কামারুজ্জামানের
জন্ম ১৯৫২ সালের ৪ঠা জুলাই শেরপুর জেলা সদরের বাজিতখালি গ্রামের এক কৃষকের পরিবারে।
এ সময় শেরপুর ছিল তদানীন্তন ময়মনসিংহ জেলার জামালপুর মহুকুমার অন্তর্গত একটি থানা।
কামারুজ্জামানের বেড়ে
উঠা শেরপুরেই। শহরের গোবিন্দপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে তিনি মেট্রিক পাশ করেন। এরপর ইন্টারমিডিয়েট পাশ
করেন ময়মনসিংহ নাসিরাবাদ কলেজ থেকে । সামরিক শাসক জিয়াউর রহমনের আমলে
১৯৭৮-৭৯ সালে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭৯ সালের অক্টোবরে কামারুজ্জামান মূল দল জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দেন এবং ওই বছর ১৬ ডিসেম্বর রুকনের দায়িত্ব পান।
১৯৮২-১৯৮৩ সালে তিনি জামায়াতে ইসলামের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামের নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্বেও ছিলেন। ১৯৯২ সাল থেকে তিনি দলে সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্বে রয়েছেন।
১৯৭১
সালে কামারুজ্জামান ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘ-এর ময়মনসিংহ জেলার প্রধান। ২২ এপ্রিল তিনি জামালপুরের আশেক মাহমুদ
কলেজের ইসলামী ছাত্রসংঘের বাছাই করা নেতাকর্মীদের নিয়ে আলবদর বাহিনী গড়ে তোলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় জামালপুরে প্রথম যে আলবদর বাহিনী গড়ে ওঠে, তার প্রধান সংগঠক ছিলেন তিনি। তাঁর
নেতৃত্বেই ময়মনসিংহ জেলার সকল ছাত্রসংঘকর্মীকে আলবদর বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই বাহিনী বৃহত্তর ময়মনসিংহে (ময়মনসিংহ, জামালপুর, নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ, শেরপুর ও টাঙ্গাইল) গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও দেশত্যাগে বাধ্য করাসহ মানবতাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধ ঘটায় ।
১৯৭১ সালের ১৬ আগস্ট তারিখে দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে
বলা হয়, 'পাকিস্তানে ২৫তম আজাদী দিবস উপলক্ষে গত শনিবার মোমেনশাহী আলবদর বাহিনীর উদ্যোগে মিছিল ও সিম্পোজিয়াম
অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় মুসলিম ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এই সিম্পোজিয়ামে সভাপতিত্ব করেন আলবদর বাহিনীর
প্রধান সংগঠক জনাব কামারুজ্জামান। এক তারবার্তায় প্রকাশ, সিম্পোজিয়ামে বিভিন্ন বক্তাগণ দেশকে
ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত দুশমনদের সম্পর্কে
সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ঘাতক বাহিনী 'আলবদর'-এর মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার
চাঞ্চল্যকর সব তথ্য নিয়ে নির্মিত 'আলবদর :
এ কিলিং স্কোয়াড অব পাকিস্তান আর্মি, ১৯৭১' নামের প্রামাণ্যচিত্রে কামারুজ্জামানের যুদ্ধাপরাধ উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, জামালপুরে কুখ্যাত আলবদর বাহিনীর যে সাতটি
ক্যাম্প ছিল, তার মধ্যে শেরপুরের সুরেন্দ্র মোহন সাহার বাড়ির ক্যাম্পটি ছিল সবচেয়ে
বিভীষিকাময়। ক্যাম্পটির তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন কামারুজ্জামান। অন্তত ৮০-৯০ জন মুক্তিযোদ্ধা ও
নিরীহ বাঙালিকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে
এই ক্যাম্পেই। দিনের পর দিন ক্যাম্পের অন্ধকার কুঠুরিতে আটকে রেখে চালানো হয়েছে অসহ্য নির্যাতন।
এসব নির্যাতন আর হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষ
সহযোগী ছিলেন আলবদর বাহিনীর জামালপুর সাবডিভিশনের প্রধান আবদুল বারী এবং সদস্য নাসির ও কামরান। দেশ
স্বাধীন হওয়ার পর আশরাফের সহযোগী আবদুল বারীর
একটি ডায়েরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা, বন্দি ও হিন্দু মেয়েদের ধর্ষণের
সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। এই আশরাফেরই অন্য সহযোগী ছিলেন কামারুজ্জামান। ডায়েরিতে
কামারুজ্জামানের নির্দেশেই
যে টর্চার ক্যাম্পে বন্দি গোলাম মোস্তফা তালুকদারকে গুলি করে হত্যা করা হয়, সে কথার উল্লেখ আছে। এরপর একাত্তরের ২৫ জুলাই সকালে শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ি উপজেলার সোহাগপুর নামে গ্রামে কামারুজ্জামানের
পরামর্শে আলবদর ও রাজাকাররা পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালায় ও নারীদের
ধর্ষণ করে। ওই হত্যাযজ্ঞে সোহগপুর গ্রামের
১৬৪ জন পুরুষকে হত্যা করে পুরুষ শূণ্য করা হয়। তারপর থেকে গ্রামটি ‘বিধবাপল্লী’
নামে পরিচিত।
শেরপুরের
বাসিন্দা ফজলুল হক তাঁর ছেলে বদিউজ্জামানকে হত্যার জন্য কামারুজ্জামানকে দায়ী করে দেশ স্বাধীন
হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ২ মে বদিউজ্জামানের বড় ভাই হাসানুজ্জামান বাদী হয়ে নালিতাবাড়ী থানায়
মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় ১৮ জন আসামির
অন্যতম ছিলেন কামারুজ্জামান। মামলাটির নম্বর ২(৫) ৭২ ও জিআর নম্বর ২৫০ (২) ৭২। ২০১০ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা
যুদ্ধকালে সংগঠিত যুদ্ধাপরাধের বিচারের প্রক্রিয়া শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৩ জুলাই, ২০১০ তারিখে কামারুজ্জামানকে পল্লবী থানা এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত
গণহত্যার একটি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
কামারুজ্জামান ছিলেন আলবদর বাহিনীর প্রধান সংগঠক:
ট্রাইব্যুনালের রায়ে বলা হয়, একাত্তরের ১৬
আগস্ট দৈনিক সংগ্রাম -এর একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ময়মনসিংহের মুসলিম ইনস্টিটিউটে পাকিস্তানের ২৫তম আজাদী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সিম্পোজিয়ামে সভাপতিত্ব করছেন ‘আলবদর বাহিনীর প্রধান সংগঠক’ কামারুজ্জামান।
আসামিপক্ষ পত্রিকাটির ওই প্রতিবেদনের তথ্য খণ্ডন করতে পারেনি। তারা প্রতিবেদনের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করতে পারেনি। পাশাপাশি, ওই সময় থেকে আজ পর্যন্ত সংগ্রামকে জামায়াতের দলীয় মুখপত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ জন্য সাক্ষ্য হিসেবে ওই প্রতিবেদনের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নাতীত। এ ছাড়া অধ্যাপক আবু সাইয়িদের বাংলাদেশের স্বাধীনতা: যুদ্ধের আড়ালে যুদ্ধ শীর্ষক বই ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশ কেন্দ্র প্রকাশিত ‘একাত্তরের ঘাতক ও দালালেরা কে কোথায়’ শীর্ষক বইয়েও কামারুজ্জামানকে ‘আল-বদরের প্রধান সংগঠক’ হিসেবে চিহ্নিত করা আছে।
এ ছাড়া ১৯৭২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি পুলিশের সহকারী মহাপরিদর্শকের স্বাক্ষরিত তালিকাভুক্ত দালালদের একটি নথিতে বলা হয়েছে, মোহাম্মদ কামারুজ্জামান (তালিকায় ২৮৭ নম্বর) একাত্তরের ২৯ ডিসেম্বর আলবদর হিসেবে ধরা পড়েন এবং তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। ওই সময় আসামির গ্রেপ্তার হওয়ার ঘটনা আসামিপক্ষের চতুর্থ সাক্ষী ও কামারুজ্জামানের বড় ভাই স্বীকার করেছেন।
একাত্তরের ৩১ ডিসেম্বরের দৈনিক আজাদ , দৈনিক পূর্বদেশ ও দৈনিক বাংলা পত্রিকার প্রতিবেদনেও দেখা যায়, ওই সময়ে গ্রেপ্তার হওয়া আসামি কামারুজ্জামান বৃহত্তর ময়মনসিংহে আলবদর বাহিনীর প্রধান সংগঠক ছিলেন। এসব নথিপত্র এটাই প্রমাণ করে, তিনি বৃহত্তর ময়মনসিংহে আলবদর বাহিনী গঠন, সদস্যদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রভৃতি বিষয় সমন্বয় করতেন।
আসামিপক্ষ পত্রিকাটির ওই প্রতিবেদনের তথ্য খণ্ডন করতে পারেনি। তারা প্রতিবেদনের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করতে পারেনি। পাশাপাশি, ওই সময় থেকে আজ পর্যন্ত সংগ্রামকে জামায়াতের দলীয় মুখপত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ জন্য সাক্ষ্য হিসেবে ওই প্রতিবেদনের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নাতীত। এ ছাড়া অধ্যাপক আবু সাইয়িদের বাংলাদেশের স্বাধীনতা: যুদ্ধের আড়ালে যুদ্ধ শীর্ষক বই ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশ কেন্দ্র প্রকাশিত ‘একাত্তরের ঘাতক ও দালালেরা কে কোথায়’ শীর্ষক বইয়েও কামারুজ্জামানকে ‘আল-বদরের প্রধান সংগঠক’ হিসেবে চিহ্নিত করা আছে।
এ ছাড়া ১৯৭২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি পুলিশের সহকারী মহাপরিদর্শকের স্বাক্ষরিত তালিকাভুক্ত দালালদের একটি নথিতে বলা হয়েছে, মোহাম্মদ কামারুজ্জামান (তালিকায় ২৮৭ নম্বর) একাত্তরের ২৯ ডিসেম্বর আলবদর হিসেবে ধরা পড়েন এবং তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। ওই সময় আসামির গ্রেপ্তার হওয়ার ঘটনা আসামিপক্ষের চতুর্থ সাক্ষী ও কামারুজ্জামানের বড় ভাই স্বীকার করেছেন।
একাত্তরের ৩১ ডিসেম্বরের দৈনিক আজাদ , দৈনিক পূর্বদেশ ও দৈনিক বাংলা পত্রিকার প্রতিবেদনেও দেখা যায়, ওই সময়ে গ্রেপ্তার হওয়া আসামি কামারুজ্জামান বৃহত্তর ময়মনসিংহে আলবদর বাহিনীর প্রধান সংগঠক ছিলেন। এসব নথিপত্র এটাই প্রমাণ করে, তিনি বৃহত্তর ময়মনসিংহে আলবদর বাহিনী গঠন, সদস্যদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রভৃতি বিষয় সমন্বয় করতেন।
৯ই মে ২০১৩, একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায়
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়া হয়। এর আগে কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে আনা বিভিন্ন
অপরাধের মধ্যে সাতটি অভিযোগে তাকে দোষী দেখানো হয়।
পরে সাতটি
অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি অভিযোগ ট্রাইব্যুনালের রায়ে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। অভিযোগগুলোর মধ্যে ১, ২, ৩, ৪ ও ৭ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হয় এবং ৫ ও ৬ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি
বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।
এর মধ্যে ৩ ও ৪
নম্বর অভিযোগে কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। এর মধ্যে তৃতীয় অভিযোগ হলো সোহাগপুর বিধবাপল্লীতে নির্বিচার
হত্যাকাণ্ড ও চতুর্থ অভিযোগ গোলাম মোস্তফাকে হত্যার
দায়। ১ নম্বর অভিযোগ বদিউজ্জামান হত্যা ও ৭ নম্বর অভিযোগ দারাসহ ছয় হত্যা অভিযোগে তাকে যাবজ্জীবন এবং ২ নম্বর অভিযোগ অধ্যক্ষ আব্দুল হান্নানকে
নির্যাতনের অভিযোগে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
কামারুজ্জামানের
বিরুদ্ধে সাত অভিযোগ
অভিযোগ-১
বদিউজ্জামান হত্যা : একাত্তরের ২৯ জুন সকালে কামারুজ্জামানের নেতৃত্বে আলবদররা শেরপুরের ঝিনাইগাতী থানার রামনগর গ্রামের আহম্মেদ মেম্বারের বাড়ি
থেকে বদিউজ্জামানকে অপহরণ করে আহম্মেদনগরে পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে সারারাত নির্যাতন করে পরদিন হত্যা করে লাশ পানিতে
ফেলে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় ট্রাইব্যুনালের
রায়ে কামারুজ্জামানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
অভিযোগ-২ অধ্যক্ষ আবদুল হান্নানকে নির্যাতন : কামারুজ্জামান ও তার সহযোগীরা শেরপুর কলেজের অধ্যক্ষ সৈয়দ আবদুল হান্নানকে নগ্ন অবস্থায় শহরের রাস্তায় হাঁটাতে হাঁটাতে চাবুকপেটা করেন। এই অভিযোগে কামারুজ্জামানকে ১০ বছরের সাজা দেন ট্রাইব্যুনাল।
অভিযোগ-৩
সোহাগপুরে গণহত্যা : একাত্তরের ২৫ জুলাই আলবদর ও রাজাকাররা পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে
শেরপুরের সোহাগপুর গ্রামে নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালায় এবং
নারীদের ধর্ষণ করে। এটি কামারুজ্জামানের
পরামর্শে পরিকল্পিতভাবে করা হয়। সেদিন ওই গ্রামে ১২০ জন পুরুষকে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনার দিন থেকে সোহাগপুর গ্রাম ‘বিধবাপল্লী’ নামে পরিচিত। এই অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় কামারুজ্জামানকে।
অভিযোগ-৪ গোলাম মোস্তফাকে হত্যা : একাত্তরের ২৩ আগস্ট কামারুজ্জামানের নির্দেশে আলবদর সদস্যরা গোলাম মোস্তফাকে ধরে সুরেন্দ্র মোহন সাহার বাড়িতে স্থাপিত আলবদর ক্যাম্পে নিয়ে যান। সেখানে কামারুজামান ও আলবদররা তাকে গুলি করে হত্যা করে। এ অভিযোগেও কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল।
অভিযোগ-৫ লিয়াকত-মুজিবুরসহ আটজনকে হত্যা : মুক্তিযুদ্ধের সময় রমজান মাসের মাঝামাঝি কামারুজ্জামান ও তার সহযোগীরা শেরপুরের চকবাজার থেকে লিয়াকত আলী ও মুজিবুর রহমানকে অপহরণ করে বাঁথিয়া ভবনের রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যান। সেখানে তাদের নির্যাতনের পর থানায় ৪ দিন আটকে রাখা হয়। পরে কামারুজ্জামানের নির্দেশে ওই দুজনসহ ১৩ জনকে ঝিনাইগাতীর আহম্মেদনগর সেনা ক্যাম্পে পাঠানো হয়। পরে লিয়াকত, মুজিবুরসহ আটজনকে উপজেলা পরিষদের কার্যালয়ের কাছে সারিতে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। কামারুজ্জামান ও তার সহযোগী কামরান সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এই অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত হয়নি।
অভিযোগ-৬ টুনু হত্যা : একাত্তরের নভেম্বরে কামারুজ্জামানের নির্দেশে আলবদর সদস্যরা টুনু ও
জাহাঙ্গীরকে ময়মনসিংহের জেলা পরিষদের ডাকবাংলোতে
আলবদর ক্যাম্পে নিয়ে যান। টুনুকে সেখানে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। জাহাঙ্গীরকে পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ অভিযোগও প্রমাণিত হয়নি।
অভিযোগ-৭ দারাসহ ছয় হত্যা : মুক্তিযুদ্ধকালে ২৭ রমজান কামারুজ্জামান আলবদর সদস্যদের নিয়ে ময়মনসিংহের গোলাপজান রোডের টেপা মিয়া ও তার বড় ছেলে জহুরুল ইসলাম দারাকে ধরে জেলা পরিষদের ডাকবাংলোয় আলবদর ক্যাম্পে নিয়ে যান। পরদিন সকালে আলবদররা ওই দুজনসহ সাতজনকে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে নিয়ে হাত বেঁধে সারিতে দাঁড় করান। প্রথমে টেপা মিয়াকে বেয়নেট দিয়ে খোঁচাতে গেলে তিনি নদীতে লাফ দেন। আলবদররা গুলি করলে তার পায়ে লাগে। তবে তিনি পালাতে সক্ষম হন। কিন্তু অন্য ছয়জনকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়। এ অভিযোগে কামারুজ্জামানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল।
শাস্তি: শাস্তির বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল বলেন, সোহাগপুর গ্রামে নির্বিচার হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনাটি চরম হিংস প্রকৃতির ছিল।
আসামি তাঁর কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ওই নৃশংস হত্যাকাণ্ডে তাঁর অংশগ্রহণ প্রমাণ করেছেন।
ট্রাইব্যুনাল রায়ে আরও বলেন, ‘আসামি যেভাবে এসব অপরাধ ঘটিয়েছে, তাতে সর্বোচ্চ শাস্তি না দিলে সুবিচার হবে না।’ হত্যাযজ্ঞের পাশাপাশি নির্বিচার যৌন নিপীড়ন মানবিকতাবোধকে উৎখাত ও ধ্বংস করেছে, যার দায় আসামিকে নিতে হবে।
অপরাধে অংশগ্রহণের মাত্রা বিবেচনা করে ট্রাইব্যুনাল মনে করেন, তৃতীয় ও চতুর্থ অপরাধের দায়ে আসামিকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া না হলে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না।
ট্রাইব্যুনাল রায়ে আরও বলেন, ‘আসামি যেভাবে এসব অপরাধ ঘটিয়েছে, তাতে সর্বোচ্চ শাস্তি না দিলে সুবিচার হবে না।’ হত্যাযজ্ঞের পাশাপাশি নির্বিচার যৌন নিপীড়ন মানবিকতাবোধকে উৎখাত ও ধ্বংস করেছে, যার দায় আসামিকে নিতে হবে।
অপরাধে অংশগ্রহণের মাত্রা বিবেচনা করে ট্রাইব্যুনাল মনে করেন, তৃতীয় ও চতুর্থ অপরাধের দায়ে আসামিকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া না হলে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না।
তার
বিরুদ্ধে আনীত ৭টি অভিযোগের মধ্যে ৫টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয় এবং
এর মধ্যে ২টি তে তাকে ফাঁসির
আদেশ দেয়া হয়।
দণ্ডাদেশের
বিরুদ্ধে ও খালাস চেয়ে ২০১৩ সালের ৬ জুন আপিল
করেন কামারুজ্জামান।
২০১৪
সালের ৫ জুন থেকে আপিলের শুনানি শুরু হয়ে শেষ হয়
১৭ সেপ্টেম্বর।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ বিচারপতি
সুরেন্দ্রকুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ আপিল শুনানি শেষে রায় অপেক্ষমাণ (সিএভি-কেস
অ্যায়োটিং ভারডিক্ট) রাখেন। এই বেঞ্চের অন্য
সদস্যরা হলেন বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও
বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৯ মে বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। ১৯৭১ সালে কামারুজ্জামান ছিলেন ময়মনসিংহ জেলা শাখার আল-বদর প্রধান। ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে গত বছরের ৬ জুন আপিল করেন কামারুজ্জামান। চলতি বছরের ৫ জুন কামারুজ্জামানের মামলার আপিল শুনানি শুরু হয়।
ট্রাইব্যুনালে সাত অভিযোগ, পাঁচটি প্রমাণিত: ট্রাইব্যুনালে কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে আনা সাতটি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে পেরেছে। এর মধ্যে সোহাগপুর ‘বিধবাপল্লি’তে নির্বিচার হত্যাকাণ্ড ও গোলাম মোস্তফা হত্যাকাণ্ডের দায়ে (তৃতীয় ও চতুর্থ অভিযোগ) কামারুজ্জামানকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করার আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। বদিউজ্জামান ও দারাসহ ছয়জনকে হত্যার (প্রথম ও সপ্তম অভিযোগ) দায়ে তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এ ছাড়া একাত্তরে শেরপুর কলেজের অধ্যক্ষ সৈয়দ আবদুল হান্নানের প্রতি অমানবিক আচরণের দায়ে কামারুজ্জামানকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। তবে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেওয়ায় যাবজ্জীবন ও ১০ বছরের শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের সঙ্গে একীভূত হয়ে যাবে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৯ মে বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। ১৯৭১ সালে কামারুজ্জামান ছিলেন ময়মনসিংহ জেলা শাখার আল-বদর প্রধান। ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে গত বছরের ৬ জুন আপিল করেন কামারুজ্জামান। চলতি বছরের ৫ জুন কামারুজ্জামানের মামলার আপিল শুনানি শুরু হয়।
ট্রাইব্যুনালে সাত অভিযোগ, পাঁচটি প্রমাণিত: ট্রাইব্যুনালে কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে আনা সাতটি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে পেরেছে। এর মধ্যে সোহাগপুর ‘বিধবাপল্লি’তে নির্বিচার হত্যাকাণ্ড ও গোলাম মোস্তফা হত্যাকাণ্ডের দায়ে (তৃতীয় ও চতুর্থ অভিযোগ) কামারুজ্জামানকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করার আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। বদিউজ্জামান ও দারাসহ ছয়জনকে হত্যার (প্রথম ও সপ্তম অভিযোগ) দায়ে তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এ ছাড়া একাত্তরে শেরপুর কলেজের অধ্যক্ষ সৈয়দ আবদুল হান্নানের প্রতি অমানবিক আচরণের দায়ে কামারুজ্জামানকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। তবে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেওয়ায় যাবজ্জীবন ও ১০ বছরের শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের সঙ্গে একীভূত হয়ে যাবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন