কামরাঙ্গা ফল বিশ্বে বিভিন্ন নামে পরিচিত যেমন_ স্টার
ফ্রুট (তারা ফল) ক্যারামবোলা প্রভৃতি। এই ফলটির উৎপত্তি মূলত শ্রীলঙ্কায়। পরবর্তী
সময়ে ভারত, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া,
মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, চীনসহ ইউরোপ-আমেরিকা মহাদেশে চাষ হয় এবং এটি বিশ্বব্যাপী টক-মিষ্টি ফল
হিসেবে বেশ পরিচিত। কিন্তু উচ্চ মাত্রার ভিটামিন সি সমৃদ্ধ কামরাঙ্গায় উল্লেখযোগ্য
আরো রয়েছে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন বি৯ (ফোলেট) মিনারেল হিসেবে রয়েছে
পটাশিয়াম ফসফরাস জিংক প্রভৃতি।
কামরাঙ্গা ফল ৩-৬
ইঞ্চি ব্যাসের এবং ভাজযুক্ত। ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ এবং পাকলে হলুদ। কামরাঙ্গা টক
স্বাদযুক্ত বা টকমিষ্টি হতে পারে। কোন কোন গাছে একাধিকবার বা সারাবছরই ফল পাওয়া
যায়। এটি ভিটামিন এ ও সি এর ভাল উৎস। সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারিতে ফল পাওয়া যায়। খেতে টক হোক বা মিষ্টি, কামরাঙ্গা
ফলটির সবটুকুই উপকারী।
পুরো ফলটাই খাওয়া যায়, পাতলা ত্বকসহ। ফল কচকচে ও
রসালো। ফলে আঁশ নেই এবং এর প্রকৃতি অনেকটা আঙুরের মত। কামরাঙ্গা পাকার পর পরই খেতে
সবচেয়ে ভাল; যখন হলদেটে রঙ ধারণ করে। এর বাদামী
কিনারাগুলো কিছুটা শক্ত এবং কষ ভাব যুক্ত। ফল পাকার ঠিক আগেই পাড়া হয় এবং ঘরে
রাখলে হলুদ রঙ ধরে। যদিও এতে মিষ্টতা বাড়েনা। বেশি পেকে গেলে এর স্বাদ নষ্ট হয়ে
যায় ।
কামরাঙ্গায় ভিটামিন সির পরিমাণ আম, আনারস
ও আঙ্গুরের চেয়ে বেশি। এতে আয়রনের পরিমাণ পাকা কাঁঠাল, পাকা
পেঁপে, লিচু, কমলালেবু ও ডাবের
পানির থেকেও বেশি। এটি
এন্টি অক্সিডেন্টের ভালো উৎসই শুধু নয় এর রয়েছে এন্টি মাইক্রোবিয়াল এবং ক্যানসার
বা অস্বাভাবিক কোষ অপরাসরণের ক্ষমতা।
পুষ্টিমানঃ
প্রতি ১০০ গ্রাম
কামরাঙ্গায় পাওয়া যায়
শক্তি
|
৩১
কিলোক্যালরি
|
শর্করা
|
৬.৭৩
গ্রাম
|
চিনি
|
৩.৯৮
গ্রাম
|
খাদ্যে
ফাইবার
|
২.৮
গ্রাম
|
স্নেহ
পদার্থ
|
০.৩৩
গ্রাম
|
প্রোটিন
|
১.০৪
গ্রাম
|
প্যানটোথেনিক
অ্যাসিড বি৫
|
৩৯
মিলিগ্রাম
|
ফোলেট
বি৯
|
১২
মাইক্রোগ্রাম
|
ভিটামিন
সি
|
৩৪.৪
মিলিগ্রাম
|
ফসফরাস
|
১২
মিলিগ্রাম
|
পটাশিয়াম
|
১৩৩
মিলিগ্রাম
|
দস্তা
|
১২
মিলিগ্রাম
|
উপকারিতাঃ
১। এতে থাকে এলজিক এসিড যা
খাদ্যনালির (অন্ত্রের) ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
২। এর পাতা ও কচি ফলের রসে
রয়েছে ট্যানিন, যা রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে।
৩। পাকা ফল রক্তক্ষরণ বন্ধ
করে।
৪। ফল ও পাতা গরম পানিতে সিদ্ধ
করে পান করলে বমি বন্ধ হয়।
৫। কামরাঙ্গা ত্বক মসৃণ
করে।
৬। এর পাতা ও ডগার গুঁড়া
খেলে জলবসন্ত ও বক্রকৃমি নিরাময় হয়।
৭। কামরাঙ্গা পুড়িয়ে
ভর্তা করে খেলে ঠাণ্ডাজনিত (সর্দিকাশি) সমস্যা সহজেই ভালো হয়ে যায়।
৮। এর মূল বিষনাশক হিসেবে
ব্যবহৃত হয়।
৯। কামরাঙ্গা ভর্তা রুচি ও
হজমশক্তি বাড়ায়।
১০। পেটের ব্যথায়
কামরাঙ্গা খেলে উপকার পাওয়া যায়।
১১। শুকানো কামরাঙ্গা
জ্বরের জন্য খুবই উপকারী।
১২। ২ গ্রাম পরিমাণ শুকনো কামরাঙ্গার গুঁড়া
পানির সঙ্গে রোজ একবার করে খেলে অর্শ রোগে উপকার পাওয়া যায়।
১৩। কামরাঙ্গা শীতল ও টক।
তাই ঘাম, কফ ও বাতনাশক হিসেবে কাজ করে।
১৪। ত্বকে ব্রণ হওয়ার পরিমাণ কমায় ।
১৫। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে ।
১৬। কামরাঙ্গা চুল, ত্বক, নখ ও দাঁত
তুলনামুলকভাবে ভঙ্গুরহীন ও উজ্জ্বল করে ।
কাদের খাওয়া উচিত নয়ঃ
১। ডায়রিয়া হলে ও ডায়রিয়া ভাল হওয়ার পরপরই
এই ফল খাওয়া উচিত নয় ।
২। কিডনিতে ইনফেকশন বা কিডনিতে পাথর আছে
তাদের জন্য নয় ।
৩। হার্ট দুর্বলদের জন্য এই ফল নয় ।
৪। হাইব্লাড প্রেসার রুগীদের এই ফলের জুস
খাওয়া উচিত নয় ।
কামরাঙ্গা
একটি অক্সালেট সমৃদ্ধ ভিটামিন সি জাতীয় ফল। অক্সালেট যে কারো কিডনি
বিকল ও প্রস্রাব নির্গমনের পরিমাণ হঠাৎ করে কমে যাওয়ার কারণ
হতে পারে। টক কামরাঙ্গার রস ক্ষতিকর বেশি। মিষ্টি
জাতীয় কামরাঙ্গা তেমন ক্ষতিকর না
হলেও কিডনি রোগী, হাইব্লাড প্রেসার, হূদরোগী কিংবা যে কোন রোগীর কামরাঙ্গার জুস সেবন না করাটা ভাল।
মুখে
চিবিয়ে খাওয়ার চেয়ে জুস করে খাওয়ায় ঝুঁকি বেশি। জুসের সঙ্গে রং সংমিশ্রণ
করলে বিপজ্জনক মাত্রা আরও বেশি হয় বলে
বিশেষজ্ঞরা অভিমত ব্যক্ত করেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন