মোবারক হোসেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া থানার
নয়াদিল গ্রামের সাদত আলীর ছেলে। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার তথ্য অনুযায়ী মোবারক হোসেন স্বাধীনতার পর জামায়াতের রোকন ছিলেন। এরপর তিনি আওয়ামী
লীগে যোগ দিলেও পরে বহিষ্কৃত হন।
অভিযোগ গঠনের আদেশ অনুসারে, মুক্তিযুদ্ধকালে
মোবারক জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত
ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি জামায়াতের ইউনিয়ন
পর্যায়ের সদস্য (রুকন) হন। একাত্তরে তিনি স্থানীয় রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন।
গত বছর ২০১৩ ২০ মে মোবারক হোসেনের বিরুদ্ধে
রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। প্রসিকিউশনের
পক্ষে ১২ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছে। তারা হলেন মামলার আইও শ্যামল
চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা দারুল ইসলাম, শহীদ
আব্দুল খালেকের মেয়ে খোদেজা বেগম ও ছেলে রফিকুল ইসলাম, মো.
খাদেম হোসেন খান, আলী আকবর,
মো. আব্দুল মালেক, মুক্তিযোদ্ধা
ননী গোপাল মল্লিক, আব্দুস সামাদ, শহীদ
জায়া ভানু বিবি, আব্দুল হামিদ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কুলের সুপারিনটেনডেন্ট চমন সিকান্দার জুলকারনাইন। গত ২৫
নভেম্বর প্রসিকিউশন পক্ষে সাক্ষ্যগ্রহন ও সাক্ষিকে
আসামীপক্ষের জেরা শেষ হয়।
এরপর আসামি মোবারক হোসেন নিজে ও তার বড়
ছেলে মোহাম্মদ আসাদ উদ্দিন সাফাই
সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেয়। পরে
তাদেরকে জেরা করে প্রসিকিউশন।
তার
বিরুদ্ধে যত অভিযোগঃ
প্রথম অভিযোগ: ১৯৭১
সালের ২২ আগস্ট মোবারক ও অন্য রাজাকারেরা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার
আখাউড়া থানার টানমান্দাইল গ্রামের ২৬ জন ও জাঙ্গাইল গ্রামের
সাতজনকে বাছাই করে তেরোঝুড়ি হাজতখানায় নিয়ে যান। ২৩ আগস্ট পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারেরা ওই ৩৩ জনকে দিয়ে গঙ্গাসাগর দীঘির
পশ্চিম পাড়ে গুলি করে হত্যা করে মাটিচাপা
দেয়।
তৃতীয় অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ১১ নভেম্বর রাত আটটা-নয়টার দিকে মোবারক তাঁর সশস্ত্র রাজাকার সহযোগীদের নিয়ে ছাতিয়ান গ্রামের আবদুল খালেককে অপহরণ করে সুহিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যান ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন। ওই রাতেই খালেককে তিতাস নদীর পশ্চিম পাড়ে বাকাইল ঘাটে নিয়ে গুলি ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়।
চতুর্থ অভিযোগ: ’৭১-এর ২৪-২৫ নভেম্বর বেলা দুইটা-আড়াইটার দিকে মোবারকের নেতৃত্বে রাজাকারের একটি দল খড়মপুর গ্রামের খাদেম হোসেন খানকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার স্টেশন রোড থেকে অপহরণ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে স্থাপিত সেনাক্যাম্পে আটকে রেখে নির্যাতন করে। ৬ ডিসেম্বর অন্য কয়েকজন বন্দীর সঙ্গে তাঁকেও কুড়লিয়া খালের পাড়ে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়।
পঞ্চম অভিযোগ: একই বছর ২৮-২৯ নভেম্বর রাত ১১টার দিকে পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারদের সঙ্গে নিয়ে মোবারক খড়মপুর গ্রামের আবদুল মালেক ও আমিরপাড়া গ্রামের মো. সিরাজকে অপহরণ করেন। ৬ ডিসেম্বর সিরাজকে কুড়লিয়া খালের পাড়ে নিয়ে গুলি করে হত্যা করেন।
২০১৪ ২৪ সে
নভেম্বর সোমবার তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এই রায় ঘোষণা
করেন৷ অন্য দু'জন সদস্য হলেন – বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মো.
আনোয়ারুল হক৷ রায়ে বলা হয়, মোবারকের বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগের
মধ্যে দুটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে৷
এর মধ্যে প্রথম অভিযোগ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার টানমান্ডাইল গ্রামের ৩৩ জনকে গঙ্গাসাগর দীঘির পাড়ে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যার দায়ে তাকে মৃত্যুদণ্ড এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতাকারী আব্দুল খালেককে অপহরণ করে হত্যার অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত৷ তবে অপর তিনটি অভিযোগ থেকে মোবারককে খালাস দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল৷
এর মধ্যে প্রথম অভিযোগ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার টানমান্ডাইল গ্রামের ৩৩ জনকে গঙ্গাসাগর দীঘির পাড়ে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যার দায়ে তাকে মৃত্যুদণ্ড এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতাকারী আব্দুল খালেককে অপহরণ করে হত্যার অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত৷ তবে অপর তিনটি অভিযোগ থেকে মোবারককে খালাস দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল৷
প্রসিকিউটর
সাহিদুর রহমান রায়ের পরে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘‘দুটি অভিযোগে মোবারক দোষী প্রমাণিত হয়েছে৷ আমরা সন্তুষ্ট৷ সে
যে রাজাকার ছিল – এটি আমরা সাক্ষ্য প্রমাণ দিয়ে বোঝাতে পেরেছি৷'' ওদিকে মোবারক হোসেনের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে
গণজাগরণ মঞ্চ৷
একাত্তরে মোবারক ও
তার সহযোগীদের হাতে নিহত আব্দুল খালেকের মেয়ে খোদেজা বেগম ২০০৯ সালের ৩রা মে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতে মামলা করেন৷
ঐ মামলায় মোবারক আগাম জামিন নিলেও, ২০১২ সালের ৬ই জুন যুদ্ধাপরাধের মামলাটি ট্রাইব্যুনালে আসার পর, তদন্ত শেষে গত বছর অভিযোগ দাখিল করা হয়৷
এরপর ১২ই মার্চ ট্রাইব্যুনাল তার জামিন বাতিল করে
কারাগারে পাঠায়৷ পরে মামলার সাক্ষী এবং যুক্তি-তর্ক শেষে চলতি বছরের ২রা জুন মামলার বিচারকাজ শেষ হয়৷
৬৪ বছর বয়সি মোবারক একাত্তরে আখাউড়ার
রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার ছিল৷ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসনের তৈরি
রাজাকারের তালিকাতেও তার নাম রয়েছে৷
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন