১৯৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পর বাঙালিরা
আশা করেছিল যে ক্ষমতার পালাবদল হবে এবং আওয়ামী লীগ ৬ দফা অনুসারে সরকার
গঠন করবে। ২৮ ফেব্রুয়ারী ১৯৭১ এ তৎকালীণ রাষ্ট্রপতি ও সেনা প্রধান ইয়াহিয়া খান পিপিপি (পাকিস্তান পিপলস পার্টি) এর জুলফিকার আলী ভূট্টোর প্ররোচনা ও চাপে জাতীয় বিধানসভার কার্যাবলি
মার্চ পর্যন্ত স্থগিত করে দেন।
এই স্থগিতকরণের প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ ৭ই মার্চ ১৯৭১ এ একটি গণসমাবেশের আয়োজন করে। এই সমাবেশ
এতই সফল ছিল যে পাকিস্তান সরকার সেনাছাউনি
ও পূর্বপাকিস্তানের সরকারি প্রতিষ্ঠান কার্যাবলী সীমিত করে দিতে বাধ্য হয়। জেনারেল ইয়াহিয়া শেখ মুজিবের সাথে বৈঠকের
উদ্দেশ্যে মার্চের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা আসেন,এবং এরপর ভূট্টো
তার সাথে যোগ দেন।
আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে পাকিস্তানী জেনারেলরা
পিপিপি কে সমর্থন যোগাতে থাকে যার ফলাফল দাঁড়ায় সেনা আক্রমণ ।
১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ থেকে শুরু হওয়া পাকিস্তানী সেনাবাহিনী কর্তৃক
পরিচালিত পরিকল্পিত গণহত্যা,
যার
মধ্যমে তারা ১৯৭১ এর মার্চ ও এর পূর্ববর্তী সময়ে সংঘটিত বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে দমন করতে চেয়েছিল।
অপারেশনটির আসল উদ্দেশ্য ছিল ২৬ মার্চ এর মধ্যে সব বড় বড় শহর দখল করে নেয়া এবং
রাজনৈতিক ও সামরিক বিরোধীদের এক মাসের ভেতর নিশ্চিহ্ন করে দেয়া। এই গণহত্যা ছিল পশ্চিম পাকিস্তানী শাষকদের
আদেশে পরিচালিত,যা ১৯৭০ এর নভেম্বরে সংঘটিত অপারেশন ‘ব্লিটজ’ এর পরবর্তি অনুষঙ্গ।
মে ৭১ এর মাঝামাঝি সময়ে সকল বড় বড় শহরের পতন ঘটার মধ্যে দিয়ে অপারেশন
সার্চলাইটের প্রধান অংশ শেষ হয়।
২৫ এ
মার্চ অপারেশন সার্চলাইট পরিকল্পনা করা
হয় ২২ শে ফেব্রুয়ারি ১৯৭১ । পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর এক বৈঠকে গৃহীত
প্রস্তাবনার ভিত্তিতে মার্চের শুরুতে ১৪তম ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল “খাদিম হুসাইন রাজা” এবং মেজর জেনারেল “রাও ফরমান আলি” অপারেশনের মূল পরিকল্পনা তৈরি করেন। বৈঠকের
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পশ্চিম পাকিস্তানের কোয়েতা হতে ১৬তম ইনফ্যান্ট্রি
ডিভিশন এবং খরিয়ান থেকে ১৯তম ডিভিশনকে ফেব্রুয়ারীর মাঝামাঝি সময়ে পূর্ব পাকিস্তানে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়ার আদেশ দেয়া হয়।
পাকিস্তানের উর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা পূর্ব পাকিস্তানের জিওসি ‘লে
জেনারেল সাহেবজাদা ইয়াকুব খান’ এবং পূর্ব
পাকিস্তানের গভর্নর ‘ভাইস অ্যাডমিরাল এস এম আহসান’ পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ জনগণের উপর সামরিক
হামলার বিরোধী ছিলেন বলে অপারেশনের পূর্বেই তাদেরকে দায়িত্ব হতে অব্যাহতি দেয়া
হয়। “লে জেনারেল টিক্কা” খানকে পূর্ব
পাকিস্তানের গভর্নর ও জিওসি করে পাঠানো হয়। মার্চের ১৭ তারিখ পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর সিওএস জেনারেল হামিদ টেলিফোন করে জেনারেল
রাজাকে অপারেশনের পরিকল্পনা করার দায়িত্ব প্রদান
করেন। ১৮ মার্চ সকালে ঢাকা সেনানিবাসের
জিওসি কার্যালয়ে বসে জেনারেল রাজা এবং মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলি অপারেশনের পরিকল্পনা তৈরি করেন। পরিকল্পনাটি জেনারেল ফরমান নিজ
হাতে লিখে নেন।
পরিকল্পনাকারীরা প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সাথে আলাপকালে বাঙালি সৈন্যদের অপারেশনের পূর্বেই নিরস্ত্র করার এবং বাঙালি রাজনৈতিক
নেতাদের গ্রেফতারের প্রস্তাব দেন। অপারেশনের সব কিছুই
নির্ধারিত হল। হাতে লিখিত
পরিকল্পনাটি ২০ মার্চে আবার জেনারেল
হামিদ এবং লে জেনারেল টিক্কা পর্যালোচনা করেন। জেনারেল হামিদ তাৎক্ষনিকভাবে বাঙালি সেনা ইউনিটগুলোকে নিরস্ত্র করার সিদ্ধান্ত
নিলেও শুধুমাত্র ‘ই পি আর’ আর্মড পুলিশ ও আধা-সামরিক বাহিনীদের নিরস্ত্র
করার অনুমতি দেন। ইয়াহিয়া খান তার সাথে এক বৈঠকের সময় আওয়ামী লীগ নেতাদের
গ্রেফতারের পরিকল্পনাকে প্রত্যখ্যান করেন । পুণঃনির্ধারিত
পরিকল্পনা অনুমোদন করা হয় এবং বিভিন্ন এলাকার কমান্ডারদের কাছে বিতরন করে দেয়া
হয়।
পাকিস্তানী পরিকল্পনাকারিদের গৃহিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অপারেশনের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন অংশ এবং স্বশস্ত্র
বাহিনীর যারা সামরিক শাষনকালে আওয়ামী লীগকে সমর্থন
জুগিয়েছে তাদের নিশ্চিহ্ন করে দেয়া।
২৪ ও ২৫শে মার্চ পাকিস্তানী জেনারেলদের একটি দল হেলিকপ্টারে করে
প্রধান প্রধান গ্যারিসনগুলো পরিদর্শন করেন এবং
গ্যারিসন কমান্ডার ও অপারেশনের অন্যান্য
সিনিয়র পাকিস্তানী কর্মকর্তাদের বিভিন্ন নির্দেশনা দেন । অপারেশন শুরুর আগেই সমস্ত নিয়মিত
বাঙালি ইউনিটকে একসাথে নিরস্ত্র করার অনুমতি
দেননি জেনারেল হামিদ, ফলে পাকিস্তানী নেতৃত্ব অন্যান্য উপায়
বাঙালি ইউনিটগুলোর সম্ভাব্য হুমকি
নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করে।
২৫ মার্চে এবং এর আগের সময়গুলোতে বাঙালি ইউনিটগুলোকে ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত করে ফেলা হয়, তাদেরকে সেনানিবাসের বাইরে পাঠানো হয় বিভিন্ন কাজ দেখিয়ে, এক অংশ থেকে আরেক অংশকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়, এবং সবগুলো অংশকেই রেডিও এবং তারহীন যোগাযোগের গ্রিড থেকে যত সম্ভব দূরে রাখা হয়। বাঙালি কর্মকর্তাদের হয় ছুটিতে পাঠিয়ে দেয়া হয় নয়তো নেতৃত্বের কেন্দ্র বা সরাসরি অপারেশনে নিয়োজিত ইউনিটগুলো থেকে যথাসম্ভব দূরে রাখা হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পশ্চিম পাকিস্তানী কর্মকর্তারা বাঙালি ইউনিট পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে নেয়। বাঙালি সৈনিকদের অনেককে ছুটিতে পাঠানো হয়, অনেককে নিরস্ত্র করা হয়, তবে এমনভাবে কাজগুলো করা যাতে কারও মধ্যে কোন সন্দেহের উদ্রেক না হয়।
সাধারণ জনবসতি এবং হিন্দু এলাকাগুলোতে আক্রমণ সহ সাফল্যের কিছু নিয়ামক নির্ধারণ করা হয় ।
১। সারা
পূর্বপাকিস্তানে একযোগে অপারেশন শুরু করতে হবে।
২। সর্বোচ্চ সংখ্যক
রাজনৈতিক ও ছাত্র সংগঠনের নেতা, সাংস্কৃতিক সংগঠনের সথে জড়িত ব্যক্তিবর্গ এবং শিক্ষকদের গ্রেফতার করতে হবে।
৩ । ঢাকায় অপারেশন
১০০% সফল হওয়া বাধ্যতামূলক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দখল এবং তল্লাশী করতে
হবে।
৪। সেনানিবাসকে
সুরক্ষিত রাখার প্রয়োজনে উন্মুক্ত ও সর্বোচ্চ ক্ষমতায় অস্ত্র ব্যবহারের কর্তৃত্ব
প্রদান করা হয়।
৫। টেলিফোন, টেলিভিশন, রেডিও ও টেলিগ্রাফ সহ
সকল অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দিতে হবে।
৬। সকল
পূর্বপাকিস্তানী বাঙালি সৈন্যদলকে অস্ত্র ও
গোলাবারুদ কেড়ে নিয়ে নিস্ক্রিয় করে দিতে হবে।
৭। আওয়ামী লীগের মনে
ভূল ধারণা সৃষ্টি করে তাদের ব্যস্ত রাখার জন্য ইয়াহিয়া খান আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার অভিনয় করবেন। এমনকি ভুট্টো যদি
আওয়ামী লীগের প্রস্থাবে
রাজি হয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন,
তবুও
ইয়াহিয়া আলোচনা চালিয়ে যাবেন।
যদিও পরিকল্পনায় পূর্ব পাকিস্তানকে দমন করার জন্য কোন নির্দিষ্ট
সময় বেধে দেয়া হয় নি, এটা ধারণা করা হয় যে রাজণৈতিক নেতাদের গ্রেফতার এবং বাঙালি সামরিক
ও আধা সামরিক বাহিনীদের নিরস্ত্র করার পর সাধারণ জনগণদের ভয় দেখিয়ে
এক সাপ্তাহের মধ্যে সামরিক শাষনের আওতাভূক্ত করা হবে ।
মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলি কর্তৃক
প্রণীত ঢাকা আক্রমণের পাকিস্তানী পরিকল্পনা ছিল নিম্নরূপঃ
১। ১৩তম সীমান্তবর্তি
সৈন্যদল সেনানিবাসে সংরক্ষিত শক্তি হিসাবে থাকবে এবং নিরাপত্তা প্রদান করবে।
২। ৪৩তম হালকা
বিমানবিধ্বংসী বাহিনী তেজগাঁও বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে।
৩। ২২তম বালুচ
রেজিমেন্ট ইপিআর বাহিনীকে নিরস্ত্র করবে এবং ইপিআর সদর দফতরের ওয়্যারলেস ব্যবস্থা
দখলে নেবে।
৪। ৩২তম পাঞ্জাব
রেজিমেন্ট রাজারবাগ পুলিশ লাইনকে নিস্ক্রিয় করবে।
৫। ১৮তম পাঞ্জাব
রেজিমেন্টের দায়িত্ব ছিল পুরান ঢাকা এবং নবাবপুরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
৬। ৩১তম ফিল্ড
রেজিমেন্ট মোহাম্মদপুর এবং মিরপুরের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল।
৭।
3 SSG এর
একটি প্লাটুন মুজিবকে ধরার দায়িত্বে ছিল।
৮। ২২তম বালুচ এবং
৩২তম পাঞ্জাব রেজিমেন্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্রোহীদের নিস্ক্রিয় করার
দায়িত্বে ছিল।
৯। ২২তম বালুচ
রেজিমেন্ট এরপর পিলখানার শক্তি বৃদ্ধি করবে।
পাকিস্তানী বাহিনীকে চট্টগ্রামে
নিম্নলিখিত লক্ষ্যসমূহ ঠিক করে দেয়া হয়:
- ই বি আর সি ইউনিট, ৮ম ই বি আর, ই পি আর এবং পুলিশ বাহিনীকে নিরস্ত্র করা।
- পুলিশের অস্ত্রসস্ত্র, রেডিও স্টেশন এবং টেলিফোন এক্সচেইঞ্জ দখল করে নেয়া।
- পাকিস্তানী নৌবাহিনীর সাথে যোগাযোগ করা।
- লে কর্নেল এম আর চৌধুরী এবং আওয়ামি লীগ নেতৃবৃন্দদের গ্রেফতার করা।
অপারেশনে নামার আগেই যাতে সংশ্লিষ্ট সব পাকিস্তানী ইউনিট কমান্ডার
তাদের দায়িত্ব বুঝে নিতে পারে সেটা নিশ্চিত করা প্রয়োজন ছিল অপারেশনর সার্চলাইটের
পরিকল্পনাকারীদের। আর এই কাজটি করা দরকার ছিল সম্পূর্ণ গোপনীয়তা বজায় রেখে। সশস্ত্র বাহিনীর
সদস্যদের একত্রিত করা, অস্ত্রশস্ত্রের যোগান, পশ্চিম পাকিস্তান থেকে অতিরিক্ত সৈনিক পূর্ব
পাকিস্তানে আনা,
আঞ্চলিক
সেনানায়কদের কার্যবিবরণী প্রদান- এই সব কিছুই করা প্রয়োজন ছিল কোন সন্দেহের উদ্রেক না
ঘটিয়ে। ২৪ ও ২৫শে মার্চ পাকিস্তানী জেনারেলদের একটি দল হেলিকপ্টারে করে
প্রধান প্রধান গ্যারিসনগুলো পরিদর্শন করেন এবং গ্যারিসন কমান্ডার ও
অপারেশনের অন্যান্য সিনিয়র পাকিস্তানী কর্মকর্তাদের বিভিন্ন নির্দেশনা দেন।
এই দলের সাথে ছিলেন জেনারেল হামিদ, জেনারেল মিট্টা, কোয়ার্টারমাস্টার জেনারেল এবং প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার কর্নেল
সাদউল্লাহ। জেনারেল ফরমানকে যশোরে পাঠানো হয়, জেনারেল খাদিম নিজে কুমিল্লা
ও চট্টগ্রামের গ্যারিসন কমান্ডারদের ব্রিফ করেন এবং ব্রিগেডিয়ার এল
ইদ্রুস ও কর্নেল সাদউল্লাহ রংপুর সফরে যান।
মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে মেজর জেনারেল কামার আলি মির্জা এবং
ব্রিগেডিয়ার হ্যারিসন পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব আসেন রসদপত্র ব্যবস্থাপনার
জন্য, মূল কারণ
ছিল তখন অসহযোগিতার কার্যকলাপের কারণে সেনানিবাসগুলোতে খাদ্য সরবরাহ বাঁধাগ্রস্ত
হচ্ছিল। অস্ত্রের মূল ভাণ্ডার ছিল ঢাকার অদূরে
অবস্থিত রাজেন্দ্রপুরে এবং ৯০০০ টন অস্ত্র ও গোলাবারুদ চট্টগ্রামে এমভি
সোয়াত নামের একটি জাহাজে খালাসের অপেক্ষায় ছিল। সুতরাং জাহাজ থেকে
রসদপত্র খুব দ্রুত খালাসের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। ততোদিনে ১৩ এফএফ এবং ২২
বালুচ ঢাকায় পৌঁছে গেছে, পাকিস্তান থেকে পিআইএ ফ্লাইট এ করে বিশেষ
যাত্রীরা ঢাকায় আসতে শুরু করেছে। পাকিস্তানীদের মূল উদ্দেশ্য ছিল সফলতা
নিশ্চিত করতে ২৫ মার্চের আগেই পশ্চিম থেকে পুরো একটি ব্রিগেড পূর্ব পাকিস্তানে
পাঠানো।
ব্রিগেডিয়ার এম আর মজুমদার নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর গুলি বর্ষণে
অস্বীকৃতি জানিয়ে এমভি সোয়াত এর মালামাল খালাসের কাজে বাঁধা সৃষ্টি করলে তাকে
২৪ মার্চ তার পদ থেকে অব্যাহতি দেন জেনারেল খাদিম।
২৫ মার্চে এবং এর আগের সময়গুলোতে বাঙালি ইউনিটগুলোকে ছোট ছোট ভাগে
বিভক্ত করে ফেলা হয়, তাদেরকে সেনানিবাসের বাইরে পাঠানো হয় বিভিন্ন কাজ দেখিয়ে, এক অংশ থেকে আরেক অংশকে বিচ্ছিন্ন করে
রাখা হয়, এবং
সবগুলো অংশকেই রেডিও এবং তারহীন যোগাযোগের গ্রিড থেকে যত
সম্ভব দূরে রাখা হয়। বাঙালি কর্মকর্তাদের হয় ছুটিতে পাঠিয়ে দেয়া
হয় নয়তো নেতৃত্বের কেন্দ্র বা সরাসরি অপারেশনে নিয়োজিত ইউনিটগুলো
থেকে যথাসম্ভব দূরে রাখা হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পশ্চিম পাকিস্তানী
কর্মকর্তারা বাঙালি ইউনিট পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে নেয়। বাঙালি সৈনিকদের
অনেককে ছুটিতে পাঠানো হয়, অনেককে নিরস্ত্র করা হয়, তবে এমনভাবে কাজগুলো করা যাতে কারও
মধ্যে কোন সন্দেহের উদ্রেক না হয়।
সাধারণ সময়ের তুলনায় তখন প্রথম ইবিআর এর শক্তি ছিল অর্ধেক, এই ইবিআর কেই শীতকালীন প্রশিক্ষণের জন্য
সীমান্তবর্তী চৌগাছায় পাঠানো হয়, ২৯ মার্চ পর্যন্ত তারা এখানেই ছিল। দ্বিতীয়
ইবিআর এর কোম্পানিগুলোকে ঢাকার আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে দেয়া হয় এবং তাদের
যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ অকেজো রাখা হয়। ৩য় ইবিআর এর কোম্পানিগুলোকে
ছড়িয়ে দেয়া হয় সৈয়দপুর সেনানিবাসের বাইরে গোড়াঘাট ও পার্বতীপুর এলাকার
আশেপাশে। ৪র্থ ইবিআর ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও শমসেরনগর এর
মাঝামাঝি এলাকায়। একমাত্র চট্টগ্রামেই নিয়মিত বাঙালি ইউনিটগুলোকে তাদের
স্বাভাবিক এলাকা থেকে সরিয়ে নেয়া হয়নি।
কোন কোন স্থানে ২৫ মার্চেই পাকিস্তানী আক্রমণ ও গণহত্যা শুরু হবার
সাথে সাথেই বাঙালি বাহিনীর সাথে সাথে পাকিস্তানীদের সংঘর্ষ বেধে যায়।