নৈতিক অধঃপতন দেখা দেয়।
এমন কি নৈতিক অধঃপতনের নিম্নপর্যায়ে উপণীত হল। মুসলিম শাসকদের মধ্যে অনৈক্য ও
বিবাদ শুরু হয় ।
স্পেনের মাটি থেকে মুসলমানদের উচ্ছেদ করার ঘোষণা দিয়ে পর্তুগীজ
রাণী ইসাবেলা চরম মুসলিম বিদ্বেষী পার্শ্ববর্তী খ্রিষ্টান সম্রাট ফার্ডিনান্ডকে
বিয়ে করে ৷ বিয়ের পর দু'জন মিলে সম্মিলিত বাহিনী গড়ে তোলে স্পেন
আক্রমণের। ১৪৯২ সালে স্পেনে মুসলমানদের চূড়ান্ত পরাজয় ঘটে। এর আগেই রাজা
ফার্ডিনান্ড মুসলমানদের হাত থেকে কর্ডোভাসহ অন্যান্য অঞ্চল দখল করে নেয়। বাকি ছিল
শুধু গ্রানাডা। গ্রানাডার শাসনকর্তা ছিলেন হাসান। খ্রিস্টানরা তার উপর চাপ সৃষ্টি
করছিল, আত্মসমর্পনের জন্য। কিন্তু তিনি কিছুতেই রাজি
হচ্ছিলেন না। তাকে আত্মসমর্পনে রাজি করাতে না পেরে খ্রিস্টানরা তার পুত্র আবু
আবদুল্লাহকে সিংহাসনে বসানোর লোভ দেখিয়ে হাত করে ফেলে। আবদুল্লাহ তাদের কথায় রাজি
হয়ে পিতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে এবং এক সময় বাদশাহ হাসান পুত্রের সাথে যুদ্ধ করার
গ্লানি এড়ানোর জন্য দেশান্তরী হন।
গ্রানাডার সর্বশেষ মূরিশ কিং (Moorsih king) হলেন
নাসরিদ বংশীয় আবু আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ (Abu Abdullah Muhammad XII), যাকে স্প্যানিশরা ‘বোয়াবদিল’ নাম
দিয়েছে। বিলাস-ব্যসনে মত্ত ও উচ্ছন্নে যাওয়া আবু আব্দুল্লাহ হলেন গ্রানাডার তাইফার
সুলতান আবুল হাসানের ছেলে। ছেলের ষড়যন্ত্র ও কুচক্রের কারনেই অনেকটা সিরাজুদ্দৌলার
মতই বাবা আবুল হাসান পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। মীরজাফরের মত আবু আব্দুল্লাহকে বানানো
হয় নামকাওয়াস্তে সুলতান। এই পুতুল সুলতানের কাছেও ১৪৮৯ সালে ফার্দিনান্দ ও
ইসাবেলার নিকট থেকে চুড়ান্তরুপে নিঃশর্ত ভাবে আত্মসমর্পনের নির্দেশনা আসে এবং
স্মরন করিয়ে দেয়া হয় অস্বীকারের ভয়াবহ পরিনতির কথাও।
আবু আব্দুল্লাহ বিশ্বাসঘাতকতা করলেও তার সেনাপতি মহাবীর মুসাসহ
অনেক মুসলমান ফার্ডিনান্ড বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকে। এর আগে কখনো
সম্মুখ যুদ্ধে মুসলমানদের পরাজিত করতে পারেনি বলে চতুর ফার্ডিনান্ড এবার পা বাড়ায়
ভিন্ন পথে ৷ তার নির্দেশে আশপাশের সব শস্যখামার জ্বালিয়ে দেয়া হয় ৷ অচিরেই
দুর্ভিক্ষ নেমে আসে গ্রানাডা শহরে ৷ দুর্ভিক্ষ তখন প্রকট
আকার ধারণ করে । বিভিন্ন
এনসাইক্লোপেডিয়া অনুযায়ী আবু আব্দুল্লাহ উপায়ান্তর না দেখে গ্রানাডা সম্পূর্নভানে
হস্তান্তর করতে বাধ্য হন ১৪৯২ সালের ২ জানুয়ারীতে, ১লা এপ্রিলে নয়।
একটি উদাহরন পাওয়া যেতে পারে এম বি সিঞ্জ (M B Synge) তার দ্যা বাল্ডউইন্স প্রজেক্ট (The Baldwin’s Project) প্রকাশিত ‘সাহসী মানুষদের সাহসী কান্ড (Brave Men and Brave
Deeds)’নামক আর্টিকেলে। তিনি লিখেছেন, "December had
nearly passed away. The famine became extreme, and Boabdil determined to surrender
the city on the second of
January (ডিসেম্বর শেষ হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। দূর্ভিক্ষ চরম আকার
ধারন করেছে। আর বোয়াব্দিল গ্রানাডা আত্মসমর্পনের সিদ্ধান্ত নিলেন ২
জানুয়ারী)"।
যখন খ্রিষ্টানরা তাদের প্রথম আক্রমণ করেছিল তারা মরক্কের
সুলতানের কাছে সাহায্যের আবেদন করলে তিনি তাদেরকে পরস্পরে যুদ্ধ থেকে বিরত হয়ে এক
শাসকের অধিনে ইসলামি হুকুমাতের দিকে ফিরে যাবার আহ্বান জানান। কিন্তু তারা তাতে
কর্ণপাত না করে নিজেদের স্বার্থ বজায় রেখে পরস্পরে যুদ্ধে লিপ্ত থাকে । এই সুযোগে
রোমান খ্রিষ্টানরা নিজেদের শক্তিশালী করে আক্রমণ করা শুরু করলে মরক্কের সুলতান
তাদের সাহায্য প্রত্যাখ্যান করলেন। এতে একের পর এক মুসলিম রাজ্য খ্রিষ্টানদের হাতে
চলে যেতে থাকে। সবশেষে ১৪৯২ খ্রিস্টাব্দের ২ রা জানুয়ারি ইসলামের দুর্গ খ্যাত
গ্রানাডার তৎকালীন মুসলিম শাসক আবু আব্দুল্লাহ (পাশ্চাত্যে তাকে ববডিল নামে ডাকা
হয়) রাজা ফার্ডিন্যান্ড এবং রানি ইসাবেলার সঙ্গে এক চুক্তির মাধ্যমে পরাজয় স্বীকার
করে মুসলিমদের ভাগ্যে দুর্দিন বয়ে নিয়ে আসে ।
এখানে ১৪৯২ সালের ২ রা জানুয়ারি তারিখটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এটা সত্য যে,
এই চুক্তির পর মুসলিমরা সেখানে বসবাস করার অধিকার পেলেও তাদের
উপর নির্যাতন এর পাহাড় নেমে আসে। এই সময়ের কয়েক দশক পরে আলজেরিয়ায় জন্ম নেয়া
বিখ্যাত ইতিহাসবিদ আবুল আব্বাস আহমাদ ইবনে মোহাম্মদ আল মাকারি (১৫৭৮-১৬৩২) স্পেনে
মুসলমানদের আগমন, শাসন এবং পতন নিয়ে রচনা করেন The
history of the Mohammedan Dynasties in Spain (extracted from the Nafhu-t-Tib
Min Ghosni-l-Andalusi-r-Rattib. Volume 2) (মূল আরবি বইয়ের
ইংরেজি অনুবাদ) ‘দ্য
হিস্ট্রি অব দ্য মোহাম্মাদান ডাইনেস্টি ইন স্পেন’। এ গ্রন্থে তিনি অত্যন্ত
হৃদয়গ্রাহী ভাষায় ধারাবাহিক বর্ণনায় স্পেনে মুসলমানদের পরাজয়ের বিষয়গুলো লিপিবদ্ধ
করেছেন। কিন্তু কোথাও তিনি এপ্রিল ফুল জাতীয় কোনো ঘটনার কথা উল্লেখ করেননি। এছাড়াও
বিশিষ্ট মুসলিম ইতিহাসবিদ এস. এম. ইমামুদ্দিন রচিত A political history of Muslim Spain গ্রন্থেও আলোচিত এপ্রিল ফুল জাতীয় কোনো ঘটনার উল্লেখ নেই।
স্পেন থেকে মুসলমানদেরকে ১৪৯২ সালেই বের করে দেয়া হয়নি। আমীর
আবূ-আব্দুল্লাহ্র সাথে ইসাবেলা আর ফার্দিনান্দের যে চুক্তি হয়েছিল তাতে গ্রানাডার
মুসলমানদের পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী কালে (১৫০৮ সালে)
ইনকুইজিশন চালু করা হলে মুসলমানদের হয় ক্যাথলিক নয়তো স্পেন ছাড়ার পছন্দ দেয়া
হয়েছিল। যারা স্পেন ছাড়েনি তারা ক্যাথলিক ছদ্মবেশে মুসলিমই থেকে যান। খৃষ্টানরাও
জানত তারা মুসলমান। আর এদেরকেই তারা মরিস্কো উপাধি দেয়। মরিস্কোদের পুরোপুরি স্পেন
থেকে বহিষ্কার করা হয় ১৬০৯ থকে ১৬১৪ সালের মধ্যে। এটাও করা হয়েছিল রাজনৈতিক ও
সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা হারানো মরিস্কোদের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য বিদ্রোহ করার পর।
সে সময়ে এপ্রিল ফুলের ঘটানার মত কোন ঘটনা ঘটেছে কিনা ইঊরোপীয় ঐতিহাসিকরা তা উল্লেখ
করেননি।
‘এপ্রিল
ফুলস ডে’ নিয়ে জার্মানদের ধারণা
আবার ভিন্ন। তাদের মতে, ১৫৩০ সালের পয়লা এপ্রিল
জার্মানির অগসবার্গে তৎকালীন আইনসভা সদস্যদের মধ্যে অর্থনৈতিক
বিষয়ে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছিল। তবে
সময় সংকুলানের অভাবে ওই সভাটি অনুষ্ঠিত হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ দেখা যায়। সভা
দেখতে আসা অসংখ্য দর্শক সভা অনুষ্ঠানের ব্যাপারে পারস্পরিক বাজিতে
জড়িয়ে পড়েন। সভাটি হয়নি। ফলে যাঁরা সভা অনুষ্ঠানের পক্ষে বাজি ধরেছিলেন তাঁরা
হেরে গিয়ে অন্য সবার ঠাট্টা-তামাশার পাত্র হয়ে পড়েন।
তবে পয়লা এপ্রিলে মানুষকে বোকা বানানোর প্রথাটি আসে ১৫৩৯ সালে
ফ্লেমিশ (জার্মানদের একটি উপজাতি, যারা বেলজিয়ামের নাগরিক এবং ডাচ ভাষায়
কথা বলে; এরা মূলত ‘বেলজিয়ান ডাচ’) কবি
‘এডুয়ার্ড ডে ডেনে’ একটি হাস্য রসাত্মক কবিতা
থেকে। কবিতাটির ইংরেজি নাম ছিল ‘রিফ্রেইন অন এরান্ড-ডে, হুইচ হু দ্য ফারস্ট অভ
এপ্রিল’ অর্থাৎ
এপ্রিলের প্রথম দিনে অপ্রাপ্তি। কবিতাটির কাহিনিতে একজন ভদ্রলোক পয়লা এপ্রিলে
তাঁর চাকরকে বোকা বানিয়েছিলেন। এভাবেই নাকি জার্মানিতে ‘এপ্রিল ফুলস ডে’র প্রথা প্রচলিত হয়।
অন্যদিকে জামার্নির সীমান্তবর্তী দেশ নেদারল্যান্ডসের অধিবাসী
ডাচদের কাছে পয়লা এপ্রিলের গুরুত্ব ভিন্ন। ১৫৭২ সালের এই দিনে তারা লর্ড আলভা
নামক সেনার নেতৃত্বে স্প্যানিশ সৈন্যদের কাছ থেকে ‘ডান ব্রিয়েল’ নামে
একটি শহর দখল করে নেয়। শহরটি দখলের ঘটনা পরম্পরায় নেদারল্যান্ডস স্প্যানিশদের
থেকে স্বাধীনতা লাভ করে বলে ডাচরা মনে করে। তাই এই দিনটি তাদের কাছে সৌভাগ্যের দিন
বলে গণ্য।
এপ্রিল ফুলের আরেকটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের
ইতিহাসের প্রফেসর জোসেফ বসকিন। তিনি বলেছেন, এই প্রথাটির শুরু হয়
রোমান সম্রাট কনস্ট্যান্টাইনের শাসনামলে। হাসিঠাট্টা নিয়ে মেতে থাকে এমন একদল
গোপাল ভাঁড় জাতীয় লোক একবার সম্রাটকে কৌতুক করে বলল,জাহাপনা,
আমরা আপনার চেয়ে ভালোভাবে দেশ চালাতে পারবে। এ কথা রাজা মহোদয়
বেশ পুলকিত হলেন। রাজা গোপাল ভাঁড়দের সরদার কুগেলকে এক দিনের জন্য বাদশাহ বানিয়ে
ক্ষমতা ছেড়ে দিলেন। আর কুগেল সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে রাজ্যময় আইন জারি করে দিলো যে,
প্রতি বছরের এই দিন অর্থাৎ ১লা এপ্রিল সবাই মিলে হাসি-তামাশা
করবে। ব্যাস, তখন থেকেই চালু হয়ে যায় এপ্রিল ফুল ডে।
১৫৮২ সালে ১৩তম পোপ গ্রেগরি তাঁর এক আদেশে ইতালিতে জুলিয়ান
পঞ্জিকার পরিবর্তে গ্রেগরিয়ান পঞ্জিকা চালু করেন। ১৫৮৩ সালে ফ্রান্সের রাজা নবম
চার্লস গ্রেগরিয়ান পঞ্জিকা অনুসারে পয়লা জানুয়ারিকে নববর্ষ বলে ঘোষণা করেন। ২২
ডিসেম্বর, ১৫৬৪ সালে এটি ফ্রান্সের পার্লামেন্টে আইন হিসেবে পাস হয়। তবে
ফ্রান্সের অনেকেই এ আইনটিকে মেনে নিতে পারেননি। তাঁরা আগের মতই পয়লা এপ্রিলকেই
নববর্ষ হিসেবে পালন করতেন। ফলে নববর্ষ পালন নিয়ে জনগণ দু ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
যাঁরা পয়লা জানুয়ারিকে নববর্ষ বলে পালন করতেন তাঁরা পয়লা এপ্রিলকে নববর্ষ
হিসেবে পালনকারীদের নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা আরম্ভ করে দিলেন। পয়লা এপ্রিলে তাঁরা
প্রতিপক্ষের পিঠে গোপনে মাছের ছবি আঁকা স্টিকার লাগিয়ে দিতেন। যাঁর পিঠে স্টিকার
লাগানো হতো তাঁকে বলা হতো ‘পওয়াহসোঁ ডাভরিল’। ‘পওয়াহসোঁ
ডাভরিল’ শব্দগুচ্ছটি এসেছে ‘এলয় দ্য আমেরভাল’ নামক একজন ফরাসি কবির কাছ
থেকে। তিনি ১৫০৮ তার ‘লে লিভরে
ডে লা ডিয়াবলেরিয়ে’ কবিতায়
‘বোকা লোক’ বোঝাতে প্রথম এ শব্দগুচ্ছ
ব্যবহার করেন। এর আক্ষরিক অর্থ ‘এপ্রিলের মাছ’; তত্রাপি
ফরাসি ‘পওয়াহসোঁ
ডাভরিল’ বলতে ‘এপ্রিল ফুলস ডে’কে বোঝায়।
কথিত আছে, ১৪৯২ সালের ১ এপ্রিল অ্যারাগোন রাজ্যের
রাজা ফার্ডিন্যান্ড এবং ক্যাস্টিলের রানী ইসাবেলা স্পেন দখল করার পর ৭ লক্ষেরও
বেশী মুসলিমদের কেউ বলে মসজিদে কেউ বলে জাহাজে আশ্রয় নিলে নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়ে
আগুনে পুড়িয়ে মেরেছিল এবং এই প্রতারণা ও বিজয় কে উদযাপন করার জন্য এপ্রিল ফুল দিবস
পালন করা হয় । কারো
কারো মতে ত্রিশ লক্ষ মুসলমানদের কে পুরিয়ে মারলো
এক সাথে । পরর্বর্তিতে মুসলমানদের
মসজিদ-মাদ্রাসা এবং স্মৃতিগুলোকে বানিয়ে ছিল তাদের ঘোড়ার আস্তাবল । সেদিন খ্রিস্টানগুরুর
আদেশে জ্ঞান-বিজ্ঞানের মূল সূত্র লক্ষ লক্ষ আরবি পুস্তক পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়।
শুধু মুসলিমগণ নয়,
ইয়াহুদীদের উপরও খ্রিস্টানগণ একই রূপ অত্যাচার করে।
কারো কারো মতে ফার্দিনান্ড ঘোষণা করেছিল, যারা মসজিদে গিয়ে আশ্রয় নেবে তাদের
নিরাপদে আশ্রয় দেওয়া হবে। তার ঘোষণায় চল্লিশ হাজার মুসলমান আত্মবিশ্বাসী হয়ে
গ্রানাডার বিভিন্ন মসজিদে আশ্রয় নিলেও তাদের শেষ রক্ষা হয়নি। মসজিদের দরজাগুলো
বাহির থেকে বন্ধ করে দিয়ে মসজিদের মেঝেতে পেট্রল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে মুসলিমদের
হত্যা করেছিল রাজা ফার্দিনান্ড। ঐতিহাসিক এক বর্ণনা মতে তিন দিন পর্যন্ত হত্যার
উৎসব চলেছিল। মসজিদের বাহিরেও অসংখ্য মুসলিমকে আগুনে পুড়িয়ে, পাহাড় থেকে ফেলে, সমুদ্রের মধ্যে জাহাজ
ডুবিয়ে ও গণজবাই করে হত্যা করা হয়।
উপরের আলোচনা থেকে “এপ্রিল ফুল” কেন
কি তা বুঝে নেওয়ার দায়িত্ব পাঠক আপনার উপরেই রইল ।